৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরদিন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ঘোষণার মাত্র একদিন পর, ৭ জানুয়ারিই পুলিশ নতুন করে গ্রেফতার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা মামলা না থাকা সত্ত্বেও প্রথমে গ্রেফতার করেছে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে। এরপর সন্ধ্যায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে ধরে নিয়ে গেছে তার বাসভবন থেকে। সেখানে ১৮ দলীয় জোটের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তিনি। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকেও গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দারা। বিএনপির তিন নেতাকেই ডিবির সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে কোনো আইনজীবীকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। গ্রেফতারের কারণ জানা গেছে গতকাল ৮ জানুয়ারি রমনা থানায় বোমা হামলা চালানোর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। অথচ আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ওই মামলার অভিযোগপত্রে তিনজনের কারো নামই ছিল না। উল্লেখ্য, বিরোধীদলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এবং বিএনপির দুই এমপি নাজিমউদ্দিন আলম ও হারুনুর রশিদকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু সংসদ অধিবেশন সামনে বলে তাদের সম্ভবত ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপির অন্য কয়েকজন নেতাকেও পুলিশ ধাওয়ার মুখে রেখেছে। এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়নে নেমে পড়েছে পুলিশ। এই সরকারের আমলে প্রথম থেকে দেশজুড়ে গ্রেফতারের অভিযান চালানো হলেও বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে কিছু বিশেষ কারণে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে পরিকল্পিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর হয়তো গ্রেফতার ও দমন-নির্যাতন বন্ধ করা হবে এবং ক্ষমতাসীনরা হয়তো সমঝোতার পথে পা বাড়াবেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টোটাই। নির্বাচনের পরদিনের সংবাদ সম্মেলনে এবং ৭ জানুয়ারি বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে ১৪ দলীয় নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শুধু ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর ঘোষণাই দেননি, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রতি কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও জারি করেছেন। নতুন পর্যায়ে গ্রেফতারের অভিযানও শুরু হয়েছে একই কারণে। বলা দরকার, প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলতে দেরি করলেও প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দলকে নির্মূলের ভয়ংকর কর্মকা- চালাচ্ছেন তারা বেশ কিছুদিন ধরেই। এতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাদের অনেককে রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু পর্যন্ত করে ফেলেছে পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রেফতার এবং নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে পুরো দেশকেই তারা মৃত্যুপুরিতে পরিণত করেছিলেন। এ সময় যৌথ অভিযানের নামে শত-শতজনকে গ্রেফতার করে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এসব অভিযানে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে বিজিবিকে তো নামানো হয়েছেই, সেনাবাহিনীকে দিয়েও ভয়-ভীতি দেখানোর কৌশল নিয়েছিল সরকার। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সরকার দলীয় গু-া-সন্ত্রাসী ও ক্যাডাররাও। এভাবে সব মিলিয়েই দেশে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন ক্ষমতাসীনরা। উদ্বেগের কারণ হলো, ভোটারবিহীন এবং তামাশার নির্বাচনের পরও সরকারের নীতি ও কর্মকা-ে কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তথাকথিত দশম সংসদকেও টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন তিনি। একই উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে তিনি ‘চুপচাপ’ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যা কিছু করার তিনি একাই সব করবেন। সেটাই করে দেখাতে শুরু করেছেন তিনি। ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী যা খুশি তা করার ইচ্ছা পোষণ করতেই পারেন, অন্যদিকে আমরা কিন্তু মনে করি না যে, দেশ তার একার ইচ্ছায় চলবে। চলবে যে না তার প্রমাণও বিগত মাত্র কিছুদিনের মধ্যে পাওয়া গেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ‘দাওয়াত’ দেয়ার নামে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন নাটক সাজানোর পর থেকে একদিকে যেমন গণগ্রেফতারের অভিযান শুরু হয়েছিল, অন্যদিকে তেমনি ১৮ দলীয় জোটও হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে কষেই জবাব দিয়েছিল। দু’দফায় ৬০ ঘণ্টার হরতালের পর প্রথমে ৭২ ঘণ্টার এবং পরে ৮৪ ঘণ্টার হরতাল করেছে জোট। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দিয়েছে অবরোধের কর্মসূচি। ২৬ নবেম্বর থেকে সাফল্যের সঙ্গে চলে আসা অবরোধের সঙ্গে সবশেষে যুক্ত হয়েছে আবারও হরতাল। ফলে সারাদেশ অচল হয়ে পড়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ‘সাধের’ নির্বাচনও প্রায় লাটে উঠেছে। ভোট পড়েছে পাঁচ থেকে সাত শতাংশ, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর হিসাবে বড়জোর আড়াই শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গী-সাথীরা লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ফেললেও এর মধ্য দিয়ে জনগণের দেয়া মেসেজ বা বার্তায় কিন্তু কোনো অস্পষ্টতা নেই। বার্তার মূলকথা হলো, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু বাতিল করলেই চলবে না, গণগ্রেফতারের অভিযান বন্ধ করে নেতা-কর্মীদেরও অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে সেই সাথে ১৮ দলীয় জোটের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিধানও সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু ও গণতন্ত্রসম্মত এই পথে ফিরে আসার পরিবর্তে দমন-নির্যাতন এবং গ্রেফতার চালিয়ে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার ও টিকে থাকার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ঘটতে পারে গণঅভ্যুত্থানÑ যার পরিণতি ক্ষমতাসীনদের জন্য অবশ্যই শুভ হবে না। অমন অশুভ পরিণতি এড়াতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে স্বৈরশাসকের নীতি ও কর্মকা- পরিহার করে দ্রুত গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসতে হবে। আমরা মনে করি নির্যাতন নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সংযম, শিষ্টাচার ও গণতান্ত্রিক পন্থার অনুসরণে বিদ্যমান সঙ্কট দূর করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
তথাকথিত দশম সংসদকেও টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন তিনি। একই উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে তিনি ‘চুপচাপ’ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যা কিছু করার তিনি একাই সব করবেন। সেটাই করে দেখাতে শুরু করেছেন তিনি। ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী যা খুশি তা করার ইচ্ছা পোষণ করতেই পারেন, অন্যদিকে আমরা কিন্তু মনে করি না যে, দেশ তার একার ইচ্ছায় চলবে। চলবে যে না তার প্রমাণও বিগত মাত্র কিছুদিনের মধ্যে পাওয়া গেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ‘দাওয়াত’ দেয়ার নামে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন নাটক সাজানোর পর থেকে একদিকে যেমন গণগ্রেফতারের অভিযান শুরু হয়েছিল, অন্যদিকে তেমনি ১৮ দলীয় জোটও হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে কষেই জবাব দিয়েছিল। দু’দফায় ৬০ ঘণ্টার হরতালের পর প্রথমে ৭২ ঘণ্টার এবং পরে ৮৪ ঘণ্টার হরতাল করেছে জোট। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দিয়েছে অবরোধের কর্মসূচি। ২৬ নবেম্বর থেকে সাফল্যের সঙ্গে চলে আসা অবরোধের সঙ্গে সবশেষে যুক্ত হয়েছে আবারও হরতাল। ফলে সারাদেশ অচল হয়ে পড়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ‘সাধের’ নির্বাচনও প্রায় লাটে উঠেছে। ভোট পড়েছে পাঁচ থেকে সাত শতাংশ, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর হিসাবে বড়জোর আড়াই শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গী-সাথীরা লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ফেললেও এর মধ্য দিয়ে জনগণের দেয়া মেসেজ বা বার্তায় কিন্তু কোনো অস্পষ্টতা নেই। বার্তার মূলকথা হলো, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধু বাতিল করলেই চলবে না, গণগ্রেফতারের অভিযান বন্ধ করে নেতা-কর্মীদেরও অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে সেই সাথে ১৮ দলীয় জোটের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিধানও সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু ও গণতন্ত্রসম্মত এই পথে ফিরে আসার পরিবর্তে দমন-নির্যাতন এবং গ্রেফতার চালিয়ে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার ও টিকে থাকার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ঘটতে পারে গণঅভ্যুত্থানÑ যার পরিণতি ক্ষমতাসীনদের জন্য অবশ্যই শুভ হবে না। অমন অশুভ পরিণতি এড়াতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে স্বৈরশাসকের নীতি ও কর্মকা- পরিহার করে দ্রুত গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসতে হবে। আমরা মনে করি নির্যাতন নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সংযম, শিষ্টাচার ও গণতান্ত্রিক পন্থার অনুসরণে বিদ্যমান সঙ্কট দূর করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনআমরা এ কোন বাংলাদেশে আসলাম? আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই। www.bloggermaruf.blogspot.com
উত্তরমুছুন