শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪
নির্বাচনে বিএনপির জয় মানে ভারতের জন্য দুঃসংবাদ
Posted on ১:৩১ PM by Abul Bashar Manik
এখানে
একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখের প্রয়োজন। তা হলো, মনোজ যোশী লিখেছেন, ২০০৬ সালে বেগম জিয়া কেয়ারটেকার সরকারের
অধীনে নির্বাচন দিতে রাজি হননি। আসলে এ তথ্যটি ভুল। লেখক খুব সম্ভবত ১৯৯৫-৯৬ সালের
কেয়ারটেকার আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় ভারতের জন্য দুর্ভাগ্যজনক
ঘটনা ঘটেছে। এখন আমরা তেমনটি দেখছি বাংলাদেশে। সামনের মাসগুলোয় ভারতের সাথে বাংলাদেশের
সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে একটি বান্ধব সরকার স্থিতিশীল
প্রতিবেশী দেশটি শাসন করেছে। এখন আমরা সে দেশে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের সম্মুখীন। আর দেশটির
সাথে আমাদের রয়েছে চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত।
উদ্বেগজনক
যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, এর
কারণ খুঁজে পাওয়া তেমন কঠিন নয়। কারণটা হলো, বাংলাদেশের দুই বেগমের মধ্যে অব্যাহত ঝগড়া, যা তাদের দুর্বল করে দিচ্ছে। বেগমরা
হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এবং তার পূর্বসূরি খালেদা জিয়া, যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
২০১৪
সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বেগম খালেদা জিয়া দাবি জানিয়েছিলেন, এ নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে
অনুষ্ঠিত হোক তার
বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর নেতৃত্বাধীন ও ক্ষমতাসীন, আওয়ামী লীগের অধীনে নয়। বিস্ময়কর নয় যে, শেখ হাসিনা এতে অস্বীকৃতি জানালেন।
একইভাবে বেগম জিয়া ২০০৬ সালে তা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে। দুই বছরব্যাপী বিক্ষোভ
ও সঙ্ঘাতের পর তিনি সম্মত হয়েছিলেন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে। সে
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছিল। পেয়েছিল ৩০০-এর মধ্যে ২৬৩ আসন। এবার
আমরা সম্ভবত একই অবস্থার দিকে যাচ্ছিলাম, যেখানে সংখ্যাটা উল্টে বিএনপির পক্ষে আসার কথা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের নিন্দা জানিয়েছে একই ভাষায়। ২০০৮ সালে
ভোট পড়েছিল ৮৩ শতাংশ। এবার প্রায় ৩০ শতাংশ।
মোট ৩০০ আসনের
১৫৩টিতেই আওয়ামী লীগ জোট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে, যারা পেয়ে গেছেন তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
দেশের ভেতরে প্রতিবাদ এবং বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দার পর শেখ হাসিনা কমবেশি
মেনে নিয়েছেন যে, তাকে
এই নির্বাচন বাতিল করতে হবে।
প্রশ্নটা
হলো সময় নির্ধারণের
সহিংসতা
ও নৈরাজ্য যত দীর্ঘায়িত হবে,
এটা বাংলাদেশের জন্য হবে তত বেশি ক্ষতিকর।
পুনরায়
নির্বাচনে বিএনপি যে জিতবে, তা
প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু এটা তো ভারতের জন্য দুঃসংবাদ। তবে নয়া দিল্লি নিজেকেই কেবল দোষ
দিতে পারে তার এই বিপর্যয়ের জন্য।
ঢাকার
বন্ধুস্থানীয় সরকারের মূল্যায়ন দিল্লি প্রায় করেইনি বলা যায়। ভারত তিস্তার পানিবণ্টন
কিংবা সীমান্ত ইস্যু, কোনো
ব্যাপারেই বাংলাদেশের সাথে চুক্তিতে উপনীত হতে পারেনি। বাংলাদেশের রাজনীতি দ্বিধাবিভক্ত।
এই পরিস্থিতিতে নয়া দিল্লিকে শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখতে পাওয়া একটি মন্দ কৌশলের
ফল। অতীতে এটা হয়তো বাস্তবতা ছিল। তবে অন্তত গত পাঁচ বছরে নয়া দিল্লির এমন অবস্থান
নেয়া উচিত ছিল যাতে বাংলাদেশে কোন দল ক্ষমতায় আছে, তা বিবেচনা না করেই ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।
বিভাজন
বাংলাদেশের
বিভিন্ন ঘটনা দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিভাজন এনেছে, যা নতুন। গত বছর সহিংস পরিস্থিতিতে
নির্বাচন করার বিরুদ্ধে আমেরিকা সতর্ক করে আসছিল। অপর দিকে, ভারত এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ‘হাসিনার ঝুড়িতেই সব ডিম রাখা হয়েছে’।
যদি
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এ নির্বাচন সম্পর্কে গ্রহণ করত অভিন্ন ভূমিকা, বর্তমান পরিস্থিতি সম্ভবত সৃষ্টি হতো
না।
এবার
যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি বিবৃতি দিয়েছে, যাতে বিরাজমান পরিস্থিতি নিরসনের জন্য সুস্পষ্টভাবে
আহ্বান জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি। ওয়াশিংটনে মার্কিন মুখপাত্র মেরি হার্ফ
সহিংসতার নিন্দার পাশাপাশি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের চোখে বিশ্বাসযোগ্য, এমন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে
অঙ্গীকার পূরণের সুযোগ এখনো আছে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এবারের
নির্বাচন প্রসঙ্গে ভারত সরকারের মুখপাত্র যে মন্তব্য করেছেন, তার সম্পূর্ণ বিপরীত এই মার্কিন বিবৃতি।
দুটোই দেয়া হয়েছে একই দিন ৬
জানুয়ারি। ভারতীয় মুখপাত্র তার দৈনিক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এ নির্বাচন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা’। তিনি আরো বলেন, ‘নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ এবং নিজেদের
আশা-আকাক্সা মোতাবেক প্রতিনিধি বাছাই করা বাংলাদেশের জনগণের ব্যাপার।’ এ নির্বাচনের বৈধতার বিষয়টি এড়িয়ে ভারতীয়
মুখপাত্র বলেছেন, ‘সহিংসতা
চলার পথ নির্ধারণ করতে পারে না এবং তা উচিত নয়’। যদিও ভারতের এ ধরনের বক্তব্য শেখ হাসিনার অবস্থানের
শতভাগ অনুমোদন নয়, তবুও
এটা প্রায় সে রকমই। হাসিনা সারা দুনিয়ার যে সমালোচনার সম্মুখীন, এর পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা যেতে পারে।
ভারতের
সঙ্কট স্পষ্ট
দক্ষিণ
এশিয়া অঞ্চলে আমাদের অল্প যে ক’জন
মিত্র আছেন, শেখ
হাসিনা তাদের অন্যতম। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের সাথে আমাদের (ভারতের) সম্পর্ক
ছিল সঙ্কটপূর্ণ। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ও চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই। কিন্তু
গত পাঁচ বছর হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়টিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উষ্ণ ও বন্ধুভাবাপন্ন
ছিল। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) বিরুদ্ধে তিনি
চালিয়েছেন সাঁড়াশি অভিযান। তা ছাড়া ইসলামপন্থীদের ওপরও তার সরকার খড়গহস্ত, যাদের আইএসআই ব্যবহার করেছিল ভারতবিরোধী
তৎপরতায়। অধিকন্তু, স্থিতিশীল
বাংলাদেশ ছয় শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের সাফল্য পেয়েছে।
সমীকরণ
শেখ
হাসিনার একটি অতিরিক্ত গুণ হলো,
তিনি জামায়াতে ইসলামীকে একহাত নিয়েছেন এবং ওরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেক বিষয় হলো,
সরকারের ওপর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ নয়া দিল্লিকে কিছুটা স্বস্তি
দিয়েছে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রেক্ষাপটে এটা বলা চলে। অবশ্য বাংলাদেশকে
এর যথেষ্ট প্রতিদান দিতে ভারত সক্ষম হয়নি। অপর দিকে, খালেদা জিয়া আর তার বিএনপি জোট বেঁধেছে জামায়াতের
সাথে। এই জামায়াত সাঙ্ঘাতিক ভারতবিরোধী। ভারতের প্রতি বেগম খালেদার মনোভাব খুব বেশি
একদেশদর্শী। ভারত ও শেখ হাসিনার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আছে বলে উপলব্ধি করাই এর কারণ।
ভারত
সম্পর্কে বলা প্রয়োজন, দিল্লির
‘খোঁড়া হাঁস’ সরকার বাংলাদেশ ইস্যু মোকাবেলা করতে
পারবে না। ব্যক্তি ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে একটি মৌলিক প্রশ্ন আমরা নিজেরাই নিজেদের করা
উচিত। তা হলো, ভারতের
স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও এই অঞ্চলে নয়া দিল্লির প্রভাব না বেড়ে কেন বরং সঙ্কুচিত হচ্ছে?
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন