রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আবারও হামলা চালিয়েছে বিনাভোটে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র-সংগঠনের ক্যাডাররা। এতে বুলেটবিদ্ধ হয়েছেন শতাধিক বলে খবরে প্রকাশ। অতিরিক্ত ভর্তি ও টিউশন ফিস কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কয়েক দিন যাবত আন্দোলন করে আসছিলেন। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ কিছু দাবি মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নেননি। ফলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘোষণা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র-সংগঠনটির ভালো লাগেনি। তাই তারা গত ২রা ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরতদের ওপর চড়াও হয় এবং ব্যাপক হামলা চালায়। সরকারি পুলিশও হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে বুলেট ছুঁড়ে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুলেট ছোঁড়া অবস্থায় হামলাকারীদের ছবিও প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে স্পষ্ট করেই এসেছে। তাই হামলাকারী কারা তা চিহ্নিতকরণে তেমন অসুবিধে নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, ক্ষমতাসীন দল ও তাদের পক্ষের লোকজনদের অন্যায়-অবিচার চোখে পড়ে না। আর দেখলেও তা না দেখার ভান করে থাকা হয়। উল্টো নিজেদের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে বিভ্রান্ত করা হয় দেশ ও জাতিকে। এমনই এক দুঃসহ অন্ধকারে ঠেলে দেবার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ধামাচাপা দিয়ে ক্ষমতাসীনদের ধোয়া তুলসিপাতা হিসেবে প্রতিপন্ন করতে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। এতে যে পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে তা নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়ে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারী ঘটনা কেবল সম্প্রতিই ঘটেনি। অতীতে এমন আরও অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছে ক্ষমতাসীন এই বিশেষ দলটি। অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণও ঝরে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র-সংগঠনটির সন্ত্রাসীদের বুলেটের নির্মম আঘাতে। কিন্তু এসব হত্যাকা- কিংবা সংঘর্ষের বিচার আজও হয়নি। বরং অন্যের ওপর দোষ চাপানোর নির্লজ্জ প্রয়াস চালানো হয়েছে বারবার। বিশেষত আদর্শবাদী ছাত্র সংগঠন শিবির কিংবা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ওপর অন্যায়ভাবে দোষ চাপিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলেছে। কথায় বলে না, ‘বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো’। ক্ষমতাসীন বিশেষ দলটি ও তাদের চামচারা সব সময়ই এ কাজটি করেছে বেশ চতুরতার সঙ্গে। কিন্তু শাক দিয়ে যে মাছ ঢাকা যায় না তা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে। এবারও সরকার ও তাদের দোসররা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে শিবির ও ছাত্রদলকে দায়ী করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে শুরু করেছে। অথচ সাধারণ ছাত্রদের ওপর পিস্তল উঁচিয়ে কারা বুলেট ছুঁড়েছে তা ক্ষমতাসীন ঘরানার মিডিয়াতেও প্রকাশ্যে এসে গেছে। এরপরও ‘ঢাক ঢাক গুড় গুড়’ ক্ষমতাসীনরা কেন করছেন তা জনগণের বুঝতে বাকি নেই আদৌ। প্যাঁচক নামে একটি প্রাণী আছে। এটি নাকি দিনের আলো সইতে পারে না। তাই এটি রাতের আঁধারে চলাফেরা করে এবং শিকার খোঁজে। পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হয় ক্ষমতাসীনরা এই প্রাণীটির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অবশ্য শুধু রাতের আঁধারেই নয়, দিনের আলোতে প্রকাশ্যেই তারা এখন শিকার করছে। প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করেও উল্টো বিরোধী পক্ষকে দোষ দিয়ে দেশের মানুষ ও বিদেশীদের বিভ্রান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগ করে চলে যেতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি যেমন হয়েছে তাতে এছাড়া কর্তৃপক্ষের উপায়ও নেই। কিন্তু শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই এমন পরিস্থিতি দাঁড়ালে পরবর্তীতে আরও কি ঘটবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হবার মতো আলামত কখনই মঙ্গলজনক নয় শিক্ষার্থীদের জন্য। এর সুদূরপ্রসারী অশুভ প্রভাব পড়ে আমাদের জাতীয় জীবনেও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বৃহত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ঘরানার রাজনীতির বলি হয়ে সম্ভাবনাময় তারুণ্যের শিক্ষা জীবন এভাবে ব্যাহত হবে তা আমরা প্রত্যাশা করি না। সম্ভবত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ব্যক্তিরাও চান না এমন পরিস্থিতি। তবে যাদের সন্তানেরা দেশের কোনও প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে না, তাদের এমন দুশ্চিন্তা না হবারই কথা। আমরা চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অবিলম্বে স্বাভাবিক হোক। শুরু হোক একাডেমিক কার্যক্রম। আর শাস্তি হোক প্রকৃত দোষীদের।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন