সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৩৬ নেতাকর্মী পদত্যাগ করায় দলটির উপজেলা শাখা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৬৭ জন সদস্যের মধ্যে ৩৬ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী নেতৃবৃন্দের অভিযোগ অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বের দুর্বলতা ও আত্মঘাতী কর্মকা-ের কারণে তাদের সমর্থিত প্রার্থী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন এবং এতে দলের সুনাম চরমভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এই পরাজয়ের দায়ভার নিয়ে তারা একযোগে পদত্যাগ করেন।
নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং আত্মঘাতী কর্মকা-ের স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের তিনডজন নেতার এই পদত্যাগকে আমরা একটি প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা বলে মনে করি। এটি তাদের লজ্জাশীলতারও পরিচায়ক। অনেকের ধারণা, আওয়ামী লীগ করলে অনেকেরই লজ্জার বালাই থাকে না, এই ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, দলটির মধ্যে এখনো অনেক লোক আছেন যাদের মধ্যে লজ্জাশরমের বালাই আছে।
আওয়ামী লীগ একটি পুরাতন দল এবং এ প্রেক্ষিতে দলটির মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী ও পরিপক্বতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অনুশীলন স্পৃহা, রাজনৈতিক শিষ্টাচার, সংযম, দূরদর্শিতা, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা, গণতন্ত্র চর্চা, মানবাধিকারের প্রতি নিষ্ঠা, প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি ন¤্র আচরণ প্রভৃতি গুণাবলীর সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি থাকার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেছে যে, দলটি তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত শুধু এই গুণাবলীই হারায়নি, মিথ্যাচার, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণ, অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, গুম, মানবিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পদদলিতকরণ, রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস প্রভৃতি বিষয়েও বিশ্বের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার এবং জালেম শাসকদেরও হার মানিয়ে গেছে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের বালখিল্যতা সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে। গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদ ও একদলীয় অপশাসন তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে তারা একটি প্রহসনে পরিণত করেছেন। যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালিয়ে তারাই দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেছেন, শত শত লোকের প্রাণহানি ঘটিয়েছেন, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতায় গিয়ে তা বাতিল করে অন্যান্য দলের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বীহীন তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে এমপি নির্বাচিত করিয়েছে এবং বাকি ১৪৬ আসনে মাত্র দশ শতাংশেরও কম ভোটার উপস্থিতির নির্বাচন করে সরকার গঠন করে সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দলটির দুর্নীতি, স্বৈরাচার ও ক্ষমতালিপ্সা এর জন্য দায়ী। এতে সারা বিশ্বে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে দলটির শীর্ষ নেত্রীর ক্ষমতালিপ্সা ও দুর্নীতিগ্রস্ততা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করেছে।
এমতাবস্থায় বিশ্বনাথ উপজেলার পদত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পদাঙ্ক অনুসরণ আওয়ামী লীগের বিবেকসম্পন্ন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা-নেত্রী ও এমপি-মন্ত্রীরা যদি পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন তাহলে দেশ এবং দল উভয়ের সুনাম রক্ষা পাবে বলে আমরা মনে করি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন