গত তিনমাসে সারাদেশে ১৮ দলীয় জোটের ২৯৪ নেতা-কর্মীকে খুন করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে ১৮৭ জনকে। লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। নেয়া হচ্ছে রিমান্ডে। চালানো হচ্ছে বর্ণনাতীত নির্যাতন। সাতক্ষীরা, যশোর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট প্রভৃতি অঞ্চলে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। অসহায় নারী-শিশু, বয়স্ক মানুষ কেউই রেহাই পাচ্ছে না যৌথবাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের নির্যাতন থেকে। নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূরের ওপর হামলার মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বেড়েই চলেছে। যৌথবাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাধারণ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে। ১৮ দলীয় নেতাদেরই কেবল নয়, তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তাদের শুধু বাড়িঘরই লুণ্ঠন করছে না, সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা। ব্যবসা বাণিজ্য, দোকানপাট সবকিছু গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এমনই এক ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে দেশজুড়ে। যেখানে সেখানে মানুষের মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা বাড়িঘরে থাকতে পারছে না বলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি তারা কৃষিকাজও করতে পারছে না। অনেকের মাঠের ফসলও গুঁড়িয়ে অথবা পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক এলাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘিœত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল-মাদরাসায়ও যেতে পারছে না ঠিকমতো।
সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কেউ পারছে না। থানা-পুলিশও এদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ গ্রহণ করছে না। নির্বিচারে চলছে গ্রেফতার অভিযান। ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, এনজিও কর্মী, সরকারি কর্মচারী কেউই রেহাই পাচ্ছেন না সন্ত্রাসীদের নির্যাতন থেকে। রাজধানীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের স্কুল-মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছেন সন্ত্রাসীদের দ্বারা। সরকারদলীয় বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে মারামারি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের দায়ভার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপি, ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের ওপর। সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিংবা সংঘর্ষে কেউ আহত-নিহত হলেও দোষ চাপানো হচ্ছে ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর। ঠুকে দেয়া হচ্ছে মিথ্যে মামলা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যশোরের মালোপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে সরকারদলীয় লোকেরাই। এমনটি বলছেন নির্যাতনের শিকার লোকদের জনপ্রতিনিধি নিজেও। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানও এমন অভিযোগ করেছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর। অথচ সরকারের তরফ থেকে জামায়াত-শিবিরের ওপর এর দায় চাপিয়ে বারবার বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। বিভ্রান্ত করা হচ্ছে দেশ ও জাতিকে। একশ্রেণীর প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও সরকারি অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে ও ভিত্তিহীন মামলা ঠুকে দিয়ে তাদের হয়রানির লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে এমনটি করা হলে সরকারি দলের দেউলিয়াত্বই যে প্রকট হয়ে দেখা দেবে তা কি ক্ষমতাসীনরা বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছেন না এখনও? অগ্রহণযোগ্য ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যেমূলক মামলা-হামলা করে যে পার পাওয়া যাবে না তা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও তারা মাছ ঢাকতে চাচ্ছেন শাক দিয়েই। তবে কাজটি যে শুভবুদ্ধির পরিচায়ক নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্ত্রাসের মূল হোতা কারা তাও মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে দ্রুত।
আওয়ামী লীগকে একটি গণতান্ত্রিক দল বলা হয়। গণতন্ত্রের জন্য এদলটি দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতির ময়দানে বিচরণ করছে। এ জন্য এদেশের মানুষ তাদের পুরস্কৃত করেছে। ক্ষমতায় বসিয়েছে। কিন্তু এটাও সত্য যে, এ দলটিই আবার গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে বাকশাল কায়েম করে এদেশের মানুষকে হতাশ করেছে। অনেকের ধারণা পুরনো এবং অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দলটি আবারও বাকশালের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। একই লক্ষ্যে তারা বারবার বেশ উচ্চকণ্ঠে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্মূলের ঘোষণা করছেন। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে তা ভাবলে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচন কমিশন কর্তৃৃক প্রদত্ত এর নিবন্ধনও ছিল। কিন্তু আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করার কারণে গণতান্ত্রিক দলটির নিবন্ধন অন্যায়ভাবে বাতিল করা হয়েছে। তবে এ দলের রাজনৈতিক কর্মকা- নিষিদ্ধ হয়নি। গত ২৩ জানুয়ারি জামায়াতকে সরকার তার পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ছাড়া আরও অনেক দল রয়েছে বাংলাদেশে। তারা নির্বিঘেœ রাজনৈতিক কর্মকা- চালাতে পারলে জামায়াত কেন পারবে না? আমরা মনে করি, ক্ষমতাসীনদের ঘাড়ে যে বাকশালের ভূত চেপে বসেছে তা অচিরেই দূরীভূত হবে। বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে মানুষের মনে স্বস্তি আনতে উদ্যোগ নেবে সরকার। এ জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলকে যেমন গণতান্ত্রিক উপায়ে কর্মসূচি পালন করতে দিতে হবে, তেমনি এর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্ত করে দিতে হবে। বন্ধ করতে হবে হত্যা, গুম এবং সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন।
ভাল
উত্তরমুছুন