শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৪
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস
Posted on ৩:৪৭ PM by Abul Bashar Manik
গণতন্ত্রের একটি সূত্র আছে এবং
এই সূত্র সারা বিশ্বে চালু আছে। পদ্ধতিগতভাবে কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল বিষয়ে সবাই
একমত। গণতন্ত্রের দু’টি পদ্ধতি গোটা বিশ্বে এখন চলমান। একটি হলো সংসদীয়
গণতন্ত্র, অন্যটি প্রেসিডেনসিয়াল পদ্ধতি; কিন্তু জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে
গণপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত হওয়ার বিধান গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় একই রকম; কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে ‘সূত্র’ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে দেখা গেল, তাতে মনে হয় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনেরা
গণতন্ত্রের নতুন সূত্রের আবিষ্কারকর্তা হিসেবে দেশ বিদেশে পরিচিতি অর্জন করতে চান।
বিভিন্ন সভা সমিতিতে এর চমৎকার ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে। সেটি হলোÑ খালি মাঠ থাকলে গোল তো হবেই। প্রতিপক্ষ না থাকলে ডজন ডজন গোল হবে। এবারের নির্বাচনে
গণতন্ত্রের নতুন সূত্র আবিষ্কার হয়েছে। সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ভোটারদের
প্রয়োজন হয় না এটাও একটি নতুন সূত্র। এবার ১৫৩ আসনে বিজয় অর্জন করতে ভোটের মালিকদের
প্রয়োজন হয়নি। বাকি ১৪৭ আসনে চরম সহিংসতা দমন করতে যৌথবাহিনীর সরাসরি গুলিতে নিহতের
সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়ে যায়। এটাও গণতন্ত্র রক্ষার আরেকটি সূত্র। কারণ সরকারি দলের কেউ কেউ
এটা স্বীকার করেছেন। গুণীজনদের লেখায়ও তা জানা গেছে। গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে সংখ্যালঘুদের
জানমালের কেন ব্যাপক ক্ষতি করতে হবে? যৌথবাহিনী তখন নির্লিপ্ত ভূমিকা
পালন করবে ওপরের নির্দেশে এটা করতে হবে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা
প্রমাণের জন্য। এটা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে সরকার নিজেদের অহিংস প্রমাণের
জন্য। সংখ্যালঘুরা এভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে গণতন্ত্রসূত্রের আবিষ্কারকদের কাছে।
২০১৩ সালে গণতন্ত্রের ‘নানা সূত্র’ দেখে মনে হচ্ছে, সত্যিকার গণতন্ত্র কোনটা, সেটা বোঝা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান
সরকার বিগত পাঁচ বছরে গণতন্ত্রের যে নতুন পাঠশালা খুলেছে, সেখানে নতুন নতুন সূত্র শেখানো হচ্ছে দলীয় লোকজনকে। ভিন্নমত (শাসক দল ছাড়া)
এবং স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকারের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ চলছে। এসব অধিকার
হলো বিরোধী দলের অফিস খোলা রাখা, সভা-সমাবেশে মিছিলসহ এবং রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি
পালন করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়া। এগুলো গণতান্ত্রিক অধিকার। এসব অধিকার পালনে বাধা
দেয়া বোধহয় গণতন্ত্রের আরেকটি সূত্র। সূত্র আবিষ্কারের কারণ হিসেবে
তারা বলতে চাইছেন, ‘আগাম সংবাদ পাওয়া গেছে ওই সব কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংসতা হবে, যা করবে বিএনপি-জামায়াত-শিবির
ক্যাডারেরা।’ কর্মসূচির আগেই মামলা হামলা দিয়ে গ্রেফতার অভিযান এটা আরেকটা ভয়ঙ্কর গণতান্ত্রিক সূত্র, যা এই সরকারের আমলে জনগণ বারবার
দেখতে পেয়েছে। এমন মন্তব্য ফেসবুক, অনলাইন জরিপ এবং পাঠক মতামতে
প্রকাশ পেয়েছে যে, সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার কারণে
দেশে আজ গণতন্ত্র বিপন্ন। এ জন্য সরকারই দায়ী। ১৪ জানুয়ারি, প্রথম আলো সম্পাদকীয়তে লিখেছে ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা
এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ। বিরোধী দল নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে না পারলে রাজনীতির
অনিয়মতান্ত্রিক পথে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। নতুন সরকারের জন্য সেই ঝুঁকি নেয়া মোটেই সমীচীন হবে না।’ ১২ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘একদলীয় শাসনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ’। দেশের বিরোধীদলীয় নেতা নিজের বাসগৃহে যেভাবে অবরুদ্ধ ছিলেন, সেটাও ছিল গণতন্ত্রের জন্য আরেক নতুন ‘সূত্র’। বিগত ৪২ বছরে এ ধরনের গণতন্ত্র জাতি প্রত্যক্ষ করেনি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ জানুয়ারি, এই ১৬ দিন বালুভর্তি ছয়টি ট্রাক, পুলিশ ও র্যাবের শত শত সদস্য, ফুটন্ত গরম পানিভর্তি পানি কামান
এবং তিন স্তরের ব্যারিকেড যা দেখলে মনে হবে কোনো যুদ্ধ চলছে। সরকারের শীর্ষপর্যায়ের
হুকুমে যে এ কাজটি হয়েছে তা পত্রিকায় উঠেছে। সরকারের ভাষ্য বিরোধী দলের নেতার ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ এসব করা হচ্ছে; কিন্তু জনগণ বুঝতে পেরেছে ‘মার্চ টু ডেমোক্র্যাসি’ প্রতিহত করা এবং নীলনকশার নির্বাচন সম্পন্ন করার
জন্যই সরকার এ কাজ করেছে। একতরফা নির্বাচনের পর এসব ব্যারিকেড প্রত্যাহার করার অর্থ দাঁড়ায় বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তা বিধানের
জন্য এসব করা হয়নি। নতুন আবিষ্কৃত গণতন্ত্রের এ আরেক সূত্র।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন