বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪

জিয়ার জনপ্রিয়তার কারণ

শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অতীব জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। বিশ্লেষণ করলে তার জনপ্রিয়তার জন্য নিচের কারণগুলো পাওয়া যায়। প্রথম কারণ, জিয়া হলেন একজন শহীদ। কুরআন মজিদ বলে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাস করে তারাই তাদের প্রতিপালকের দৃষ্টিতে সিদ্দিক (সত্যনিষ্ঠ) ও শহীদের মতো। তাদের জন্য রয়েছে প্রাপ্য পুরস্কার ও জ্যোতি।’ (সূরা হাদিদ, ১৯ আয়াত) জিয়া শাসনতন্ত্রে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করেন। আর যারা তা সহ্য করতে পারেনি, তারাই তাকে শহীদ করে। দ্বিতীয় কারণ, তিনি নিহত হয়েছিলেন; কিন্তু ব্যর্থ হননি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি একটি বৃহৎ ধারার প্রবর্তক, যা গণতন্ত্রায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তৃতীয় কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নামাজে জানাজা তিনিই পেয়েছিলেন। চতুর্থ কারণ, তিনি ছিলেন সবচেয়ে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা। বউ-ছেলেকে বিপদের মুখে রেখে তিনি ইয়াহিয়ার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হন। পঞ্চম কারণ, তার কণ্ঠ থেকে বাঙালিরা তখন স্বাধীনতার ঘোষণা শোনে, যা প্রথমে সবাইকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মতো ঘোষণাটি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দিয়ে শৃঙ্খলার পরিচয় রাখেন। ছয় নম্বর কারণ, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হয়েও এবং সব ক্ষমতা ভাগ্যক্রমে তার হাতে আসা সত্ত্বেও তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিলেন। সাত নম্বর হলো, তিনি ছিলেন মধ্যপন্থী চিন্তা-চেতনার ধারক ও বাহক। তিনি বাড়াবাড়ি পছন্দ করতেন না। আট নম্বর কারণ, প্রথম জীবনে কিছুটা বামের প্রভাবে এলেও তিনি সে লাইন ছেড়ে দেন। তার বন্ধুদের অনেকেই বাম ঘরানার ছিলেন। তার সামনে ছিল ন্যাপ ও জাসদের বাম আদর্শ। তাদের ব্যর্থতায় তিনি তাদের সাথে যেতে চাননি। তার এ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রনায়কোচিত ছিল, যা ব্যর্থ ন্যাপ ও জাসদের চেয়ে তাকে বেশি সফলতা এনে দেয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ধর্মীয় চেতনাবিহীন বাম রাজনীতি তেমন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। নয় নম্বর হলো, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা তিনি। বাঙালি ও বাংলাদেশীতে খুব একটা ফারাক নেই, তবে যেহেতু সমগ্র বাংলা মুলুক আমরা পাইনি, তাই বাংলাদেশ সমগ্র বাঙালি কমিউনিটির রাষ্ট্র হতে পারেনি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন যুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও পশ্চিম বাংলার ভাইরা মূলত কাশী, বৃন্দাবন, মথুরা ছাড়তে পারবেন না বলে আমাদেরই ছেড়ে গেলেন। স্বাধীন বাংলা তখন হতে পারল না। আমাদের অবস্থা এখন ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের মতো। দুই দেশেই ফরাসি ভাষা চলে, তবে আলাদা দুই দেশ। বাংলা ও বাঙালিÑ এ শব্দগুলো মুসলিম সুলতানি আমল থেকে প্রচলিত এবং মুসলমানদেরই দেয়া। এখন যেহেতু বাংলাদেশের বাইরেও বাঙালি আছে (এখানে ১৬ কোটি, আর সেখানে ৯ কোটি), আর আমাদের বাংলাদেশে চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও আরো নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাই রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সঠিক সিদ্ধান্ত; আমরা সংখ্যাগুরুরা বাঙালি, আর সবাই মিলে বাংলাদেশী। বাঙালি ও বাংলাদেশী ধারণার সমন্বয় সহজ। দশ নম্বর হলো, রাজনীতিতে জিয়া ইনকুসিভ’ (অন্তর্ভুক্তকরণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ) চরিত্র আনয়ন করেছেন, যা সবাইকে নিয়ে কাজ করা, এর আগে বঙ্গবন্ধু এটা অনেকটাই শুরু করেছিলেন; তবে শেষ করার সময় পাননি। বঙ্গবন্ধু যেমন অতীতকে পেছনে ফেলে সবাইকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছিলেন, শহীদ জিয়া তা আরো বিস্তৃত করলেন। জিয়াকে বাংলাদেশের নেলসন ম্যান্ডেলা বলা যেতে পারে। এগারো নম্বর হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আবেগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে জিয়া ইসলামি আদর্শকে সঠিক স্থান দেন। এর আগে অবশ্য বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মুসলমান।তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করলেন, মাদরাসা বোর্ড করলেন, ঘোড়দৌড় ও মদপান নিষিদ্ধ করলেন, তাবলিগ জামাতকে ইজতেমার জন্য জমি দান করলেন; সর্বোপরি ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন। সময়ের দাবিতে জিয়া ধর্মের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। বারো নম্বর হলো, জিয়ার আমলে তার শাসনে প্রকৃতই মনে হলো যে, দেশ এখন সত্যিকারভাবে সার্বভৌম। তেরো নম্বর হলো, পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি বহুমুখিতা আনেন। ইন্ডিয়া ছাড়াও চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও মুসলিম দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্ব প্রসারিত করেছিলেন। এর আগে অবশ্য বঙ্গবন্ধুও পাকিস্তানসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে, সেই সাথে চীনের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নের প্রাথমিক চেষ্টা নিয়েছিলেন। মুসলিম বিশ্বে জিয়া খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। চৌদ্দ নম্বর হলো, জিয়ার আমলকে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া সম্পর্কের সমমর্যাদার যুগ বলা যেতে পারে। ইন্ডিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন। তখন দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানিচুক্তি হয়েছিল, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করেছিল। পনের নম্বর হলো, জনগণের সাথে জিয়ার যোগাযোগ ছিল সরাসরি। খালকাটা কার্যক্রম তাকে জনগণের কাছে নিয়ে যায়। ষোল নম্বর, তার জীবনযাত্রা ছিল খুব সাদাসিধে আড়ম্বরহীন। সতের নম্বর, তিনি দুর্নীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন। আঠারো নম্বর, তিনি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনেন। সমাজতন্ত্র করতে গিয়ে শিল্প তথা অর্থনীতির যে সমূহ ক্ষতি হয় তা তিনি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য, আমরা দেখেছি, পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনও অর্থনীতির ক্ষেত্রে আগের অবস্থানে না থেকে অর্থনীতিতে সংস্কার এনেছিল। জিয়া তা আগেই করেছিলেন। উনিশ নম্বর কারণ, তিনি সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।
তার সময়ে সামরিক বাহিনীতে অনেক শৃঙ্খলাবিরোধী ঘটনা ঘটে এবং শেষবার তিনি নিহতই হলেন। তবে এটিও ঠিক যে, তিনিই পেরেছিলেন সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা আনতে, যার পরিণতিতে তার বিরুদ্ধে শেষ ক্যুব্যর্থ হয়। অন্য কোনো জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা তার মতো সফল হতে পারতেন কি না সন্দেহ। বিশ নম্বর কারণ, জিয়ার অমর কীর্তি সার্ক। দেশের বাইরেও সবাইকে নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল তার। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে এই আঞ্চলিক সংস্থা। এর মাধ্যমে তিনি ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের মতো পরস্পর পারমাণবিক শত্রুকেও এক টেবিলে নিয়ে আসতে সফল হন, যা আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটা ধাপ। আজ পর্যন্ত সার্ক পূর্ণতা না পেলেও এর সম্ভাবনা প্রচুর। একদিন না একদিন সার্ক সফল হবেই। তখন সার্কের গুরুত্ব আরো বোধগম্য হবে।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads