শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৪
গণতন্ত্রের নামে সার্কাসতন্ত্র এবং আকর্ষণীয় সঙদের দর্শনীয় মহড়া
Posted on ১১:৫৯ AM by Abul Bashar Manik
বিশ্বখ্যাত নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, অদ্ভুত নির্বাচন। টাইম ম্যাগাজিন উল্লেখ করেছে গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, নষ্ট নির্বাচন। গত ৫ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনটি নিয়ে বিশ্বের
প্রধান প্রধান গণমাধ্যম এভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের নামে এমন
তামাশা বিশ্ববাসী আর দেখেনি।
এ নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেকায়দায়
পড়েছিল এ দেশের টিভি চ্যানেলগুলো। কারণ প্রিন্ট মিডিয়ার মতো কিছু কথা কৌশলে বলে দিলেই
তাদের চলে না। কিছু চাক্ষুষ ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাদের হাজির করতে হয়। বেচারাদের
দেখে এবার সত্যিই করুণা লেগেছে। অনেক কায়দা করেও মোটামুটি সম্মানজনক একটা ভোটার উপস্থিতি
তারা কেউ দেখাতে পারেনি।
প্রতিটি নির্বাচনের পরপরই কত
শতাংশ ভোট পড়েছে, তা জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এবার এ তথ্য জানাতে দুই দিন সময় নেয়া
হয়েছে। প্রশ্নটি ছিল, দুই আর দুই কত হয়? উত্তরটি হলো, আপনার কত দরকার? এমন একটি বোঝাপড়ার কারণেই এই
সময়টুকু লেগেছে। আগে ধারণা করা হতো নির্বাচন কমিশনের কোনো মেরুদণ্ড নেই। এবার প্রমাণ
হলো শুধু মেরুদণ্ড নয়, ঘেন্না-পিত্তি সৃষ্টির জন্য এদের পেট থেকে গিলা
বা কলিজাটিও উধাও হয়ে গেছে।
ঘেন্না-পিত্তি, লজ্জা-শরম, অনুতাপ-অনুশোচনার মতো ব্যাপারগুলো নিয়ে এ নির্বাচন
কমিশনকেও ছাড়িয়ে গেছেন কোনো কোনো নেতা। যে মেজাজে তিনি নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে
হাজির হয়েছেন, তা দেখে অনেকেই বিস্মিত ও স্তম্ভিত। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর বডি
ল্যাঙ্গুয়েজ ও উচ্চারণ দেখে জনগণের বিস্ময়ের পারদ আরেকটু ওপরে উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের
মেরুদণ্ড বা গিলার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলেও আমাদের এসব রাজনীতিবিদ কী ধাতুর
তৈরী, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত ২৯ ডিসেম্বর ছিল বিরোধী দলের
গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা। সারা দেশ থমথমে। দুধের শিশুরাও উৎকণ্ঠায়। জাতির এমন কঠিন
সময়েও কেউ কেউ ব্যাডমিন্টন খেলেছেন। সেই ছবি আবার আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ থেকে ছড়ানো
হয়েছে।
এ জাতির যখন টেনশন বাড়ে তখন তাদের
নিজের টেনশনটি কমে যায়। প্রতিশোধের জন্যই যারা রাজনীতিতে নেমেছেন তাদের সম্পর্কে কী
বলা যাবে। বাড়াবাড়ি? কথাটি মিথ্যে নয়। সেই প্রতিশোধ এখন ভালোভাবেই নেয়া
হচ্ছে বলেই এখন মালুম হচ্ছে। সারা রোম যখন জ্বলছিল নিরু তখন আপন মনে বাঁশি বাজাচ্ছিল।
আর এখন সারা দেশ যখন জ্বলছে বাংলাদেশের নিরু তখন কী করছেন?
একই দিনের অন্য একটি ছবি নিউ
ইয়র্ক টাইমসের বদৌলতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্ব জেনে গেছে, এক ফ্যাসিস্ট ও গেস্টাপো বাহিনীর পরিচয়। একজন মহিলা আইনজীবীকে ঘিরে ধরেছে এই
ফ্যাসিস্ট বাহিনী। পতাকা বাঁধা হাতের লাঠি দিয়ে অসহায় মেয়েটিকে এলোপাতাড়ি পেটাচ্ছে।
আতঙ্কগ্রস্ত মেয়েটির ভয়ার্ত চোখ দুটোও ছবিটিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সত্যিই এক বীভৎস
দৃশ্য।
এক সোনার ছেলে আবার প্যান্টের
জিপার খুলে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলনরত বিরোধীদলীয় আইনজীবীদের প্রদর্শন
করেছে। এক হাতে এ মহৎ কর্মটি সম্পন্ন করার সময় এই সোনা মানিকের অন্য হাতে ছিল লাল-সবুজের
পতাকা। এ ছবি এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। কারণ সোনার ছেলের দলটি দেশের গণতন্ত্রকে একই
ধরনের জিনিস একই ভঙ্গিতে দেখিয়ে চলছে। ওপরে বর্ণিত এ তিন ছবি একসাথে দেখালে এ দেশটি
সম্পর্কে অন্য কিছু বলার দরকার নেই।
সোনার ছেলেদের থেকে সোনার মেয়েরাও
খুব একটি পিছিয়ে ছিল না। সোনার মেয়েদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে শামীম ওসমান ও
ডা: ইকবালগণ এখন অবসরে যেতে পারেন। নাজমা আক্তার ও অপু উকিলের নেতৃত্বে এই প্রমীলারা
চড়াও হয়েছিলেন প্রতিপক্ষ পুরুষ আইনজীবীদের ওপর। এদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে ফেসবুকে কেউ কেউ
তুলনা করেছেন রাসূল সা:-এর চাচার কলিজা চিবিয়ে খাওয়া হিন্দার সাথে। তুলনাটি অনেকের
কাছেই সঠিক মনে হয়েছে। এই বাহিনী চিবিয়ে খাচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের কলিজা।
ভাগ্যিস আগের দিনের মহিলা আইনজীবীর
মতো কোনো পুরুষ আইনজীবী এ হিন্দা বাহিনীর নাগালে পড়েননি। সেটি পড়লে নিউ ইয়র্ক টাইমস
দুই গুণ উৎসাহ নিয়ে সেই ছবিটি প্রকাশ করত। কাজেই মহান আল্লাহ পাক শুধু বিরোধী দলের
মানসম্মান নয়, তাবৎ পুরুষকুলের ইজ্জত রক্ষা করেছেন।
এই হিন্দালীগ ও চাপাতিলীগ মিলে
গণতন্ত্রের নামে সার্কাসতন্ত্র কায়েম করে ফেলেছে। এ সার্কাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয়
জানোয়ারটি বানানো হয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার জাতীয় পার্টিকে। এই সিংহকে মাঝে
মধ্যে হুঙ্কার তোলার জন্য দর্শকের সামনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনিও মুক্ত সিংহের মতোই
গর্জন তুলে দর্শকদের আমোদিত করেছেন। অনেক গরম গরম কথা বলে নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়েছিলেন।
দর্শকেরাও তুমুল হাততালি দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসলেন।
কিছু দিন পর ডিগবাজি দিয়ে আবারো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন। সিংহটির মাথা খারাপ
হয়ে যাচ্ছে দেখে সার্কাসের মূল কাউনরা এগিয়ে এলেন। দর্শকদের সামনে থেকে এই সিংহকে এবার
সরিয়ে ফেলা হয়। এই সিংহকে রাখা হয় সিএমএইচে। এই সিএমএইচ থেকে এই সিংহ নিজের বাসায় আসতে
পারেননি। কিন্তু গলফ খেলতে ঠিকই গলফ কাবে যেতে পেরেছেন। কাউনগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, এই গলফ খেলাটিও ছিল তার চিকিৎসারই অংশ।
সার্কাস কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী নতুন জুটি তা দেখিয়ে দিয়েছেন। কামরুল হাসান চিত্রিত
এই ‘বিশ্ববেহায়া’র কিছু হায়া মনে হয় এখনো অবশিষ্ট আছে। অবশিষ্ট সেই
হায়ার কারণেই এবার নিজে না গিয়ে বাকিটুকু সম্পন্ন করার জন্য নিজের স্ত্রীকে ঠেলে দিয়েছেন।
সার্কাসতন্ত্রে মহিষের মতো প্যারেড
করেছেন রাবিশ শব্দখ্যাত অর্থমন্ত্রী। নিজের কৌতুকে নিজেই বিশেষ ভঙ্গিতে শরীর দুলিয়ে
হেসেছেন। বলেছেন, সরকারে থাকলে সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। জনগণের পকেট থেকে
এক হলমার্ক নিয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। সার্কাসতন্ত্রে মহিষের ভূমিকায় অংশগ্রহণকারী
এই মন্ত্রী বলেছেন এটি পি-নাট। অথচ কিছু টাকার জন্য শিক্ষকদের মরিচের
গুঁড়ার স্প্রে মেরেছেন এই প্যারেডের অন্য একজন। রানা প্লাজার ঘটনার পর তিনি বিল্ডিং
নাড়াচাড়া তত্ত্ব উপহার দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এগুলো দেখে জাতীয় পার্টির
এক নেতা বলেছিলেন, এ সরকারে পাঁচজন পাগল ও তেরোজন নাস্তিক রয়েছে। সাম্প্রতিক রওশন
এরশাদকে নিয়ে যে সার্কাস হয়েছে, তাতে বিশেষ একটা ভূমিকা ছিল এই নেতার। নীতিহীন এই
মানুষগুলোই নীতি-নৈতিকতার কথা বলেই দেশের আজ এ বারোটা বেজেছে।
একটি সার্কাস পার্টিতে যেসব কলাকুশলী
ও জন্তু-জানোয়ার থাকে তার সবই এ মহাজোট নামক মহাসার্কাস পার্টিতে রয়েছে। সিংহ, মহিষ ও কালো বিড়াল ছাড়াও অন্য সবই ছিল। এমনকি মুরগিও ছিল। সবাই নিজ নিজ ভঙ্গিতে
প্যারেড করেছেন। এ সার্কাস যাতে নির্বিঘেœ প্রদর্শিত হতে পারে, তজ্জন্যে প্রথমেই একটি দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তার সম্পাদককে গ্রেফতার
করে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ভাগ্যেও একই পরিণতি হয়েছে।
যাদের লেখনী, বক্তব্য কিংবা সাংগঠনিক ভূমিকা হুমকি বলে গণ্য হয়েছে, সার্কাসের কাউনরা তাদের ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছেন। এই ল্যাং মারা দেখে
হেসে হেসে পেটে খিল ধরিয়ে ফেলেছেন দেশের বাঘা বাঘা সম্পাদক, কলামিস্ট ও এ জগতের আরো বড় বড় বিজ্ঞজন। রাজনৈতিক জগতের কাউন ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক
জগতের কয়েকজন কাউন বিশেষ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। কাউনদের একজন আবার পাকবাহিনীকে ১৯৭১
সালে মুরগি সরবরাহ করতেন। তিনি এখন খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই সময় যারা পাকবাহিনীকে নারী
সরবরাহ করতেন তাদের।
হাইকোর্ট এলাকায় বিরোধী দলের
আইনজীবীদের রঙিন পানি ও সাউন্ড কামান দিয়ে প্রতিহত করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসে হতভাগা
আইনজীবীর যে ছবিটি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে, তা ওই সময়ের ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষকদেরও লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। প্রেস কাবে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের
সহযোগিতায় গুণ্ডাবাহিনী আক্রমণ করেছে। হিন্দা বাহিনীর ইট নিক্ষেপ, অপু উকিলের ইটা সরবরাহ ফেসবুকে ছড়িয়ে আছে। মোড়ে মোড়ে চাপাতি লীগ, গোপালি পুলিশ মানুষকে বের হতে দেয়নি। এরপরও মাথায় চান্দি ছাড়া অর্থাৎ টাকওয়ালা
এক রাজনীতিবিদ ঘোষণা করেছে, একজন মানুষও বিরোধী দলের ডাকে রাস্তায় বের হয়নি।
বিরোধীদলীয় নেতা অবরুদ্ধ। বালুর
ট্রাক বাসার সামনে এনে তাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও এই সঙগণ জানাচ্ছেন তিনি মুক্ত
ও স্বাধীন। এটি নাকি বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তা বাড়ানোর স্বার্থেই করা হয়েছে। অর্থাৎ
সঙরা বলছেন, আপনার মাথায় পাখি হাগু করে দিয়েছে। আপনি মাথায় হাত দিয়ে দেখেন
কিছুই নেই। কিন্তু সঙ বলছেন, আছে। এটিই হলো কাউন বা জোকারদের মজাক। জাতির সাথে
এ ধরনের মজাকটিই তারা করেছে। সঙদের এই মজাকের সামনে পুরো জাতি ও দেশের গণতন্ত্র আজ
অসহায় হয়ে পড়েছে।
গণতন্ত্রের কলিজাটি চিবিয়ে খেয়ে
ফেলেছেন। তার পরও উপাধি ধারণ করেছেন গণতন্ত্রের নামে। টকশো জগতে আরাফাতের মতো আওয়ামী
টিয়া পাখিরা এখনো জাতিকে গণতন্ত্রের জ্ঞান দিচ্ছেন। গণতন্ত্রের মানসকন্যার তৃপ্তি ছিল
তিনি দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। দেশের ভোটারদের অর্ধেকের বেশিকে
ভোট কেন্দ্রেই যেতে হয়নি।
পুরো দেশটি ভয়ঙ্কর ডাকাত দল কর্তৃক
আক্রান্ত। গোপালি পুলিশ, চাপাতিলীগ ও হিন্দালীগের যুগপৎ আক্রমণে বিরোধী দল
রাস্তায় নামতে পারছে না। রাস্তায় বের হওয়ামাত্রই নেতাদের অ্যারেস্ট করা হচ্ছে অথবা
কর্মী বাহিনীকে সরাসরি বুকের দিকে তাক করে গুলি করা হচ্ছে। এ জন্য ফ্যাসিবাদী সরকারকে
সমালোচনা না করে বিএনপি নেতাদের সাহস ও আন্তরিকতা নিয়ে মিডিয়ার একটা অংশ প্রশ্ন তুলছে।
ধর্মীয় বোধ থেকে শাহাদতের একটা আকাক্সক্ষা রাজনৈতিক কর্মী বাহিনীর মাঝে প্রোথিত করা
হয়েছে। কাজেই এই গুলির মুখেও কিছু নেতাকর্মী রাস্তায় বের হওয়ার সাহস দেখাতে পারছেন।
এ সাহসের জন্য সুশীলগণ একমুখে জামায়াতের নিন্দা করছেন এবং অন্যমুখে বিএনপির ভীরুতার
জন্য তিরস্কার করছে। এদের প্রশ্ন দেখে মনে হয় ডাকাতদের চেয়েও এসব প্রশ্নকারী আরো বড়
ডাকাত।
বর্তমান পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতাদের
যে দৃষ্টিতে দেখছে ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী আওয়ামী লীগের নেতাদের একই দৃষ্টিতে দেখেছিল।
সারা দেশের মানুষ তখন রুখে দাঁড়ালেও নেতা পর্যায়ের প্রতিটি আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীকে
তল্পিতল্পাসহ বর্ডার পাড়ি দিতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের তখন অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধের
সুযোগ থাকলেও বেশির ভাগ নেতা তা করেননি।
স্বাধীন দেশে বিএনপি হলো একটি
নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এটি কোনো গেরিলা বাহিনী নয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে
অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে পারে না। বর্তমান মিডিয়া বিরোধী দলকে পেয়েছে গল্পের ওই মদনের
মতো। মদনকে জিজ্ঞেস করা হয়, মদন তুই মনিবের কথা শোনসনি কেন ? মদন বলে, উনি প্রথমে আমাকে বলে, এক পা খাঁড়া করে দাঁড়া। তার কথামতো
আমি দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পরে বলে, অন্য পাও ওপরে তুলে দাঁড়া। তখন একটু রেগে গিয়ে বলেছি, তা হলে কি ‘ইয়ের’ ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াব?
মদনের তাও একটা ‘ইয়ে’ ছিল। সত্যি বলতে কী, বিরোধী দলের নেতাদের তাও নেই।
এ কথা প্রশ্নকারীরা উপলব্ধি করলে শুধু উপায়হীন বিরোধীদলীয় নেতাদেরই নয়, হতভাগা দেশটিরও অনেক উপকার হতো। দস্যুরূপী এ সরকার বিরোধী দলকে এক পায়ে দাঁড়
করিয়ে রেখেছে। এখন এই মতলববাজ মিডিয়া চায় অপর পাটি ওপরে তুলে বিএনপি নেতারা দাঁড়িয়ে
থাকুক। এ ধরনের প্রশ্নকারীরা আসলে এই ডাকাত দলেরই সদস্য। যে সার্কাসের কথা বলেছি, এরা সেই সার্কাসের বুদ্ধিবৃত্তিক সঙ।
বেগম খালেদা জিয়া কোনো ভুল বা
অপরাধ করলে তা বেগম খালেদা জিয়ার একক অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হয়। তখন ব্যক্তি খালেদাই
স্পষ্টভাবে দায়ী হন। নারী নেতৃত্বকে তখন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় না। কিন্তু শেখ হাসিনার
কোনো ভুল বা অপরাধ যখন স্পষ্ট হয়ে পড়ে এবং শেখ হাসিনাকে তিরস্কার করা যখন অপরিহার্য
হয়ে পড়ে, তখন ‘দুই মহিলা’কে একসাথে বেঁধে ফেলা হয়। পাঠক, চিনতে ভুল করবেন না। এরাও এই একই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য।
অতি চালাকের গলায় দড়ি। কাজেই
এই চালাক জাতির গলায় আজ বাকশালের দড়ি পড়েছে। ধর্মীয় মৌলবাদের ভয় দেখিয়ে এখন এ জাতিকে
রাজনৈতিক মৌলবাদের সাথে হাঙ্গা (দ্বিতীয় বিয়ে) দেয়া হয়েছে। এ হাঙ্গার ঘটকালি করেছে
সুশীলসমাজ।
সেই সুশীলসমাজকেই এখন সরাসরি
‘বাটপার’ ডেকেছেন একজন অতি সুশীল। ‘খালেদা জিয়ার গোসসা ও নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা’ নামে একটি দৈনিকে একটি ভয়ানক
লেখা লিখেছেন। এতে সুশীলসমাজের প্রতিও তার নিজের মনের গোসসাটিই প্রকাশ করেছেন। বাকশালের
বুদ্ধিবৃত্তিক এই লাঠিয়াল নতুন বছরে প্রতিজ্ঞা করছেন কয়েক লাখ লোককে মেরে ফেলার জন্য।
এই ক্রুদ্ধতা ও হিংস্রতার নাম হলো স্বাধীনতার চেতনা। এদের মনের ঘৃণার খোরাক জোগাতে
১৬ কোটি মানুষের সুখ বিলকুল হারাম হয়ে গেছে।
সিঙ্গেল ইউনিটের চমৎকার এই রাষ্ট্রকে
এরা ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। সব মানবিক বোধ ও শুভ ইচ্ছা এদের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছে।
তাদের মনের ‘হাড় কড়মড়ে’ রোগটি সারানোর জন্য কয়েক লাখ লোকের রক্ত দরকার।
কারণ এই কয়েক লাখ লোকের রক্ত ঝরাতে পারলে লেন্দুপ দর্জির কাজটি সহজ হয়ে পড়বে। এরা জাতিকে
এ সর্বনাশা গৃহযুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে। এই মতলববাজের দল সাধারণ মানুষকে রক্তারক্তিতে
লাগিয়ে দিয়ে নিজেরা চলে যাবেন কলকাতা, দিল্লি বা আরো দূরের নিরাপদ কোনো
দেশে। উভয়পক্ষের কয়েক লাখ লোক মারা গেলেও আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, গৃহযুদ্ধের উসকানিদাতা এদের নিজেদের রক্ত কখনোই ঝরাবে না। উভয়পক্ষেই মরবে সাধারণ
মানুষ।
১৯৭১ সালের অভিজ্ঞতা তাই বলে।
সেই যুদ্ধেও এই গলাবাজদের কারো রক্ত ঝরেনি। প্রথম চান্সেই এরা পগার পার হয়েছিলেন। তল্পিতল্পাসহ
কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কারো কারো জন্য আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
এসব ঘটনা দেখে ঠিক থাকতে পারেননি জহির রায়হান। সেসব ঘটনা নিয়ে একটা প্রামাণ্য চিত্র
প্রকাশের পরিকল্পনা করেছিলেন। এই দুঃসাহসের কারণেই তাকে স্বাধীনতার বেশ কিছু দিন পরও
(রাজাকারদের অ্যাকাউন্টে) জীবনটি খোয়াতে হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ
আজকের এই চেতনাধারীদের বয়স হওয়া সত্ত্বেও কেউ তখন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। সিঙ্গেল
ইউনিটের চমৎকার এই দেশে গৃহযুদ্ধ লাগাতে সক্ষম হলেও এদের কারো টিকিটি বাংলাদেশে পাওয়া
যাবে না। যাদের এ দেশে থাকতে হবে এবং যাদের রক্ত ঝরবে তাদের এগিয়ে আসা দরকার।
রাসূল সা:-এর চাচার কলিজা চিবিয়ে
খাওয়া হিন্দাও একপর্যায়ে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু তাকে দেখে রাসূল সা: বলতেন, ‘তুমি আমার চোখের সামনে এসো না হিন্দা।’ আজকের হিন্দা বাহিনীর অনেকেই
কিংবা এ হিন্দাদের সন্তানেরা তাদের কৃতকর্মের ফলটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। এদের অনেকেই
নিজের ফাঁসি চেয়ে হয়তো তখন বইও লিখবে।
কিন্তু দেশ ও দেশের গণতন্ত্রের
জন্য যে অপরিমেয় ক্ষতিটি হবে সেই ক্ষতি হয়তোবা কোনো দিন পূরণ হবে না।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন