শিশুদের হাতে খেলনা তুলে দিতে কে না ভালোবাসে? পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই শিশুদের হাতে আদর করে খেলনা পুতুল, গাড়ি, ঝুমঝুমি, বাঁশি, সাইকেল ইত্যাদি তুলে দেয়া হয়। বাবা-মা, ভাই-বোন, মামা-চাচা সবাই এ কাজটি করেন। তবে এশীয় দেশগুলোতে শিশুর হাতে খেলনা দেবার ঐতিহ্য ও প্রবণতা বেশ জোরালো বলা যায়। কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি সংস্থার পরিসংখ্যানে বলা হয়েছিল যে, পুতুল খেলায় আগ্রহী শিশুরা নাকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুদ্ধিতে দুর্বল হয়। তবে এতে কোনও অভিভাবক কিংবা ভাই-বোন, মামা-চাচা শিশুদের হাতে পুতুলের মতো খেলনা তুলে দিতে পিছপা হয়েছেন বলে মনে হয়নি। আর ওই পরিসংখ্যানের ফলে পৃথিবীর কোথাও শিশুদের খেলনার বেচাকেনা কমে গেছে এমনটাও শোনা যায়নি। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সবদেশে শিশুর হাতে খেলনা তুলে দেবার প্রবণতা এতটাই বেশি যে, উল্লেখিত পরিসংখ্যানটির প্রতি গুরুত্ব দেবার কোনও আগ্রহই সৃষ্টি হয়নি। তবে গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ নেশন শিশুদের খেলনা সম্পর্কে সত্যিই একটি উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ খবর ছাপিয়েছে। পত্রিকাটি পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ইএসডিও) এর সার্ভে রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানায় যে, আমাদের দেশের মার্কেটে যেসব খেলনা পণ্য বিক্রি হয় তার ৯৭ শতাংশই উচ্চশক্তির বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে প্রস্তুত। এগুলোতে শিশুদের জন্য যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে, তেমনই মারাত্মক রোগ-ব্যাধিও ছড়াচ্ছে।
সার্ভে রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়, প্লাসটিক জাতীয় পদার্থে তৈরি এসব শিশু খেলনায় বিষাক্ত রাসায়নিক ছাড়াও পাওয়া গেছে সিসা, ব্রোমাইন, কেডমিয়াম, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি। শিশুরা এসব খেলনার সংস্পর্শে নানারকম ভাইরাস রোগসহ চর্মরোগ, ক্যান্সার, কিডনিরোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ, হৃদরোগ, ব্রেইন টিউমার এবং দৈহিক বৃদ্ধিজনিত মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, স্থানীয়ভাবে তৈরি ও আমদানিকৃত খেলনা ইএসডিও এবং অন্য একটি বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে বেশিরভাগে ৮৩০৫ দশমিক ৮ পিপিএম সিসা; ৩৯২৩ পিপিএম ব্রোমাইন; ৪৯০ দশমিক ৫ পিপিএম কেডমিয়াম এবং ২৫০২ দশমিক ২ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। আর এ মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি। উল্লেখ্য, ইউরোপের দেশগুলোতে সিসা ৬৫ দশমিক ৫ পিপিএম, ব্রোমাইন ৭৫ পিপিএম, কেডমিয়াম ২০ পিপিএম এবং ক্রোমিয়াম ২৭ দশমিক ৫ পিপিএম মাত্র শিশুদের খেলনায় ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। শিশুদের খেলনা আমদানি কিংবা স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয় না। আর এ মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকের বিষ অভিভাবক ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা শিশুদের হাতে তুলে দেন সানন্দেই। কিন্তু এসব খেলনার বিষয়য়ে প্রিয় শিশুটির হাত থেকে পেটে গিয়ে নীরবে ঘাতক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয় সেদিকে কারোর ভ্রƒক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। ট্র্যাজেডি এখানেই। গ্রাম-গঞ্জ কিংবা শহরের অনেক মা-ই ভুলিয়ে রাখবার জন্য শিশুর মুখে চুষনি তুলে দেন। কিন্তু এ চুষনিতে যে ঘাতক বিষয় রয়েছে সেদিকে খেয়াল ক’জন মায়ের আছে?
শিশুরা শুধু আমাদের বুকের ধনই নয়। প্রাণের চেয়ে প্রিয়জনই নয়। শিশুরা আমাদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। শুধু দেশ নয়, সমগ্র পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে আজকের শিশুরাই সিংহভাগ অবদান রাখবে। এ শিশুদের সাময়িক হাসি দেখবার জন্য তাদের হাতে বিষাক্ত খেলনা তুলে দিয়ে মানবসভ্যতাকে যেন বিপন্ন না করে তুলি সে বিষয়ে এখনই আমাদের সজাগ হতে হবে। প্রয়োজনে বিষাক্ত রাসায়নিকে প্রস্তুত শিশু খেলনার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সচেতন বিশ্ববাসীকে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন