বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
এ টিম বি টিমের খেলা
Posted on ৩:৫৭ PM by Abul Bashar Manik
বাংলাদেশ এখন বিশ্বরাজনীতির অন্যতম
স্নায়ুকেন্দ্র। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্বশক্তিগুলো কিভাবে মাঠ সাজাবে এবং তাদের স্বার্থের
বোঝাপড়াটা কেমন হবে, তারই পরীক্ষাভূমি বাংলাদেশ। রাজনীতির মাঠে যারা
খেলছেন, যাদের হয়ে খেলছেন, যাদের স্বার্থে খেলছেন তার একটা
রূপক উপমা হতে পারে বহুজাতিক কোম্পানির বাজারনীতি এবং মার্কেটিং পলিসি। জনগণ কখনো ভোক্তা, কখনো দর্শক।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো একটি বিশেষ
ধরনের মার্কেটিং পলিসি অনুসরণ করে। লক্ষ্য বাজার দখল ও একচেটিয়া মুনাফা অর্জন। তারা
নিজেদের পণ্যের সাথে নিজেদেরই পণ্যের একটি প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে
পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভোক্তা বা ক্রেতারা তাতে একটি ব্র্যান্ডের প্রতি মোহ ভঙ্গ
হলে চটকদার ও চমৎকার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে একই কোম্পানির ভিন্ন ব্র্যান্ডের সাবান, পেস্ট কিংবা অন্য কোনো প্রসাধনী পণ্য কিনে রুচি পাল্টায়। ভাবে, একটি ছেড়ে অন্যটা ধরে জিতে গেছেন। আদপে তিনি প্রতারিতই হলেন। অন্য দিকে এই
কৌশলের কাছে দেশজ কোম্পানিগুলো মার খেয়ে ব্যবসাবাণিজ্য লাটে তোলে। তাতে পরোক্ষভাবে
দেশের স্বার্থও ক্ষুণ্ন হয়। দেশীয় কোম্পানিগুলোও বহুজাতিক কোম্পানির এই মার্কেটিং পলিসি
অনুসরণ করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। সর্বত্র দাপটের কাছে টিকে থাকতে পারছে না। তারা
এতে কখনো লাভবান হয়, কখনো হয় না। মাঝে মধ্যে পুঁজিও হারায়। তারপরও টিকে
থাকা ও অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে একই কোম্পানি ব্র্যান্ড পরিবর্তন করে একই ধরনের ভোগ্যপণ্য
বাজারজাত করে। বিজ্ঞাপনের চমকে ক্রেতা রুচি পাল্টায়। কিন্তু ওই কোম্পানির বাইরে যেতে
পারে না বা যায় না। অনেক কোম্পানি শেষ পর্যন্ত তার সুনাম খ্যাত পণ্যটির ব্র্যান্ড বহুজাতিক
কোম্পানির কাছে স্বল্পমূল্যে তুলে দিতে বাধ্য হয়। তা ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি তার বাণিজ্যিক
স্বার্থে আপনাকে তার উৎপাদিত বিলাস পণ্যে অভ্যস্ত করে ছাড়বেই। আপনার ক্রয়ক্ষমতাও তাদের
জানা। তাই মিনি প্যাক করে আপনাকে দামি পণ্যটি ব্যবহার করাবে। একদিন পকেট না কেটে আপনি
হররোজ তাদের লাভবান করবেন কিন্তু টের পাবেন না। মনে মনে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে ভালো পণ্যের
ব্যবহার করে তুষ্টি বোধ করবেন।
সাম্রাজ্যবাদী চক্র, আধিপত্যবাদী শক্তি ও সম্প্রসারণবাদী গোষ্ঠী একইভাবে টার্গেটকৃত দেশে একাধিক
রাজনৈতিক দলের ওপর ভর করে। আপনার সহ্যের ভেতর, আস্তে আস্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
নিয়ে তারা এগোয়। প্রথমে আপনার রুচি পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়। তারপর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে
মগজ ধোলাই করে আপনাকে তাদের ইচ্ছামতো প্রস্তুত করে। তারপর সরাসরি ভর করে। এরপর সেই
দলগুলোকে পাতানো খেলার মতো পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলে। তাতে কোনো বিশেষ
দল জনপ্রিয়তা হারালে বি-টিমকে কৌশলে সামনে এনে খাড়া করে। সাধারণ মানুষ বিষয়টা টের পায়
না। গভীরভাবে তলিয়ে দেখতেও যায় না। তাই প্রতারিত হয়। অপর দিকে সাম্রাজ্যবাদী চক্র তাদের
কালো হাত দিয়ে উদ্দেশ্য অর্জন করে নেয়। তখন আর কিছুই করার থাকে না। ওপরের দিকে তাকিয়ে
দেখে মাথার আশ্রয় সরে গেছে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে মইটাও নেই।
বুকে হাত দিয়ে বলুন তো- ভাষা
আন্দোলনের আগের চৈতন্য লালন করলে আমরা উর্দুর পরিবর্তে এতটা হিন্দি অভ্যস্ত হতে পারতাম!
বাংলাদেশের স্বাতন্ত্র্য এভাবে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো! ইসলাম-মুসলমান বললেই এত নাক
সিটকাতাম! যতসব চেতনার বুদবুদ দিয়ে দেশকে অস্থির ও জনগণকে বিভক্ত করতে পারতাম! দেশের
বাজার ও স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েও নির্লিপ্ত থাকা যেত! বিডিআর থেকে দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে
বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাষ্ট্রকেই নিরাপত্তাহীন করে দেয়া সম্ভব হতো! নিশ্চয় হতো না।
জীবন থেকে নেয়া একটা উপমা দেয়া
যাক। স্বাধীনতার পর দুঃশাসন ও শাসন-শোষণে বাড়াবাড়ির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের
স্বপ্নভঙ্গের কারণ ঘটে। খাই খাই ও চাটার দলের কারণে এক সময়ের নন্দিত বঙ্গবন্ধু ও তার
দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছে যেতে থাকে। তারুণ্যের স্বপ্নভঙ্গ ও আশাহত
হওয়ার প্রেক্ষাপটে দ্রোহের আহ্বান নিয়ে মুজিব, আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী হিসেবে
মাঠে নামে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসমাখা লড়াকু দল জাসদ। হতাশাগ্রস্ত মানুষ পরিবর্তনকামী ও
তারুণ্য দলে দলে শামিল হতে থাকে। ক’দিন না যেতেই জাসদ নেতৃত্ব মুজিব, আওয়ামী লীগ ও ভারত বিরোধিতার ওপর আপাত মধুর ও ভুবনমোহিনী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের
অলীক গল্পের আলখেল্লা পরিয়ে দেয়। আসলে সেটা কোনো সাম্যবাদী চিন্তা ছিল না, ছিল তারুণ্যের সামনে মনলোভা এক ধরনের বিপ্লবের জাদুময় মায়াজাল বিছানো। তার
পরের ঘটনা গণবাহিনীর রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা। শত শত তরুণের জীবনহানির কারণ ঘটল। অবশেষে
বাকশালের পথ ধরে পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডি ধেয়ে এলো। সেই সময় আমাদের মতো তরুণেরা যখন জাসদের
ব্যাপারে লড়াকু সৈনিক, তখন আমাদের এককালের সতীর্থ কানে কানে বললেন, বুঝে শুনে লাফাও, ভারতের বি টিমে খেলে কী লাভ! খেলতে চাও তো এ-টিমে
থেকেই খেলো। তার সরাসরি মন্তব্য জাসদ আওয়ামী লীগের বি-টিম। এটাও স্মরণ করিয়ে দিলেন, এক সময় দেখবে যারা শুধু দেশ ও জনগণের জন্য প্রতিবাদী ও লড়াকু হয়েছে, তারা ছিটকে পড়বে। অন্যরা সময়মতো এ টিমকে সমর্থন জুগিয়ে যারা দলটির জন্ম দিয়েছে
তাদের ঋণ শোধ করবে।
মেজর জলিল জাসদ ছেড়ে দিলে তার
সাথে আগের পরিচয়ের সূত্রে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলাম। তখন তিনি অতীত কৃতকর্মের কাফফারা
দিতে বই লিখছিলেন। ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধিনতা’ তখন বাজারে। অন্য বইগুলোও প্রকাশিত হচ্ছিল। ব্যাপক আলোচিতও হচ্ছিল।
এক সময়ে এসে আলোচিত জাসদ নেতা
ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ব্যক্তিগত ও পারিবারিক
পর্যায়ে উন্নীত হলো। ঘনিষ্ঠতার কারণেই আমার বিয়ের আসরে পাঁচজন জাতীয় ব্যক্তিত্বের অন্যতম
ছিলেন জলিল ভাই। জলিল ভাইয়ের মৃত্যুর পর ‘জলিল রচনাবলি’ সম্পাদনার দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছিল সম্পর্ক ও তার সম্পর্কে জানা শোনার
কারণেই। রচনাবলির প্রকাশনা উৎসবে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শব্দসৈনিক জ্ঞান তাপস সৈয়দ আলী
আহসান স্যার উপস্থিত ছিলেন। উদ্যোক্তাদের জন্য জলিল রচনাবলির শ’ দুয়েক বই রেখে অবশিষ্ট সব বই মিসেস জলিল অর্থাৎ আমাদের প্রিয় সায়মা ভাবীর কাছে
পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আজকাল অনেকেই জলিল ভাইয়ের বইগুলো চান। যারা তার সাথে সম্পর্কের বিষয়টি
জানেন, তারা আশা করেন আমার সংগ্রহে আছে। যদিও ব্যক্তিগত কপিটা ছাড়া আর
কোনো কপি আমার হাতেও নেই। যে সতীর্থ আমাকে বিটিমের বিষয়টি অবহিত করেছিলেন, তিনিও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তখনই তার ধারণা ছিল সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল শেষ
পর্যন্ত বি-টিমে খেলতে রাজি হবেন না। বাস্তবেও ঘটেছিল তাই। জীবদ্দশায় জলিল ভাইকে আগরতলা
‘ষড়যন্ত্র’ মামলার অন্যতম আসামি জাসদের আরেক সংগঠক সুলতান ভাইয়ের
সামনেই এ-টিম, বি-টিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। দু’জনেই অভিযোগটি কবুল করে সত্যতা মানলেন। একসময় জাসদ যখন কাচের মতো ভেঙে টুকরো
টুকরো হচ্ছিল- তখন একজন সাবেক জাসদ নেতা মন্তব্য করেছিলেন- জন্মগত ত্রুটি ও বি-টিমের
দল এভাবেই ভাঙে। শেষ পর্যন্ত দেশপ্রেমিকেরা জাতীয়তাবাদী ধারায় চলে যায়, অন্যরা পঞ্চম বাহিনীর হয়ে ভাড়া খাটে। আজ যারা জাসদের নামে এ টিমের সাথে খেলছেন
তাদের পূর্বাপর ভূমিকায় এ-টিম বি-টিমের সেই প্রতিষ্ঠিত ধারণা পরিষ্কার করে দেয়। যারা
খেলায় নেই তাদের অবস্থানও স্পষ্ট।
এরশাদ যখন বন্দুকের জোরে ক্ষমতা
দখল করলেন, তখন তাকে যারা কৌশলে সমর্থন জোগালেন, তাদের সাথে এরশাদের আজকের সখ্য এ-টিম বি-টিমের সেই প্রতিষ্ঠিত ধারণাটি
পুষ্ট করে। এরশাদ বি-টিম হয়ে খেলতে নেমেছেন- এই তথ্যটিও জেনেছিলাম আরেকজন সেক্টর কমান্ডারের
বরাতে। সেই বিরাশি সাল থেকে এরশাদ ও তার মিত্রদের রাজনৈতিক মেলবন্ধনের পূর্বাপর খতিয়ান
দেখে এ-টিম বি-টিম বানিয়ে খেলার বিষয়টি এখন আর ধারণা পর্যায়ে নেই। বিশ্বাসে রূপান্তরিত
হয়েছে। এরশাদের রাজনৈতিক জন্মটাকে এখন বলা হচ্ছে আজন্ম পাপ। এরশাদের চাতুর্যের রাজনীতি
ও ধূর্তামি সেই ধারণা পোক্ত করে দেয়। তাছাড়া এরশাদ যে রাজনীতি করেন তার সাথে আওয়ামী
রাজনীতির দুস্তর ব্যবধান। এই বৈপরীত্যের মাঝেও তারা খেলার স্বার্থে ও সুতার টানে একই
সমতলে ছিলেন, আছেন।
বাংলাদেশের মানচিত্রজুড়ে বর্তমানে
যে খেলা চলছে, এ খেলা মরণ খেলা। আমাদের রাজনৈতিক রোগের ডায়াগনোসিস করছে ইউরোপ-আমেরিকা-ভারত।
প্রেসক্রিপশন আসছে ভারতের সাউথ ব্লক আশ্রয়ী থিঙ্ক ট্যাঙ্কের পক্ষ থেকে। আমাদের রাজনীতিবিদেরা
এই সত্যটি কেউবা জেনে, কেউবা না জেনে এ খেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে
গেছেন। এ খেলায় আমাদের জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তারা দর্শক মাত্র। কেউ সচেতনভাবে, কেউ বা বাধ্য হয়ে। এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বহুজাতিক কোম্পানির পণ্যের মতো বিক্রি
হচ্ছেন। কেউ বা বিক্রি হয়ে গেছেন। অসংখ্য মানুষ না জেনে, না বুঝেই সাধারণ ক্রেতা বা ভোক্তা হয়ে আছেন। বাংলাদেশে যে ফাঁসির জোয়ার বইছে, তার সাথে এই খেলার সম্পর্ক প্রত্যক্ষ বলেই মনে হয়। কোনোটি থেকে কোনোটি বিচ্ছিন্ন
নয়। এক এগারো থেকে শুরু, পিলখানা হয়ে আজ অবধি পৌঁছে গেছে।
ইন সাইড র’ পড়ে মনে হতো কিছুটা বাড়াবাড়ি হতেই পারে। আজ কোনোটি বাড়াবাড়ি মনে হয় না। মনে
হয় বঙ্গবন্ধু, চার নেতা, জিয়া, তাহের, মঞ্জুর, সিরাজ সিকদার, সবাই ষড়যন্ত্র ও পরিস্থিতির শিকার।
কেউ ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে টিকে থাকতে পারেননি, ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক বা পরিস্থিতির
শিকারই হয়েছেন। এখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, সংবিধান থেকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সর্বত্র ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। ক্ষমতার
কালো হাত এখন উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
পরিস্থিতি না বুঝেই এই সময়ে সবচেয়ে
‘সত্যবাদী’ সেজেছে পুলিশ। পো ধরেছে অন্যরা। তারা প্রেস
ব্রিফিং করে, টকশো করে, গান-বাদ্যের আসর বসায়। তারা এতটা করিৎকর্মা যে বিচার
ও প্রমাণের আগে সাজা দেয়। আনুষ্ঠানিক বিচারের আগে রায় বলে দেয়। তারাই ক্রসফায়ারের গল্প
সাজায়। এই পোশাকি আচরণ আর কত দিন চলবে জানি না। তবে পুলিশি রাষ্ট্রের সব বৈশিষ্ট্য
আমাদের সরকার অর্জন করেছে। প্রশ্ন, কার স্বার্থে? প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই বা কাদের নির্দেশে এতটা দলবাজ ও সরকারের
কর্মচারী সেজেছে- তাও বোধগম্য নয়। এ ধরনের মানসিক গোলামির কারণে তাদের পেশাদারিত্ব, সুনাম এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তাও তারা ভাববার সময় পাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা
নিয়ে এ প্রসঙ্গে একটা গল্প বলা যেতে পারে। এটি বার কয়েক শোনা গল্প। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের
আদালতে নেয়ার আগে তালিকা মুসাবিদা করছে। গ্রেফতার হওয়া একটি বালকের বয়স জিজ্ঞাসা করল।
বালকের জবাব, ১৪ বছর। পুলিশ অশ্রাব্য ভাষায় গাল দিয়ে ক’টা শপাং শপাং লাগিয়েই বলল, হারামজাদা, তোর বয়স একুশ (কারণ ১৪ বছরের বালককে কোর্টে তোলার বিপত্তি অনেক)। পুলিশ ক্ষেপে
গিয়ে বলল, তুই মিথ্যা বলছিস। তারপর বালকটির বাবার বয়স জিজ্ঞাসা করল। বালকের
জবাব ৩৫ বছর। এবারো গালি এবং বেতের বাড়ি বাদ পড়ল না। ধমক দিয়ে বলল, তোর বয়স ২১ হলে তোর বাপের বয়স ৩৫ হয় কী করে। তোর বাপের বয়স ৪৫ বছর। এবার দাদার
বয়স জিজ্ঞাসা করতেই বালক বলে দিলো, স্যার আপনিই বলুন, আমার কোনো কথাই আপনি বিশ্বাস করবেন না। আপনি যা বলবেন সেটাই আমার দাদার বয়স
হবে।
এটি গল্প নয়। অনেক সত্য ঘটনার
নির্যাস। আমাদের পুলিশ সম্পর্কে জনগণের ধারণা মিশ্র এবং সুখকর নয়। এর জন্য জনগণ দায়ী
নয়, প্রধানত দায়ী সরকার ও অপেশাদার পুলিশ কর্মকর্তারা। তারপর অতি উৎসাহী
দলবাজ পুলিশ। শকুন যেমন গরু মরার জন্য দোয়া করে বলে লোককথা চালু আছে, তেমনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য পুলিশ দোয়া করে বলেও লোককথা চালু আছে।
তাই তারা ধরে আনতে বললে বেঁধে আনে। কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বললে গুলি ছোড়ে। সেই সাথে গ্রেফতারবাণিজ্য
তো আছেই। এবার অবশ্য দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের উপকারিতার বিষয়টিও জানলাম। একজন রাজনীতিবিদ
জেল থেকে এসে মন্তব্য করলেন- পুলিশ পয়সার বস না হলে দুর্গতি বাড়ত। জেল পুলিশ টাকায়
বিক্রি না হলে কষ্টটাও হতো বেশি।
আজকাল পুলিশ কর্মকর্তারা মিডিয়াব্যক্তিত্ব
হয়ে উঠেছেন। এতে পরিচিতি বাড়লেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রচুর। তা ছাড়া রাজনৈতিক সরকারের
সব অন্যায্য দায় কেন পুলিশ নেবে। পুলিশ তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, শুধু সরকারের পেটোয়া বাহিনী নয়। জনগণের খাদেমও বটে। পুলিশ সদস্যেরা আমাদেরই
কারো ভাই, বন্ধু, পিতা কিংবা সন্তান। এ সত্যটি নগদ নারায়ণরা ভুলে
থাকলেও বিবেকবান, মানবিক বোধসম্পন্নরা ভুলে থাকবেন কেন! যারা এই পতাকা ও মানচিত্রটাকে
জায়নামাজের মতো পবিত্র ভাবেন- তারা আশা করেন- দেশপ্রেমিকেরা এবার অন্তত নিজ নিজ অবস্থান
থেকে স্বাধীন সত্তা, স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি জানান দিতে সাহসী
হয়ে উঠবেন।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন