সি রা জু র র হ মা ন
আপনারও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন। শিশুদের মধ্যে এ প্রবণতা মাঝে মাঝে লক্ষ্য করা যায়। চুরি করে রসগোল্লা খেয়ে, অথবা অন্য কোনো দোষ করে ধরা পড়ে গেলে তারা উল্টোপাল্টা অভিযোগ শুরু করে, কিংবা মেজাজ দেখায়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও সেটাই স্বভাব। কোনো অন্যায় ধরা পড়ে গেলে তিনি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড় তুলে সবার মনোযোগ ভিন্নমুখী করতে চান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের তিন নম্বর বড়কর্তা মিজ ওয়েন্ডি শারম্যান সবেমাত্র ঢাকা সফর করে গেছেন। অবশ্যই কূটনৈতিক ভাষায়, কিন্তু নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীকে কিছু ‘রায়ট অ্যাক্ট‘ (আইনি ব্যবস্থার হুশিয়ারি, অপ্রিয় সত্য) শুনিয়ে গেছেন তিনি। মিজ শারম্যান বলে গেছেন, পরবর্তী নির্বাচন অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে হতে হবে। এও তিনি লক্ষ্য করে গেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দলই চায় নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির ভিত্তিতে, তা সে পদ্ধতিকে যে নামেই অভিহিত করা হোক। ওয়েন্ডি শারম্যান আরও বলে গেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব করতে বড় দুটি দলের মধ্যে সংলাপ অত্যাবশ্যক।
মার্কিন কর্মকর্তা হুশিয়ারি দিয়ে গেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে বিলম্ব করা চলবে না। ওয়াশিংটন ভয় করছে, বিলম্ব হলে এই অত্যন্ত সফল এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কামড়াকামড়ি শুরু হবে এবং গ্রামীণ ব্যাংক বেহাতে চলে যেতে পারে। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অমর্যাদার অবসানের তাগিদও খুব সম্ভবত তিনি দিয়ে গেছেন। তাছাড়া মনে করা হয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার উন্নয়নের তাগিদও দিয়েছেন ওয়েন্ডি এবং সভা-সমাবেশ ইত্যাদির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও তিনি উদ্বেগ জানিয়ে গেছেন।
সব চিন্তাশীল মানুষই জানেন, ওয়াশিংটনের ‘উদ্বেগ‘ প্রকারান্তরে কঠোর হুশিয়ারি। হাসিনা যদি গোঁয়ার্তুমি করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন করেন তাহলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সে নির্বাচন বর্জন করবে। তেমন অবস্থায় নির্বাচিত সরকারকে স্বীকৃতিদান ওয়াশিংটনের জন্য কঠিন হবে। ওয়াশিংটন স্বীকৃতি না দিলে ইওরোপীয় ইউনিয়নসহ সব পশ্চিমা দেশও হয়তো স্বীকৃতি দেবে না।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করবেন এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করবেন বলেই সবাই আশা করেন। লালমনিরহাট আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থেকে মনে হয়, পরিস্থিতির বাস্তবতা শেখ হাসিনা এখনও হজম করে উঠতে পারেননি। এ বৈঠকটি সম্বন্ধে একটা কথা আগে বলে নিই—টেলিভিশনে সমবেতদের মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে দেখছিলাম। সর্বক্ষণ মনে হচ্ছিল, তাদের হয় ভাড়া করে কিংবা তাড়া করে সেখানে হাজির করা হয়েছিল। কারও মুখে হাসি, উত্সাহ কিংবা সমর্থন দেখতে পাচ্ছিলাম না।
এ বৈঠকে শেখ হাসিনা আবারও (হয়তো হাজারতম বার) বিএনপি নেত্রী এবং তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। লক্ষণীয় যে, খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনের জন্যে পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা পেয়েছিলেন বলে মিথ্যা অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেছিলেন। সে মিথ্যা এখন ধরা পড়ে গেছে। সুতরাং স্বভাবজাতভাবে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে আরও কিছু গালাগাল করে জনসাধারণের মনোযোগ ভিন্নমুখী করার ব্যর্থ প্রয়াস পেয়েছেন।
সরকারের সময় ক্ষেপণের চেষ্টা
সরকার বিষয়টা থিতিয়ে আসা পর্যন্ত সময় ক্ষেপণ করতে চায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, সরকার পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের কাছে সংশ্লিষ্ট শুনানির অনুলিপি চেয়েছে। দীপু মনি অবশ্যই জানেন কোনো সার্বভৌম দেশের সুপ্রিমকোর্টের কাছে অন্য কোনো দেশ নথিপত্র দাবি করতে পারে না। পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট শুনানির অনুলিপি দেবে না, এ কথা দীপু মনি অবশ্যই জানতেন। কিছুটা সময় নষ্ট করা সরকারের উদ্দেশ্য ছিল।
বিতর্কের ঝড় উঠেছে দুবাইয়ের খালিজ টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত দীপাঞ্জন রায়ের একটি খবরের কারণে। সে খবরে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক প্রধান লে. জে. মোহাম্মদ আসাদ দুররানি সুপ্রিমকোর্টের এক শুনানিতে বলেছেন, বাংলাদেশের ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ কোটি রুপি অর্থ সাহায্য দিয়েছিলেন। ডেইলি মেইল পত্রিকা অনলাইনের ভারতীয় সংস্করণ ঘুরে বাংলাদেশের প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এবং সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রচারিত খবরে বলা হয়েছিল, জেনারেল দুররানি খালেদা জিয়াকে দিয়েছিলেন ৫০ কোটি রুপি। মিথ্যা গুজবের বেলায় যেমনটা ঘটে, এক্ষেত্রেও টাকার অঙ্ক পাঁচ কোটি থেকে ফুলেফেঁপে ৫০ কোটি হয়ে গেছে।
জেনারেল দুররানি নয়া দিগন্ত পত্রিকাকে এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শুনানিতে তিনি খালেদা জিয়াকে টাকা দেয়া দূরের কথা, বিএনপি কিংবা বাংলাদেশের নামও উচ্চারণ করেননি। তার সে অস্বীকৃতি পরে আরও কোনো কোনো মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্পূর্ণ মিথ্যা খবরকে পুনঃপুন উচ্চারণ করে রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়ার আশায় বিএনপি নেত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে বিরোধী দলের নেতা এবং স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রীকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেন।
তার পর থেকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, সুপ্রিমকোর্টের সে শুনানিতে জেনারেল দুররানি খালেদা জিয়াকে টাকা দেয়ার কথা বলেননি। আরও পরে পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট দীপু মনির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে, যেটা আমরা আগেই মনে করেছিলাম। যে কোনো সুস্থ বুদ্ধির মানুষই মনে করবেন, এর পর শেখ হাসিনার উচিত ছিল প্রকাশ্যে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি সেটা করেননি, বরং উল্টো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এবং বিষোদ্গার করছেন।
সত্যভাষী বলে শেখ হাসিনার সুনাম নেই। তিনি যে সব সময় সত্য কথা বলেন না, তার কিছু প্রমাণ বিবিসিতে কর্মরত থাকার সময় আমিও পেয়েছিলাম। এর আগে প্রকাশিত আমার একাধিক বইতে এবং পত্রান্তরে প্রকাশিত কোনো কোনো কলামে দৃষ্টান্ত হিসেবে ১৯৮৮ সালের দুটি এবং ১৯৯০ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করেছি। খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা না করে তিনি এ ধারণা সৃষ্টি করলেন যে, তার সত্ সাহসেরও কিছু স্বল্পতা আছে।
সবাই জানেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক সম্পদ ভারতকে উপহার দেয়ার কাজ অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলেই দিয়েছে, ভারতের ‘বস্তা বস্তা টাকা ও পরামর্শে’র জোরে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং এটাও সবাই জানেন, ভারতের বহিঃর্বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা র’ শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের আসন চিরস্থায়ী করতে যথাসাধ্য সাহায্য দিচ্ছে। অনেকে এখন সন্দেহ করেন, খালিজ টাইমস পত্রিকায় আলোচ্য মিথ্যা খবর প্রকাশের পেছনে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের অপযশ দেয়ার জন্য র’য়ের ভূমিকা ছিল। আগেই বলেছি মিথ্যা সংবাদটি সৃষ্টি করেছিলেন ভারতীয় সাংবাদিক দীপাঞ্জন রায়। আরও উল্লেখ্য, খালিজ টাইমসের দু’জন শীর্ষ সম্পাদকও ভারতীয় নাগরিক।
সে যা হোক, খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে প্রধানমন্ত্রীর অপারগতার দরুন এখন দাবি উঠেছে, খালেদা জিয়ার পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরিবর্তে শেখ হাসিনারই উচিত ভারত কিংবা উত্তর আমেরিকায় চলে যাওয়া। দীর্ঘকাল তিনি ভারতে ছিলেন এবং তিনি ভারতের প্রিয়পাত্রী। তাছাড়া তার ছেলে ও মেয়ে উত্তর আমেরিকায় থাকেন এবং তাদের লাইফ স্টাইল (জীবনযাপন পদ্ধতি) তাদের জ্ঞাত আয়ের সূত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে উত্তর আমেরিকা থেকে কেউ কেউ আমাকে জানিয়েছেন। সুতরাং বিদেশে তার অর্থকষ্ট কিংবা অন্য কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
(লন্ডন, ০৮.০৪.১২)
serajurrahman@btinternet.com
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের তিন নম্বর বড়কর্তা মিজ ওয়েন্ডি শারম্যান সবেমাত্র ঢাকা সফর করে গেছেন। অবশ্যই কূটনৈতিক ভাষায়, কিন্তু নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীকে কিছু ‘রায়ট অ্যাক্ট‘ (আইনি ব্যবস্থার হুশিয়ারি, অপ্রিয় সত্য) শুনিয়ে গেছেন তিনি। মিজ শারম্যান বলে গেছেন, পরবর্তী নির্বাচন অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে হতে হবে। এও তিনি লক্ষ্য করে গেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দলই চায় নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির ভিত্তিতে, তা সে পদ্ধতিকে যে নামেই অভিহিত করা হোক। ওয়েন্ডি শারম্যান আরও বলে গেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব করতে বড় দুটি দলের মধ্যে সংলাপ অত্যাবশ্যক।
মার্কিন কর্মকর্তা হুশিয়ারি দিয়ে গেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে বিলম্ব করা চলবে না। ওয়াশিংটন ভয় করছে, বিলম্ব হলে এই অত্যন্ত সফল এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কামড়াকামড়ি শুরু হবে এবং গ্রামীণ ব্যাংক বেহাতে চলে যেতে পারে। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অমর্যাদার অবসানের তাগিদও খুব সম্ভবত তিনি দিয়ে গেছেন। তাছাড়া মনে করা হয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার উন্নয়নের তাগিদও দিয়েছেন ওয়েন্ডি এবং সভা-সমাবেশ ইত্যাদির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও তিনি উদ্বেগ জানিয়ে গেছেন।
সব চিন্তাশীল মানুষই জানেন, ওয়াশিংটনের ‘উদ্বেগ‘ প্রকারান্তরে কঠোর হুশিয়ারি। হাসিনা যদি গোঁয়ার্তুমি করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন করেন তাহলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সে নির্বাচন বর্জন করবে। তেমন অবস্থায় নির্বাচিত সরকারকে স্বীকৃতিদান ওয়াশিংটনের জন্য কঠিন হবে। ওয়াশিংটন স্বীকৃতি না দিলে ইওরোপীয় ইউনিয়নসহ সব পশ্চিমা দেশও হয়তো স্বীকৃতি দেবে না।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করবেন এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করবেন বলেই সবাই আশা করেন। লালমনিরহাট আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থেকে মনে হয়, পরিস্থিতির বাস্তবতা শেখ হাসিনা এখনও হজম করে উঠতে পারেননি। এ বৈঠকটি সম্বন্ধে একটা কথা আগে বলে নিই—টেলিভিশনে সমবেতদের মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে দেখছিলাম। সর্বক্ষণ মনে হচ্ছিল, তাদের হয় ভাড়া করে কিংবা তাড়া করে সেখানে হাজির করা হয়েছিল। কারও মুখে হাসি, উত্সাহ কিংবা সমর্থন দেখতে পাচ্ছিলাম না।
এ বৈঠকে শেখ হাসিনা আবারও (হয়তো হাজারতম বার) বিএনপি নেত্রী এবং তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। লক্ষণীয় যে, খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনের জন্যে পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা পেয়েছিলেন বলে মিথ্যা অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেছিলেন। সে মিথ্যা এখন ধরা পড়ে গেছে। সুতরাং স্বভাবজাতভাবে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে আরও কিছু গালাগাল করে জনসাধারণের মনোযোগ ভিন্নমুখী করার ব্যর্থ প্রয়াস পেয়েছেন।
সরকারের সময় ক্ষেপণের চেষ্টা
সরকার বিষয়টা থিতিয়ে আসা পর্যন্ত সময় ক্ষেপণ করতে চায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, সরকার পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের কাছে সংশ্লিষ্ট শুনানির অনুলিপি চেয়েছে। দীপু মনি অবশ্যই জানেন কোনো সার্বভৌম দেশের সুপ্রিমকোর্টের কাছে অন্য কোনো দেশ নথিপত্র দাবি করতে পারে না। পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট শুনানির অনুলিপি দেবে না, এ কথা দীপু মনি অবশ্যই জানতেন। কিছুটা সময় নষ্ট করা সরকারের উদ্দেশ্য ছিল।
বিতর্কের ঝড় উঠেছে দুবাইয়ের খালিজ টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত দীপাঞ্জন রায়ের একটি খবরের কারণে। সে খবরে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক প্রধান লে. জে. মোহাম্মদ আসাদ দুররানি সুপ্রিমকোর্টের এক শুনানিতে বলেছেন, বাংলাদেশের ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ কোটি রুপি অর্থ সাহায্য দিয়েছিলেন। ডেইলি মেইল পত্রিকা অনলাইনের ভারতীয় সংস্করণ ঘুরে বাংলাদেশের প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এবং সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রচারিত খবরে বলা হয়েছিল, জেনারেল দুররানি খালেদা জিয়াকে দিয়েছিলেন ৫০ কোটি রুপি। মিথ্যা গুজবের বেলায় যেমনটা ঘটে, এক্ষেত্রেও টাকার অঙ্ক পাঁচ কোটি থেকে ফুলেফেঁপে ৫০ কোটি হয়ে গেছে।
জেনারেল দুররানি নয়া দিগন্ত পত্রিকাকে এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শুনানিতে তিনি খালেদা জিয়াকে টাকা দেয়া দূরের কথা, বিএনপি কিংবা বাংলাদেশের নামও উচ্চারণ করেননি। তার সে অস্বীকৃতি পরে আরও কোনো কোনো মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্পূর্ণ মিথ্যা খবরকে পুনঃপুন উচ্চারণ করে রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়ার আশায় বিএনপি নেত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে বিরোধী দলের নেতা এবং স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রীকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেন।
তার পর থেকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, সুপ্রিমকোর্টের সে শুনানিতে জেনারেল দুররানি খালেদা জিয়াকে টাকা দেয়ার কথা বলেননি। আরও পরে পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট দীপু মনির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে, যেটা আমরা আগেই মনে করেছিলাম। যে কোনো সুস্থ বুদ্ধির মানুষই মনে করবেন, এর পর শেখ হাসিনার উচিত ছিল প্রকাশ্যে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি সেটা করেননি, বরং উল্টো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এবং বিষোদ্গার করছেন।
সত্যভাষী বলে শেখ হাসিনার সুনাম নেই। তিনি যে সব সময় সত্য কথা বলেন না, তার কিছু প্রমাণ বিবিসিতে কর্মরত থাকার সময় আমিও পেয়েছিলাম। এর আগে প্রকাশিত আমার একাধিক বইতে এবং পত্রান্তরে প্রকাশিত কোনো কোনো কলামে দৃষ্টান্ত হিসেবে ১৯৮৮ সালের দুটি এবং ১৯৯০ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করেছি। খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা না করে তিনি এ ধারণা সৃষ্টি করলেন যে, তার সত্ সাহসেরও কিছু স্বল্পতা আছে।
সবাই জানেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক সম্পদ ভারতকে উপহার দেয়ার কাজ অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলেই দিয়েছে, ভারতের ‘বস্তা বস্তা টাকা ও পরামর্শে’র জোরে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং এটাও সবাই জানেন, ভারতের বহিঃর্বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা র’ শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের আসন চিরস্থায়ী করতে যথাসাধ্য সাহায্য দিচ্ছে। অনেকে এখন সন্দেহ করেন, খালিজ টাইমস পত্রিকায় আলোচ্য মিথ্যা খবর প্রকাশের পেছনে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের অপযশ দেয়ার জন্য র’য়ের ভূমিকা ছিল। আগেই বলেছি মিথ্যা সংবাদটি সৃষ্টি করেছিলেন ভারতীয় সাংবাদিক দীপাঞ্জন রায়। আরও উল্লেখ্য, খালিজ টাইমসের দু’জন শীর্ষ সম্পাদকও ভারতীয় নাগরিক।
সে যা হোক, খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে প্রধানমন্ত্রীর অপারগতার দরুন এখন দাবি উঠেছে, খালেদা জিয়ার পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরিবর্তে শেখ হাসিনারই উচিত ভারত কিংবা উত্তর আমেরিকায় চলে যাওয়া। দীর্ঘকাল তিনি ভারতে ছিলেন এবং তিনি ভারতের প্রিয়পাত্রী। তাছাড়া তার ছেলে ও মেয়ে উত্তর আমেরিকায় থাকেন এবং তাদের লাইফ স্টাইল (জীবনযাপন পদ্ধতি) তাদের জ্ঞাত আয়ের সূত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে উত্তর আমেরিকা থেকে কেউ কেউ আমাকে জানিয়েছেন। সুতরাং বিদেশে তার অর্থকষ্ট কিংবা অন্য কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
(লন্ডন, ০৮.০৪.১২)
serajurrahman@btinternet.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন