শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৪

টিভিতে সালামের জবাব প্রদানে অনীহা কেন?


শক্ত ভিত ছাড়া যেমন মজবুত ও বড় ইমারত নির্মিত হতে পারে না, তেমনি স্বকীয় ও ঐতিহ্যিক ভিত ছাড়া আপন সংস্কৃতির বিকাশ ও সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। এই বিষয়টি কোনো বিদগ্ধ ও সংস্কৃতিমান ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারেন না। অথচ অবাক ব্যাপার হলো, আজকাল কিছু ব্যক্তি নিজেদের ঐতিহ্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলোকে বর্জন করে প্রগতিশীল হতে চাইছেন। এরা কিছু গান করে, অভিনয় করে নিজেদের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভাবতে শুরু করেছেন এবং মনে করছেন তারা সংস্কৃতির যে ধারা সৃষ্টি করতে চাইবেন জনগণ তা মেনে নেবেন। অথচ সংস্কৃতি হলো, একটি জনপদের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও আশা-আকাক্সক্ষার রূপময় প্রকাশ। গায়করা অভিনেতারা হলেন পারফরমার, তারা গান কিংবা অভিনয়ের মাধ্যমে গণআকাক্সক্ষার প্রতিধ্বনি করে থাকেন। যে কোনো সংস্কৃতিসেবী কিংবা সমাজবিজ্ঞানী এ কথা স্বীকার করবেন যে, দীর্ঘদিনের অনুশীলন, চর্চা ও ভালো লাগার মাধ্যমে একটি জনপদের মানুষের কিছু স্বকীয় ও ঐতিহ্যিক ভিত তৈরি হয়ে যায়। কোনো গায়ক, অভিনেতা কিংবা উপস্থাপক ইচ্ছে করলেই সেই স্বকীয়তা ও ঐতিহ্যকে মুছে ফেলতে পারেন না, অস্বীকার ও করতে পারেন না। কেউ এমনটি করতে চাইলে তিনি শুধু গণবিচ্ছিন্নই হবেন না, গণবিরোধী ব্যক্তি হিসেবেও চিহ্নিত হবেন। দুঃখের বিষয় হলো, আজকাল কোনো কোনো টিভি চ্যানেলে আমরা কোনো কোনো ব্যক্তির তেমন গণবিরোধী আচরণ লক্ষ্য করছি।
দিন কয়েক আগে নাট্যকার সেলিম আলদীনকে নিয়ে আলাপচারিতার একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলো বাংলাভিশনে। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক ছিলেন একজন গায়ক, আর অতিথি ছিলেন একজন নাট্যশিল্পী। অনুষ্ঠানটির বিষয়-আশয় নিয়ে আজ তেমন কিছু বলার নেই, তবে উপস্থাপকের দৃষ্টিকটু আচরণ নিয়ে কিছু বলতেই হয়। উপস্থাপক মহোদয় এই জনপদের মানুষের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক আচরণকে বর্জন করার দুঃসাহস দেখালেন। যতবারই দর্শকরা তাকে সালাম জানিয়ে প্রশ্ন করেছেন, ততবারই তিনি সালামের সঙ্গত জবাব প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেছেন, অর্থাৎ দর্শকের আসসালামু আলাইকুমের জবাবে ওয়ালাইকুম আসসালাম না বলে উপস্থাপক শুধু ‘শুভেচ্ছা’ জানিয়ে গেছেন। জানি না সালামের ব্যাপারে তিনি এমন বৈরী আচরণ কেন করলেন? প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক ও অতিথি উভয়ই ছিলেন মুসলমান। অথচ আমরা বিভিন্ন টিভি-অনুষ্ঠানে অমুসলিম উপস্থাপককেও দেখেছি সালামের জবাবে ওয়ালাইকুম আসসালাম বলতে।
উপস্থাপকের আচরণ দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, সালামের জবাবের মধ্যে কি মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোনো বিষয় আছে? আমরা তো একথা জানি যে, সালামের মাধ্যমে একজন অপরজনের প্রতি শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে থাকেন, আর ‘ওয়ালাইকুম-আসসালামে’র মাধ্যমে জবাবদাতাও একই বিষয় কামনা করেন সালামদাতার প্রতি। শান্তি ও কল্যাণ কামনার এই যে সংস্কৃতি, তাতে তো কোনো সুস্থ মানুষের আপত্তি থাকতে পারে না। অথচ টিভি চ্যানেলটির উপস্থাপক মহোদয় সারা অনুষ্ঠানেই সালামের সঙ্গত জবাব প্রদানে তার আপত্তির কথা জানিয়ে গেলেন। এমন আচরণের মাধ্যমে তিনি আসলে দর্শকদের মধ্যে কী বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইলেন? তিনি কি সালমের জবাব না দেয়ার মাধ্যমে দর্শকদের সালাম প্রদানে নিরুৎসাহী তথা নিবৃত্ত করতে চাইলেন? তার এই আচরণ বাংলাদেশের গণমানুষের হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় ও সংস্কৃতির মূল্যবোধের ওপর নির্মম আঘাত। এমন আঘাত দেয়ার উৎসাহ তিনি কোত্থেকে পেলেন? আর একজন মুসলিম হিসেবে তার তো একথা জানা থাকার কথা যে, সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব, না দিলে এতে গুনাহ হয়। বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষকেও  ভেবে দেখতে হবে যে, জনমনে আঘাত প্রদান করে এমন অসঙ্গত কাজ করার সুযোগ তারা উপস্থাপককে আরও দেবেন কি না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads