রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪

পুলিশের উপর সরকার কি নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে?


পুলিশ বিভাগ নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শক্তিধর হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার একজন সহকারী উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা গ্রহণ করছেন না।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনের আগের দিন ২২ মার্চ মালামাল পাঠানোর সময় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার এটিএম মাহবুবুল করিমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, গালি-গালাজ ও পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন লৌহজং থানার এএসআই মোঃ এমদাদ। তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও নির্বাচনী মালামালসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নষ্ট করার অভিযোগও উঠেছে। প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মধ্যে বিনিময় করা কয়েকটি চিঠিতে দেখা যায় ইউএনওকে লাঞ্ছিত করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনও নির্দেশই পুলিশ সুপার মানেননি। পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী ২৩ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে অভিযুক্ত এএসআই-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ২৪ মার্চ আবারো মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পত্র দিয়ে বিকেলের মধ্যে মামলা করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আবার ২৫ মার্চ স্বরাষ্ট্র সচিবের একান্ত সচিব মামলা গ্রহণের বিষয়ে এসপির সাথে পুনরায় কথা বলেন এবং ২৭ মার্চ পুনরায় মামলা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু ৩০ মার্চ পর্যন্ত কোনও মামলা রুজু হয়নি। বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত বিস্ময়কর ও অভূতপূর্ব বলে মনে করি। আমরা যতদূর জানি পুলিশ বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এদের একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা এবং সরকারের নির্দেশ পালন। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যে স্বয়ং পুলিশের একজন কর্মচারী একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে শুধু তার দায়িত্ব পালনে বাধাই দিচ্ছেন না তাকে প্রাণের ভয়ও দেখাচ্ছেন। আবার প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্বাচনকালে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের যাবতীয় মেশিনারি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তাদের নির্দেশ মান্য করতে তারা বাধ্য। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র পরিদৃষ্ট হয়। এখানে সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো, চেইন অব কমান্ড এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও এখতিয়ার কোনটাই আমরা দেখতে পাই না। এখানে দু’টি প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত পুলিশের একজন এএসআই কেমন করে এত অপরাধপ্রবণ ও শক্তিধর হয়ে ওঠেন যে তিনি প্রশাসন ক্যাডারের একজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে তার কাজে বাধাদান এবং পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিতে পারেন। দেশটা কি আসলেই মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয়ত নির্বাচন হচ্ছে গজারিয়া থানায়। লৌহজং  থানার এএসআই এখানে কিভাবে এলেন এবং ঘটনার নাটের গুরু হিসেবে আবির্ভূত হলেন? তার শক্তির উৎস কোথায়? উৎস যেখানেই হোক অমরা মনে করি সরকারের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর এবং দেশে যে এখন প্রশাসনেরও কার্যকারিতা নেই এটি তারই একটি উদাহরণ। আমরা অবিলম্বে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। তা না হলে দেশে প্রশাসন বলতে আর কিছু থাকবে না এবং সর্বত্র নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়বে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads