শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৪

কাল প্রহসনের নির্বাচন


পরিসংখ্যান অনুসারে ৭৮ শতাংশ নাগরিকের কাছে অগ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশে আগামীকাল। আর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের ৫২ শতাংশ ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে বিরোধী ১৮ দলের লাগাতার আন্দোলন ও অবরোধের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে রাস্তায় নামিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবকে বিরোধী দল দমনে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে। অথচ এ নির্বাচনী সিডিউল বাতিল করে শুধু বিরোধী জোট নয়, দেশের সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক এমনকি বিশ্বের অনেক সংস্থাসহ ৮২টির মতো দেশের তরফ থেকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্ষমতাসীনরা এসব আহ্বানে সাড়া না দিয়ে একতরফা এবং অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দেশ-বিদেশের জনমত এবং তামাশার নির্বাচন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব উপেক্ষা করে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষে সংশোধিত ও পরিবর্তিত সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতার নতুন সিঁড়ি পাড়ি দেবার যে স্বপ্ন তারা দেখছেন তা শুধু দেশের শান্তিশৃঙ্খলা এবং স্থিতিশীলতাই বিনষ্ট করবে না, আমাদের প্রিয় দেশটিকে বিশ্বদরবার থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এমনকি আমরা অর্থনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক অবরোধের মতো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে  পারি।
ক্ষমতাসীনরা অবশ্য বলে বেড়াচ্ছেন যে, এ নির্বাচন শুধু সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার জন্য। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের এমন কথা কেউ বিশ্বাস করছেন না। হাস্যকর ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে নানা অপকৌশলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা করবেন। আগামীকালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী অনেক রক্ত ঝরেছে। অনেক মানুষকে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে জীবনপাত করতে হয়েছে। হাজার হাজার নাগরিক পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। অসংখ্য মানুষ হয়রানিমূলক মামলায় পড়েছেন এবং কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে দিনাতিপাত করছেন। বলতে দ্বিধা নেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন নির্বাচিত হলেও তারা অস্বস্তিতে ভুগছেন। অনেকেই নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। আগামীকালের নির্বাচন যে প্রহসনের এবং অগ্রহণযোগ্য তা তারা নিজেরাও বোঝেন। এমতাবস্থায় এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে তারা কীভাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করবেন তা ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না অনেকেই। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের পরপরই যে সংসদ ভেঙে দিয়ে আবারও নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এ ব্যাপারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা অনেকেই প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া এ প্রহসনের নির্বাচনের পর সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা সামলানো যে কঠিন হয়ে পড়বে তা নিয়েও তারা দুর্ভাবনায় রয়েছেন। শুধু নির্বাচিতরাই নন, তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যেও নানা দুর্ভাবনা ও আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে অহরহ।
ক্ষমতাসীন নেতারা অনেকেই বড় বড় কথা বলছেন। শোনাচ্ছেন আশার বাণীও। কিন্তু তাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ দেখে পরিস্থিতি অনুকূলে নয়, এটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা অনেকেরই। সামরিক বাহিনীকে রাস্তায় নামিয়ে, ১৮ দলীয় নেত্রীকে গৃহবন্দী রেখে তার বাসার সামনে পুলিশ, জলকামান আর বালির ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। এমনকি বেগম জিয়ার বাসার সামনে বোমা ফাটিয়েও ভয় দেখানো হচ্ছে বিরোধী জোটের আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের। এতো পুলিশ আর গোয়েন্দা সদস্য সেখানে দিনরাত দায়িত্বরত থাকা সত্ত্বেও বোমাবাজদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কী বিস্ময়কর! আমরা মনে করি সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করে সমঝোতার মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শেষমুহূর্তে হলেও ক্ষমতাসীনদের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা উচিত। সিংহভাগ নাগরিকের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে অবস্থানগ্রহণ কারুর জন্যই কল্যাণকর হতে পারে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads