মোঃ নূরুল আমিন
চাকরি জীবনের দু’টি স্মৃতি আমার মনে প্রচ- দাগ কেটেছিল। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে প্রায় একই সময়ে আমি তৎকালীন পাকিস্তান অবজার্ভারে একজন সহসম্পাদক এবং কায়েদে আজম কলেজে (বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ) বাণিজ্য বিভাগে একজন অধ্যাপক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলাম। অধ্যাপনার চাকরির মাস চারেক পরেই ১৯৬৯ স্যালের ডিগ্রী-পরীক্ষা ছিল এবং তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে আমার ইনভিজিলেশন ডিউটি পড়েছিল। যে হলে আমার ডিউটি পড়েছিল সে হলে জগন্নাথ কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মতিন স্যারের ডিউটিও পড়েছিল। মতিন স্যার অত্যন্ত প্রবীণ শিক্ষক আর আমি ছিলাম সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া একজন তরুণ শিক্ষক। পরীক্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্র লিখায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মাঝের সারিতে কয়েকটি ছেলে কথাবার্তায় মশগুল ছিল। একজনকে দেখা গেল বই খুলে উত্তরপত্র লিখতে। মতিন স্যার নিজে না সামলিয়ে আমাকেই বললেন, ইয়ংম্যান, তুমি যাও এবং সামলাও। আমি গেলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, নকল করছ কেন? বইটা এবং উত্তরপত্র কেড়ে নিলাম। ছেলেটি নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিল, স্যার খাতাটা ফেরৎ দিন, আমি নকল করছি না, বই দেখে আসলটা লিখছি। তার জবাব শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম। ছেলেটি ছিল ছাত্রলীগের জগন্নাথ কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক। বিষয়টি প্রিন্সিপাল পর্যন্ত গড়েছিল। শিষ্টাচার ও অপরাধবোধ মনে হচ্ছিল সে দিন লজ্জায় পালিয়ে গিয়েছিল। আজকের রাজনৈতিক অঙ্গনের দুরবস্থা দেখে কথাটি আমার প্রায় মনে পড়ে। শিক্ষাঙ্গনে আমরা কি মানুষ তৈরী করছি না গরু?
আরেকটি ঘটনা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ের। অবজারভারের সিনিয়র সহসম্পাদক নূরুজ্জামানসহ মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়েরউদ্দিনের বাসায় গিয়েছিলাম তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সারাদেশে নৈরাজ্য চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কথায় কথায় আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিব এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিষয়টিও আমাদের আলোচনায় উঠে এসেছিল। খাজা সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এ মামলা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন কিনা, উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, শেখ মুজিব পুরো বিষয়টিই তাকে বলেছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও আওয়ামী লীগপন্থী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কয়েকজন আমলা প্রথমত এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে এবং পরে শেখ মুজিবকে তাদের এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার বানায়, শেখ মুজিব ছাত্রনেতাদের হাতে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন এবং খাজা খয়েরউদ্দিনের বর্ণনামতে, একদিন তিনি তার বাসায় গিয়ে তাকে ছাদে নিয়ে সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত বলেছিলেন এবং তার পরামর্শ চেয়েছিলেন। এ আলোচনাকালে পিডিপির সহ-সভাপতি আব্দুর রহিমও উপস্থিত ছিলেন। আমরা খয়ের উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এই রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন না কেন? তার জবাব ছিল “দেখ, আমরা রাজনীতিবিদ, আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা এমন কোন কাজ করতে পারি না যাতে আমাদের একজন ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনীতিবিদের ফাঁসি হয়।” তার সাথে আমাদের অনেক কথা হয়েছে কিন্তু তার এই কথাটি আমি কখনও ভুলতে পারি না। রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ ও মুসলিম লীগের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অহিনকুল সম্পর্ক। কিন্তু এই সম্পর্ক ব্যক্তি জীবনের সম্পর্কের ওপর কখনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। রাজনৈতিক শিষ্টাচারের এটি একটি উদাহরণ।
আরেকটি ঘটনা আমাদের মনে পড়ে এটি দৈনিক শক্তির সম্পাদক জনাব জয়নাল আবেদীনের মুখে শোনা। ১৬ ডিসেম্বরের পর জয়নাল আবেদীনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তার ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তিনি আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী ছিলেন এবং শেখ মুজিবের রাজনৈতিক আচরণের বিরোধিতা করতেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে ফেরত আসার পর শক্তি সম্পাদক জয়নালের খবর নিয়ে যখন জানতে পারলেন যে তিনি জেলে তখন তিনি স্বউদ্যোগে তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে বঙ্গভবনে তার কার্যালয়ে হাজির করিয়ে ছিলেন এবং তার শারীরিক ও আর্থিক অবস্থার খবর নিয়েছিলেন। দৈনিক শক্তি তখন বন্ধ ছিল এবং জয়নালের বাড়িঘরও লুটপাট হয়ে তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল। শেখ মুজিব তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। সামনে কোরবানীর ঈদ ছিল। তিনি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে টেলিফোনে নির্দেশ দিয়ে তিনটি বড় গরুর হাটের ইজারা জয়নালের অনুকূলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এজন্য তাকে কোন পয়সা দিতে হয়নি। তিনটি হাটে, জয়নালের বর্ণনা মতে তার প্রায় ৯ লাখ টাকা উপার্জন হয়েছিল। একজন কট্টর ভিন্নমতাবলম্বীর প্রতি শেখ মুজিবের এটি ছিল উদারতা ও শিষ্টাচার। যদিও তার বিরুদ্ধে অন্যান্য ক্ষেত্রে এর বিপরীত আচরণের অভিযোগও ছিল।
ঘটনাগুলো মনে পড়ল গত রোববার পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি ছবি দেখে। ছবিগুলো ছিল কয়েদীর পোশাকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিডিএফআইএর সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম প্রমুখের। এদের সবাইকে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এই অস্ত্রগুলো নাকি আসামের স্বাধীনতাকামী উলফাদের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ ভূ-খ-ের ওপর দিয়ে আসামে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে আনা হয়েছিল। এই অস্ত্রের চালানটি চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ধরা পড়েছিল এবং তৎকালীন সরকার এর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছিলেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মামলাটির মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং পুরাতন আসামীদের অনেককেই বাদ দিয়ে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াত প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, শিল্প সচিব নূরুল আমিন, ডিজিডিএফআই-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেককেই এ মামলায় জড়িয়েছেন। মাওলানা নিজামীর মতো একজন ব্যক্তির যার পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে দুর্নীতি, অনিয়মের সামান্য দৃষ্টান্তও সরকার খুঁজে পায়নি, তাকে এই মামলায় ফাঁসি দেয়ার ঘটনাটি শুধু বিস্ময়কর নয় অভাবিতও। তার অপরাধ তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত একটি সংস্থা কাফকোর জেটিতে এই অস্ত্র নাকি খালাস হয়েছিল যদিও পত্র-পত্রিকায় বিপরীত তথ্য পাওয়া যায়। কাফকো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার ওপর বাংলাদেশ সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণও নাই এবং তার কাছ থেকে এই প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত সার বাংলাদেশ সরকারকে ক্রয় করে আনতে হয়। একজন মন্ত্রী তার অধীনস্থ কোন প্রতিষ্ঠানের জেটিতে কি উঠা-নামা করল তা দেখার কথা নয়। আবার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর সাথে ঐ প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব এত বেশি যে সেখানে কি ঘটছে না ঘটছে তার দৈনন্দিন খবরাখবর নেয়া বা পাওয়া মন্ত্রীর জন্য অবাস্তব। বলা হচ্ছে তার নির্দেশে নাকি এই অস্ত্র খালাস হয়েছে। এই নির্দেশনামার কপি অথবা নির্দেশ সংক্রান্ত টেলিফোন সংলাপের ট্রান্সক্রিপ্ট সম্পর্কে অনেক চেষ্টা করেও আমি কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। আর দূরতম সম্পর্কের কথা যদি বলতে হয় তাহলে এটা অনেকটা বরিশাল অঞ্চলের একটি প্রবচন, ‘দারোগার নায়ের মাঝি, সে পাকায় যে কাছি, তার ধারে মোরা আছি’ মোরা আইনের মানুষ’-এর মতো শোনায়। অনেকেই বলছেন এটি শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিব্যক্তি। আবার কেউ কেউ বলছেন প্রতিবেশী ভারতের আনুকূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই ফাঁসির এই দ-। কোন কোন বিশ্লেষক প্রতিবেশীকে সন্তুষ্ট করার জন্য দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিক নেতা এবং সেনা গোয়েন্দা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের এর মাধ্যমে বলি দেয়ার কথাও বলছেন। যে অস্ত্র আটক করে তৎকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে তা বিতরণ করে দিয়েছেন সেই অস্ত্র মামলায় এই ধরনের ফাঁসির রায় বিস্ময়কর। এটা চোরাচালানের মামলা। চোরাচালানের মামলায় এ দেশে আজ পর্যন্ত কারোর ফাঁসির দ- হয়েছে এ ধরনের তথ্য আমি খুঁজে পাইনি। তথাপিও দ- যখন হয়েছে এবং আদালত তা দিয়েছেন তার বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তবে এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধারণা যে এই দ- বাংলাদেশের স্বার্থে হয়নি এবং কোন কোন বিশ্লেষক যেমন ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী তিনি তো এটা মেনে নিতেই রাজী নন। তিনি একটি টিভি চ্যানেলের টক শো’তে পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৫ ধারা উল্লেখ করে বলেছেন, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া যায় যে উলফাকে সাহায্য করার জন্যে বাংলাদেশের কেউ আমাদের ভূ-খ-ের ওপর দিয়ে অস্ত্র চলাচলে সহযোগিতা করেছে তবুও এই কাজকে অনৈতিক ও অন্যায় বলা যায় না। কেন না আমাদের সংবিধানের ২৫ (গ) ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সা¤্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করবেন।’ ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। আমরা চাই না যে, ভারতের কোন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী তার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় সমস্যা হয়ে দাঁড়াক এবং এটাও আমাদের কাম্য নয় যে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন সংগঠন আমাদের ভূ-খ-কে তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ব্যবহার করবে। পাশাপাশি এটাও আমাদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত যে, বাংলাদেশের কোন সরকার ভারতের ইচ্ছাদাস হয়ে আমাদের কোন রাজনৈতিক দল, তার নেতা-কর্মী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক বা বর্তমান কোন সিনিয়র, জুনিয়র কর্মকর্তা অথবা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তাদের বলির পাঠা বানাক। এটা যদি করা হয় তাহলে বাংলাদেশ নামক ভূ-খ-টি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে বলে বিশ্বাস করা যায় না।
রাজনীতিতে মহানুভবতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এতে দূরদর্শিতার ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন পাওয়া যায়। রাজনীতি করতে গেলে অথবা দেশ পরিচালনা করতে হলে বড় মনের দরকার হয়। একটি সংকীর্ণ মন ও মানসিকতা এবং ষোল কোটি মানুষের বিশাল একটি দেশ একসাথে চলতে পারে না।
আমি নিবন্ধের শুরুতে কয়েকটি ঘটনার কথা বলেছিলাম। ষাটের দশক থেকে বর্তমানে আমরা অনেক সমৃদ্ধ। শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সবক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক পরিবর্তন ও অগ্রগতি দেখতে পাই। কিন্তু শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্র রাজনীতিতে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে? যেই ছেলেটি বই দেখে পরীক্ষার হলে নকল করে উত্তরপত্র লেখাকে বই দেখে আসল লেখার স্বাধীনতার কথা বলতো তার বা তাদের সন্তানরা শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা কি করেছে? দেশবাসী তা প্রত্যক্ষ করছেন। শিক্ষাঙ্গন এখন অস্ত্রধারীদের অনৈতিক কর্মকা-ের আখড়া হয়ে পড়েছে। সরকার নির্লিপ্ত। একবার ভেবে দেখুন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে মুসলিম লীগ, জামায়াত, পিডিপির যেসব নেতা অবহিত ছিলেন তারা যদি আদালতে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেন তাহলে অবস্থা কোথায় দাঁড়াত? কিন্তু তারা সেই সাক্ষ্য দেননি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তাদের মধ্যে ছিল না। কিন্তু আজকের আওয়ামী লীগ জামায়াত, বিএনপিসহ প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য যেসব অমানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে রাজনীতির ইতিহাসে তার নজির খুব কম। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। সীমান্তে আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, সীমান্ত হত্যায় তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রতিবেশীর বাতলানো জঙ্গি লিঙ্ক খুঁজতে আমাদের ছেলেদেরই শুধু নয়, বোরখাপরা মেয়েদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে আরবি অথবা ইসলামী শব্দের সংশ্লেষ থাকলে তাদের আর রক্ষা নেই। হত্যা, গুম, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহতভাবে চলছে। রাষ্ট্রীয় অবিচারের প্রতিবাদে সুপ্রীম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের জ্যেষ্ঠতম বিচারককেও পদত্যাগ করতে হয়। মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
যীশু খ্রীষ্টের জন্মের ৩০০ বছরেরও পূর্বে আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেছিলেন এবং তার হাতে রাজা পুরু পরাজিত হয়ে বন্দী হিসেবে তার সামনে এসেছিলেন। আলেকজান্ডার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি আমার কাছ থেকে কি ধরনের আচরণ আশা করো? পুরুর সাদাসিধে জবাব ছিল, ‘রাজার মতো।’ বলাবাহুল্য, বন্দী পুরুকে আলেকজান্ডার স্বাভাবিক অবস্থাতেই তার সামনে হাজির করেছিলেন, ডান্ডাবেড়ি বা কয়েদীর পোশাক পরিয়ে নয়। এখন ভাবুন তারা সভ্য ছিলেন না আমরা?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন