রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ব্যাংক ডাকাতি


কিশোরগঞ্জে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ডাকাতির ঘটনা ভুলতে না ভুলতেই আবারও একই পদ্ধতিতে ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে। এবারের ঘটনাস্থল বগুড়ার আদমদীঘি। সেখানেও সোনালী ব্যাংক থেকেই সুড়ঙ্গ খুঁড়ে টাকা লুটে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। টাকার পরিমাণ অবশ্য অনেক কম৩২ লাখ ৫১ হাজার। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়নের জামানতের অর্থ জমা নেয়ার জন্য সরকারের নির্দেশে শনিবার সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা খোলা রাখা হয়েছিল। বিকালে ভল্ট খুলতে গিয়ে কর্মকর্তারা দেখতে পেয়েছেন, ভল্টটি ভাঙা। তারপর খোঁজ শুরু করেছিলেন তারা। দেখেছেন, তিনতলা ব্যাংক ভবনের নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। সুড়ঙ্গটি শেষ হয়েছে একটি আসবাবপত্রের দোকানে। অর্থাৎ ওই দোকানের নিচ দিয়ে প্রায় ২০ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল। টাকাও নেয়া হয়েছে সুড়ঙ্গ দিয়েই। তাড়াহুড়ো বা অন্য কোনো কারণে ডাকাতরা অবশ্য সব টাকা নিতে পারেনি। সুড়ঙ্গের পথে পাওয়া গেছে আট লাখ ৭১ হাজার টাকা। পুলিশ এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধারণা, বন্ধের দিন থাকায় ডাকাতরা হয়তো শুক্রবার বা তার আগের দিন সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শেষ করে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা নিয়ে গেছে। পুলিশ যথারীতি ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী এবং আসবাবপত্রের দোকান মালিকসহ চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে জনমনে ছড়িয়ে পড়েছে ভীতি ও আতঙ্ক। কারণ, নিরাপত্তার জন্যই মানুষ বাসায় না রেখে ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। সেই ব্যাংকও যদি নিরাপদ না হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? প্রশ্নটি অকারণে ওঠেনি। মাত্র মাস দেড়েক আগে, গত ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ডাকাতি করা হয়েছিল। সে টাকা উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেফতার করা হয়েছে সত্য কিন্তু তার চেয়ে বড় সত্য হলো, সোনালী ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান একটি ব্যাংক থেকেও এভাবে ডাকাতি করা সম্ভব!
মুখে অনেক লম্বা কথা বললেও এদেশের কর্তাব্যক্তিরা যে জনগণের স্বার্থের বিষয়টিকে মোটেও গুরুত্ব দেন না বগুড়ার আদমদীঘি শাখা সোনালী ব্যাাংকের ডাকাতি নিঃসন্দেহে তারই আরো একটি বড় প্রমাণ। ঘটনাটির মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এসব নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। একটি বিষয় হিসেবে এসেছে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কর্মকা-। দশ-পনেরো ফুট নিচে নয়, মাত্র চার-পাঁচ ফুট নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করা হয়েছে বলেই কিছু না কিছু শব্দ হওয়ার এবং কোনো না কোনো সময় তা মানুষের কানেও যাওয়ার কথা। কিন্তু কেউই, এমনকি ব্যাংকেরও কেউ তা শোনেনি বা এ ব্যাপারে সামান্য টেরও পায়নি এটা সহজে বিশ্বাস করা যায় না। পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে ব্যাংকের নিরাপত্তার দিকটি। টাকা যেহেতু জনগণের সেহেতু প্রতিটি ব্যাংকেরই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর হওয়ার কথা। কিন্তু কিশোরগঞ্জের মতো আদমদীঘি শাখা সোনালী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, কর্তাব্যক্তিরা এমনকি ভল্টের নিরাপত্তা বিধানেরও ব্যবস্থা নেননি। এমন একটি ভল্টেই তারা টাকা রেখেছেন যা ডাকাতদের পক্ষে সহজেই ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়েছে। অথচ ভল্ট এমন হওয়া উচিত যা সাধারণ কোনো মানুষ ভাঙতে পারবে না। এজন্যই ভল্টে এবং ভল্টে টাকা রাখার নিয়ম হয়েছে। না হলে তো মেঝের ওপরও টাকা রাখা হতো সিন্দুক, আলমারি বা ভল্টের প্রয়োজন পড়তো না। আমরা মনে করি না যে, ভল্টের বিষয়টিকে অপরাধ ও উদাসীনতা ছাড়া আর কিছু বলার সুযোগ থাকতে পারে। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সরকারের উচিত একটি বিষয়ে তদন্ত করা ব্যাংকের কয়েকজন জড়িত বলে যে আলোচনা চলছে তা সত্য কি না। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আসবাবপত্রের দোকান মালিককেও ছাড় দেয়া চলবে না। তিনি জেনেশুনে ডাকাতদের থাকতে দিয়েছিলেন কি না নাকি নিজেও জড়িত ছিলেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা প্রসঙ্গক্রমে প্রতিটি ব্যাংকেরই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করার জন্য জোর দাবি জানাই। ভবন ভাড়া নেয়ার সময়ই সংস্কার ও নতুন নির্মাণসহ এমন আয়োজন করা দরকার যাতে কারো পক্ষে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বা অন্য কোনো পন্থায় এত সহজে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে পড়া ও ডাকাতি করা সম্ভব না হয়। কোনো ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা যাতে দায়িত্ব পালনে অবহেলা না করতে পারেন সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা এবং পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ ও আনসারদের প্রতিও ঘনিষ্ঠ নজরদারি রাখতে হবে। সব মিলিয়েই আমরা চাই, দেশের আর কোথাও আর কোনো ব্যাংকে যেন এ ধরনের ডাকাতি আর ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হোক অনতিবিলম্বে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads