শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪

রাজনীতির চালকের আসনে জাতীয়তাবাদী শক্তি


জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তিকে দুর্বল ভাবার সুযোগ নেই। ইতিহাসের নজিরবিহীন দমন-পীড়ন, জেল-জুলুম ও সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতনের পরও জাতীয়তাবাদী শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতির মূলস্রোত। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ স্রোতকে দমিয়ে রাখা হয়েছে মাত্র। প্রতিকূলতা কাটিয়ে যথাসময়ে ঘুরে দাঁড়াবে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তি। তখন পাল্টে যাবে রাজনীতির দৃশ্যপট। পালানোর পথ খুঁজবে স্রোতের বিপরীত রাজনৈতিক শক্তি। আওয়ামী লীগ সব অস্ত্র ব্যবহার করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে, কিন্তু জাতীয়তাবাদী শক্তি এখনো সব কৌশল ব্যবহার করেনি। তাতেই আওয়ামী শিবিরের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। এখন তাদের দাফন-কাফন শুধু বাকি আছে। অন্য দিকে প্রহসন ও তামাশার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টিও রাজনৈতিকভাবে বিলীনের পথে। এরা এখন গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর মাধ্যমে এরা পুরোপুরি হারিয়েছে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তির ভাবমর্যাদা।  

দৃশ্যত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক তিগ্রস্ত দুটি দল। এর ফলে জাতীয়তাবাদী শক্তিই এখন রাজনীতির চালকের আসনে।

স্রোতের প্রতিকূলে থেকে বাইরের শক্তির সাহায্যে নৌকা চালাচ্ছে আওয়ামীশিবির। এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে আওয়ামী লীগের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে। এই নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, মাত্র ১০ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে রাজনীতি করছে আওয়ামীশিবির। তাই আওয়ামী নেতাদের আচরণ এমন বেপরোয়া। তাদের মুখের ভাষা ও শরীরের অঙ্গভঙ্গিতেই বোঝা যায় এরা যে কত দুর্বল রাজনৈতিক শক্তি। কিছু দলবাজ পুলিশের সাহায্য না থাকলে, রাজনীতি তো দূরে থাক; স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করাই তাদের জন্য কঠিন হতো, পালিয়ে তারা আত্মরা করত। কাজেই এই ুদ্র ও দুর্বল শক্তিকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই জাতীয়তাবাদী শক্তির। তাদের এখন মাঠে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আন্দোলনে যে যে জায়গায় ত্রুটি ছিল, তা খুঁজে বেড় করতে হবে; নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে রাজপথে, পুনরুদ্ধার করতে হবে মানুষের ভোটাধিকার। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সরকার।

দুর্বল শক্তিই আক্রমণাত্মক রাজনীতি করে। প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিতে ভয় পায়। এই ভয় থেকেই আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচনের পথে হেঁটেছে এবং শেষপর্যন্ত তা বাস্তবের রূপ দিয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ দুই যুগের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে ইমেজ সৃষ্টি হয়েছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। এই ইমেজ পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব বর্তেছে জাতীয়তাবাদী শক্তির ওপর। তাই পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। তাকাতে হবে সামনের দিকে। নতুন নতুন কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে কাক্সিত ল্েয।

একটি মন্দ কাজ ১০টি ভালো কাজকে তিগ্রস্ত করে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য তেমনি একটি মন্দ কাজ। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হয়তো ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে; কিন্তু হেরেছে বাংলাদেশ। গোটা দুনিয়ায় খবরের শিরোনাম হয়েছে ৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের নির্বাচন। বাংলাদেশের শত্ররা বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করার জন্য এই নির্বাচনকে লুফে নিয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সুনাম ুণœ করতে এই নির্বাচনকে কাজে লাগাবেÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই দেশের স্বার্থে বর্তমান সংসদ নির্বাচন বাতিল করতে হবে। অতি দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করতে হবে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক চাপ অপরিহার্য। সব বিরোধী দলকে ভেদাভেদ ভুলে এক হতে হবে, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তিকে। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামলে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হবে। 

জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহসী ও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে জাতীয়তাবাদী শক্তির ধারক ও বাহক বিএনপিকে। আত্মগোপন থেকে বের হয়ে আসতে হবে বিএনপি নেতাদের। কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় কারাবরণের কৌশল নিতে হবে। এটিকে চলমান আন্দোলনের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে মনে করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিরোধ যখন তুঙ্গে ওঠে, ঠিক তখন নেতৃত্ব প্রকাশের সময়। মানুষের বিপদে যে সামনে এসে দাঁড়ায়, তাকে মানুষ নেতার মর্যাদা দেয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সেই বিভীষিকাময় রাতে নিরীহ মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে নেতারা পালিয়েছিলেন, সেদিন জিয়াউর রহমান মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন; একজন মেজর থেকে তিনি রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন, হয়েছেন কোটি কোটি মানুষের নেতা। তিনি জেল-জুলুম ও জীবনের পরোয়া করেননি। জেল রাজনীতির একটি অংশ, জেল নেতাদের আরেক আবাসন; যারা রাজনীতি করেন, মানুষের জন্য কাজ করেন, এরা জেলকে ভয় করেন না।

মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে আওয়ামী লীগের। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দলবাজ কিছু পুলিশ ছাড়া সরকারের পে আর কোনো শক্তি নেই। একটা ঐক্যবদ্ধ ধাক্কা সামলানোর মতা তাদের নেই, তারা এমন খাদে পড়বে; এখান থেকে ওঠে আসতে তাদের কয়েক যুগ সময় লাগবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

এই সরকারের যারা সহযোগী হবে, তাদেরও পরিণতি হবে করুণ। আওয়ামী লীগের সহযোগী হতে গিয়ে জাতীয় পার্টি আজ বিলীনের পথে। বৃহত্তর রংপুরে নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কর্মী-সমর্থকেরা জাতীয় পার্টি ছেড়ে যোগ দেবে জাতীয়তাবাদী শক্তির মূল স্রোতে। তাতে একক শক্তি হয়ে আবির্ভূত হবে জাতীয়তাবাদী শক্তি। বাংলাদেশের রাজনীতির চালকের আসনে অধিষ্ঠিত হবে তারাই।

প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে যারা নেতৃত্ব দিতে পারেন, এরাই নেতৃত্বের কঠিন পরীায় উত্তীর্ণ হন; ইতিহাস তাদের গলায় নেতৃত্বের মালা পরায়। একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে দেশের চলমান রাজনীতি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমনে সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার নগ্ন কৌশল দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণ দুর্বল করতে চাচ্ছে; যাতে বিরোধী দল কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে। 

কাজেই এ অবস্থায় নেতাদের আত্মগোপন কোনোভাবেই কাক্সিত নয়, কেননা তাতে আন্দোলনের গতি ধরে রেখে রাজনৈতিক ফসল ঘরে তোলা বিরোধী জোটের জন্য নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জ! সরকার আন্দোলন দমাতে চূড়ান্ত কৌশল হিসেবে ন্যক্কারজনক পথের আশ্রয় নেবে; এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুর্বল শক্তি টিকেই থাকে কৌশলের ওপর। এরা সময়-সুযোগ বুঝে রাজনীতিতে অভিনব কৌশল প্রয়োগ করে প্রতিপকে ঘায়েল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। একটার পর একটা কৌশল এরা সৃষ্টি করে রাজনীতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। এতে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তারা উপকৃত হয়। 

আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে হলে দলটিকে রাজনৈতিক চাপে না ফেলে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেই অর্থে চলমান আন্দোলন অস্তিত্ব রার আন্দোলন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা গ্রাম-গঞ্জ-পাড়া-মহল্লায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সাথে বিএনপির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থানের ফলে সরকার এখন কোণঠাসা। একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে এরা শুধু জনগণ থেকেই নয়, গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একতরফা নির্বাচন তাদের করুণ পরিণতি ডেকে আনবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

কাজেই জাতীয়তাবাদী শক্তির ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। চুপ করে ঘরে বসে থাকলে সোনার বাংলা শ্মশানে পরিণত হবে। এমনটি হতে দেয়া যায় না। দেশকে রা করতে হবে বিপর্যয় থেকে। আর এ দায়িত্ব নিতে হবে বিএনপিকে। গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য। ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ ষড়যন্ত্রকারীদের পদচারণা। দেশপ্রেমিকেরা  আজ বিতাড়িত। এভাবে মার খাওয়ার কোনো মানে হতে পারে না। গর্জে উঠতে হবে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে। রুখে দিতে হবে ষড়যন্ত্রকারীদের। জাতীয়তাবাদী শক্তি ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দেশবিরোধী শক্তি পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে, রা পাবে দেশ; জয় হবে জাতীয়তাবাদী শক্তির ।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads