খালেদা জিয়াকে তার প্রতিপক্ষ দলের
নেত্রী অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অপমানজনক ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করে থাকেন। এই আক্রমণ অনেক
সময় শালীনতাও ছাড়িয়ে যায়। খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ, তার শিাগত যোগ্যতা, তার পারিবারিক জীবন; তার জন্ম কোন দেশে, তিনি কোন সময় ঘুমাতে যান ও কী খান প্রভৃতি বিষয় নিয়েই তাকে আক্রমণ করা হয় প্রতিনিয়ত।
আবার অনেক সময় তাকে পাকিস্তান চলে যেতেও বলা হয়। খালেদা জিয়া অবশ্য এসবের কোনো প্রতিক্রিয়া
দেখান না, তিনি অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে শান্ত ও স্থির থাকেন। এখানে তার
একটা বিশাল ব্যক্তিত্বের অবয়ব ফুটে ওঠে। তার এই ব্যক্তিত্বের কাছে চরমভাবে ধরাশায়ী
হন প্রতিপ দলের নেত্রী, এখান থেকেই তার ভেতরে ােভ তৈরি হয় আর এ ােভের বহিঃপ্রকাশ
তিনি ঘটান খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে।
খালেদা
জিয়া জনগণের স্বার্থে যা বলেন, সেখানে স্থির থাকেন। জনগণের স্বার্থের বিপরীতে তিনি
কোনো আপস করেন নাÑ এটি তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন কাজের মাধ্যমে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী
আন্দোলনে তিনি আপস করেননি। আপস করেননি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ও জনগণের ভোটাধিকার
রার আন্দোলনেও।
কেননা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রকৃত
জনগণের সরকার কায়েম সম্ভব নয়। এ দাবি না মানা আর জনগণের বিপে অবস্থান নেয়া সমান কথা।
ভোটাধিকার জনগণের আত্মমর্যাদা। খালেদা জিয়া জনগণের ভোটাধিকারের পে অবস্থান নিয়েছেন, এটি তার নৈতিক অবস্থান। নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে তিনি বড় করে দেখেননি। নির্বাচনে
জয়-পরাজয় আর নৈতিক অবস্থান এক নয়। খালেদা জিয়া নৈতিক অবস্থানে অটল থেকেছেন। এখানেও
তার একটা ব্যক্তিত্বের সমাহার দেখা গেছে। তার এই ব্যক্তিত্বের কাছে চরমভাবে ধরাশায়ী
হয়েছেন প্রতিপ দলের নেত্রী। তাই নির্বাচনের পরেই সাতীরার জনসভায় তিনি খালেদা জিয়াকে
পাকিস্তান চলে যেতে বলেছেন।
বলা বাহুল্য
১৯৮৬ সালেও ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা জাতীয় বেঈমান হবে বলে’Ñ খালেদা জিয়ার কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন
প্রতিপ দলের নেত্রী। খালেদা জিয়া তখন অন্যান্য দলকে সাথে নিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
আপসহীন আন্দোলন করছিলেন। এ আন্দোলনের সূত্র ধরেই দেশে গণতন্ত্র এসেছে। ফলে বেড়েছে জনগণের
মতায়ন এবং আর্থসামাজিক খাতে ঘটে চলেছে অভুতপূর্ব উন্নয়ন, যা আজ আলোচিত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক পর্যায়েও।
বাংলাদেশ
থেকে আরো দুই যুগ আগে স্বাধীন হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। ভারতের নোবেল
বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ
ড. মনমোহন সিংয়ের ভাষ্য মতে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ েেত্র ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের
অর্জন অনেক বেশি।
আয়ের দিক
থেকে ভারত বাংলাদেশের অনেক ওপরে। ভারতের মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি) এক হাজার
১৭৫ মার্কিন ডলার। আর বাংলাদেশের ৫৯০ ডলার; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত যে আয়ের দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে তার প্রতিফলন অন্যান্য েেত্র কতটুকু? ভারতের চেয়ে শিশুমৃত্যুর হার বাংলােেদশে অনেক কম; শিশুর স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ওজন কম হওয়ার দিক দিয়েও ভারত বাংলাদেশের অনেক
পেছনে। মাতৃগর্ভকালীন মৃত্যুও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক কম। সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন
সুবিধার েেত্রও বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে।
নারী শিা
ও নারীর মতায়নের েেত্রও ভারত বাংলাদেশের অনেক পেছনে পরে আছে; আজ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে একজন শিতি মেয়ে পাওয়া যায়, এমনকি খেটেখাওয়া মানুষের ঘরেও। বালাদেশের কৃষকেরা যে সুযোগ-সুবিধা পায়, ভারতের কৃষকেরা তা পায় না, ভারতে কৃষিঋণের জন্য কৃষকেরা
আত্মহত্যা করতে পর্যন্ত বাধ্য হন।
আমরা যদি
আমাদের মনটা একটু বড় করি এবং দৃষ্টিটা একটু প্রসারিত করি তা হলে দেখতে পাবো, বাংলাদেশের এসব বড় বড় অর্জনের পেছনে চালকের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে গণতন্ত্র
আর গণতন্ত্রের জন্য অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির
এক সুদীর্ঘকাল অতিক্রম করেছেন, জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা সামরিক স্বৈরশাসনের
নিগড় থেকে মতাকে বেড় করে নিয়ে গেছেন তিনি জনগণের দোরগোড়ায়।
এ কঠিন
কাজ করতে তাকে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, সহ্য করতে হয়েছে জুলুম-অত্যাচার।
নারী শিা
ও নারীর মতায়নের েেত্র বেগম জিয়ার নেতৃত্বে নেয়া গৃহীত পদপে কিঞ্চিৎ আলোচনা না করলে, লেখাটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। নারী শিা ও নারীর মতায়নে বেগম জিয়ার অবদান বিশেষ
স্মরণযোগ্য। এ অবদান তার চরম প্রতিপরাও স্বীকার করেন। প্রবাদ আছে, শিতি মা-ই পারেন শিতি জাতি গড়তে। এ দেশে শিতি মা তৈরির সূচনা করেন বেগম খালেদা
জিয়া। নারী শিার সব ক’টি দ্বার উন্মোচিত হয় বেগম জিয়ার হাত ধরেই। ১৯৯১
সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক সরকার নারী শিার উন্নয়নে শিা খাতে অর্থ
বরাদ্দ দেন সর্বোচ্চ। ফলে গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠতে থাকে নতুন পাকা স্কুল। করা হয় প্রাথমিক
শিা বাধ্যতামূলক। চালু করা হয় শিার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি। মেয়েদের অবৈতনিক শিা, উপবৃত্তিসহ আরো নানা সুযোগ-সুবিধা চালুর ফলে শিােেত্র এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন
সাধিত হয়। ছেলেমেয়েরা ব্যাপকহারে স্কুলমুখী হয়, বিশেষ করে স্কুলগামী মেয়ের সংখ্যা
উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে একজন শিতি মেয়ে পাওয়া যায়।
এটিই গণতন্ত্রের সুফল। এ সুফল আজ সবাই ভোগ করছে; কিন্তু খালেদা জিয়াকে মনে রেখেছেন
কয়জনে? তার নেতৃত্ব ও দৃঢ়তার কাছে পরাজিত হয়ে প্রতিপ শক্তি তাকে অপমানজনকভাবে
কটা করেন।
খালেদা
জিয়ার নেতৃত্বে বর্তমানে জনগণের ভোটাধিকার রার আন্দোলন চলছে। আন্দোলনে সাময়িক ছন্দপতন
হলেও শেষ পর্যন্ত তিনিই জয়ী হবেন। কেননা এ আন্দোলনে জনগণের সমর্থন আছে। নদীর স্রোত, বাতাসের গতিবেগ ও জনগণের আবেগ আটকে রাখা যায় না, জনগণের শক্তিরই জয় হয়।
জনগণের
শক্তি কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন মাঠপর্যায়ে নতুন নেতৃত্বের। সেই নেতৃত্বও তৈরি হবে খালেদা
জিয়ার নেতৃত্বেই। এর জন্য অবশ্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।
উত্তরাধিকার
সূত্রে লব্ধবস্তু ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দেয়ার অর্থ হচ্ছে নেতৃত্ব। এ এমন এক বস্তু, যা সাহস ও স্থির সঙ্কল্প নিয়ে চলার জন্য তৈরি করে নেয় এবং বৃহৎ ছবি অবলোকন
করার সামর্থ্য দান করে। ন্যায় ও সত্যের পথ অনুসরণ করতে জনগণকে উৎসাহ দান এবং পরিবর্তন
আনয়নে অনুঘটক হওয়ার মতাই হচ্ছে সত্যিকারের নেতৃত্ব।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন