সম্প্রতি আবারো সহিংসতার শিকারে
পরিণত হলেন সংখ্যালঘুরা। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দিন যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও , নওগাঁ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও লক্ষ্মীপুরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের
বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এ ধরনের
ঘটনা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। একে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনীতি, পারস্পরিক দোষারোপ, পাল্টাপাল্টি বিবৃতি, রোড মার্চ, মানববন্ধন। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ আর টকশোর গরম আলোচনা পৌষের শীতের হিমেল আবহাওয়ায় উষ্ণতা ছড়িয়েছে। প্রতিযোগিতায়
পিছিয়ে নেই মিডিয়াওয়ালারা। কভারেজে ব্যস্ত তারা ।
সংখ্যালঘুদের
মর্মবেদনায় আমরা মর্মাহত । তাদের শোকে আমরা শোকাহত, ব্যথায় ব্যথিত, দুঃখে দুঃখিত। তাদের বিনিদ্রায় আমরা নিদ্রাহীন। দুষ্কৃতকারীদের শাস্তির দাবিতে আমরা সোচ্চার; কিন্তু কারা দুষ্কৃতকারী, কাদের শাস্তি চাই আমরা!
অতীতে
নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি কোনোটিরই। প্রকৃত ঘটনা এবং অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়নি। শাস্তির
আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়েছে একে অন্যকে ঘায়েলের তীর ছোড়াছুড়ি। সবই হয়েছে লক্ষ্যভ্রষ্ট।
এবারো আলামত দৃশ্যমান।
শুরু হয়েছে
রাজনীতির খেলা। এ দেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিশেষ করে শাসক রাজনীতিকেরা সব সময়ই নোংরা
খেলায় মেতেছে। ফলে সত্য অনেকাংশেই ধামাচাপা পড়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকে
রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ফলে প্রকৃত অপরাধীরা আড়াল হয়ে যাচ্ছে।
নব উদ্যমে তাদের স্বার্থ উদ্ধারে আবারো মেতেছে। ইদানীংকালের ঘটনা থেকেও একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
নির্বাচনের
কয়েক ঘণ্টা পরই যশোরের অভয়নগর উপজেলার চেঙগুটিয়ার চাঁপাতলা মালোপাড়ায় সংখ্যালঘুদের
ওপর তাণ্ডব শুরু হয়। কয়েক শ’ হামলাকারী বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে ভাঙচুর, লুটপাটে মেতে ওঠে। কয়েক শ’ নারী-পুরুষ-শিশু প্রাণভয়ে নদী
পার হয়ে পাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই নির্বাচনের প-েবিপে সৃষ্টি হওয়া উত্তাপ
ছড়িয়ে পড়ে। মতাসীন মহল ও প্রশাসন একবাক্যে নির্বাচনবিরোধীদের ওপর দোষ চাপিয়ে প্রতিহিংসা
চরিতার্থে উঠেপড়ে লাগে। পাইকারিভাবে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়। বাঘারপাড়া
থানার ওসি, জেলা পুলিশের মুখপাত্র এবং জেলা প্রশাসন এ ঘটনার সাথে নির্বাচনবিরোধীদের
দায়ী করেছে।
তিগ্রস্ত
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন ভিন্ন কথা। সহিংস ঘটনার জন্য তারা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী শেখ আবদুল ওহাবের
সমর্থকদের দায়ী করছেন। জানা যায়, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে
এই আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তিনি। নির্বাচনের আগেই প্রকাশ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের
সদস্যদের তাকে ভোট না দেয়ার পরিণতি ‘ভয়াবহ হবে’ বলে শাসিয়ে দিয়েছিলেন। মালোপাড়া মন্দিরের সামনে নির্বাচনী সভায় স্থানীয় হিন্দুদের
অধিকাংশই অনুপস্থিত থাকে। তারা রণজিত রায়কে সমর্থন দিয়েছিলেন। নির্বাচনে তার জয়লাভের
পর যা হওয়ার তাই হয়েছে। পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে প্রতিশোধ নিয়েছে ওহাবের কর্মী-সমর্থকেরা।
হামলাকারীদের বেশির ভাগই ছিল তার লোকজনÑ এটা তিগ্রস্তরা স্বীকারও করেছেন নাম-পরিচয় উল্লেখ করে।
সংখ্যালঘুদের
ওপর হামলার পর আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী রণজিত কুমার রায় বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা ও হুইপ
শেখ আবদুল ওহাবের ক্যাডারেরা। অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা
আবদুল মালেক সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের ইন্ধনে
এ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচনের
পর ওই দিন রাতে দিনাজপুর সদর উপজেলার কর্নাই গ্রামে হিন্দুদের কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে
ভাঙচুর হয়। আক্রান্ত হয় কয়েকটি মুসলিম পরিবারও। ঘটনাস্থল থেকে শামীম ও কামরুল নামে
সরকার সমর্থক দু’জন হামলাকারী যৌথবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে । দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ
সদস্য এবং উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী জেসমিন আরা জোস্নার
অনুরোধে ওদের ছেড়ে দেয়া হয়। এর পরপরই তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা কর্নাই গ্রামে তাণ্ডব চালায়।
তারা কর্নাই বাজারের হিন্দু ও মুসলমানদের ১০-১২টি দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট এবং গ্রামের বেশ কিছু সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা চালায়।
নির্বাচনোত্তর
সহিংসতায় নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় কালীমন্দিরে আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীপ।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেকের ভাষ্য মতে, দলের প্রার্থী নির্বাচিত এমপি ছবি বিশ্বাসকে ভোট দেয়ায় নিজ দলের প্রতিপক্ষ
গ্রুপের লোকেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
টাঙ্গাইলের
ভূঞাপুর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত ফলদা ইউনিয়নে মন্দির পোড়ানোর ঘটনার প্রধান আসামি আওয়ামী
লীগের শীর্ষ এক নেতাকে গ্রেফতার না করায় এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে নির্বাচন বর্জন করেছে
সহস্রাধিক হিন্দু ভোটার। নোয়াখালীর কৃষ্ণপুরে হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনায়
স্থানীয় পূজা কমিটি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
পটুয়াখালীর
শহরতলী লাউকাঠি বাজারে ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাদুর শেখের দাবিকৃত এক
প্যাকেট সিগারেট ও ৫০০ টাকা না দেয়ায় তিনজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে মারধর, দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুর করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে সে ও তার ক্যাডার বাহিনী।
বাংলাদেশে
সাম্প্রদায়িক হামলার কুশীলবদের বিচারের আওতায় না আনার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। সেই সুযোগে
কিছু অপশক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে বারবার। নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়ন
করতে তৎপর তারা। এ দেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে অসৎ রাজনীতিকেরা সব সময়ই নোংরা খেলায় মেতেছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের সব দায় চাপানো হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর। এবারো হয়নি ব্যতিক্রম।
সুপরিকল্পিতভাবে
দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি
করে তার দায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের তথা নির্বাচনবিরোধীদের ওপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা
হাসিলের অপপ্রয়াস দেখা গেছে। প্রচারের সাথে বাস্তবতার ছিল না মিল।
দেশের
বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ‘আসল’ সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হচ্ছে। গণ-আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতেই এসব
করা হচ্ছে; ৫ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনে ভোটারদের অনুপস্থিতি ও দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত বর্জন এবং দেশ-বিদেশে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও
সংস্থার প্রবল সমালোচনার মুখে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও লক্ষ্মীপুর দেশব্যাপী সংখ্যালঘু ও হিন্দু সম্প্রদায়ের
ওপর পরিকল্পিত হামলা করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
দেশের যেকোনো সহিংস ঘটনার দায় জামায়াতের ওপর চাপানোর প্রতিবাদ করে জামায়াতে
ইসলামী ও ছাত্রশিবির। জাতির সাথে এ ধরনের নিষ্ঠুর উপহাস বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি
আহ্বান জানানো হয়। সুস্পষ্টভাবে জানানো হয়, যদি নিরপে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জামায়াত-শিবির দায়ী বলে প্রমাণিত হয়, সেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রশাসনকে সহযোগিতার
জন্য তারা প্রস্তুত। এমনকি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ঘটনায় জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংস্থার সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর
ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে জামায়াত।
বাংলাদেশ
হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা সুব্রত চৌধুরীর মতে, সংখ্যলঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলে সেটা দলগুলোর পারস্পরিক দোষ চাপানোর বিষয়
হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামলাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। ‘জামায়াত-শিবির করেছে’ কথাটি একটা স্লোগান হয়ে গেছে। বাস্তবে অনেক জায়গায়
আওয়ামী লীগের লোকজনও জড়িত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে-ই হামলা করুক না কেন, সরকার কেন তাদের বিচার করছে না?
অভয়নগরের
চাপাতলা মালোপাড়ায় আক্রান্তদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের মতে, শুধু জামায়াত-শিবিরের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। এতে প্রকৃত অপরাধীরা
পার পেয়ে যেতে পারে। জাতীয় মানবাধিকার আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন, বিভিন্ন সময় হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলো রাজনীতির আবর্তে হারিয়ে যায়।
প্রতিটি হামলার পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করে।
নির্বাচনবহির্ভূত
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাও বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে। যেমন ফেসবুকের সূত্র ধরে রামুসহ কক্সবাজারের
বিভিন্ন জায়গায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর ও তাদের উপাসনালয়ে হামলা, পাবনার সাঁথিয়ায় যুবলীগের চাঁদাবাজদের দ্বারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা
ও ভাঙচুরের ঘটনা এবং বরিশালের চর কাউয়ার কালীখোলা গ্রামে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র
করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকটি ঘরে হামলা হয়; কিন্তু ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতকেও
অনেক সময় সাম্প্রদায়িক বলে একাকার করে ফেলা হয়।
সব কিছুতেই সরকার, কিছু সংগঠন এবং এক শ্রেণীর প্রচারমাধ্যম বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের
বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল।
সাতীরায়
সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে
হাতেনাতে
ধরা পড়া যুবলীগ নেতা আবদুল গফফারের ছবিসহ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ফেনীর দাগনভূঞা
উপজেলার দুধমুখা বাজারসংলগ্ন শশী ঠাকুর বাড়ির মিহির চক্রবর্তীর কিশোরী মেয়ে দুধমুখা
উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে ৯ জানুয়ারি রাত ৮টায় তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের
ক্যাডাররা। পাঁচবিবি উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের রাম বিলাস দাসের ছেলে রমেশ চন্দ্র দাস
উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন ফুলতলা বাজারে সার ও কীটনাশকের ব্যবসায়ী। ঋণ পরিশোধে
ব্যর্থ রমেশ ভারতে পালিয়ে যান। রাজনৈতিক প্রতিপকে দমনে এ ঘটনাকেও ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ হিসেবে প্রচারণা চালানো হয়।
দিনাজপুরে
সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরাই যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে এ কথা নির্যাতিত
ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী ভালো করেই জানেন। এমনকি ঘটনায় রঙ ছড়াতে যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের
৩০টি পরিবারের বসবাস, সেখানে ‘পাঁচ শ’ পরিবার’ আছে বলে দাবি করা হয়েছে।
জাতির
জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হলোÑ জানা গেছে, নির্বাচনপরবর্তী সংখ্যালঘুদের
ওপর ছক আগেই তৈরি করা হয়েছিল। কী, কখন, কোথায়, কেমন করে, কাদের দ্বারা ঘটবে এবং কাদেরকে দায়ী করা হবে।
২ জানুয়ারি
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় অগ্নি রায়ের রিপোর্টটিতে তেমন
আভাসই মিলেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার
গঠিত হবে, কোনো কারণে এই সরকার পড়ে গিয়ে যদি জামায়াত সমর্থিত বিএনপি সরকার
আসে, তাহলে বিপুলসংখ্যক অনুপ্রবেশকারী মোকাবেলার জন্য ভারতকে প্রস্তুত
থাকতে হবে।
তাৎপর্যপূর্ণ
বিষয় হলো, তাদের অনুসারী দেশীয় মহলও ইনিয়ে বিনিয়ে ঘটনার একই পূর্বাভাস জানিয়েছিল। সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও লেখকদের অনেকে
আগে থেকেই বলে আসছিলেন, নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হবে। তারা
আরো বলেছিলেন, বিপুলসংখ্যক সংখ্যালঘু দেশ ত্যাগ করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কিভাবে নিশ্চিত হলেন বিরোধী দলের বর্জন করা একটি নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের
ওপর হামলা হবে। তা হলে ধরে নেয়া যায়, আক্রমণ হবে এ কথা পুলিশ ও স্থানীয়
প্রশাসনের জানা ছিল। তেমনি জানা ছিল মতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্তাব্যক্তিদেরও। এত কিছু
জানা সত্ত্বেও আক্রমণের শিকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন?
সত্যকে
আড়াল করে ক্ষমতাসীন মহল সূচনালগ্ন থেকে দেশের কোথাও সহিংস ঘটনা ঘটলেই কোনো ধরনের বাছবিচার ও তদন্ত ছাড়াই তার সব দায় এবং দোষ বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের
ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। একই সাথে কোরাস গেয়ে আসছে তাদের দলীয় মনোভাবাপন্ন
কিছু গণমাধ্যম, নিজস্ব ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী ও সংগঠন।
যারা আক্রান্ত
হচ্ছে, তারা এ দেশের নাগরিক, আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের ভাই ও বন্ধু। রাজনীতি ও ভেদাভেদ ভুলে নিপীড়িতের সাহায্যে এগিয়ে আসতে
হবে সবাইকে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব একা সরকার ও প্রশাসনের নয়। দেশের
মানুষেরও। প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে সব ধরনের ভয়ভীতি, চাপ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে ।
সংখ্যালঘুদের
দায়িত্ব হবে মহলবিশেষের প্রতি দুর্বল না থেকে প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে সাহায্য করা। নিজের
চোখ দিয়ে অপরাধীদের দেখা। নিজ কানে যা শুনবে তাই বলা এবং প্রকৃত ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী
হওয়া।
অপর দিকে
দ্রুত বিচারের নামে প্রকৃত দোষীদের স্বচ্ছ বিচার হবে, না শত-সহস্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘সাইজ’ করা হবে সেই শঙ্কায় শঙ্কিত অনেকে। যদি তাই হয়, ভোট ব্যাংকের ‘আমানত’ হিসেবে ব্যবহৃত সংখ্যালঘুদের
ভবিষ্যৎ শঙ্কাপূর্ণ থেকেই যাবে। প্রকৃত দোষীরা থেকে যাবে অধরা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন