বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নসাপেক্ষ ভূমিকা


আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১৬টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ম ও আইন অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারবে কি না তা নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণও যথারীতি ক্ষমতাসীনরাই তৈরি করেছেন। দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্টে জানা গেছে, প্রথম দফার নির্বাচনে শোচনীয় ভরাডুবির পর ক্ষমতাসীনরা আরো জোরেশোরে বাঁকা পথে পা বাড়িয়েছেন। বিরোধী দলের, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা নির্বাচনী তৎপরতাই চালাতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন দলের গু-া-সন্ত্রাসীরাতো সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছেই, পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাবনাময় সব প্রার্থীর বিরুদ্ধেই একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। সেসব মামলায় গ্রেফতারের জন্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ফলে প্রচারণা চালানো ও জনসভা করার মতো কোনো কার্যক্রমই চালাতে পারছেন না বিরোধী দলের প্রার্থীরা। তাদের পোস্টার পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এমন ত্রাসের রাজত্বই কায়েম করা হয়েছে যে, নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং জনসংযোগ করা দূরে থাকুক, বিরোধী দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মূলত এ কারণেই নির্বাচনের দিন এগিয়ে এলেও নির্বাচনকে নিয়ে যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ার কথা তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থার পেছনে সরকারের পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশনও নেতিবাচক ভূমিকাই পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব যেখানে ছিল দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়া থেকে সরকারকে নিবৃত্ত করা, কমিশন সেখানে উল্টো সরকারের জন্য প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে। সুজন-এর মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভূমিকা পালনের অভিযোগ তুলেছে। অথচ আইনানুযায়ী উপজেলা নির্বাচন শুধু নির্দলীয় ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নয়, কমিশনকেও সর্বাত্মকভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন রকম পরিস্থিতি। প্রতিটি এলাকাতেই পুলিশ ও প্রশাসন অনেকাংশে ঘোষণা দিয়েই সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে ভূমিকা পালন করছে। বহু এলাকায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকেও মামলা ও গ্রেফতারের নামে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশ। এসব প্রকাশ্যে ঘটলেও কোনো ব্যাপারেই নির্বাচন কমিশনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ আইন হলো, নির্বাচনের সময় কমিশনের নির্দেশ ও অনুমতি ছাড়া পুলিশ ও প্রশাসন গ্রেফতার ও হয়রানির মতো কোনো তৎপরতায় জড়িত হতে পারবে না। কোনো ব্যবস্থা নেয়া এবং উপজেলা পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে নিষেধ করা বা কিছু বলা দূরে থাকুক, সব বিষয়ে রহস্যময় নীরবতা পালন করছে বলেই নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ বরং ভাবতে বাধ্য হচ্ছে যে, কমিশন প্রকৃতপক্ষে সরকারি দলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। একই কারণে মনে করা হচ্ছে, এই কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। সরকার যে প্রভাব খাটাবে এবং পুলিশ ও প্রশাসনকে নিজদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ব্যবহার করবে সে বিষয়েও মানুষের মনে সন্দেহ নেই।
সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাধাহীন সুযোগ এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত বলেই আমরা দলীয় গু-া-সন্ত্রাসী এবং পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের হামলা, গ্রেফতার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। প্রতিবাদ জানাই নির্বাচন কমিশনের নীরবতা ও সরকারি দলের পক্ষে প্রশ্রয়ের বিরুদ্ধেও। আমরা মনে করি, সংবিধান ও আইন অনুসারেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং সবদলের প্রার্থীকে বাধাহীনভাবে অংশ নেয়ার ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার। এ ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের। অন্যদিকে সে কমিশনের বিরুদ্ধেই পক্ষপাতিত্বের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কমিশনকে অবশ্যই পক্ষপাতিত্ব পরিত্যাগ করে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রত্যেক প্রার্থীই বাধাহীনভাবে সভা-সমাবেশ করতে ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন। সরকার যাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেফতারের নামে প্রার্থী ও তার কর্মীদের হয়রানি না করতে পারে সে বিষয়েও কমিশনকে আইন অনুযায়ী শক্ত অবস্থান নিতে হবে। বর্তমান পর্যায়ে এটা বিশেষভাবে দরকার এ জন্য যে, ক্ষমতাসীনরা একদিকে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পক্ষে এখনও সমর্থন যোগাড় করতে পারেননি, অন্যদিকে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনেও তাদের ভরাডুবি ঘটেছে। সে কারণে আজকের তথা দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে বিজয়ের জন্য তারা মরিয়াভাবে চেষ্টা চালাবেন। বাস্তবে চালাচ্ছেনও। এজন্যই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বেড়ে গেছে বহুগুণ। এই দায়িত্ব পালনে সামান্য অবহেলা করলেও কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে। বড়কথা, ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হবে জনগণ এবং বিপন্ন হয়ে পড়বে গণতন্ত্র। আমরা তাই কমিশনের প্রতি আরো একবার নিরপেক্ষ হওয়ার এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads