শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ক্রিকেট দাদাগিরির জায়গা নয়
Posted on ২:৫৮ PM by Abul Bashar Manik
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে ভারত এই উপমহাদেশের বৃহৎ শক্তি শুরু থেকেই। তবে
সাম্প্রতিককালে মহাদেশীয় বৃহৎ শক্তি হিসেবে সে পাল্লা দিতে নেমেছে চীনের সাথে। আর এখন
এই অতি উচ্চাকাক্সা ক্রীড়াঙ্গনেও সংক্রমিত হওয়ায় দেখা যাচ্ছে, ভারত তার দাদাগিরি বাংলাদেশ শুধু নয়, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, এমনকি সুদূরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার ওপরেও ফলাতে উন্মুখ। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক
সর্বোচ্চ ফোরামে ভারত শুধু একটি বৃহৎ শক্তি নয়, দস্তুরমতো একক পরাশক্তি হয়ে ওঠার
জন্য নানা ফন্দিফিকির আঁটছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কথিত একক পরাশক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের মতোই চরম কর্তৃত্ববাদী মানসিকতায় ভারত আজ কলুষিত।
ক্রিকেট সাম্রাজ্যের সম্রাট হওয়ার
অভিলাষী ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া- এই তিন বড় ভাইয়ের অবাঞ্ছিত দাদাগিরির
প্রয়াসে বাংলাদেশে তো বটেই, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকায়, এমনকি এর বাইরেও এবার প্রচণ্ড প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ঢাকায় শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচের দর্শকদের মধ্যেও এই
প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। ঢাকায় নানা বয়সী শত শত ক্রিকেটপ্রেমী রাজপথে নেমে আসেন।
মানববন্ধনের ব্যানার-প্লাকার্ডে লেখা ছিল, Cricket
is business for you, but recreation for us. ভারতীয় প্রস্তাব কার্যকর হলে বিশেষ করে বাংলাদেশ
কার্যত টেস্ট মর্যাদা হারাবে- এই আশঙ্কায় তরুণসমাজ ও মিডিয়া ুব্ধ হয়ে ওঠে। সরকার সমর্থক
ও বিরোধী নির্বিশেষে পত্রপত্রিকা ক্রিকেট বিশ্বে তিন দেশের অন্যায় আধিপত্য এবং অনৈতিক
বৈষম্য সৃষ্টির কারসাজির তীব্র সমালোচনা করেছে। প্রসঙ্গক্রমে মিডিয়ায় এ বিষয়ে বহু তথ্য, বিশ্লেষণ ও অভিমত উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি ও সাবেক
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ভারতসহ ত্রিপাণ্ডবের সর্বশেষ তৎপরতায় উদ্বিগ্ন
হয়ে বলেছেন, বাংলাদেশকে নতুন বন্ধু খুঁজতে হবে।
বাংলাদেশের জন্য ক্রীড়াঙ্গনের
বাইরেও ক্রিকেটের যে সবিশেষ গুরুত্ব জাতি উপলব্ধি করছে, সে ব্যাপারে একজন ভাষ্যকর লিখেছেন, Cricket
is the sole unifying force and factor in this divided, polarised and wretched
country. People irrespective of political affiliation, party support and
professional outlook, forget the differences in opinion and outlook and join
ranks when it comes to cricket (এই বিভক্ত, মেরুকরণকৃত ও দুর্ভাগা দেশে ক্রিকেটই ঐক্যবদ্ধকারী
একক শক্তি ও উপাদান। রাজনৈতিক মতামত, দলীয় সংশ্লিষ্টতা এবং পেশাগত
দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিশেষে জনগণ মতভেদ ভুলে গিয়ে একাত্ম হয়ে যায় যখন ক্রিকেটের প্রশ্ন
আসে।)
ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো
ভারতও এখন বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ ও মিডিয়ার নিন্দা কুড়াচ্ছে। এদের উদ্যোগে দ্বিস্তরবিশিষ্ট
নতুন পদ্ধতির নামে যে চরম বৈষম্য সৃষ্টির পাঁয়তারা হয়েছিল ক্রিকেটাঙ্গনে, তাকে ন্যায়নীতির পরিপন্থী, অবিচারমূলক এবং আধিপত্যবাদী মানসিকতাপ্রসূত
বলেই গণ্য করা হচ্ছে। ধরে নেয়া যায়, ইংল্যান্ড পাশ্চাত্যের মনোভাবের
প্রতীক। অস্ট্রেলিয়া ভৌগোলিকভাবে প্রাচ্যের হলেও দেশটি রাজনৈতিকভাবে পাশ্চাত্যেরই বার্ধিতাংশ।
অপর দিকে ভারত তো সেই উন্নয়নশীল বিশ্বেরই একটি নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র, যারা নানাভাবে পাশ্চাত্যের বঞ্চনা-বৈষম্যের শিকার। ক্রিকেটের জগতে এই উপমহাদেশের
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের মতো দেশগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ভারত ‘বিগ ব্রাদার’ জুটির অন্যায্য মোড়লিপনার জোরালো প্রতিবাদ করবে-
এটাই ছিল স্বাভাবিক, যুক্তিসঙ্গত ও প্রত্যাশিত। অথচ বাস্তবে চাণক্যের
চেলারা এর বিপরীত ভূমিকা নিয়ে প্রমাণ করলেন, তারা ‘গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল’। ক্রিকেটের মতো ভদ্রলোকের খেলার
জগতে কর্তৃত্ব কায়েমের প্রয়াস চালানো হয়েছে অভদ্রজনোচিত পন্থায়। ভারত এমনিতেই ব্রাহ্মণ্যবাদী
বর্ণভেদ প্রথার জন্য যুগ যুগ ধরে নিন্দিত ও সমালোচিত। বিশ্বক্রিকেটে কথিত বিগ থ্রি’র অভিজাততন্ত্র চাপিয়ে দেয়ার জন্য ভারতের উদ্যোগ সেই বর্ণবাদী কুপ্রথাকেই স্মরণ
করিয়ে দেয়। ওদের ‘কুপ্রস্তাব’ এবার যদি উত্থাপিত এবং এরপর গৃহীত হতো, তা হলে বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশ এবং আফ্রিকার জিম্বাবুয়ের দশা হতো হিন্দু
সম্প্রদায়ের শূদ্রদের মতো; কিন্তু এখন যেমন খোদ ভারতেরই অসংখ্য সচেতন, মুক্তমনা ও বিবেকবান মানুষ স্বেচ্ছাচারী পুরোহিততন্ত্রের বিপক্ষে, তেমনি ভারতীয় জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতের ক্রিকেটপুরোহিত হওয়ার খায়েশের
বিরুদ্ধে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রস্তাবের
ঘোর বিরোধিতা ও সমালোচনা খোদ ভারতেই। সে দেশের মিডিয়া বলেছে, ‘এই বোর্ড লোভী।’ আনন্দবাজার পত্রিকার মতে, ‘ভারত নানা টোপ দিয়ে ক্রিকেটকে শোষণ করতে চাচ্ছে। বোর্ড সভাপতি যেভাবে আইসিসি
সদস্যদের ক্ষেপিয়ে তুলেছেন, তাতে সামনের দিনে কাউকে কাছে পাবে বলে মনে হয় না।’ আনন্দবাজারের উদ্বেগের কারণ, ভারতের অতি লোভে উপমহাদেশের ‘তিন সহোদর’ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাথে ভারতের
ক্রিকেটসখ্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের প্রতি সমর্থন দিয়ে
এসেছে ক্রিকেটাঙ্গনে। অথচ এবার দ্বিস্তর কাঠামোর কথা বলে বাংলাদেশকে দূরে সরিয়ে দেয়া
হলো। ভারতের জানা ছিল, তার প্রস্তাবমাফিক টেস্ট ম্যাচের কন্টিনেন্টাল কাপ
চালু হলে বাংলাদেশই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার পরও ভারত নিজেকে আর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে বিশেষ সুবিধার হকদার এবং বাংলাদেশসমেত অন্যদের ব্রাত্যজন ভাবছে।
ভারতের প্রস্তাব এতটাই অযৌক্তিক যে, আইসিসির সাবেক সভাপতি এবং ভারতীয়
ক্রিকেটের অন্যতম ‘মুরব্বি’ জগমোহন ডালমিয়া পর্যন্ত এটা সমর্থন
করতে পারেননি।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে
কিছুটা উগ্র জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার অনুসারী মনে করা হয়। সে পত্রিকা পর্যন্ত ক্রিকেট
সাম্রাজ্যে ভারতের আধিপত্যকামী মনোভাবের সমালোচনা করেছে। ভারতের নতুন দাবি কার্যকর
হলে তা বুমেরাং হয়ে যায় কি না, সে আশঙ্কা করে গৌতম ভট্টাচার্য লিখেছেন ওই পত্রিকায়।
শিরোনাম, ‘শোষণ করতে গিয়ে ভারত না শোষিত হয়ে যায়।’ পত্রিকাটিতে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ যাতে ভারতের নতুন দাবিগুলো সমর্থন করে, সে জন্য ভারতীয় ক্রিকেটকর্তা শ্রীনিবাসন কেন বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছেন।’
ভারত ক্রিকেটসংক্রান্ত বিষয়ে
বাংলাদেশকে হুমকি দেয়ার খবরে সব মহলে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জানা গেছে, ২৮ জানুয়ারি আইসিসি বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের সভা শুরু হওয়ার আগেই
ভারত জেনে যায়, বাংলাদেশ ভারতীয় প্রস্তাবের বিপক্ষে থাকবে। তখন প্রথমে আইপিএল
কর্মকর্তা সঞ্জয় প্যাটেল বিসিবি প্রধানকে চাপ দেন সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে। পাপন রাজি
না হওয়ায় স্কাইপে ডেকে আনা হয় শ্রীনিবাসনকে; কিন্তু পাপন তবুও সম্মত হননি।
এতে নিবাসন রেগেমেগে বলেন, ‘তা হলে আমরা এবার বাংলাদেশে এশিয়া কাপ আর টি-২০
বিশ্বকাপ খেলব না। দেখি, আপনারা কিভাবে এ দু’টি আসরের আয়োজন করেন।’
ভারতের এমন চাপেই জিম্বাবুয়ে
এবং ওয়েস্টইন্ডিজ ভারতকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়; কিন্তু এটা যে অনৈতিক, তা জিম্বাবুয়ে স্বীকার করেছে। তাদের এক কর্মকর্তা বলেই দিলেন, ‘আমরা ব্লাক মেইলিংয়ের শিকার। তবুও কিছু করার নেই।’ তবে শ্রীনিবাসন নানা প্রলোভন দেখালেও পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে ভারতের পক্ষে
টানতে ব্যর্থ হন। ফলে পরিস্থিতি সুবিধার নয় দেখে ভারত রেলিগেশনের প্রস্তাব আর তোলেনি।
তবে এটা বাতিল নয়, স্থগিত করা হয়েছে মাত্র। আনন্দবাজার এ প্রসঙ্গে লিখেছে, ‘শ্রীনিবাসন কি একবার ভেবে দেখেছেন, লোভ দেখিয়ে যা আদায় করা যায়, তা স্থায়ী নয়।’ এমনকি, ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড
পর্যন্ত ভারতের পাশে না-ও থাকতে পারে বলে পত্রিকাটি আশঙ্কা করে বলেছে, ‘তখন কী অবস্থা হবে?’
আইসিসি বৈঠকে যাওয়ার আগে বিসিবি
সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথাবার্তা ও ভূমিকা থেকে এমন আভাসই স্পষ্ট হচ্ছিল, বাংলাদেশ ‘নিরুপায়’ বলে ভারতের দাবি ও প্রস্তাবে
সায় দেয়া ছাড়া উপায় নেই। পাপনের যুক্তি ছিল, ‘বাংলাদেশের বিরোধিতার পরও যদি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দ্বিস্তরসহ নতুন প্রস্তাবগুলো পাস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা
যায়, তা হলে বিরোধিতা করা ও না করা একই। সে অবস্থায় বিরোধিতা করলে বাংলাদেশ
ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ বাংলাদেশের অর্থ প্রয়োজন। তা পাওয়ার পথ যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, সে জন্য অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা শুনে সাথে সাথে তীব্র প্রতিবাদ
শুরু হয়ে যায়। পাপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি খেলার চেয়ে টাকাকে দেখছেন
বড় করে।
ক্রিকেট বিশ্বের এসব ঘটন-অঘটনের
মধ্যে বাংলাদেশে কৌতূহলোদ্দীপক যা ঘটেছে, তা হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ভারতসহ ত্রিরতেœর পক্ষাবলম্বনের সমূহ সম্ভাবনার মধ্যে হঠাৎ উল্টে গিয়ে দেশব্যাপী নিন্দা ও
ধিক্কার অর্জনের পথ বন্ধ করেছে। তার চেয়েও বেশি লক্ষণীয়, বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন, যিনি একজন রাজনীতিক, ক্রিকেট রাজনীতির জটিল খেলায় আপাতত সফল হয়েছেন। তাই তাকে এক রকম হিরো হিসেবে
তুলে ধরতে চাচ্ছেন তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। সে জন্য আইসিসি সভা থেকে ফিরে এলে বিমানবন্দরে
তাকে বীরোচিত সংবর্ধনা দিতে লোকজনসহ ব্যাপক আয়োজন করা হয়।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিগ বস
শ্রীনিবাসন সম্প্রতি সভাপতির পদ হারাতে বসেছিলেন জামাতার ক্রিকেটকেলেঙ্কারির কারণে।
লোভনীয় পদটা যায় যায় করেও কোনো মতে টিকে গেলেন নেহাৎ ভাগ্য জোরে। সেই নিবাসন বাংলাদেশকে
হুমকি দেয়ার খবর শুধু এ দেশের মিডিয়ায় নয়, কলকাতার আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন
পত্রপত্রিকায় এসেছে; কিন্তু বিসিবি সভাপতি পাপন ঢাকায় ফিরে বললেন, হুমকির খবর সত্য নয়। এভাবে তিনি মিডিয়াকে ‘মিথ্যুক’ ঠাওরালেন কি বিশেষ কারো ভয়ে কিংবা কোনো দেশকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য? অন্যদের কথা বাদ দিলেও ভারতীয় পত্রিকায় যে নিবাসনের হুমকির কথা ছাপা হয়েছে, তার মানে কী? বাস্তবে যদি ‘দালমে কুছ কালা’ না হয়, তাহলে নিবাসনের দেশের মিডিয়াও কেন তাকে হুমকিদাতা বলছে? ভারতের পত্রপত্রিকা তো কখনো নিজ দেশের বিপক্ষে গিয়ে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো
রাষ্ট্রকে সমর্থন করে না। পাপনের নেতৃত্বে বিসিবি আইসিসি বৈঠকের আগে এমন বক্তব্য দিচ্ছিল
যে, আমাদের মিডিয়াসহ সবাই প্রায় নিশ্চিত ছিল, ‘বিসিবি ভারতের প্রস্তাবে সায় দিতে যাচ্ছে।’ তা হলে আসল ব্যাপার কী এমন যে, ভারত বাংলাদেশের সমর্থন লাভের ইঙ্গিত পেয়েছিল এবং পরে হঠাৎ বিসিবির ভিন্ন মত
দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে হুমকি দিয়েছে? যা হোক, পাপনের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও এই
ধারণা সহজে দূর হবে না যে, নিবাসন হুমকি দিয়েছেন।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, আনন্দবাজার জানিয়েছে- শ্রীনিবাসন হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দ্বিস্তরের টেস্ট প্রস্তাবের সপক্ষে ভোট না দিলে ভারত এবার ঢাকায়
এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না।’ অথচ বিসিবি সভাপতি ‘হিরোর মতো সংবর্ধনা নিয়ে ঢাকায় বললেন, এসবের কিছুই ভারত বলেনি।’ এখানেই শেষ নয়। পঞ্চমুখে ভারতের প্রশংসা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই এমপি
বললেন, এশিয়া কাপ আর টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনে ‘সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে ভারতই।’ পাপন বাংলাদেশী মিডিয়ার ওপর বেশ
চটেছেন। এই মিডিয়ার উল্টাপাল্টা লেখালেখিতে নাকি তার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে।
আইসিসির সর্বশেষ সভায় তিন রাঘববোয়াল
মুখ হা না করলেও তারা নিশ্চয়ই বসে থাকবে না। ‘ছোট মাছ’গুলোর বিপদের আশঙ্কা কিন্তু দূর হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে পরবর্তী মিটিংয়ের
দিকে নজর সবার। তদুপরি আরেক ফাঁড়া দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত ক্রিকেটের
তিন দাদার সাথে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে খেলার তেমন সুযোগ পায়নি। যে ভারতকে বাংলাদেশের
‘দুখের দিনের দরদী’ এবং মহাপরীক্ষিত মিত্র বলে বিসিবি
প্রেসিডেন্টের দল এবং এর সরকার বিশ্বাস করে, সেই মহাপ্রতিবেশী কিন্তু আজ পর্যন্ত
বাংলাদেশকে ক্রিকেট খেলতে নিমন্ত্রণ করার যোগ্যই মনে করেনি। বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলগুলো
ভারতে দেখার সুযোগ দিচ্ছে না দেশটি। তেমনি বাংলাদেশী ক্রিকেট টিমের খেলা দেখার সুযোগ
সেখানে দেয়া হয়নি আজ অবধি। আইসিসি থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার নাজমুল হাসান পাপন দুঃখের
সাথে বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড গিয়ে আমরা টেস্ট খেলেছি গত দশ বছরে কেবল
একবার। আর ভারতে যেতে পারি না ১৪ বছর ধরে।’
স্মর্তব্য, বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে ১৪ বছর আগে। এত দিনেও আমাদের জাতীয় দল নিকটতম
পড়শি দেশে খেলার জন্য যেতে না পারার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের উন্নাসিক ও
তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনোভাবই ফুটে উঠছে।
একটি পত্রিকার ভাষায়, ‘২০২০ সাল পর্যন্ত আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফটিপি) ইংল্যান্ড সফরের
কোনো সূচি নেই বাংলাদেশের। তিন বড় দেশের টেস্ট ক্রিকেটকে দ্বি-স্তর করে ফেলার প্রস্তাব
স্থগিত হয়ে গেলেও পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়ে গেছে। এফটিপির বদলে এখন নাকি পরস্পর দু’দেশ ঠিক করবে সফরের বিষয়গুলো। সিঙ্গাপুরে ৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠকের আগেই বিভিন্ন
দেশ এসব চুক্তি সেরে ফেলবে বলেও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শোনা যাচ্ছে।’ এ প্রসঙ্গে বিসিবির সাবেক প্রধান, সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, আইসিসির এই নতুন নীতির কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
ভারত থেকে অহরহ, এমনকি অনেক সময় দলে দলে আসছেন সংস্কৃতি ও ক্রীড়া অঙ্গনের লোকজন। এসে তারা চুটিয়ে
নাচছেন, গাইছেন, খেলছেন, খাচ্ছেন। আর আয়ের অবস্থা তো রমরমা।
শুধু বিপুল আয়ই নয়, ভারতের নামী-দামি কেউ কেউ এ দেশের কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা
তথ্য দিয়েছেন কর ফাঁকি দিতে। অপর দিকে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল যেমন ভারতে দেখা যায়
না, তেমনি বাংলাদেশী সংস্কৃতিসেবী ও ক্রীড়াবিদেরা সহজে ভারতে যেতে
পারেন না। অহেতুক ‘ভিসা জটিলতা’র কথা বলে তাদের আটকে দেয়া হয়।
বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার যদি নিয়মমাফিক ও প্রয়োজনে কড়াকড়ি করত ভারতীয়
শিল্পী ও খেলোয়াড়দের আসার ব্যাপারে, তা হলে নিশ্চয়ই দিল্লির চাপের
সম্মুখীন হতো। শুধু তাই নয়, এখানকার একটি মহল ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর হানি হচ্ছে’ বলে হইচই শুরু করে দিত।
কিছু দিন আগে মহিলা কাবাডি দল
ভারতে যেতে পারেনি। অথচ তারা এর আগে সে দেশে গিয়ে ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন।
ভারতের কড়াকড়ির বাড়াবাড়ি সর্বশেষ ঘটল শেখ জামাল ধানমন্ডি কাবের বেলায়। বর্তমান সরকারের
বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট কাবটিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ‘নিয়মকানুন’-এর বেড়াজালে আটকে গিয়েছিল। ফলে বহু প্রত্যাশিত আইএফএ শিল্ডে তাদের খেলতে যাওয়া
হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। সম্প্রতি ‘ভিসা জটিলতা’র শিকার হয়ে বাংলাদেশের পাঁচজন
কারাতে খেলোয়াড়ও যেতে পারেননি ভারতে।
পুনশ্চ : ক্রিকেটের অঙ্গনে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ কথাটা বহুল পরিচিত; কিন্তু এবার ভারতকে নিউজিল্যান্ড ‘ব্ল্যাক ওয়াশ’ করেছে। কিছু দিন আগে এই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট টিমই বাংলাদেশে এসে খেলায় নাকানিচুবানি
খেয়েছে। তখন বলা হয়েছিল ওদের ‘বাংলা ওয়াশ’ দেয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার একটি পত্রিকার খবর
: ‘ক্রিকেট মাঠের খেলা। তাই দাপটটা মাঠে দেখালেই তো হয়; কিন্তু ভারত মাঠের বাইরে দাপট দেখাতে গিয়ে মাঠের ক্রিকেটে হ-য-ব-র-ল। ব্ল্যাক
ক্যাপসদের কাছে শেষপর্যন্ত কিনা ব্ল্যাক ওয়াশ হয়ে গেল। ওয়ানডে সিরিজে ভারতীয়রা হেরে
গেল ৪-০-তে।’
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন