বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০১৪

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব


মহানগরী ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে গ্রাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। খুন, জখম ও নিখোঁজ হবার খবরে সারা দেশের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে নিমজ্জিত। একের পর এক জলজ্যান্ত মানুষ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। নিখোঁজ হলেই আর মিলছে না কারুর খোঁজ। পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী অভিযানের পর অভিযান চালিয়েও নিখোঁজের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি কিংবা হত্যার ঘটনা কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের মতো শহরে একের পর এক ঘটে যাচ্ছে শিশু-কিশোর স্কুলছাত্র অপহরণ ও হত্যা। স্কুল-মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না মা-বাবা কিংবা তাদের অভিভাবকরা। অপহৃত ও নিখোঁজদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে গভীর নলকূপের ৬০/৭০ ফুট নীচে। নদী-পুকুরে ভেসে উঠছে কারুর কারুর গলিত-বিকৃত লাশ। শনাক্ত করা যাচ্ছ না লাশটি কার। অনেকের মাথায়-বুকে বুলেটের আঘাত দেখা যাচ্ছে। অনেককেই বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হচ্ছে। এমনই এক দুঃসহ আতঙ্ক ও দুর্ভাবনার মধ্যে দেশের সাধারণ মানুষ দিনযাপন করছেন।
সারা দেশে পর্যায়ক্রমে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিন পর্যায়ের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে অনেক ঝুটঝামেলার মধ্য দিয়ে। প্রথম পর্যায়ে সহিংসতা তেমন না থাকলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ভয়াবহ সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা। জীবনহানির মতো নির্মম ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে নির্বাচনের দিনে। সামনে আরও ২ পর্যায়ে নির্বাচন রয়েছে। এতেও সহিংসতা ব্যাপক আকারে ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। শুধু নির্বাচনের দিনেই নয়, এর আগের ও পরের দিনগুলোতেও সহিংসতা ঘটছে ব্যাপকভাবে। বাড়িঘর ভাংচুর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা, এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটছে নির্বাচন পরবর্তীতে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে পরস্পরকে দায়ী করার ধারাবাহিক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয় না বললেই চলে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সহিংস ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীনদেরই দায়ী করা হচ্ছে। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও একটি অংশ ক্ষমতাসীনদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে এবং প্রতিপক্ষ দমনে ক্ষমতার অপব্যবহার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এক শ্রেণির পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা চালাবার দুঃসাহসও দেখিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কখনও কখনও বলা হয় যে, পুলিশের পোশাক ও পরিচয় ব্যবহার করে অজ্ঞাত মহল থেকে অপহরণ এবং গুপ্তহত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ?
অবশ্যই আমাদের পুলিশ ও সহযোগী সংস্থাগুলো এতটা অদক্ষ নয়। তারা ইচ্ছে করলে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে অবশ্যই সক্ষম। তবে ক্ষমতাসীনরা তাদের ব্যবহার করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে স্বার্থোদ্ধারে ব্যাপৃত থাকলে পুলিশ ও তাদের সহযোগী সংস্থগুলো অনেকটা অসহায়ত্ব বোধ করে বৈকি। এ প্রবণতা আইন-শৃঙ্খলার পরিপন্থী  এভাবে দেশ চলতে পারে না। ক্ষমতাসীনদের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কর্তব্য পালন করতে হবে সাহসিকতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে। তাহলেই দেশের সাধারণ মানুষ থাকবে তাদের সঙ্গী হয়ে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads