তোমরা তো জানো মনটা আমার চিরকালই
বিদ্রোহী। সারা জীবনই মনের কথামতো চলেছি। তাই তোমাদের কথা খুব বেশি একটা শুনতে পারিনি।
আমি অনেক ভেবেছি আমাকে নিয়ে। কেন আমি অন্য দশজনের মতো হতে পারলাম না। বেশ সুখে শান্তিতেই
আমার দিনগুলো কাটার কথা ছিল। যে সংসারকে সুখের বলা হয় তেমন সংসারই আমার। আমার বিবির
মতো মানুষ হয় না। তিনি সারাজীবন আমাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন। আমার এতটুকু অসুবিধা
হোক তিনি তা কোনো দিনও চাননি বা হতে দেননি। তিনি যেমন করে আমাকে ভালোবাসেন তেমন করে
আমি তাকে ভালোবাসতে পারিনি। আসলে আমি একজন গৃহহীন গৃহী। সংসারে থেকেও কোনো দিন এর ভেতরে
ছিলাম না। আমার বিবিই একা একটা সংসার। তিনিই এ সংসারের মাঝি। তিনি নৌকার মালিক। তিনিই
সারাজীবন বৈঠা টেনেছেন। এর সুখ দুঃখ তিনিই। আমি ছিলাম শুধু তার একজন সাথী। আমরা দুইজন
একসাথে আছি ৪৭ বছর। ২০১৬-তে ৫০ বছর পুরবে। জানি না সেদিন আমি বা তিনি থাকবেন কি না।
আমি চাই তিনি থাকুন। আমার মতো মানুষের বেশি দিন জগতের জায়গা বা অন্ন ধ্বংস করা উচিত
নয়। আমি কোনো দিন কাউকে নিজের দেশের চেয়ে বেশি ভালো বাসতে পারিনি। দেশ আমার প্রথম প্রেম।
৪৩ বছরে
আমাদের দেশটি মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরের মতো হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কেন
হয়নি তা তুমি ভালো করে জানো। তুমি তো দেশকে ভালোবেসে আর সংসার করোনি। সেদিক থেকে ভাবলে
তুমি আমার চেয়ে অনেক অনেক বড় দেশপ্রেমিক। সারাটা জীবন দেশকে শুধু দিয়ে গেছো। আমি তেমন
করে কিছু দিতে পারিনি। তাই তোমার কাছে গেলেই আমার মাথা অবনত হয়। একজন নারী হয়ে তুমি
যা পেরেছ আমি কেন তা পারিনি তা ভেবে আমি নিজেকে মা করতে পারি না। মাঝে মধ্যে নিজের
প্রতি সীমাহীন ঘৃণা হয়।
দেশের
এখন যে অবস্থা তাতে এ বয়সে আমি শুধু চোখের পানি ফেলি। ভাবলেই কান্নায় আমার বুক ভেঙে
যায়। চোখের পানিতেই সব ভিজে যায়। তুমি তো এখনো লড়াই করে যাচ্ছো। কতবার জেলে গিয়েছ তার
হিসাব তুমি কখনই রাখো না। তুমি বলো দেশকে ভালোবাসলে একটু কষ্ট পেতেই হয়। আসলে আমরা
তো দেশকে ভালোবেসেছি দেশের মানুষের জন্যে। এ মানুষগুলো সারাজীবন শুধু দিয়ে গেছে। বিনিময়ে
কিছুই পায়নি। ৪৩ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভেবেছিলাম এটাই শেষ যুদ্ধ। দেশের সব মানুষ
দু’বেলা ভালো করে খেতে পারবে। আব্রু রা করার মতো পরনের কাপড় পাবে।
ওদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। চিকিৎসার অভাবে মরে যাবে না। না যা ভেবেছিলাম
তা হয়নি। কখন হবে তাও জানি না। কখনো হবে কি না, তাও বলতে পারি না।
এখন আমাদের
বয়স বেশ হয়ে গেছে। একটি সুখী দেশের নাগরিক হিসেবে নিজের দেশকে দেখে যেতে পারব কি না
জানি না। তুমি তো এ দেশের কাছে কিছুই চাওনি নিজের জন্যে। চেয়েছিলে শুধু দেশের মানুষের
জন্যে সুখ। এখনো তুমি বড়ই একা। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলে ২২-২৩ বছর বয়সে। যে বয়সে মানুষ
প্রেম করে, ভালোবেসে ঘর বাঁধে। তোমাকে অনেক বার বলেছিলাম, ওই বয়সে যুদ্ধে যেয়ো না। তুমি রাগ করতে, অভিমান করতে, কেঁদে ফেলতে। বলতে যুদ্ধ বুঝি শুধু ছেলেদের কাজ। শেষ পর্যন্ত তুমি যুদ্ধে গেলে।
যুদ্ধের ক্যাম্পে, ময়দানে, সীমান্তে সবাই তোমাকে কাছে পেতে চেয়েছে, আদর করতে চেয়েছে। তোমাকে পাহারা দিয়ে রাখি তাই বন্ধুরা প্রায় সবাই আমার ওপর
নাখোশ ছিল। তোমার বাবা মা আমার ওপর ্যাপে ছিলেন। তারা ভাবতেন আমিই তোমাকে উসকিয়ে মুক্তিযুদ্ধে
নিয়ে গিয়েছিলাম।
২০ ডিসেম্বর
তুমি আমি এক সাথে ঢাকায় ফিরে আসি। তোমাকে ধানমণ্ডির বাসায় রেখে আসতে গিয়ে আমি কঠিন
সময়ের মুখোমুখি হয়েছি।। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জুলাই মাসের দিকে তোমার মা এ জগৎ ছেড়ে
চলে গেছেন। সে খবর আমি তোমাকে জানাতে পারিনি। জানানোর মতো আমার সাহস ছিল না। সে সময়ে
তোমাকে সান্ত্বনা দেয়ার মতাও আমার ছিল না। বাসায় ঢুকে তুমি মা মা বলে বাসার ভেতরে কিচেনের
দিকে এগিয়ে গেলে। আমি ড্রয়িংরুমে তোমার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার দুই চোখ
বেয়ে ঝর ঝর করে পানি ঝরছিল। তার কান্না দেখে আমারও চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম
না।
তুমি কিচেন
থেকে ড্রয়িংরুমে ফিরে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছিলে আর জানতে চাইছিলে মা কোথায়? তখন তোমার বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমিও চুপ, তিনিও চুপ। তুমি ধীরে ধীরে আন্দাজ করছিলে। যে রাতে বাসা ছেড়েছিলে সে রাতে তোমার
মা অসুস্থ ছিলেন। প্রচণ্ড ব্যথায় কাঁতরাচ্ছিলেন আর তোমাকেই ডাকছিলেন। বলছিলেন, আশি, কোথাও যাসনে মা। আমাকে আর কষ্ট দিসনে মা। তুই চলে গেলে আমি মরে
যাবো। সে রাতেই তুমি মাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলে আমার সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে।
তুমি এবার
প্রচণ্ড কান্নায় ভেঙে পড়লে। মাগো মাগো বলে চিৎকার করতে লাগলে। আমি বুঝতে পারছিলাম না
কিভাবে তোমাকে সান্ত্বনা দেবো। তোমাকে ওই অবস্থায় রেখেই আমি নিষ্ঠুরের মতো চলে এসেছিলাম।
আমারও কষ্ট হচ্ছিল, চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। আমার সারা শরীর
কাঁপছিল। আগে থেকেই সবাই জানত আমি ঢাকায় ফিরেছি। শান্তি নগরের বাসায় সবাই অপো করছিল।
আমার ভাইবোন সবাই উপস্থিত। আমার কাঁধে একটি ঝুলানো ব্যাগ ছিল। পরনে ছিল যুদ্ধের পোশাক।
আমার দুই বছরের রনি বলেছিল যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে একটি সাইকেল কিনবে। বিবিজানকে সবার সামনেই
জড়িয়ে ধরে আদর করলাম। তিনি যেন লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইলেন। আমার চুল দাড়ি ও গোঁফের
দিকে তাকালেন। অভ্যাস মতো বললেন, এুনি বাথরুমে যাও, দাড়ি গোঁফ কামাও। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। এখন আর মুক্তিযোদ্ধাগিরি করার
প্রয়োজন নেই। কালই অফিসে যাও, দেখো চাকরি আছে কি না। এক দিনের জন্যেও এই পোশাক
আর পরবে না। আল্লাহই ভালো জানেন, কত দিন গোসল করোনি। ভাইবোন সবাই পা ছুঁয়ে সালাম
করল। নিকট দূরের আত্মীয়স্বজনেরাও বাসায় এলেন। অনেকেই বললেন, আমরা লোকেমুখে আপনার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সেদিন বেগম সাহেবাকে ২০-৩০ জনের খাবার
রান্না করতে হয়েছে।
পরের দিন
প্রেস কাবে যাওয়ার আগে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম। তোমার বাবাকে ড্রয়িংরুমেই পেয়েছিলাম।
মনে হলো, তার মনের জোর একেবারেই শূন্যের কোঠায়। স্ত্রী বিয়োগের বেদনা তিনি
আর বইতে পারছেন না। কথা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। চায়ের কাপ হাতে ড্রয়িংরুমে তুমি
আসার আগেই তিনি বললেন, বাবা আমার মেয়েটার এখন কী হবে। তুমি আমাকে পথ দেখাও।
আমি আর ক’দিন বাঁচব? মেয়েটার একটা সুরাহা দেখে না গেলে আমার দোজখেও ঠিকানা
হবে না। আমার দুই হাত চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করে দাও। তুমি ছাড়া এ জগতে ওর আর কেউ নেই। চার দিকে
ওর শুধু বদনাম। কেউ এ মেয়েকে বিয়ে করবে না। আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারি না। ও নিজে কিভাবে
মুখ দেখাবে আমি ভেবে পাচ্ছি না। আমার বাড়ির লোভে বহু বড় বড় মুক্তিযোদ্ধা ওকে বিয়ে করতে
চায়। বাড়ির চাকর হওয়ার যোগ্য নয় এমন ছেলেরা ক’দিন পরেই বাড়ি এসে ঝামেলা পাকাবে।
এমন সময় তুমি এসে পড়ায় তিনি মুখ বন্ধ করে চুপ হয়ে গেলেন।
তুমি বললে, বাবা আমাকে নিয়ে তুমি অত চিন্তা করো না। মুক্তিযুদ্ধ করেছি দেশের জন্যে। দেশের
মানুষ যদি বদনাম করে করুক। দেখি না, দেশ এখন কোন দিকে যায়। তুমি ভাবছ
আমাকে নিয়ে, আর আমি ভাবছি দেশকে নিয়ে। সোনার বাংলা গড়ব বলেই তো দেশ স্বাধীন
করেছি। অনেক বড় কাজ করেছিস মা, এমন বড় কাজ আর হয় না। কিন্তু তুই তো মেয়ে মানুষ।
সংসার তো করতেই হবে। সংসার ধর্মকর্ম দুটোই। আমি তোকে বিয়ে দিয়েই মরতে চাই। বেশি দিন
বাঁচবনারে মা। তুই একা কেমন করে থাকবিরে মা। এরশাদ যদি তোর দায়িত্ব নেয় আমি শান্তিতে
মরতে পারব। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। কিছু বলব তেমন সাহস আমার ছিল না।
তুমি খালুজানকে
ধমক দিয়ে বলে উঠলে, বাবা তুমি পাগলামি করলে আমি আর এখানে থাকব না। তুমি
শান্তিতে থাকো, এসব নিয়ে একেবারেই ভেবো না। এরশাদকে তুমি অস্বস্তিতে ফেলো না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাকে নিয়ে সে জ্বালাতন সহ্য করেছে। ও না থাকলে আমি বেঁচে ফিরে আসতে
পারতাম না। তুমি তো জানো ও বিবাহিত। সে তার স্ত্রীকে সীমাহীন ভালোবাসে। সে তোকেও ভালোবাসে।
ভালো তো
বাসবেই, সে আমার পরম বন্ধু। জগতের সবাই জানে সে আমার বন্ধু। আয়েশা, দেশকে ভালোবেসে আমরা অনেকটা পথ, অনেকগুলো বছর পার করে এসেছি।
তুমি ছিলে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীা। সে পরীায় তুমি আমাকে পাশ করিয়ে দিয়েছ। তুমি
বহু আগেই বলেছ তোমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তোমার মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। যেমন বাংলাদেশ
আমরা চেয়েছিলাম তা আর হবে কি না জানি না।
আমাদের
শরম চলে গেছে। কথায় কথায় বলি ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। দুই লাখ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছেন।
হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। এসব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।
পুরো জাতিটাই মিথ্যার বেসাতি করে চলেছে। শহীদ আর বীরাঙ্গনাদের নিয়ে ব্যবসা চলছে। লাখ
লাখ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে।
আমরা ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে কত কথা বলেছি। এখন সে রকম ২২ পরিবারকে কিনতে পারে ২২ শ’ পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্যই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি।
ওরাই দেশ চালায় রাজনৈতিক দল চালায়। যে যত বেশি কর ফাঁকি দিতে পেরেছে সেই তত ধনী হতে
পেরেছে। দেশটা এখন মুরুব্বিহীন এক সুন্দরী নারী বা সম্পদে পরিণত হয়েছে। যে যেভাবে পারছে
লুটেপুটে খাচ্ছে। দেশের আব্রু নিয়ে চার দিকে টানাটানি চলছে। এরাই সুযোগ পেলেই কোরাসে
সুর তুলে গাইতে থাকে ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’। এদের লাজ লজ্জা নেই, মা-বোন নেই। তাই নিজের মাতৃভূমির ইজ্জত নিয়ে টানাটানি
করছে। এরাই আবার চেতনার কথা বলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গালাগালি করে। জাতির মহান নেতা, স্থপতি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক শহীদ জিয়াকে দলবেঁধে গালাগাল করে।
এ ব্যাপারে দলগুলোর ভেতর সীমাহীন প্রতিযোগিতা। ৪৩ বছরে এ দেশের রাজনীতিকেরা কম ধনী
হননি। যেকোনোভাবেই যে কেউই একবার এমপি হতে পারলে চৌদ্দ গোষ্ঠীর ব্যবস্থা হয়ে যায়।
তোমার
আমার দুর্ভোগ্য আমরা এখনো জীবিত আছি এমন বাংলাদেশকে দেখার জন্যে। আমি ভেবেছিলাম সবকিছু
এক দিন ঠিক হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত তোমার কথাই সত্য হলো। দেশের কিছুই হলো না। কোটি লোক
এখনো নিয়মিত চিকিৎসা পায় না, সবার ঘরে শিা প্রবেশ করেনি, বেকারত্বের চিৎকার আজ ঘরে ঘরে। নেতাদের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজনের বিদেশে লেখাপড়া না করলে চলে না। দেশপ্রেমিকের রাজনীতি আজ কসাই
খানায় নিয়মিত জবাই হচ্ছে। সৎ রাজনীতির চিৎকারে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস আজ কম্পিত। বাংলাদেশ
আজ দু’টি দেশ। একটি বাংলা, অপরটি বাংলাদেশ। জাতি আজ দু’টি, একটি বাঙালি, অপরটি বাংলাদেশী। একদল পাকিস্তান বা চীনের প,ে আরেক দল ভারত আর রাশিয়ার প।ে রাজনীতিকেরা কথায় বলে ফেলেন, দেশে এখন দুইপ। স্বাধীনতার প শক্তি আর স্বাধীনতার বিপ শক্তি। দেশের মানুষকে
ভাগ করার জন্যে রাজনীতিবিদেরা উঠেপড়ে লেগেছেন। শুধু রাজনীতির হীন স্বার্থে এমন চরম
বিপর্যয় তারা ডেকে এনেছেন।
অনেকেই
বলেন, দেশকে আজ এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে ভারত। আবার অনেকে বলেন, পাকিস্তানের চরেরা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভারত এখন যা করছে তাকে আমি সঠিক মনে
করি। ’৭১ সালে তারা আমাদের জন্য পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেছে, তাদের হাজার হাজার সৈন্য মারা গেছে, সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আমাদের
ওপর মুরুব্বিয়ানা করার তাদের ন্যায্য অধিকার আছে। আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সবই আজ তাদেরই দান। এ ছাড়া ভারত আমাদের
বৃহৎ প্রতিবেশী। চীনের সাথে টেক্কা দেয়ার মতা রাখে। এক তুবড়িতে ’৭১ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে। ভারত তো আশপাশের সব দেশের মুরুব্বি। বাংলাদেশের
মুরুব্বি হতে আপত্তি কোথায়। শুনেছি, ভারতের নেতারা ঘরোয়া বৈঠকে বলে
থাকেন, ’৭১ সালে বাংলাদেশ বানাতে তাদের যে খরচ হয়েছে তা
আজো উঠে আসেনি। খরচ পুষিয়ে দেয়ার জন্য মুজিবনগর সরকার একটি গোপন চুক্তি করেছিল বলে
জোর গুজব রয়েছে। ভারত নাকি সে চুক্তির ষোলআনা বাস্তবায়ন চায়। সে চুক্তিটা কী, তা ভারতের প্রকাশ করা উচিত এবং বাংলাদেশ সরকারের তা বাস্তবায়ন করা দরকার।
আয়েশা, আমি জানি তোমার বেদনার কোনো শেষ নেই। সীমাহীন বেদনা সহ্য করার জন্যেই তুমি
এখনো বেঁচে আছো। তরুণদের কথা শুনে তোমার হয়তো আরো বেশি কষ্ট হয়। ওরা তো জানে না, মুক্তিযুদ্ধ কী ছিল। ওদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ শুধুই কবিতা বা গান। রঙ তুলির ছবি।
বুকফাটা কান্নার একটি ডকুমেন্টারি। ওদের কাছে সবই কল্পনা, রঙিন ক্যানভাস। ওদের তুমি মা করে দাও। কারণ ওরা এখনো বাপ-দাদার বায়াদলিল জানে
না। ৪৩ বছরেও আমরা তাদের ভালো করে জানাতে পারিনি আমাদের পূর্ব পুরুষের কথা, ইংরেজের ১৯০ বছরের শোষণের কথা, ুদিরাম আর শের আলী খানের কথা।
তাই আজ দেশের এমন অবস্থা হয়েছে। ভারতকে ভালো করে তার পাওনা বুঝে নিতে দাও। মনে রাখতে
হবে সবকিছুরই একটা হিসাব আছে। ভারতের স্বার্থ তোমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে। ভারত পাকিস্তান
ভেঙেছে তোমাকে প্রিয়তম প্রতিবেশী হিসেবে পাওয়ার জন্য।
এরশাদ মজুমদার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন