অ লি উ ল্লা হ নো মা ন
অপহরণের পর গুপ্তহত্যার শিকার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুলের স্ত্রী গত সোমবার সকালে ফোন করে এম ইলিয়াস আলীর খোঁজ নিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ফোনে প্রথমে আমার কাছে ইলিয়াস আলীর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। পত্রিকা পড়ে বিভ্রান্ত। ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন, এমন একটা সংবাদ শুনতে চান তিনি। জানতে চান ইলিয়াস আলীকে আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কি-না। একথা বলতে বলতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কান্নায় ফোঁপাতে থাকেন আর বলার চেষ্টা করেন, কোনো স্ত্রী যেন তার মতো স্বামীহারা না হন। স্বামী অপহরণ হওয়া এবং স্বামীহারা হওয়ার বেদনা যে কত কষ্টের, সেটা যার ঘটেছে তিনি ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবেন না বলার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছিল যেন তার বুক ফেটে যাচ্ছে। তিনি আর কথাই বলতে পারেননি। এক পর্যায়ে ফোনটি রেখে দেন। মোবাইলে তার কান্না এবং ফোঁপানো শুনলে যে কারও চোখে পানি আসবে। তাকে কী বলে যে সান্ত্বনা দেব, সে ভাষা খুঁজে পাইনি।
যশোরের ঝিকরগাছা থানা বিএনপির সভাপতি ও যশোর জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক ছিলেন নাজমুল। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয়। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় অপহরণের শিকার হন। পরের দিন সকালে তার লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরে রাস্তার পাশে। অপহরণকারীরা তাকে হত্যা করে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে যায়।
অপহরণ হওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই ঢাকার মিরপুরে একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে ছিলেন। রাত ১০টায় স্ত্রী ও সন্তানদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা যাও আমি একটু পরে আসছি। ফিরে এসেছেন, তবে লাশ হয়ে। স্ত্রী-সন্তান আর জীবিত পাননি তাদের অতি আপনজনকে। রাত ১২টায় স্ত্রী অপর একজনের ফোন থেকে জানতে পারেন, নাজমুল দুষ্কৃতকারীদের কবলে পড়েছেন। সর্বশেষ একটি ফোনে নাজমুল তার এক বন্ধুকে বিষয়টি জানাতে পেরেছিলেন। এর পরপরই ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। নাজমুলের বন্ধু সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানান স্ত্রীকে। এরপর থেকেই সবাই মিলে খোঁজাখুঁজিতে বের হয়ে পড়েন। নাজমুল নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে ফিরছিলেন মোহাম্মদপুরের বাসায়। মোহাম্মদপুর থানার কাছাকাছি জায়গা থেকে তিনি অপহরণকারীদের শিকার হন। নাজমুলের স্ত্রী জানান, স্বামীর এই সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি থানায় ছুটে গেছেন। রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে গেছেন র্যাবের কার্যালয়ে। কার্যকর কোনো সহযোগিতা পাননি। রাতে র্যাব-পুলিশ কেউই তেমন তত্পরতা দেখায়নি। র্যাব তাদের বলেছিল, থানায় জিডি করে আসেন। অভিযোগ বাক্সে বিবরণ লিখে রেখে যান। থানায় জিডি করতে করতে এবং র্যাবের কার্যালয়ে বাক্সে রাখতে রাখতে রাত পার হয়ে যায়। নাজমুলের স্ত্রীর বদ্ধমূল ধারণা, র্যাব ও পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তত্পর হলে নাজমুলকে উদ্ধার করা যেত। ঘাতকরা এত দ্রুত ঢাকা শহর পার হতে পারত না। কারণ নাজমুলের সঙ্গে গাড়ি ছিল। অপহরণকারীরা তাকে গাড়িসহ নিয়ে গিয়েছিল।
লাশ পাওয়ার পর মামলার তদন্তেও পুলিশের তেমন আগ্রহ নেই। মোহাম্মদপুর জোনের এসি নাজমুলের স্ত্রীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ নিয়ে সময় দেয়ার মতো কোনো সুযোগ তাদের নেই। র্যাবের কাছে গেলে বরং উল্টো বলা হয় সব সম্পদের হিসাব দিয়ে যাওয়ার জন্য। কোথায় কী রয়েছে সেটার বিবরণ জানাতে বলা হয় নাজমুলের স্ত্রীকে। অপহরণ ও হত্যাকারীদের চিহ্নিত বা গ্রেফতার করার চেয়ে তাদের হয়রানি করা হয়। মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরের জন্য তিনি লিখিত আবেদন করেছেন। তাতেও কোনো সাড়া নেই বলে জানিয়েছেন নাজমুলের স্ত্রী। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী অপহরণের পর গুম হওয়ার খবরে তিনি খুবই বিমর্ষ। তিনি বলেন, আমি চাই আর কোনো স্ত্রী এভাবে স্বামীহারা না হোক। কোনো সন্তান এরকম করে বাবাহারা না হোক। ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফিরিয়ে দেয়া হোক, সেটাই আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছেন বলে জানান নাজমুলের স্ত্রী।
শুধু বিএনপি নেতা নাজমুল নন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকার আরেক জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর থেকে তার কোনো খোঁজ আজও মেলেনি। স্ত্রী-সন্তান অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন যদি কোনো সংবাদ পাওয়া যায়। এই প্রতীক্ষা যে কত কষ্টের, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না। ভাষায়ও বোঝানো সম্ভব নয়। সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো একটি সংস্থার সদস্যরাই তাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে বদ্ধমূল ধারণা চৌধুরী আলমের পরিবারের সদস্যদের।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীকে গাড়িচালকসহ অপহরণের পর গুম করা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে তিনি অপহরণের শিকার হন। আজ নয়দিন পার হয়ে গেছে। ১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই প্রতিবাদে সিলেট বিভাগ অচল। ২২ এপ্রিল থেকে ৩ দিন সারাদেশে পালিত হয় হরতাল। ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে দেশজুড়ে। সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি। দাবি একটাই—বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জনপ্রিয় রাজনীতিক এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত চাই। ইলিয়াস আলী কতটা জনপ্রিয় ছিলেন তা প্রমাণ করে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ। তার নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসেন প্রতিবাদ করতে। ২৩ এপ্রিল বিশ্বনাথ থানা ঘেরাও করতে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের আক্রমণে ৩ জন প্রাণ দিয়েছেন। তাদের সবার কথা—প্রয়োজনে জীবন দেব, তবু প্রিয় নেতাকে ফেরত চাই।
এদিকে ইলিয়াস আলীকে নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে দেশজুড়ে। গুম হওয়ার পরের দিন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, বিরোধীদলীয় নেতা ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুরে তাল মিলিয়ে বক্তব্য দিতে থাকলেন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তারা আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, বিরোধী দল আন্দোলনের কোনো ইস্যু খুঁজে পাচ্ছে না। ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রেখে আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া সাফ বলেছেন, সরকারের এজেন্সির লোকেরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই বক্তব্য দিচ্ছেন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আভাস পাওয়া যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরাই ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে—সরকারের হাতে রাষ্ট্রের সব এজেন্সি রয়েছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র সরকারের নিয়ন্ত্রণে। মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে জানেন বিরোধীদলীয় নেতা লুকিয়ে রেখেছেন, তাহলে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা সরকারি এজেন্সিগুলো ব্যবহার করে ইলিয়াস আলীকে বের করছেন না কেন? প্রধানমন্ত্রী ইলিয়াস আলীকে বের করে প্রমাণ করতে পারেন, বিরোধীদলীয় নেতা যে অভিযোগ করেছেন সেটা সত্য নয়। প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন সেটাই সত্য, তা প্রমাণ করতে পারেন জাতির সামনে। তা না করে সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা শুধু বলছেন, বিরোধী দল ইস্যু তৈরির জন্য ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রেখেছে। সরকার তো আন্তরিকভাবে চাইলেই সেটা প্রমাণ করতে পারার কথা। সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব মেশিনারি থাকার পরও নিজেদের বক্তব্য প্রমাণ করতে না পারলে সাধারণ মানুষ ধরে নেবে, বিরোধীদলীয় নেতা যে অভিযোগ করেছেন সেটাই সত্য। কারণ বিরোধীদলীয় নেতার নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারি এজেন্সি নেই। প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণেই সরকারি সব এজেন্সি।
সরকারের এজেন্সিগুলো রাজনৈতিক নেতা ও নাগরিকদের অপহরণের পর গুম করেছে—এমন অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৬০ জন নাগরিককে অপহরণের পর গুম করেছে। পরিবারের দাবি ও অধিকার’র নিজস্ব অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এ ৬০ জনকে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তাদের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকার’র অনুসন্ধান অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ২ জন, ২০১০ সালে ১৮ জন, ২০১১ সালে ৩০ জন ও ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ জনকে অপহরণের পর সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা গুম করেছে। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি অপহরণের ঘটনা অধিকার নিজে তদন্ত করেছে। তাদের তদন্তে নিশ্চিত হতে পেরেছে, এ ৬০ জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করা হয়। এর বাইরে পুলিশের হিসাব অনুযায়ী নিখোঁজের সংখ্যা আরও বেশি। বর্তমান সরকারের ৩ বছরে নিখোঁজ হওয়া মানুষের সংখ্যা ২ শতাধিক।
অপর একটি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের আমলে গুম হওয়া নাগরিকের সংখ্যা ১২২ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত অপহরণের পর গুম করা হয়েছে ২২ জনকে। এছাড়া ২০১১ সালে ৭০ জন, ২০১০ সালে ৩০ জন এবং ২০০৯ সালে ১৩ জন গুম হন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অপহরণের পর নাগরিকদের গুম করার কয়েকটি ঘটনার চিত্র আমাদের কাছেও রয়েছে। এ বিষয়ে থানায় জিডিও করা হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আলিফ নামের এক যুবককে (২৪) ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় অপহরণ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তার মা ঢাকার মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেট দুই থানায়ই জিডি করেন। আলিফের বাবা মো. শাজাহান আলী বিশ্বাস একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপহরণের সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শ্যামলী থেকে আলিফকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে পরিবার। র্যাব-পুলিশের কাছে অনেক ধরনা দিয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। গত ১০ এপ্রিল আলিফকে হঠাত্ করে র্যাব রাজশাহীর এক জায়গা থেকে গ্রেফতার দেখায়। বলা হয়, হিজবুত তাহরিরের লিফলেটসহ তাকে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেছে। আলিফের বাবার আগে থেকেই ধারণা ছিল, সে র্যাবের হেফাজতে রয়েছে। কারণ অপহরণ হওয়ার দুই দিনের মধ্যে অজ্ঞাত একটি ফোন থেকে তারা জানতে পেরেছিলেন, আলিফ র্যাব হেফাজতে রয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল ঢাকার নিউমার্কেট থানায় আরও একটি জিডি করা হয়। মো. মোস্তাফিজুর রহমান নামে হুদা অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে তিনি জিডি করেন। এতে বলা হয়, ৪ এপ্রিল বিকাল ৩টায় একটি মোবাইল ফোন থেকে তার মোবাইলে ফোন করে অফিসের নিচে নেমে আসার অনুরোধ করা হয়। তার সঙ্গে জরুরি কথা রয়েছে বলে তাকে নিচে নেমে আসার অনুরোধ করে। নিচে আসার সঙ্গে সঙ্গে চার ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয়। মোবাইল ফোনটির বুকলিস্ট থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের কামাল নামে একজনের ফোন নম্বর বের করে ফোন দিয়ে তাকে নিচে আসার জন্য বলতে বলা হয়। অর্থাত্ মোস্তাফিজুর রহমানকে বলা হয়, কামালের নাম্বারে ফোন করে যেন নিচে আসতে বলে। তাদের কথায় কামাল হোসেনকে ফোন করে নিচে আসতে বলা হয়। কামাল নিচে এলে মোস্তাফিজুর রহমানকে বলা হয়, আপনি চলে যান। তারা কামাল হোসেনকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে কামাল হোসেনের মোবাইল বন্ধ। অর্থাত্ যে ফোন থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন দিয়ে নিচে আসতে বলা হয়েছিল সেটাই বন্ধ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এরকম অভিযোগ অপহৃতদের পরিবার থেকে আসছে। এছাড়া ২০১০ সালের জুলাই মাসে রাজু ও মোর্তজা নামের দু’জনকে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অপহরণ করা হয়েছিল। তারা দু’জনই ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য। এই দুই ব্যক্তির অপহরণের বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন আমি নিজেও লিখেছি, যা আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আদালত অবমাননার একটি মামলায় সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে আমাকে কারাভোগ করতে হয়েছে। ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট আমি কারাগারে আত্মসমর্পণ করেছিলাম। এই দণ্ডের সুবাদে ৩৭ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। কারাগারে যাওয়ার আগের দিন আমার লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় রাজু ও মোর্তজাকে নিয়ে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, র্যাবের হেফাজতে ছিলেন এমন দু’জন বলেছেন, রাজু এবং মোর্তজাকে র্যাব কার্যালয়ে দেখা গেছে। আমার কারাভোগ অবস্থায় রাজু ও মোর্তজাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের দু’জনের সঙ্গেই ঘটনাচক্রে সৌভাগ্যক্রমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা হয়। তাদের মুখ থেকেই শুনেছি, কীভাবে অপহরণ করা হয়েছিল এবং র্যাবের হেফাজতে রেখে কেমন নির্যাতন করা হয়েছে। মোর্তজার শরীরে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ইলেকট্রিক শকের চিহ্ন দেখা যায়নি। এজন্য সারাক্ষণ চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতেন। তার কাছ থেকে শুনেছি, নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন। জ্ঞান ফিরলে আবার চালানো হতো নির্যাতন। এভাবে ৩৯ দিন র্যাবের হেফাজতে রেখে নির্যাতন চালানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কারাগারে পাঠানোর আগের দিন তাকে ঢাকার বাইরে একটি জেলা থেকে গ্রেফতার দেখানো হয়। রাজুরও একই অবস্থা। কারাগারে পাঠানোর আগের দিন পর্যন্ত তাদের পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন হন্যে হয়ে খুঁজেছেন। কোথাও তাদের সন্ধান মেলেনি। কেউ স্বীকার করেনি তাদের আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজু, মোর্তজা বা আলিফের সৌভাগ্য, নির্যাতনের পরও তারা বেঁচে রয়েছেন। তাদের জীবিত অবস্থায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চৌধুরী আলম গুম হয়েছেন ২১ মাস পার হয়ে যাচ্ছে। কোনো খবর নেই। ইলিয়াস আলীর ভাগ্যে কী ঘটেছে কেউ জানে না। দেশবাসী ইলিয়াস আলীকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চায়। তার মতো একজন দেশপ্রেমিক জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ফিরে আসুন—সেটাই কামনা সবার। ব্রেকিং নিউজে দেখতে চাই, ইলিয়াস আলী ফেরত এসেছেন। অপহরণের পর গুপ্তহত্যার শিকার নাজমুলের স্ত্রীর বুকফাটা কান্নার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই—কোনো সন্তান এভাবে বাবাহারা এতিম হোক, আমরা চাই না। ফিরিয়ে দিন রাজপথ কাঁপানো নেতা ইলিয়াস আলীকে।
লেখক : সাংবাদিক
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন