এবনে গোলাম সামাদ
বাংলা ভাষায় ‘কাঁঠালের আমসত্ত্ব’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। যার অর্থ হলো উদ্ভট কোনো
কিছু করতে চাওয়া। অথবা উদ্ভট চিন্তা- চেতনাকে প্রশ্রয় দেয়া। অথবা অবাস্তব অমূলক বস্তু।
আমাদের রাজনীতি যেন হয়ে উঠতে যাচ্ছে কাঁঠালের আমসত্ত্ব। যা ছিল একদিন পূর্ব পাকিস্তান
তাই আজ পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। পাকিস্তানের উদ্ভব হওয়াটা যদি ভুল হয়ে থাকে, তবে আজকের বাংলাদেশের উদ্ভব হওয়াটাকেও বলতে হবে ভুল। বাংলাদেশ হারাবে তার অস্তিত্বের
যুক্তি (Raison d’etre)। বাংলাদেশকে মিশিয়ে দিতে হবে ভারতের সাথে। আমরা আমাদের
জাতিসত্তার সম্পর্কে এমন অনেক কথা বলছি যে, তা হয়ে উঠতে চাচ্ছে কাঁঠালের
আমসত্ত্ব। এ বিষয়ে আমাদের চিন্তা-চেতনাও হয়ে উঠতে চাচ্ছে উদ্ভট। এই উপমহাদেশে পাকিস্তান
আন্দোলন কেন হতে পেরেছিল আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই তা জ্ঞাত নয়। তাদের উচিত
এ বিষয়ে জ্ঞাত হওয়ার চেষ্টা করা। কারণ তাদের ওপর নির্ভর করবে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
বিমলানন্দ শাসমল একটি বই লিখেছেন (১৯৯১) ভারত কী করে ভাগ হলো নামে। বইটি পড়লে আমাদের
প্রজন্ম যথেষ্ট উপকৃত হতে পারবে বলে আমার মনে হয়। বইটির এক জায়গায় বিমলানন্দ শাসমল
বলেছেন- ‘বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দেয়ার জন্য আমরা ভারতীয়রা কৃতিত্বের দাবি
করি এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে এই সময়ে এশিয়ার মুক্তিসূর্য বলেও অভিহিত করা হতো।
কিন্তু বিনীতভাবে বলতে চাই- যে লোকটির জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারল তার নাম মুহাম্মদ
আলী জিন্নাহ। ১৯৪৭ সালের ২০ জুন পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা জিন্নাহর আহ্বান অগ্রাহ্য
করে যদি পাকিস্তানে যোগ না দিতেন এবং ভারতে যোগ দিতেন এবং তারপর ১০-২০ বছর বাদে যে
কারণে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইলেন, অর্থাৎ ভাষার পার্থক্যের জন্য
ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে স্বাধীনতা লাভ করতে চাইতেন; তা হলে শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা বাঙালিরা ফুলের মালা দিয়ে পূজা করতাম, না রাস্তায় গুলি করে মারার দাবি করতাম? প্রায় একই কারণে শেখ আব্দুল্লাহকে
কত বছর কারাগারে থাকতে হয়েছিল, নিশ্চয় সে কথা কেউ ভোলেনি। পাকিস্তানে স্বেচ্ছায়
যোগ দিয়ে তারপর পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি জানালে পাকিস্তান পূর্ব বাংলায়
যে অত্যাচার করেছিল, আমাদের ভারতবর্ষে স্বেচ্ছায় যোগ দিয়ে তারপর ভারত
থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি জানালে ভারতবর্ষ পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের চেয়ে বেশি না
হোক কম অত্যাচার করত না। মিজো-নাগাদের ওপর আমরা যে অত্যাচার করেছিলাম, পৃথিবীর লোক কোনো দিন সে সংবাদ জানতে পারবে না।...’
বিমলানন্দ
শাসমলের পিতা বীরেন্দ্র শাসমল ছিলেন বাংলার প্রাদেশিক কংগ্রেসের একজন খ্যাতনামা নেতা।
বিমলানন্দ শাসমল নিজে ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় মুসলমানের ছুরিকাঘাতে গুরুতররূপে
আহত হন ও বেশ কিছ ুদিন হাসপাতালে থাকেন। কিন্তু তবুও তিনি মুসলিমবিদ্বেষী হননি। এই
উপমহাদেশের রাজনীতি নিয়ে তার বই ‘ভারত কী করে ভাগ হলো’- তে আলোচনা করতে চেয়েছেন অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে। এ রকম বই লেখা যথেষ্ট কৃতিত্বের
পরিচায়ক। তাই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বলছি বইটি জোগাড় করে পড়ে দেখার জন্য।
আমাদের
জাতিসত্তা নিয়ে চলেছে বিতর্ক। বিতর্ক চলেছে আমরা বাঙালি না বাংলাদেশী। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর
রহমানের কাছে মনে হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ আমাদের জাতিত্তার প্রকৃত পরিচয়বহ নয়। কারণ, বাংলা যাদের মাতৃভাষা তারা সবাই বাস করছেন না বাংলাদেশে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ
বিভক্ত হয়ে আছেন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে। বাংলা যাদের মাতৃভাষা তাদের প্রায় শতকরা
৬০ ভাগ হলেন বাংলাদেশের নাগরিক। আর শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ হলেন ভারতের নাগরিক। ভারতের
হিন্দু বাঙালিরা চাননি এবং চাচ্ছেন না বাংলা ভাষাভিত্তিক কোনো স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্র
গড়তে। এরা হিন্দি শিখছেন এবং বেঁচে থাকতে চাচ্ছেন ভারতেরই মহাজাতির অংশ হিসেবে। পক্ষান্তরে
বাংলাদেশের বাংলাভাষীরা, বিশেষ করে মুসলমানেরা ভারতের মধ্যে মিশে যেতে চাচ্ছেন
না। তাদের জাতিসত্তার ধারণা, মিলছে না বাংলাভাষী হিন্দুদের জাতিসত্তার সাথে।
আজকের বাংলাদেশ, বাংলাদেশের বাংলাভাষী মুসলমানের সংগ্রামের মাধ্যমে উদ্ভূত। জিয়া
তাই বাংলাদেশের জাতিসত্তাকে বাঙালি না বলে বলতে চান বাংলাদেশী। খালেদা জিয়া বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদে আস্থাশীল। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন বাঙালি জাতীয়তাবাদে। শেখ
হাসিনার বাঙালি জাতীয়তাবাদ হলো বেশ কিছুটা হিন্দুত্ব ঘেঁষা। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, দুর্গাপূজা বাঙালি সংস্কৃতির উৎস। কিন্তু খালেদা জিয়া কোনো দিনই এ রকম কোনো
উক্তি করেননি। অনেকে বলছেন, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মধ্যে যে দ্বন্দ্বের
উদ্ভব হয়েছে তার মূলে আছে কেবলই ক্ষমতার রাজনীতি। কিন্তু খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার
রাজনীতির পার্থক্যের ভিত্তি কেবলই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দিয়ে রচিত নয়। তাদের দু’জনের চিন্তার মধ্যে আছে আদর্শিক ব্যবধান। খলেদা জিয়া বিশ্বাস করেন বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদে। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন বাঙালি জাতীয়তাবাদে। এই দুই জাতীয়তাবাদ
সমার্থক নয়। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মধ্যে যে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারছে, এ দিক থেকে বিচার করলে তাকে বলতে হবে ভাবনৈতিক বিরোধ। ব্যক্তিগত বিরোধ নয়।
সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে চিহ্নিত করা যেতে পারে ব্যক্তিস্বার্থ নিরপেক্ষ ভাবাদর্শগত
বিরোধ (Conflict of impersonal ideals)। সমাজবিজ্ঞানে বলে মানুষে মানুষে
বিরোধ ঘটতে পারে অনেক কারণেই। সমাজবিজ্ঞানে মানুষে মানুষে সঙ্ঘাতকে প্রধানত চার ভাগে
ভাগ করা হয়: যুদ্ধ, বংশ পরম্পরায় ঝগড়া (Feud or factional strife), মামলা মোকদ্দমা এবং ব্যক্তিস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়
এ রকম আদর্শভিত্তিক সঙ্ঘাত। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মধ্যে সঙ্ঘাত (Conflict) সৃষ্টি হতে পারছে এ দেশের রাজনীতিতে দু’টি আদর্শের জন্য। কেবলই ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশের কারণে নয়। কথাগুলো আমি বলছি
এই কারণে যে, ক’দিন আগে কোনো এক টেলিটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন
সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপককে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার দ্বন্দ¦কে কেবলই ক্ষমতার লড়াই হিসেবে বর্ণনা করতে দেখে। খ্যাতিমান অধ্যাপক মনে করেন, এ দু’জন নেতা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নিমগ্ন হয়েছেন। এর সাথে জাতিস্বার্থের
কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার ধারণা সংশ্লিষ্টতা আছে। কেননা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদ সমার্থক নয়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ পৃথক সার্বভৌম বাংলাদেশ রক্ষার অনেক অনুকূল।
একটা জালিয়াতির
নির্বাচন হয়ে গেল। গণতান্ত্রিক আদর্শের দিক থেকে একে কোনোভাবেই বলা যায় না গ্রহণযোগ্য
নির্বাচন। এতে প্রতিফলিত হতে পারল না দেশবাসীর মতামত। সম্ভবত জালিয়াতির নির্বাচনের
বিরুদ্ধে জনমতকে সুগঠিত হতে না দেয়ার জন্যই নির্বাচনের পর পরই আরম্ভ হতে পারল হিন্দুদের
ওপর হমলা। এই হামলার সব দোষ চাপানো হচ্ছে বিএনপি, জামায়াতের ওপর। কিন্তু পুলিশ
এ পর্যন্ত কোনো বিএনপি ও জামায়াতিকে ধরতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা কোনো বিএনপি
ও জামায়াতে ইসলামীর ষড়যন্ত্রকে উদঘাটিত করতে পারেনি। জামায়াত ও বিএনপির বিরুদ্ধে তোলা
হচ্ছে অভিযোগ। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণ নয়। আমি বেশ কিছুটা বিস্মিত হই ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ’ এর আচরণ দেখে। এরা বাংলাদেশ স্বাধীন
হওয়ার পর কেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান তকমার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। কেন নিজেদের ভাবছেন
না বাংলাদেশী অথবা বাঙালি। কেন এরা নিজেদের জাতিসত্তাকে চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন হিন্দু
বৌদ্ধ খ্রিষ্টান হিসেবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যদি অন্যায় হয়, তবে এ রকম একটি সংগঠনকে বেআইনি করার প্রশ্ন উঠছে না কেন? এই সংগঠনের সংগঠকেরা কি ধর্মের নামে সঙ্ঘাত সৃষ্টির সহায়ক হচ্ছেন না? কিন্তু আমাদের দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা এ রকম একটি সংগঠনের সমালোচনায়
মুখর নন। এদের আলোচনা শুনে মনে হয়, মুসলমানেরাই যেন কেবল সাম্প্রদায়িক; হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানরা নন। আমরা জানি না, কেন ও কী কারণে হিন্দু বৌদ্ধ
খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আর বাংলাদেশে এর আবির্ভাব হতে দেখা গেল রাষ্ট্র
হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে। এই সংগঠন আমার কাছে মনে
হয়, আমাদের জাতিসত্তার চেতনা পরিপন্থী হিসেবে। বাংলাদেশকে প্রমাণের
চেষ্টা করা হচ্ছে একটি মৌলবাদী দেশ হিসেবে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে
হতে পারছে ভয়াবহ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। ভারতে বিদেশী খ্রিষ্টান মিশনারিকে পুড়িয়ে মারা
হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম ঘটনা এখনো ঘটতে দেখা যায়নি। নি¤œবর্ণের হিন্দুরা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের কাছে নিগৃহীত। এরা বিবেচিত অস্পৃশ্য
ও অশুচি হিসেবে। ভারতে ১৯৫০ সালে মহারাষ্ট্রে ড. বি আর আমবেদকার (ভারতের সংবিধানের
রচক) মহারাষ্ট্রের নি¤œবর্ণের হিন্দুদের বলেন বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতে। নি¤œবর্ণের হিন্দুরা আমবেদকারের পরামর্শে গ্রহণ করেন বৌদ্ধধর্ম। কিন্তু এই বৌদ্ধরা
মহারাষ্ট্রে এখনো কুড়াচ্ছেন উচ্চবর্ণের হিন্দুদের কাছে বিশেষ ঘৃণা। এরা এখনো বিবেচিত
হচ্ছেন অস্পৃশ্য হিসেবে। বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানরা এভাবে অবহেলিত নন। কিন্তু
তথাপি প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশে বাড়ছে মুসলিম মৌলবাদের প্রভাব। আসলে ইসলামকে
এক অর্থে বলতে হয় একটি ধর্মনিরপেক্ষ ধর্ম। কারণ কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, ধর্মের নামে কোনো জবরদস্তি নেই (সূরা-২: ২৫৬)। কুরআন শরিফকে বাদ দিয়ে মুসলিম
মৌলবাদ হতে পারে না। কারণ কুরআন হলো মুসলমানদের মৌলবিশ্বাসের ভিত্তি। ধর্মনিরপেক্ষতা
মুসলিম মৌলবাদের অংশ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ছেড়ে হিন্দুরা ভারতে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু ভারত কেন এদের
গ্রহণ করছে? বাংলাদেশের নাগরিকদের, ভারত সরকার কেন যেতে দিচ্ছে ভারতে? কী করে এরা পারছেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করতে? যেখনে বৈধভাবে গরুর ব্যবসায় করার জন্য ভারতে গিয়ে গরু কিনে বাংলাদেশে ফেরার
জন্য আসা বাংলাদেশীকে হতে হচ্ছে বিএসএফের হাতে গুলিবিদ্ধ। ভারতের মানুষ গরুর গোশত ভক্ষণ
করতে পারেন না। ভারত তাই বৃদ্ধ গরু বিক্রি করছে বাংলাদেশের কাছে। বাংলাদেশের মানুষ
যে জোর করে ভারত থেকে গরু এ দেশে নিয়ে আনছেন, এমন নয়। তবে কিছু গরু সীমান্তের
দু’পার থেকে চুরি হওয়ার ঘটনা যে ঘটছে না, তা নয়। তবে সেটা খুবই গণনযোগ্য নয়।
বাংলাদেশের
গণতন্ত্র কোথায় চলেছে আমরা তা জানি না। আমরা অনেক ব্যাপারেই ভারতকে সমালোচনা করলেও
ভারতের গণতন্ত্রকে তারিফ করেই থাকি। ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। শেখ
হাসিনা ভারত ঘেঁষা মনোভাব নিয়ে চলেন। কিন্তু ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে তিনি অনুসরণ
করতে মোটেও ইচ্ছুক নন। ভারতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগে লোকসভা ভেঙে দেয়া হয়। পুরনো
যে মন্ত্রিসভা থাকে তা দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু কোনো গুরুতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নেয় না। কিন্তু শেখ হাসিনা, বাংলাদেশে এমন সংবিধান রচনা করেছেন, পুরনো সংসদ ভেঙে না দিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারছে। গণতন্ত্রে
বিরোধী দল থাকে। তবে বিরোধী দল থেকে কেউ মন্ত্রী হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে এখন দেখা
যাচ্ছে, বিরোধী দল থেকেও অনেকে মন্ত্রী হতে পারছেন। বিষয়টি অনেকের কাছেই
মনে হচ্ছে উদ্ভট। এমনকি সুরঞ্জিত সেনের মতো ব্যক্তিকেও বলতে শোনা গেল, এই গণতন্ত্রকে কাঁঠালের আমসত্ত্ব হিসেবে উল্লেখ করতে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
বলছেন, এ রকম ব্যবস্থা নাকি পাকিস্তানে কিছু দিন ছিল। আমরা সব বিষয়ে পাকিস্তানের
সমালোচনা করতে চাই। কিন্তু এ ব্যাপারে পাকিস্তানকে অনুসরণ করাটা সঙ্গত বলে বিবেচিত
হতে পারছে কিভাবে? এবার নির্বাচন হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে
করছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা। এ ব্যাপারেও তো অনুসরণ করা যেত পাকিস্তানের দৃষ্টান্ত।
কিন্তু সেটা করা হলো না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন হলেন শেখ হাসিনার বিশেষ দূত। তাকে
চিহ্নিত করা হচ্ছে একজন মূল্যবান গণতন্ত্রী হিসেবে। কিন্তু এই এরশাদ ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ
আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সামরিক ক্যু-দেতার মাধ্যমে; ভোটের মাধ্যমে নয়। আমাদের রাজনীতি নানা দিক থেকেই হয়ে উঠছে কাঁঠালের আমসত্ত্ব।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন