‘জাবিতে খাদক লীগ’ শিরোনামের খবরটি সঙ্গত কারণেই কৌতূহল সৃষ্টি করে। খবরটির বিবরণে উল্লেখ করা হয়, খাবার খেয়ে বিল না দেয়াকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। গত রোববার বেলা আড়াইটার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়, চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ অবস্থায় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান পদত্যাগ করেন। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
ছাত্রলীগের জোরজবরদস্তি কিংবা সন্ত্রাসের ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই তাদের নিয়ে শিরোনাম করা হয়। কিন্তু এতে তাদের টনক নড়ে না। ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগও এদের অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত করার ব্যাপারে ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রশ্রয়েই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পুলিশ প্রশাসনও এদের প্রশ্রয় দিয়ে যায়। ফলে ছাত্রদের সম্ভাবনাময় একটি অংশ ভুল পথের পথিক হয়ে শুধু নিজেদেরই ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে না, সমাজের জন্যও এক বড় আপদ হয়ে উঠছে। এটা আমাদের জন্য এক দুঃখজনক চিত্র। তবে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এবারের খবরটিতে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয়ও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপু গ্রুপের কর্মীরা শহীদ মিনার এলাকায় প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্থাপিত অস্থায়ী খাবারের দোকানে পাঁচ হাজার টাকার খাবার খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যেতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেল প্রতিবাদ জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকের কর্মীরা রাসেল গ্রুপের ওপর চড়াও হলে উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এখানে আশাবাদের বিষয়টি হলো, অন্যায়ের প্রতিবাদ। নিজ দলের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেন সাধারণ সম্পাদক রাসেল। আমরা মনে করি, অন্যায়ের প্রতিবাদ নিজেদের মধ্য থেকেই শুরু হওয়া প্রয়োজন। যেসব নেতা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন তাদের পেছনেই ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকদের দাঁড়ানো প্রয়োজন। এই ফারাকটি উপলব্ধি করতে হবে ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাদেরও। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অনেক সময় দেখা যায় আঞ্চলিকতা, আধিপত্য ও সঙ্কীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে ব্যর্থ হন তারা। ফলে দুর্জনরাও প্রশ্রয় পেয়ে সামনে এগিয়ে যায়। দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে যদি ন্যায় ও সততা প্রাধান্য না পায় তাহলে জাতীয় ক্ষেত্রে তারা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবেন কেমন করে? তাই শুধু জাতীয় স্বার্থে নয়, দলের সাংগঠনিক স্বার্থেও ছাত্রলীগের ন্যায়বান নেতাদের পক্ষাবলম্বন করা এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের কর্তব্য।
আমাদের জাতীয় রাজনীতি এখন এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে, ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব নিয়ে অনেকেই এখন তেমন ভাবেন না। অথচ কোনোভাবেই বিষয়টির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। এখন ছাত্র রাজনীতি যেভাবে, যে মানে গড়ে উঠবে, ভবিষ্যতে তার প্রভাব পড়বে জাতীয় রাজনীতিতে। এই বিষয়টি কি আমাদের জাতীয় রাজনীতিবিদরা অস্বীকার করতে পারবেন? তাহলে ছাত্রদের শুধু আপন স্বার্থে ব্যবহারের বদলে তাদের বিঘোষিত আদর্শের আলোকে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে না কেন? এমন দায়িত্বহীন আচরণের কারণে তাদের কি ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না? বিষয়টি তারা উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন