বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০১৪
আইন শাস্তি ও মানবাধিকার
Posted on ৪:৪৫ PM by Abul Bashar Manik
আইন, শাস্তি ও মানবাধিকার বিষয় হিসেবে ভিন্ন। কিন্তু তিনটি বিষয়ই একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। সুষ্ঠুসমাজ ব্যবস্থাপনা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হয়।এই আইনেরই পরবর্তী পর্যায় হলো শাস্তি। যে সমাজ ব্যবস্থাপনা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইন প্রণীতহয় তারই দাবি অনুসারে সমাজ বিরোধী ও শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। আইনইনিশ্চিত করে কোন অপরাধের জন্য কোন শাস্তি হতে হবে। আইন ও শাস্তির সাথে মানবাধিকারের প্রশ্নটিগভীরভাবে জড়িত। আইন যদি পক্ষপাতদুষ্ট ও বৈষম্যপূর্ণ হয় কিংবা আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমেউদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শাস্তিদান হয় তাহলে সেখানে মানবাধিকার থাকে না, মানবাধিকার লংঘিত হয়।বেদনার বিষয় হলো এই মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে আজ পদে পদে, আইন ও শাস্তিকে অনেক ক্ষেত্রেইব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আইনের নির্দেশ এবং দাবিকে কার্যকরী করার জন্যে শাস্তি বিধানের একটা পদ্ধতি হিসেবে মামলাদায়েরের ব্যবস্থা রয়েছে। মামলায় বাদী ও আসামী পক্ষের বক্তব্য, তথ্য প্রমাণাদি বিবেচনা করে শাস্তিরব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এমনকি অনেক গণতান্ত্রিক দেশেও এই মামলাকে প্রতিপক্ষ দমন ও দলনের মাধ্যমহিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজ আমাদের দেশে মামলার যে হিড়িক পড়ে গেছে তাকে প্রতিপক্ষ দমনও দলনের অস্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ, মামলা, গ্রেফতার এই তিনটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ।অভিযোগের মধ্যে প্রাথমিক বিশ্বাসযোগ্যতা পেলে তা আমলে নিয়ে বিচারের কাজ শুরু হয়।অভিযোগের প্রকৃতি এবং দাবি যদি এমন হয় যে আসামীকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন তাহলে গ্রেফতারকরা হয়। গ্রেফতারের পর জামিনে ছাড়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু যদি এমনটা দেখা যায় যে, গ্রেফতারকরার পর অভিযোগ তালাশ করা হয় এবং মামলা দায়ের হয় কিংবা তদন্ত ছাড়াই আম-অভিযোগে শতশত লোককে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে সেটা আইন ও সুবিচারের লংঘন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলেবিবেচিত হতে পারে। আজ আমাদের দেশে এটাই অহরহ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টা এতই স্পষ্ট যেআসামি, পুলিশ, প্রশাসন, বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইসহ দেশব্যাপী সকলেই এটা জানেন, উপলব্ধিকরেন। এরপরও এই বিষয়টি অব্যাহতভাবে চলতে পারছে। এটা শুধু সীমাহীন বিস্ময়েরই নয় দারুণউদ্বেগের। কারণ কোনো দেশের বিচার ব্যবস্থা যদি এমন নৈরাজ্যের শিকার হয় তাহলে বিচারপ্রার্থীমজলুমের কিংবা অত্যাচারিত মানুষের আশ্রয় আর কোথাও অবশিষ্ট থাকে না। আশার কথা, এইউদ্বেগজনক বিষয়ের বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ হচ্ছে। আমাদের আশা এই প্রতিবাদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতনকরে তুলবে।
একটা বড় বিষয় যেন আমরা ভুলে বসে আছি। আইন ও শাস্তি আসলে অপরাধীকে মাত্র শাস্তি দিবারজন্য নয়, আইন ও শাস্তির বিধান করা হয়েছে মানুষকে অন্যায় ও যুলুমের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য,সমাজকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন যে, ‘হত্যার শাস্তি হত্যা-বিধানেরমধ্যে মানব জাতির জীবন রয়েছে।’ অর্থাৎ হত্যাকারীকে হত্যার শাস্তি দেয়ার বিধানের আসল লক্ষ্যহত্যাকারীকে হত্যা করা নয়, এ ধরনের অপরাধ থেকে মানব জাতিকে রক্ষা। আমাদের আইন ও শাস্তিবিধানের এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। আইন ও শাস্তি বিধানের খোদায়ী এই উদ্দেশ্যকে যদি গ্রহণ করা হয়,তাহলে আইন, শাস্তি ও মানবাধিকার নিয়ে যে সংকটে আমরা পড়েছি তার নিরসন ঘটতে পারে।অভিযোগের আগেই যদি কাউকে গ্রেফতার না করা হয়, কিংবা অভিযোগের প্রাথমিক সার-বত্তাবিবেচনা না করেই যদি কাউকে জেলে পুরা না হয়, জামিন পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আর একটি মামলায়কাউকে জেলে আটকানো না হয়, আম-অভিযোগে গণগ্রেফতার ও গণআসামি করা বন্ধ হয়,রাজনৈতিক কর্মকা-ের মধ্যে সন্ত্রাসের আবিষ্কার যদি না হয়, রাজনৈতিক রিমান্ড যদি পরিহার করা হয়,তাহলে আইন, শাস্তি ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সুস্থতা ফিরে আসতে পারে। এই সুস্থতা সকলেরইচাওয়া হওয়া উচিত।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন