বিংশ শতাব্দীর এই যুগে সর্বস্তরে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় যেখানে আধুনিক বিশ্বায়নের পথে পৃথিবী ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে। তারই ছোঁয়ায় আমাদের দেশও শিক্ষা-দীক্ষায়, শিল্পে-বাণিজ্যে, তথ্য-প্রযুক্তিতে দ্রুত এগিয়ে চলেছে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, রাজনীতিবিদদের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে দেশের জনগণ রাজনীতিবিদদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আগামী সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন বুকে ধারণ করে। এক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিবিদদের কর্মকা-ে দেশপ্রেম তো দূরের কথা, গণতন্ত্রই হুমকির সম্মুখীন। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আচরণে প্রশ্ন জাগে তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের চেতনা আদৌ কি বিদ্যমান? কোনো কোনো জনপ্রতিনিধির আচরণে মনে হয় এখনও তারা বর্বতার বেড়াজালে নিজেদের মন-মানসিকতাকে ধারণ করে আছেন। বর্তমানে দেশে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় আরেকটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে দেশ ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন আছে, অথচ এদের হাতেই রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব। এখনকার রাজনীতিবিদরা প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার পরিবর্তে প্রতিশোধের রাজনীতিতে লিপ্ত।
রাজনীতিবিদরা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করতেও পিছপা হন না, সেই রাজনীতিবিদরাই যখন গণতন্ত্রের কথা বলেন। আর তারাই যখন ক্ষমতায় থাকেন। কি করে সম্ভব তাদের দিয়ে দেশপ্রেম ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকেরই যেমন রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে, তেমনই রাজনীতিবিদদের কারণে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা লঙ্ঘিত না হয় সেটা দেখার দায়িত্বও তাদের রয়েছে। দুঃখজনক বিষয় যে, যখন আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি কর্তৃক জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হয় তাতে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ারই শামিল বলে মনে হয়। দেশে এখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম বিপর্যয় বিরাজ করছে, যার বহিঃপ্রকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামে ছিল “শিশু সন্তানদের সামনেই বাবাকে বেঁধে লাঠি পেটা” লেখাটি পড়ে যে কোনো হৃদয়বান ব্যক্তির হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হওয়ার কথা। যা মধ্যযুগীয় বর্বতাকেও হার মানায় রংপুরের বদরগঞ্জের কালুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হককে ভোট না দেয়ার অপরাধে চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের চক্রান্তে আমজাদ হোসেনকে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পেটাচ্ছে। পাশে আমজাদের তিন শিশু সন্তান হাঁউমাউ করে কাঁদছে আর আছাড়ি পিছাড়ি করছে বাবাকে বাঁচাতে। অন্যরা ধরে রেখেছে অবুঝ ঐ তিন শিশুকে, এভাবেই তাদের সামনে তিন চার ঘণ্টা ধরে চলে আমজাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন। এ জাতীয় আচরণে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকেও যে জনগণ আজ নিরাপদ নয় এটাই প্রমাণ করে জনগণ তার সঠিক বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন সেখানে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার প্রশ্ন এসে যায়। প্রায়শই এই জাতীয় সংবাদ পত্রিকার শিরোনাম হয়ে যখন আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রতিনিধিদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন জাগে শিরোনামের বিষয়টি “কোথায় মানবাধিকার কোথায় গণতন্ত্র?” তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বত্রই মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রমিত হয়েছে। অথচ যাদের দ্বারা দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ আলোকিত হবার কথা, জনগণকে আগামী সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেয়ার কথা সে জায়গাতে আমরা কতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছি, যাদের হাতে দেশ ও জনগণের দায়িত্ব ভার অর্পিত হয়েছে সে জবাবদিহিতার জায়গায় থেকে কতটুকুই বা দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে পারছেন যারা নাকি স্বেচ্ছাচারিতায় নিজেদেরকে লিপ্ত করছেন। যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন আজ তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণে প্রতিনিয়তই গণতন্ত্র ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের জায়গাটি হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে। এ থেকে প্রশ্ন জাগে যাদেরকে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে মনে করা হয় তাদের কাছে সত্যি কি গণতন্ত্র নিরাপদ? এই সংস্কৃতি থেকে কি আমাদের রাজনীতিবিদরা বেরিয়ে আসতে পারছেন না? সেই শঙ্কায় আজ জনগণ শঙ্কিত। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও জনগণের ভোটের জায়গাটি প্রশ্নবোধক জায়গাতে আবদ্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণের উপায় নিয়ে আজ ভাবনার সময় এসেছে। ভিয়েতনামের মতো যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যারা মাত্র কয়েক বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করেছে আজ তারা সুস্থ ধারার রাজনীতির কারণে শিল্পে-বাণিজ্যে দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে। আমাদের রাজনীতিবিদদের কথা এবং আগ্রাসী আচরণে দেশপ্রেম ও মানবিকতার বিষয়টি সা¤্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা কি আসলে গণতন্ত্রের পথে নাকি অগণতান্ত্রিক পথেই... ব্যস্ত? জনগণের একমাত্র ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা ও মূল্যবোধের জায়গাটাকে আজ প্রতিনিয়তই খর্ব করা হচ্ছে, ভোটের অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। জনগণকে শঙ্কায় ফেলে সাংবিধানিক সম্মানকে অক্ষুণœ রাখা যায় না এটা কোনো দেশপ্রেমের পরিচয় হতে পারে না। ক্ষমতাই কেবলমাত্র সমস্ত মানবিকতার ঊর্ধ্বে হতে পারে না। জনগণ প্রতিনিয়তই যে বিষয়টির শিকার হচ্ছে তাহলো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। যা একটি স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র বিকাশের ও উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। জনপ্রতিনিধিদের অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায় তারা ব্যক্তি স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য বৃহৎ জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে গণতন্ত্রকে কলুষিত করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর একে-অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমঝোতা না থাকার ফলে সামনের দিনগুলোতে সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা এবং অস্থিতিশীল অর্থনীতির প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন