বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

মন্ত্রী এমপিদের দুর্নীতি তদন্ত


দুর্নীতি দমন কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের সাত এমপি ও মন্ত্রীর অর্জিত অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছেন বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এই মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাবেক এমপি এনামুল হক, আসলামুল হক, আব্দুর রহমান বদি ও মোঃ আব্দুল জব্বার প্রমুখ। রিপোর্ট অনুযায়ী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেয়া তথ্যের সঙ্গে দশম জাতীয় সংসদের হলফনামার তথ্যানুযায়ী প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী-এমপি’র অস্বাভাবিকভাবে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেরই সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে শত শত গুণ। তথ্যানুযায়ী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের আয় বেড়েছে একশ’ গুণের বেশি, মাহবুবুর রহমানের ২০ একর সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়ে ৫ বছরের ব্যবধানে উন্নীত হয়েছে ২৮৬৫ একরে।
সুজনের দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০০৮ ও ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে আয়, সম্পদ, দায়দেনা, আয়কর সংক্রান্ত তথ্য এবং পারিবারিক ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৪৮ প্রার্থীর আয় ৫৮ ভাগ বেড়েছে। মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে বেড়েছে ২৪৩ ভাগ, প্রতিমন্ত্রীদের ৪৬৪ ভাগ, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও হুইপদের ক্ষেত্রে বেড়েছে ৩০৭১ শতাংশ পর্যন্ত। সম্পদ বৃদ্ধির এই হার অত্যন্ত অস্বাভাবিক। আমরা মনে করি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, হুইপসহ নেতা-কর্মীদের অবৈধ সম্পদ বৃদ্ধির এই তথ্য অত্যন্ত ভয়াবহ, একটা দরিদ্র দেশের মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন ও শোষণের একটা নিকৃষ্ট উদাহরণ, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রথম যখন দুর্নীতি ও সম্পদ বৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করে কিছু কিছু পত্র-পত্রিকা মন্ত্রী-এমপিদের মুখোশ খুলে দিতে শুরু করে, তখনই নির্বাচন কমিশন দুর্নীতির এই তথ্যগুলো ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকার এর সাথে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত এবং তারা চান না যে, সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ পাক। আমরা সরকারের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।
আমরা মনে করি সরকারের কয়েক জন মন্ত্রী-এমপিই শুধু নন, দু’একজন ব্যতিক্রম ছাড়া দল, দলের অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রায় সকলেই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সাধারণ মানুষের সম্পদ চুরি করে অর্থের ও সম্পত্তির পাহাড় তৈরি করেছেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ঘুষ দুর্নীতি, ভর্তি বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করেননি। ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউ, আইটিসিএল, শেয়ার কেলেঙ্কারী, বেলওয়ের নিয়োগ বাণিজ্য, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকসহ জাতীয়করণকৃত ও বেসরকারি বেশকিছু ব্যাংক এবং অর্থ প্রতিষ্ঠানের ঋণ কেলেঙ্কারী বাংলাদেশের দুর্নীতির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ও অভূতপূর্ব কতিপয় ঘটনা ও অপরাধ। এসব অপরাধের কোনও বিচার হয়নি। এবং সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে স্বাভাবিক বিচারের পথও রুদ্ধ করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় দুদকের দুর্নীতি তদন্তের খবরে আমরা আশান্বিত না হয়ে বরং হতাশই হই বেশি। আমরা মনে করি সরকারের আজ্ঞাবহ ও দুর্নীতিগ্রস্ত দুদক দিয়ে দুর্নীতির বিচার হতে পারে না। এখানে আবার ডাবল স্ট্যান্ডার্ডেরও ব্যাপার আছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বিরোধী দলের হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয় আর সরকারি দলের হলে তারা ভিআইপি মর্যাদা পায়। এ ধরনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে দুর্নীতির বিচার হতে পারে না। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার। তা না হলে লোক দেখানো এ ধরনের তদন্তের প্রয়োজন নেই। জনগণকে তাদের সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে শরিক হতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads