গত ৫ জানুয়ারি হয়ে গেল বাংলাদেশ ১০ম
জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যদিও ঐ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়ন
রয়েছে। ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মাত্র ১২টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ
করেছিল ঐ নির্বাচনে। মহাজোট তাদের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করলেও দেশের অন্যতম
বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক,
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো
এ নির্বাচন মেনে নেয়নি। তারা পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। এ নিয়ে রাজনৈতিক
দলগুলো বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামসহ
কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বর্তমান সরকারকে অবৈধ সরকার বলে আখ্যায়িত করছে।
আবার যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন তারা সরকারে গিয়ে দেশের উন্নয়ন
কর্মকা-ে ইতিমধ্যে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে হাজারো
জল্পনা-কল্পনা থাকলেও নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের প্রায় সকল
উপজেলা নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করেছেন। সারা দেশে এখন বইছে উপজেলা নির্বাচনী হাওয়া।
বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গেলেও তারা স্থানীয়
সরকার বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যাচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দল,
সুশীল সমাজসহ সচেতন মহলে বিভিন্ন
জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। সর্বশেষ সব দলের প্রার্থীদের সমন্বিত অংশগ্রহণেই হচ্ছে আসন্ন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি আমরা চাই বা কেমন
জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে এ নিয়েও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সারা দেশে।
গত ৯ম সংসদের অনেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনেক মন্ত্রী-এমপিদের অবৈধ সম্পদের সন্ধানে নেমেছে দুদক।
বিশেষ করে গত মহাজোট সরকারের সময় পদ্মাসেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি
কেলংকারির কারণে সরকারকে অনেক সমালোচনায় পড়তে হয়েছিল। সরকার সেই ধকল এখনও কাটিয়ে
উঠতে পারছে না। দুর্নীতি করতে গিয়ে অনেকে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। শুধু তাই নয়,
গত নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতও
হয়েছে অনেকে। সন্ত্রাস আর দুর্নীতির কারণে অনেককে দল থেকে বহিষ্কার হতে হয়েছে। এখন
আগামী উপজেলা নির্বাচন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাদের লক্ষ্য উপজেলা নির্বাচনের
ফলাফল তাদের পক্ষেই যাবে বেশির ভাগ। কিন্তু জনতার প্রত্যাশা হলো আগামী উপজেলা
পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান
পদে যারা নির্বাচিত হবেন তারা হবেন সৎ, শিক্ষিত এবং কলুষমুক্ত জনপ্রতিনিধি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফলও
আমরা পেতে শুরু করেছি। তবে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে অনেক সংসদ সদস্য,
মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের
কম্পিউটার, ইন্টারনেট,
অনলাইন সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।
এখানে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যারা ডিজিটাল
বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করবে তাদেরই যদি এ সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকে তাহলে কি করে
এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
দেশের উন্নয়ন,
অগ্রগতি,
সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে
স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব অনেক। তাই উপজেলা পরিষদের যারা চেয়ারম্যান,
ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন
তাদের উন্নয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন,
কর্মসংস্থান সৃষ্টি,
বেকারত্ব নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ ও
বাস্তবায়নে অভিজ্ঞ হতে হবে। এ কারণে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আগামী উপজেলা
নির্বাচনে যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে, তাদের হতে হবে সৎ, অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত। তাহলে এলাকার সামাজিক উন্নয়ন সহজ হবে।
আমাদের দেশে ধূমপান বিরোধী আইন থাকলেও খোদ
জনপ্রতিনিধিরা সেই আইন মানছে না। ইতোমধ্যে একজন মন্ত্রী জনসম্মুখে ধূমপান করে
ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছেন। যদি জনপ্রতিনিধিরা নিজেরাই ধূমপান,
মাদক সেবনের সাথে জড়িত থাকেন
তাহলে তারা সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবেন?
অনেক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেই
মাদক সেবন ও ব্যবসার অভিযোগ এ বাংলাদেশেই আছে।
কথায় আছে শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। একটি শিক্ষিত জাতি গড়ার
জন্য সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া দরকার। কিন্তু লক্ষ্যণীয়
বিষয় যে, আমাদের দেশে
বিভিন্ন নির্বাচনে পেশীশক্তি, অর্থের
প্রভাবের কারণে অশিক্ষিত জনপ্রতিনিধিরা এক একটি নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব নেন। এরা
অনেকেই অজ্ঞতার কারণে কোথায় প্রকল্প বা কোথা থেকে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ আনতে হয় সে
বিষয়টি জানে না। সুতরাং ঐ এলাকা উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে যায়। অপরদিকে জনপ্রতিনিধি সেবার
পরিবর্তে ব্যবসার জন্য রাজনীতি ও নির্বাচন করে। নির্বাচিত হয়ে সে জনসেবার কথা
ভাবেই না। কিভাবে জনগণের কাছ থেকে বিভিন্ন পন্থায় টাকা অর্জন করা যায়,
কিভাবে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা
যায় এই নিয়ে ব্যস্ত থাকে সারাটা সময়। এতে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হয় উন্নয়ন,
অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার
রক্ষা থেকে। তবে আমাদের দেশে সৎ, শিক্ষিত,
যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের
জন্য সুষ্ঠু কোন নীতিমালা নেই। একজন জনপ্রতিনিধি হতে হলে তার যোগ্যতারও কোন
মাপমাঠি সরকারিভাবে নেই। এই বিষয়টি সরকারি পর্যায়ে নীতিমালার মাধ্যমে সুরাহা হওয়া
উচিত। এছাড়াও ভাল প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে সরকারি কোন প্রচারণা বা দিকনির্দেশনা
নেই। এ ব্যাপারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণকে সচেতন করতে হবে। সমাজ উন্নয়নে কি
ধরনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা দরকার তা জনগণকে বুঝানো উচিত।
শুধু সরকার নয়, এক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক,
সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে
এগিয়ে আসতে হবে। এসব সংগঠনকে দাতাসংস্থা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের
পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। এসব সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত
প্রচার চালাতে হবে। শিক্ষা, শান্তি,
প্রগতির জন্য দরকার সৎ,
শিক্ষিত ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি।
যদি আমাদের দেশে প্রতিটি স্তরে ভাল জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় তাহলে আমাদের সমাজ
হবে কলুষমুক্ত। সমাজের অন্ধকার কেটে আস্তে আস্তে আলোকিত হবে আমাদের বাংলাদেশ।
সবক্ষেত্রে সফলতা আসবে আমাদের। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ হবে একটি আলোকিত মানচিত্র।
তাই আসুন আমরা শপথ নেই, দেশের
স্বার্থে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সৎ, শিক্ষিত ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করি।
এসএম জহিরুল ইসলাম
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন