৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনেও দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় জড়িত বলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মূলত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, গুলশান মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ভোট কেন্দ্র সম্পর্কেও। দু’টি তিনতলা ভবনে এখানে ছিল মোট পাঁচটি ভোট কেন্দ্র। ভোটার ১১ হাজার ৬৮৯ জন। বেলা সাড়ে দশটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেল পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে আটটি। সব বুথ ফাঁকা। কিন্তু স্কুল মাঠের ভেতরে জনা পঞ্চাশেক যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। বাদামি জ্যাকেট পরা এক ব্যক্তি তাদের নেতা। জানা গেল, তার নাম আখতার হোসেন। তিনি উত্তর যুবলীগের নেতা। তার সঙ্গে আছেন হৃদয় নামের আরেক ব্যক্তি। মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এসব লোক কোনো অনুমতির ধার ধারছেন না। তারা যখন-তখন বুথে ঢুকছেন আর বেরুচ্ছেন। মাঠের জটলা থেকে শোনা গেল তাদের কথা-বার্তা। কে একজন বলছেন, ‘১০০ করে ভোট ১২ হাজার। পারবি না? যা তাড়াতাড়ি কর। লম্বা করে সবাই লাইনে দাঁড়াও। কেউ কিছু বুঝবে না। শুধু একজন একজন করে ভোট দিয়ে আস। আরেকজন বলছেন, ‘কী করে যাব, সাংবাদিক আছে তো।’ এরপর মাঠের ভেতরে দায়িত্বরত এক টিভি সাংবাদিককে ডেকে এক যুবক বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘বড় ভাই দয়া করে একটু বাইরে যান, একটা ঘণ্টা সময় আমাদের দেন। কিছু একটা করি। মান-সম্মান তো থাকছে না।’ যুবকদের কথায় টিভি সাংবাদিক কেন্দ্রের বাইরে চলে যান। এরপর যুবকদের একজন নিচের তলার কেন্দ্রে ঢুকে সিল মারতে শুরু করেন প্রকাশ্যে। প্রথম আলোর ক্যামেরায় তা ধরাও পড়ে। কিছুক্ষণ পর বুথে ঢুকেন আরেকজন যুবক। তিনিও সিল মারতে শুরু করেন। কিন্তু এ খবর দ্রুত রটে যায়। ঘটনাস্থলের অল্প দূরেই খালেদা জিয়ার বাসভবন। আগে থেকে একদল সংবাদ কর্মী অবস্থান করছিলো। খবর পেয়ে কয়েকজন দ্রুত এসে হাজির হন। তখন যুবকরা সরে গিয়ে মাঠের মধ্যে অবস্থান নেন। তবুও দিনভর তাদের নানা চেষ্টা চলতে থাকে। গণমাধ্যম কর্মীরাও সহজে মাঠ ছাড়ছিলেন না। কিন্তু এত কিছুর পরেও ভোট শেষে দেখা গেল পাঁচ কেন্দ্রে ১১ হাজার ৬৮৯ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র তিনশ’ ৭৬টি। অর্থাৎ তিন শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের এ সংখ্যা শুনে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পোলিং অফিসার বলেন, ‘ভাই যশোরের এমপি আফিলউদ্দীন যে ফর্মুলা দিয়েছিলেন সেভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা এসে পড়ায় কাজ হয়নি। উল্লেখ্য যে, যশোরের সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দীন যশোরে নির্বাচনী সভায় বলেছিলেন, ‘১০০ ছেলে থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রে। ওরা বুথে যাবে, আবার এসে লাইনের পেছনে দাঁড়াবে। ওরা বাড়ি যাবে না। ১০০ ছেলে সব সময় লাইনে থাকবে। এভাবে বুথে যাবে আবার আসবে। লোক ও সাংবাদিকরা দেখবে যে ভোটের মাঠ ভরা।’ ভোটের এমন দৃশ্য ও ফর্মুলা দেখে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটা কেমন হয়েছে। ‘এই ভোটেও কারচুপি!’Ñ শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনের রিপোর্টে বলা হয় ঃ বিরোধী দলবিহীন এমন নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনলেন স্বতন্ত্রসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কয়েকটি আসনে নির্বাচন চলাকালে তারা এসব অভিযোগ আনেন। ফলে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বয়কট করতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এদের মধ্যে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা যায়, মতিয়া চৌধুরী কেন্দ্রগুলোতে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজনকে জোর করে বের করে দিয়ে সিল মেরে ভোট কাস্ট করেছেন নিজের পক্ষে। এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও নিজের পক্ষে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সরকারি দলের আরো অনেকের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের এমন চিত্রে কলঙ্কতিলক লেগেছে নির্বাচন কমিশনের কপালে। নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেই তথ্য নির্বাচনের দিন রাতে জানানোর কথা ছিল ইসির। কিন্তু রহস্যজনক বিষয় হলো, নির্বাচনের দুই দিন পরেও সেই তথ্য জানাতে সমর্থ হলো না আমাদের নির্বাচন কমিশন। আর এখন বলা হচ্ছে, ভোট পড়েছে ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) জানিয়েছে নির্বাচনে সব মিলিয়ে ভোট পড়েছে ১০ শতাংশেরও কম। আসলে এই নির্বাচন নিয়ে কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। বিরোধী দলবিহীন ও ভোটারবিহীন এই নির্বাচন নিয়ে প্রোপাগান্ডার প্রহসন রচিত হতে পারে কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন শুধু দেশের মানুষের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়নি ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন। ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এ নির্বাচনের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেনি। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা ও ৫৩ জাতির সংস্থা কমনওয়েলথ অর্ধেকের বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়া এবং বাকিগুলোতে নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ায় সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফলে তাদের হতাশা ও অসন্তোষের কথা জানিয়েছে। বলেছে, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন অনুযায়ী এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। আর জাতিসংঘ নির্বাচনকে ‘বিভক্তি ও কম অংশগ্রহণমূলক’ বলে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সাড়া দিয়ে শিগগিরই অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অর্থবহ সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্বাচনের ব্যাপারে অসন্তোষের কথা জানিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজনের কথাও বলেছে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের দীর্ঘদিনের আহ্বান ও কূটনৈতিক তৎপরতা বিফলে যাওয়ায় হতাশ হয়েছেন তারা। তাই দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে তারা ‘স্বল্প সময়ের সরকার’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে শিগগির গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নতুন করে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবাক ব্যাপার হলো, বাস্তবতা সম্পর্কে জেনেও না জানার ভান করছেন বর্তমান সরকার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে দেশে-বিদেশে যে অসন্তোষ, অগ্রহণযোগ্যতা ও হতাশা দেখা দিয়েছে তাতো এড়িয়ে যাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। দেশের জনগণ আশা করেছিলো, বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করে সরকার একটি নতুন নির্বাচনের রোডম্যাপে চলার ঘোষণা দেবে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী বাহাদুরদের কথাবার্তা ও প্রশাসনের গ্রেফতার অভিযান দেখে কোনো শুভবুদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছেন, তারা ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবেন। আর সরকারের গ্রেফতার অভিযান দেখে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, তারা দমন অবদমনের হার্ডলাইনে গিয়ে বিরোধী দলকে অকার্যকর করতে চান। কিন্তু ক্ষমতার প্রতাপে মত্ত সরকারি দলের নেতারাও একথা অস্বীকার করতে পারবেন না যে, হিংসা হিংসাকেই ডেকে আনে। দমন-পীড়ন সহিংসতাকেই প্রশ্রয় দেয়। অথচ সরকারের মূল দায়িত্বই হলো, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন। দমন-পীড়ন তো এ লক্ষ্যের রোডম্যাপ হতে পারে না। যে কোনো বিবেকবান মানুষই একথা স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের উচিত হবে একটা উইন-উইন পরিবেশ সৃষ্টি করে সমঝোতার পথে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সরকারের মধ্যে তেমন কোনো বোধোদয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে দায়িত্ব পালনের বদলে বিরোধী দলের ইমেজ ক্ষুণœ করার লক্ষ্যে চাতুর্যপূর্ণ প্রোপাগা-াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও স্কুলে আগুন দেয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। আমরা জানি যে, শুধু ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়া ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বাংলাদেশের কোনো নাগরিকই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও স্কুল পোড়ানোর রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। এসব কাজ যারাই করবে তারাই অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনসঙ্গত ব্যবস্থাগ্রহণও অপরিহার্য। তবে অবাক ব্যাপার হলো, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের পরিবর্তে ওই সব ন্যক্কারজনক কাজকে বিরোধী দলের ইমেজ নষ্ট করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিডিয়া ও প্রশাসনের যোগসাজশও চোখে পড়ার মতো। এ প্রসঙ্গে বগুড়ার সুজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রোপাগা-ার এই সময়ে জামায়াত-শিবিরের ওপর দোষ চাপানোর লক্ষ্যে ওই স্কুলের আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান নিজেই সহযোগীদের নিয়ে স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেন। কিন্তু বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ধরা পড়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনগণ তাকে গণধোলাই দিয়ে আটক করে রাখে। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রহমান পুলিশ ও সেনা সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করেন। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায়ও উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চলছে। এ প্রসঙ্গে অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বড়িঘরে হামলার ঘটনা উল্লেখ করা যায়। এ এলাকায় এবার জাতীয় সংসদের হুইপ ও বিদায়ী এমপি শেখ আব্দুল ওহাব আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। তার পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন রণজিত রায়। এ নিয়ে গত এক মাস যাবৎ দুই নেতার সমর্থকদের মাঝে চলছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা। এবার নির্বাচনে হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ার ভোটাররা শেখ আব্দুল ওহাবের পরিবর্তে রণজিত রায়কে ভোট দেয়। এতে পরাজিত সাবেক হুইপ শেখ আব্দুল ওহাব ও তার সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে মালোপাড়ায় হামলা চালায়। এ প্রসঙ্গে এমপি রণজিত রায় বলেন, ওই এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে তার প্রতিপক্ষ শেখ আব্দুল ওহাবের সমর্থকরা জড়িত। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তারা প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব নিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। অথচ গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে যশোরের জেলা প্রশাসক ঐ হামলার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছেন। এই যদি হয় অবস্থা, তা হলে সংখ্যালঘুরা সুবিচার পাবে কেমন করে? দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের বদলে প্রশাসন যদি সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের যন্ত্রে পরিণত হয়, তাহলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কেমন করে? আর সুশাসন না থাকলে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা কীভাবে রক্ষিত হবে?
আমরা জানি, সুশাসনের কথা বলে ক্ষমতায় এলেও গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ অপশাসনের চূড়ান্ত করে ছেড়েছে। ফলে বিভিন্ন জরিপে তাদের পরাজয়ের আগাম ঘণ্টা বেজে উঠেছিল। আর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারী দলের প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় সেই বার্তাকে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছিল। এরপর সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার একের পর এক গ্রহণ করে চাতুর্য ও প্রহসনপূর্ণ কৌশল। সরকারের লক্ষ্য ছিল, বিরোধী জোট যেন নির্বাচনে আসতে না পারে। এই অপকৌশল দেশে-বিদেশে সবার কাছে ধরা পড়ে যায়। তারপরও একমাত্র ভারতের সমর্থনের কারণেই সরকার বিরোধী দলহীন নির্বাচন সম্পন্ন করার সাহস পায়। কিন্তু ট্র্যাজেডি হলো, বিরোধী দলহীন নির্বাচন করতে গিয়ে নির্বাচনটি যে ভোটারবিহীন হয়ে গেল। তাই অপাতত বিজয়ের ঢেকুর তুললেও এই বিজয় যে সরকারের জন্য গলার ফাঁস হয়ে উঠবে তেমন আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু যে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, কমনওয়েলথসহ আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি তা নয়, এখন ভারতের পত্রিকায়ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘ভুয়া’ নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। ভারতের প্রভাবশালী ‘দি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ভুয়া নির্বাচন সত্ত্বেও দিল্লী তার মিত্রের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সমর্থনের কারণেই হাসিনা সরকার নির্বাচন আয়োজনে সাহসী হয়েছিল। তবে ভারতকে এজন্য মূল্য দিতে হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার জন্য ভারত ¯্রােতের বিপরীতে সাঁতার কাটছে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন ও বিরোধী দলবিহীন ভুয়া নির্বাচনে হাসিনা সরকারকে সমর্থন করার কারণে ভারতকে কী মূল্য দিতে হবে তা এ মুহূর্তে আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়, তবে বাংলাদেশের মানুষকে যে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে তা আমরা বেশ ভাল করেই উপলব্ধি করছি। তাই প্রশ্ন জাগে, অর্থহীন এমন একটি নির্বাচনের আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কী?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন