গত ৫ জানুয়ারি প্রহসন ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও একই ঘরানার কয়েকটি দল ছাড়া ১৮ দলীয় জোটসহ বাকি রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দকেও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে আটকে রেখে এবং রিমান্ডে নিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সঙ্গত কারণেই জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। ফলে ভোটগ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল প্রায় ভোটারবিহীন। অনেক ভোট কেন্দ্রের ব্যালট বাক্সগুলো ছিল একেবারেই শূন্য। কোথাও কোথাও দু’চারটে করে ভোট পড়েছিল মাত্র। ভোটগ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বসে বসে খোশগল্পে মেতেছিলেন। কোথাওবা ঝিমাচ্ছিলেন। তবে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি না দেখে পোলিং ও প্রিজাইডিং অফিসাররা নিজেরাই ব্যালটপেপারে সিল মেরে বাক্স ভরেছেন এমন খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে কাগজে। এছাড়া ক্ষমতাসীনদের ক্যাডাররা পুলিশ পাহারায় সারাদিন নৌকামার্কায় সিল মেরেছেন বলে প্রকাশ। শুধু তাই নয়, সরকার সমর্থকদের অনেকে নাকি একাই হাজার হাজার ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে পুরেছেন। এছাড়া আর তো উপায় ছিল না। অগ্রহণযোগ্য ও তামাসার নির্বাচনে যেখানে ভোটার উপস্থিতি একদমই ছিল না, কোথাও কোথাও ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভোট যেখানে পড়েইনি, সেখানে ঠেলেঠুলে কোনওরকমে ৪০ শতাংশের মতো ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের হিসাবে পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। তাও নির্বাচন অনুষ্ঠানের কয়েকদিন পর কমিশনকে এ ঘোষণা দিতে হয়েছে। এছাড়া ১৫৩ আসনের ভোটারদের বঞ্চিত করে বিনা ভোটে এমপি মনোনীত করে অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করা হয়েছে ইতিহাসে। এমনই এক প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনে একতরফা বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠন করা হয়েছে আমাদের দেশে।
গণতন্ত্রের এ দুর্গতি দেখে দেশবাসী যেমন হতবাক, তেমনই গণতন্ত্রকামী বিশ্ববাসীও বিস্মিত ও বিমূঢ় বৈকি। এমন ভোটারবিহীন এবং রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ ছাড়া পৃথিবীর কোনও দেশে এরকম একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। তাই অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে পদত্যাগ করে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক জোট, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষ যখন অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার তখন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা দম্ভ করে বলছেন, বেগম জিয়াকে আগামী নির্বাচনের জন্য ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার মানে হচ্ছে জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচিতরা জোর করেই আগামী ৫ বছর ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে থাকতে চেষ্টা করবেন। তবে গত ২০ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বল্পসময়ের মধ্যে বেগম জিয়ার আহ্বানে গণসমাবেশে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছিল তা দেখে মনে হয় ক্ষমতাসীনদের দম্ভ অচিরেই ফুটোবেলুনের মতো ফুঁস করে উঠবে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রংপুরসহ সর্বত্র বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে সেøাগানে সেøাগানে আকাশ-বাতাস মুখর করে তোলে। শুধু দলীয় নেতা-কর্মীরাই নন, সাধারণ নারী-পুরুষ এবং তরুণ-তরুণীরাও মিছিলসহকারে এসে ১৮ দলীয় জোটের গণসমাবেশে যোগ দিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখলকারী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল গণসমাবেশে বেগম জিয়া দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, জোর করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় বেশিদিন থাকা যায় না। খুব শিগগিরই অবৈধ সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে সাতক্ষীরা ও গাইবান্ধায় পুলিশ ও বিজিবি অভিযান চালিয়ে বিরোধী জোট তথা বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে আসামি ধরতে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। যৌথবাহিনীর সঙ্গে থেকেছে আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডাররাও। তারা নারী-শিশুদেরও রেহাই দেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের সাধারণ নাগরিক কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের ওপর এমন নির্মম ও লোমহর্ষক জুলুম চলতে পারেÑ তা কল্পনাও করা যায় না। অথচ জোর করে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলকারীরা সাধারণ মানুষের ওপর এমন ঘৃণ্য কর্মকা-ই পরিচালনা করছেন। বিনাবিচারে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী কিংবা সমর্থকদের হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে। গুম করা হচ্ছে অনেক নেতা-কর্মীকে। আতংকে মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েও বাঁচতে পারছে না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর মানুষ তাদের ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে না এমনও কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? তাই বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম জিয়া বলেছেন, ‘অর্জিত স্বাধীনতা আমরা হারাতে বসেছি।’ না, আমরা স্বাধীনতা হারাতে চাই না। স্বাধীনতা আমাদের অহংকার এবং বর্ম। অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করবোই ইনশাআল্লাহ। যারা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে তারা নিশ্চয়ই ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবে। মুছে যাবে তাদের দম্ভ ও অস্তিত্ব।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন