২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি রোববার দিনটি দুনিয়ার ইতিহাসে লাল অক্ষরে লিখা থাকবে। এই দিন বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্যে আড়াই শতাংশেরও কম সংখ্যক ভোটারের সমর্থন নিয়ে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া একটি পরিহাসের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক একটি দল জাতীয় সংসদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসন দখল করে একটি নতুন সরকার গঠন করেছে। এই সংসদের ৩০০ আসনের মেধ্য ১৫৩টি আসনে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনা ভোটে শাসকদল ও তার জোটের প্রার্থীরা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে জনগণের প্রতিরোধের মুখে এবং তাদের অংশগ্রহণ ছাড়াই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দলগুলো এতে অংশগ্রহণ করেছে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক কোন সংস্থাই বলতে গেলে এতে পর্যবেক্ষক পাঠাননি, একমাত্র ফেমা এবং আওয়ামী লীগের বশংবদ দুই একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া। এই নির্বাচনের বদৌলতে বাংলদেশের কোন কোন এলাকা, বিশেষ করে পার্বত্য এবং দুর্গম অঞ্চলসমূহের পোলিং অফিসাররা হেলিকপ্টারে চড়ার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছিলেন। তাদেরকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সামগ্রীসহ কেন্দ্রে পৌঁছিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও ভোট কেন্দ্রের অবস্থার উন্নতি হয়নি। ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। যেমন বান্দরবানের রুমার একটি কেন্দ্রে ১২৫০ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৮৫টি। আরেকটি কেন্দ্রে ৮৭৫টি ভোটের মধ্যে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৪২টি। সরকার তার সমগ্র আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়েও ভোটরদের কাছে টানতে পারেননি। এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় যে বৈশিষ্ট্যটি ছিল সেটি হচ্ছে বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের অবস্থান। সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েও ১৮ দলের ক্ষুদ্রতম কোন দলকেও সরকার নির্বাচনে আনতে পারেনি। তাদের মন্ত্রিত্ব ও বড় বড় পদের লোভ দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রলোভন কোন কাজে আসেনি। পূর্বের সংসদ না ভেঙ্গে পরিহাসের নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পড়িয়ে নবম সংসদের সদস্যদের মেয়াদপূর্তির ১২ দিন আগেই শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি তার মন্ত্রিসভার ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রীর শপথ বাক্য পড়িয়েছেন। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মাত্রার এই যাত্রাকে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বাংলাদেশে একদলীয় শাসনের সূচনা বলে অভিহিত করেছেন। ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন দেশ এই মন্ত্রিসভাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠায়নি। কারো কারোর মতে রাশিয়া এই নির্বাচন ও নতুন সংসদকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কিন্তু তাদের বার্তার শব্দ চয়ন লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আসলে এটা শুভেচ্ছাবার্তা নয় বরং সরকারের জন্য এটি নিন্দাবার্তা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছে যে, এটি হচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রা। তাদের এই মন্তব্য তাৎপর্যবহ, স্বৈরতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এখানে যদি ব্যক্তির স্বৈরাচার ও দলের স্বৈরাচারকে আলাদা করে দেখা হয়ে থাকে তাহলেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য সামান্য। ব্যক্তির স্বৈরাচার দলকে যখন গ্রাস করে তখন দলব্যক্তির দুঃশাসন ও হঠকারিতার বাহন হয়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলের অবস্থা অনেকটা তাই এবং এ প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়াকে বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন বলা যায়। এটা অনেকটা পাগলের মাথা খারাপ হওয়ার মতো। মানুষের মাথা খারাপ হলে তাকে পাগল বলে, আবার পাগলের পাগলামি যখন সকল সীমা অতিক্রম করে তখন রসিক জনেরা বলেন যে, পাগলের মাথা খারাপ হয়েছে। সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক শুরু থেকেই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এরশাদের স্বৈরাচার ছিল সামরিক স্বৈরাচার এবং আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার স্বৈরাচার হচ্ছে বেসামরিক স্বৈরাচার। এক্ষেত্রে সামরিক এবং বেসামরিক স্বৈরাচার একত্র হয়ে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী এক নায়কতন্ত্রের জন্ম হয়েছে বলা যায়। তবে এক্ষেত্রে এরশাদ যে তেলেসমাতিটা দেখিয়েছেন বৃদ্ধ বয়সে তা না দেখালেও পারতেন। তিনি এবং তার গুরু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নিকৃষ্টতার যে অতল গহ্বরে নিয়ে গেছেন তা থেকে সভ্যতা ও শিষ্টাচারের পর্যায়ে তাকে তুলে আনতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা, শতাব্দীও লেগে যেতে পারে। শেখ হাসিনার নির্বাচনী নাটকের মাঝামাঝি এসে এরশাদ তার জাতীয় পার্টির এমপি প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী তার নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন। তার দলের গোপাল ভাড়েরা জাতিকে অনেক কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু পরে দেখা গেল যে তারা বিক্রি হয়ে গেছেন এবং সর্বত্র বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। একদিন হঠাৎ করে র্যাব তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেল। তার হদিস পাওয়া গেল সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। বলা হলো তিনি অসুস্থ এবং তা জেনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। দেশব্যাপী হাস্যরোলের সৃষ্টি হলো। তিনি ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে বলেছিলেন যে, ১০০টি লোককে জিজ্ঞাসা করুন একটি লোককেও শেখ হাসিনার পক্ষে পাবেন না। তিনি ভারতের জামায়াত বিরোধিতার কথাও শুনালেন। শেখ হাসিনা তাকে আটক করে হাসপাতালে পাঠালেন। হাসপাতালে তিনি রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন না। গলফ খেলায় মত্ত হয়ে পড়লেন। এর মধ্যে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলো এবং তার দলীয় প্রার্থীদের সাথে তিনিও নির্বাচিত হয়ে গেলেন। অন্যান্য এমপির সাথে তিনি শপথ নিলেন না। ১১ জানুয়ারি তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে শপথ বাক্য উচ্চারণ করলেন এবং ১২ জানুয়ারি হাসপাতাল ছেড়ে বঙ্গভবনে মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগদান করে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের দায়িত্ব নিয়ে বাসায় ফিরলেন। তার মুখে ছিল এক রাশ তৃপ্তির হাসি। বাকিটা পাঠকরা বুঝে নিতে পারেন।
১২ জানুয়ারি যে সময়ে তৃতীয় বারের মতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করছিলেন তখন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ত্রাস আদম বাহিনীর প্রধান ৫টি হত্যাসহ ১০টি মামলার পলাতক আসামী পৌর কাউন্সিলর আদম আলীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপি খান টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মণিরামপুর থানা ঘেরাও করা হয় এবং এই সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেয়ার জন্য জেলার পুলিশ প্রশাসনের উপর দলের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। পুলিশ সূত্র বিষয়টি স্বীকার করেছে। একই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীরা শিবির নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে উপর্যুপরি গুলী ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন শিবির নেতাকে হত্যা করেছে। ৫ জন শিবির নেতা-কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং সেখানে পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত সবাই ছাত্রশিবিরের। এখানে আগ্নেয়াস্ত্রধারী আক্রমণকারী কেউ গ্রেফতার হননি। দৈনিক যুগান্তরের খবর অনুযায়ী সরকারদলীয় হামলাকারীরা ফেনী ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তথা দিনাজপুর, নেত্রকোনা, ঝালকাঠি, বরিশাল ও যশোরের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করেছে এবং এই নির্যাতনের সাথে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটছে ্ এবং চাঁদা না দেয়ার ফলে শাসক দলের ক্যাডাররা তাদের মারধর ও বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন ফল হচ্ছে না। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে শেখ হাসিনার তৃতীয় মাত্রার সরকার কেমন হবে।
সরকারের পুলিশ বাহিনী জঙ্গি পুস্তক অভিহিত করে বিভিন্ন স্থান থেকে কোরআন-হাদীস ও ইসলামী বই-পুস্তক বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যাবার ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যারা ইসলামের কথা বলেন, ইসলামের দাওয়াত দেন তাদের হত্যা ও নিগ্রহের মাত্রা অস্বভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, বাংলাদেশে সেদিন সম্ভবত বেশি দূরে নয় যে দিন জিহাদী পুস্তক হিসেবে পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এখন হচ্ছে অঘোষিতভাবে, তখন হবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে। ’৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে নিরাপদে কোন মুসলমানের জানাযায়ও মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হবে এটা কি ব্রিটিশ আমলেও আমরা কল্পনা করেছি? নীলফামারীর রামগঞ্জে যৌথবাহিনীর তা-বে মুসলমানরা ঘর ছাড়া এবং একটি পত্রিকা খবর দিয়েছে যে, সেখানে অধিকাংশ মসজিদে আযান ও জামাত হচ্ছে না। যে কয়টি মসজিদ খোলা আছে সে কয়টি মসজিদেও চার-পাঁচ জনের বেশি মুসল্লি আসে না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনী শহরে গ্রামে মুক্তি খুঁজে যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে যেত। এখন স্বাধীন বাংলাদেশে যুবকদের সাথে যুবতী এবং পর্দানশীন মেয়েদেরও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধরাও রেহাই পাচ্ছে না। এটি কি একটি স্বাধীন দেশের নমুনা? সরকার তার নির্বাচনের ব্যর্থতা, গণতন্ত্র হত্যা এবং ভারতীয় অনুপ্রেরণায় সংখ্যালঘুরা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার নিপীড়নের উপর থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে যৌথবাহিনী দিয়ে জনপদ তছনছ করে দিচ্ছে। প্রতিবেশি ভারত বলছে তারা এদেশকে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেখতে চান এবং শেখ হাসিনার পাশে তারা রয়েছেন। তাদের অনুপ্রেরণায় শেখ হাসিনা দেশের দশমিক সাড়ে সাতানব্বই ভাগ ভোটারের অধিকার ও চেতনাকে উপেক্ষা করে দেশবাসীর ওপর স্বৈরাচারের স্টিম রোলার চালাচ্ছেন। এটা কি স্বাধীন দেশ না ভারতের অঙ্গ রাজ্য? জনসংখ্যার দৃষ্টিকোণে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে কথিত ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যায় ও স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা পালন করেছে তা দেশটির প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত করে দিয়েছে বলে আমরা মনে করি।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহানায়ক বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আমি জামায়াতে ইসলামীকে আর দোষ দেই না। জামায়াত ৪২ বছর আগে যা বুঝেছিল আমরা ৪২ বছর পর তা বুঝেছি। দেশের অবস্থা এমন হবে জানলে মুক্তিযুদ্ধ করতাম না। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঘক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনও অনুরূপ কথা বলেছেন এবং ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আফসোস করেছেন। জামায়াত নেতারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি। তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের আশঙ্কা করে অখ- পাকিস্তানের কাঠামোতে থেকে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ যেখানে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল সেখানে তারা দেশের ভেতরে অবস্থান করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের অত্যাচার থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে। তারা লুটপাট করেনি মানুষও হত্যা করেনি। তারা লুটপাটের সম্পত্তি ভোগ করেছেন বা করেছে এমন নজির নেই। ৪২ বছর পরে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং হচ্ছে এই অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, এবং মুক্তিযুদ্ধের নামে যারা দেশের মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে বিদেশে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাদের মুখে শোনা কথা, কোন প্রত্যক্ষদর্শীর নয়। জনাব কাদের সিদ্দিকী ও শাহ মোয়াজ্জেমের বিলম্বিত বোধোদয়ের জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে তাদের এই বোধোদয় এই মুহূর্তে জাতিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না বলে আমি মনে করি। বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে একটি কথা আছে। ‘মরলে চিনে হাঁই, ভাঙলে চিনে লাই।’ অর্থাৎ কিছু কিছু মহিলা আছেন যারা স্বামীর মৃত্যুর পর তার মর্যাদা বুঝতে পারেন। কৃষকদের জন্যেই লাই বা বাঁশের তৈরি বিশাল এক ধরনের পাত্র হচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু। এটি ভাঙলে তারা বিপাকে পড়েন এবং তার মর্যাদা বোঝেন। বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা যায় না এবং ৪২ বছর পূর্বের অবস্থানেও আমরা আর ফিরে যেতে পারি না। ভারত আমাদের ১৯৭১ সাল নয়, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান এবং তারা এখানে কিছু দালালও তৈরি করেছেন।
ভাষা সৈনিক নামে কথিত আহমেদ রফিক গত ৩ জানুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটির ১৫তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের এক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ‘ভারত-বিভাগ বিচার : প্রাসঙ্গিক পূর্ণ বিবেচনা’ শীর্ষক বক্তৃতায় বলেছেন যে, ভারত বিভাগ কোন সুফল বয়ে আনেনি। তার বক্তৃতায় তিনি জিন্নাহর চিন্তা-ধারার সমালোচনাও করেছেন। তার এই বক্তৃতায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও ভারতীয় দাসত্ব বরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ভারত যদি বিভাগ না হতো তিনি নামের সাথে ভাষা সৈনিক শব্দটি ব্যবহার করতে পারতেন না এবং আজকের স্বাধীন বাংলাদেশও হতো না। বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিল্প, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যে সাফল্য তা কল্পনাই থেকে যেত। পূর্ববঙ্গ, পশ্চিম বঙ্গের পশ্চাদভূমি থাকতো এবং আহমেদ রফিকের ন্যায় ব্যক্তিরাসহ এ দেশের মুসলমানরা ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতের গোলামী করতেন। তার মতো ভারতের অনেক কৃতদাস বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনে এখন বিচরণ করছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তার অবস্থান আর বুদ্ধদেব বসুর অস্থানের মধ্যে আমি যথেষ্ট মিল খুঁজে পাই। বুদ্ধদেব বসু সম্প্রতি বলেছেন যে, তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ও ভারতবিরোধী শক্তি দেখতে চান না। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের ব্যাপারে তার এই উক্তি অত্যন্ত আপত্তিকর। কিন্তু আপত্তিকর হলেও তাদেরই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন আমাদের সরকার। জনগণের মেন্ডেট নিয়ে নয় বরং তাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে। জামায়াতে ইসলামী এখন বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের চিন্তা-চেতনার প্রতিক হয়ে উঠেছে। তারা এই দেশের স্বাধীনতার প্রধান রক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং যারা বিদেশি আধিপত্যবাদের দালাল তারা এখন জামায়াতকে নির্মূল করার জন্যে বদ্ধপরিকর। একজন মনীষী বলেছেন সত্যকে কেউ অস্বীকার করলে সত্য মরে না, তার ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় তাদের যারা তাকে অস্বীকার করে। আমরাও তার সাথে একমত।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন