রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

এ কেমন সংবর্ধনা!


রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই। আত্মসমালোচনার কোনো উপলব্ধি নেই। চলছে মন্ত্রী-এমপিদের নির্লজ্জ সংবর্ধনার দৌরাত্ম্য। মন্ত্রী-এমপিদের সংবর্ধনা জানাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ল-ভ- শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। কিন্তু বছরের শুরুতে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের সংবর্ধনার নামে আকস্মিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে সড়কের দু’পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অথচ আমরা জানি, সংবর্ধনার জন্য রাস্তার পাশে শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমন কর্মকা- দ-নীয় অপরাধ। অথচ বিরোধী দলবিহীন ও ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ের দামামা বাজাতে সরকারদলীয় এমপি ও মন্ত্রীরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলেছেন। এসব মন্ত্রী-এমপি আগামীতে দেশ ও জাতির জন্য কি ধরনের কল্যাণ বয়ে আনবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।
গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গতকালও পাবনায় এক মন্ত্রীর সংবর্ধনার জন্য পাঁচ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয় শিক্ষার্থীদের। এ সময় তাদের সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও দেখা গেছে। দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, দুপুরে আমরা খাইনি, খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। এরপরেও স্যাররা আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। এ ঘটনায় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা শিশুদের স্কুলে পাঠিয়েছি পড়তে, রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখতে নয়।’ প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ্য যে, মন্ত্রীর সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দলীয় ব্যানারে প্রায় অর্ধশত তোরণ তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কেন বেআইনিভাবে রাস্তার দু’পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ক্ষমতাসীন দলের নেতা, নয়তো সংসদ সদস্য। তাই এলাকায় মন্ত্রী-এমপি এলে প্রধান শিক্ষকদের ওপর আগে থেকেই রাজনৈতিকভাবে চাপ দেয়া হয়। তাদের আদেশ অমান্য করলে চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। এমন চিত্র থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, ক্ষমতাসীনদের মন-মানসিকতার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সরকার গঠনের পর তাই আমাদের দেখতে হচ্ছে শিশু অধিকার ও মানবাধিকারবিরোধী এসব কর্মকা-।
দশম সংসদ নির্বাচনে কিভাবে এমপি নির্বাচিত হয়েছে, কিভাবে সরকার গঠিত হয়েছে তা দেশের জনগণ জানে। জনগণের ভোট ছাড়াই যারা কৌশলে এমপি বা মন্ত্রী হয়েছেন, তাদের তো কিছুটা চক্ষুলজ্জা থাকার কথা। এমন একটি প্রশ্নবোধক নির্বাচনের পর তারা কি করে যে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে কৃত্রিম সংবর্ধনা গ্রহণ করেন তা ভাবতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ম্যানেজড নির্বাচনের মতো এসব সংবর্ধনাও ম্যানেজড বিষয়। এসব অপসংস্কৃতি গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গণপ্রতিনিধিরা এসব সংবর্ধনা গ্রহণের মাধ্যমে যেন রাজা-প্রজা ব্যবধান তৈরি করতে চান। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এবার তারা যেভাবে গণপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাতে জনগণের ভোটের বালাই তেমন ছিল না। কলা-কৌশলের মাধ্যমে নির্বাচিত এসব প্রতিনিধির গণসংবর্ধনা না নেয়ার মধ্যেই ভালাই রয়েছে। কারণ ভোটবিহীন নির্বাচনে বিজয়ীদের সংবর্ধনা ঢাক যত জোরে বাজবে তা তত বেশি প্রসহনের মতো মনে হবে। তাই সংবর্ধনার এমন ঢাক যত কম বাজবে ততই ভাল। বরং প্রদর্শনমূলক এসব কর্মকা- বাদ দিয়ে এমপি ও মন্ত্রীরা জনগণের কল্যাণে পরিশ্রম করলে, উন্নয়নের কিছু কাজ করলে তাদের লুপ্তপ্রায় ইমেজ কিছুটা হলেও উদ্ধার হতে পারে। আসলে এদেশে যা কিছু উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটেছে তার মূলে রয়েছে পরিশ্রমী জনগণের অবদান। তাই এখন মন্ত্রী-এমপির সংবর্ধনার নামে লাখ লাখ টাকা খরচ ও শিশু-কিশোরদের হাজার-হাজার কর্মঘণ্টা বিনষ্ট না করে বরং দেশের পরিশ্রমী কর্মবীরদের সংবর্ধনা দিলেই সময়ের দাবি পূরণ হয়। মন্ত্রী-এমপিরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads