‘বন্ধুপ্রতিম’ প্রতিবেশী ভারত শুরু থেকেই বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ সরকার তা বুঝতে না পারলেও দেশের মানুষের তা উপলব্ধি করতে যে কোনো অসুবিধা হয়নি। ২০০৯ সালেই তা বোঝা গিয়েছিল। ঐ বছর একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রতিভাবান মধ্যসোপান ও সিনিয়র কর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে দেশে যে স্থিতিহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল এবং সরকারের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল ভারতের একটি টোপ অসহায় সরকারকে তখন চাঙ্গা করতে মৃত সঞ্জীবনী সুধার ভূমিকা পালন করেছিল। দিল্লী তখন বলেছিল যে, হাসিনা সরকারকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনবোধে ভারত সরকার বাংলাদেশে সেনা হস্তক্ষেপ করবে। ব্যস, আর যায় কোথায়? এরপর একটির পর একটি দাবি আসতে লাগলো। প্রথমত, স্থল ও নৌ ট্রানজিট, তারপর করিডোর, বন্দর ব্যবহার, কয়লা-গ্যাস সুবিধা প্রভৃতি। বিনা চুক্তিতে, বিনা শর্তে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তা মেনে নেয়া শুরু হলো। রাস্তাঘাটের ক্যাপাসিটি দেখা হলো না, নদীর উপর তৈরি সেতুর ভারবহন ক্ষমতা বিবেচনায় আসলো না। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক চার্জ মওকুফ করে দিয়ে ভারতীয় মালবাহী জাহাজ এসে জেটিতে পণ্য খালাস শুরু করলো আর সেই পণ্য ও ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে ৫৪ চাকার ভারি যানবাহনগুলো যখন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বুকের উপর দিয়ে চলতে শুরু করলো, তখন মানুষ বিস্ময়ের সাথে দেখলো তাদের দেশের গাড়িগুলো গতি হারিয়ে ফেলেছে। আশুগঞ্জের সেতু যখন ভারতীয় যানবাহন বহনে অক্ষম হয়ে পড়লো, তখন সেখানে নদীতে বাঁধ দিয়ে তার উপর দিয়ে ভারতীয় গাড়ি পার করা হচ্ছে। তাদের এজন্য কোনও মাশুল দিতে হয়নি। বলা হলো, ভারতের কাছে আমরা ঋণী। তাদের ফ্রি সার্ভিস দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা বুক উজাড় করে তাদের সার্ভিস দিতে থাকলাম আর মানুষকে আশ্বাস দিতে থাকলাম যে, ভারতের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের ফলে সৃষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত জটিলতার অবসান হবে। ছিটমহল বণ্টন এবং সীমান্ত চুক্তির সুরাহা হবে এবং সীমান্তবাসীরা স্বাধীনতার স্বাদ পাবে, ১৯৭৩ সালে সম্পদিত মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়িত হবে, টিপাইমুখ প্রকল্পের বাস্তবায়ন বন্ধ হবে এবং তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদিত হবে। এই আশায় বাংলাদেশ সবকিছু দিয়ে দিল। কিন্তু পেল না কিছুই। বাংলাদেশী মন্ত্রীরা দিনক্ষণ সময় বেঁধে দিয়ে তিস্তা চুক্তির ঘোষণা দিলেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এলেন। সাথে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আসার কথা ছিল। তিনি এলেন না। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তথাপিও বললেন, তিস্তা চুক্তি হবে। কিন্তু হলো না। পরবর্তীকালে দিল্লীশ্বরও বললেন, হবে। কিন্তু হলো না। আশায় আশায় আমরা সব দিয়ে দিলাম। হাতের পাঁচও রাখলাম না। এতে অবশ্য একটা কাজ হয়েছে। সারা দুনিয়া সমর্থন না করলেও ভোটারবিহীন একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনে ভারত বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং তাদের পুনরায় ক্ষমতায় আরোহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের নির্মূল করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমে সহায়তা করেছে। এর বিনিময়ে সব পাওয়ার পর এখন তারা আসল কথায় এসেছেন। মিয়ানমারে বিমসটেক সম্মেলনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের সাথে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন সম্ভবপর নয় এবং সীমান্ত চুক্তিও তারা করতে পারবেন না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিনা প্রতিবাদে তা মেনে নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।
মনমোহন সিং-এর এই সিদ্ধান্তকে অনেকে কূটনৈতিক প্রতারণা বলে অভিহিত করেছেন। আবার কেউ কেউ এর সাথে আন্তর্জাতিক প্রতারণারও তুলনা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে আলোচনা হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু হয়নি। এত বড় প্রতারণার পরও কোন কোন মন্ত্রী কানেকটিভিটির নামে ভারতকে ট্রানজিট-করিডোর দেয়ার অনুকূলে বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টাও শুরু করেছেন।
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। নেপালের হিমালয় পর্বতে ২৩১৮৯ ফুট উঁচুতে কাংসি হিমবাহে সিকিমের চুনথাং-এর কাছাকাছি স্থানে তিস্তা নদীর জন্ম। নদীটি প্রথমে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দার্জিলিং-এর পূর্বে সিওয়ালিং পর্বতে বাধাগ্রস্ত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এসে কালিম্পং এবং দার্জিলিং সড়কের সংযোগস্থলের নিকটে তার প্রধান শাখা রংগীট নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। জলপাইগুড়ি থেকে তিস্তা দক্ষিণ দিকে এসে করতোয়া, পুনর্ভবা এবং আত্রাই এই তিনটি চ্যানেলে বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়। সম্ভবত এজন্যই নদীটি প্রথমে ত্রিস্রোতা ও পরে অপভ্রংশ হয়ে তিস্তা নাম ধারণ করে। হিন্দু মাইথলজি অনুযায়ী দেবী পার্বতীর স্তন থেকে এর জন্ম। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩০৯ কিলোমিটার এবং এর মধ্যে ১১৫ কিলোমিটারই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
তিস্তার বৃহদাংশ নেপালের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং নদীটি সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি হয়ে রংপুরের ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্রে এসে পড়েছে। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা ও জৈববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ব্যবস্থায় তিস্তার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি লোক এর সাথে সরাসরি জড়িত এবং এ প্রেক্ষিতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে আমাদের বঞ্চিত হবার অর্থ হচ্ছে আমার জীবন জীবিকা থেকে বঞ্চিত হওয়া। এর পরিণাম ভয়াবহ। এর ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের গাছপালা, ফসল-ফসলাদি পানি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে এবং লোনা পানি ও আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব ঘটবে। বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ পানি নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পÑ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটির বাস্তবায়নও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তিস্তা বাঁধ প্রকল্পটির ইতিহাস বাংলাদেশে অত্যন্ত দীর্ঘ। তিস্তা নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ধারণা বিভাগ পূর্বকাল থেকেই ১৯৫৩ সালের দিকে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে প্রথমবারের ন্যায়। এরপর একটি সমীক্ষা পরিচালিত হয়। এর ভিত্তিতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার লক্ষ্যে একটি বাঁধ দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৬টি জেলার ৩৫টি উপজেলার ৭,৪৮,৯৯০ হেক্টর তথা প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ একর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এর প্রথম রিপোর্টটি তৈরি করেন M/s Haigh Zinn & Associates নামক লন্ডনের একটি সংস্থা। ১৯৬০ সালে তারা তাদের রিপোর্ট পেশ করেন। Associated Consulting Engineers নামক পাকিস্তানী একটি সংস্থা একে সহযোগিতা করে এবং এর প্রধান প্রকৌশলী জনাব খুররম জা মুরাদের সুপারিশক্রমে তৎকালীন ওয়াপদা প্রকল্পটি আরও নিখুঁত করার জন্য লন্ডনভিত্তিক ইরহহর Binni & Partners নামক একটি সংস্থাকে দ্বিতীয় সমীক্ষা পরিচালনার জন্য নিয়োগ করে। প্রথমোক্ত সংস্থাটি তিস্তার উপর বাঁধ দিয়ে প্রতি সেকেন্ড ২৫৫ ঘনমিটার পানি প্রত্যাহার ও ডাইভার্ট করে সাড়ে ১৮ লাখ একর জমি সেচের আওতায় আনার প্রস্তাব করে। শেষোক্ত সংস্থাটি (বিন্নি এন্ড পার্টনার্স) আরও বিস্তারিত সমীক্ষা চালিয়ে প্রাথমিক ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি হাইড্রলিক ও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন পেশ করে। ১৯৬০ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও ১৯৮০ সাল নাগাদ তিস্তা পাড়ে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ছাড়া অন্য কোনও কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা-সমীক্ষার মধ্যে তা সীমাদ্ধ ছিল। প্রকল্পে বিদেশী অর্থায়নে ভারত কর্তৃক সমস্যা সৃষ্টিই ছিল এর মূল কারণ। আবার এক্ষেত্রে গণদাবির অভাব যেমন ছিল, তেমনি সরকারের আন্তরিকতার অভাবও লক্ষণীয় ছিল। আশা করা গিয়েছিল যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জোরদার হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হয়নি।
প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে রংপুর জেলার রংপুর, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ তারাগঞ্জ; নীলফামারী জেলার নীলফামারী জলঢাকা, সৈয়দপুর, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ; গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্যাপুর, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী; দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর, চিরিরবন্দর, ঘোড়াঘাট, পার্বত্যপুর, খানসামা, ফুলবাড়ী, নবাবগঞ্জ; বগুড়া জেলার বগুড়া, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, গাবতলী, শিবগঞ্জ, কাহালু এবং জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল এবং কালাই উপজেলার ১৮.৫০ লাখ একর জমি অভিগমন প্রক্রিয়ায় সেচ কাজে তিস্তার পানি পেত এবং কোটি কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী এ থেকে উপকৃত হতো।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল তিনটি। এক. অভিগমন পদ্ধতিতে সেচের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি; দুই. বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং তিন পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ। বাংলাদেশকে তিস্তার ন্যায্য পানি থেকে বঞ্চিত করার ভারতীয় সিদ্ধান্ত এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে যেমন বাধার সৃষ্টি করবে, তেমনি তিস্তা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যে অবকাঠামো সৃষ্টি করা হয়েছিল তার সুফল থেকেও আমরা বঞ্চিত হবো। বলাবাহুল্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৪-৯৫ সাল পর্যন্ত তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে যে কাজগুলো করেছে তার ব্যয় ও পরিসর বিরাট।
বহু ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে সওদী ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট এবং আইডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে মোট ১৪৯৮৩.৮৯ মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে ১৯৯৪-৯৫ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়। এই প্রকল্পের অধীনে মোট ১৫০০০ হেক্টর তথা ৩৭,০৫০০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর উপর গড়ে তোলা হয় ৪৪টি গেটবিশিষ্ট ২০১৮ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁধ, ৩৬২ ফুট লম্বা ৮টি বিশিষ্ট একটি ক্যানেল হেড রেগুলেটার, ৪৫৪৩ কিমি লম্বা সেচ খাল, ৫০৪০ কিমি নিষ্কাশন নালা, ৬৯.২০ কিমি প্রকল্প সড়ক, ৯টি ব্রিজ, ২০টি কালভার্ট একটি পাওয়ার হাউস, ২টি ওয়ার্কশপ, ১৬০ কিমি ট্রান্সমিশন লাইন, ১৭টি গুদাম, ৪১৭৪৩ বর্গমিটারের আবসিক এবং ১১২১৩ বর্গমিটারের অফিস ভবন প্রভৃতি।
তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে ভারত আমাদের বঞ্চিত করতে পারে না। জাতিসংঘের Protocol for Transnational water sharing অনুযায়ী আন্তর্জাতিক কোনও নদীর উজানের দেশ ভাটির দেশকে তার পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। আবার ডWorld Trade Organization-এর সদস্য দেশগুলো কর্তৃক স্বীকৃত ও সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন ব্যবস্থা কোনও দেশ গ্রহণ করতে পারে না। এ প্রেক্ষিতে ভারত তিস্তার পানি বণ্টনে অনীহা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক আইন ও সমঝোতা লঙ্ঘন করছে। এর ফলে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টির নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫২.৪৮ অনুপাতে বণ্টনের একটি প্রস্তাব ইতঃপূর্বে উঠেছিল এবং বাংলাদেশের তরফ থেকে শুষ্ক মওসুমে গজলডোবা পয়েন্টে এর প্রবাহকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে এই বণ্টনের মূলনীতি নির্ধারণের দাবি উঠেছিল। আমরা দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে ন্যায্য বণ্টনে এখনো বিশ্বাসী। কিন্তু ভারত চুক্তি সম্পাদনের বিপক্ষে যে ঘোষণা দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের বিষয়টি উত্থাপন করা জরুরি বলে আমরা মনে করি। আমরা আমাদের দেশ ও জনগণের ধ্বংস কামনা করতে পারি না। একইভাবে তিস্তা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যে স্থাপনা তৈরি হয়েছে সেগুলো অকেজো হয়ে থাকুক অথবা ধ্বংস হোক তাও কাম্য হতে পারে না। কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশকে আধিপত্যবাদের হাতে ছেড়ে দিক তা দেশপ্রেমিক বাংলাদেশের মানুষ কামনা করেন না। একই কথা সীমান্ত চুক্তির বেলায়ও প্রযোজ্য। ভারত যদি বাংলাদেশের জীবন-মরণ সমস্যাগুলো সমাধানের পথে না এগোয় তাহলে বাংলাদেশ থেকে তাকে প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করা শ্রেয় বলেই আমি মনে করি। তিস্তার পানির বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তার দাবি যদি বাংলাদেশ ছেড়ে দেয় তাহলে ভারত সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানি থেকে তাকে বঞ্চিত করার সাহস পাবে। এ ব্যাপারে আমি মনে করি, অবিলম্বে Helsinki Ruls on the uses of the waters of Internatanal Rivers, জাতিসংঘের Convention on the law of non-navigational uses of internatonal water courses এবং Berlin Ruls on water Reversএর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী পানি প্রদানে উজানের দেশ ভারতকে বাধ্য করার জন্য জাতিসংঘের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়াও প্রয়োজন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বিষয়টি সুরাহা হবার জন্য আমরা অনেক অপেক্ষা করেছি। এতে যখন কাজ হচ্ছে না, তখন আদালতের শরণাপন্ন হওয়া উভয় পক্ষের জন্য শ্রেয় বলে আমি মনে করি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন