বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১২

জোট আমলের প্ল্যান্টগুলো চালু থাকলে দাম বাড়ানোর দরকার হতো না বিদ্যুৎ সংকট সামাল দিতে পারছে না সরকার আগামীতে পরিস্থিতি হবে আরো ভয়াবহ



শাহেদ মতিউর রহমান : কোনভাবেই বিদ্যুৎ সংকট সামাল দিতে পারছে না সরকার।  গ্রীষ্মের তাপদাহ যতই প্রখর হচ্ছে অব্যাহত লোডশেডিংয়ে নাগরিকদের দুর্ভোগ ততই আরো বাড়ছে। একদিকে সরকার কুইক রেন্টাল থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ পাওয়ার দাবি করলেও জনগণ কিন্তু বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে সাধারণ মানুষ। এদিকে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও জনপ্রতিনিধিরা লিখিতভাবে বিদ্যুৎ নিয়ে যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে সরকারের কাছে আবেদনও জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, গতমাসের গোড়া থেকেই সরকার গ্রাম অঞ্চলে কৃষির সেচ কাজের জন্য শহরের বিদ্যুৎ গ্রামে দেয়া হবে এই অযুহাতে শহরে ব্যাপকভাবে লোডশেডিং করতে থাকে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গ্রামে বিদ্যুতের অবস্থাও ভালো নয়। অনেক এলাকাতে লোডশেডিংয়ের কারণে ফসলের মাঠ ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। পরে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসক বরাবরে পত্র দিয়ে রাত আটটার পরে গ্রামের দোকানপাটের  বিদ্যুৎও বন্ধ রাখার  নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী অতিরিক্ত তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের দেখা মিলছে না কোথাও। গ্রাম কি শহর সর্বত্রই এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক এলাকাতে বিক্ষুব্ধ লোকজন রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভও প্রদর্শন করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১ সালে সরকার জোট সরকারের আমলের ১৪টি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট মেরামত না করার কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রায় সবগুলোই হচ্ছে গ্যাস চালিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো চালু থাকলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যেত সর্বোচ্চ  মাত্র ২ টাকা  প্রতি ইউনিট। আর বেসরকারি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থেকে এই বিদ্যুৎ কিনতে হয় ৪ টাকা, ৫ টাকা বা ৬ টাকা দিয়ে। আর রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সেটা কিনতে হয়  ১২ থেকে ১৬ টাকায়। তাহলে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ঠিক ও সম্প্রসারণ করলে অনেকগুলো সুবিধা শুধু সরকার নয় এদেশের জনগণও পেত। যেমন প্রথমত, চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যেত অনেকটা সুলভেই; দ্বিতীয়ত, এই বিদ্যুৎ পাওয়ার বিষয়টি হতো নিশ্চিত ও নির্ভরযোগ্য; তৃতীয়ত,  জনগণকে এভাবে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করার কোন কারণ থাকতো না। সর্বোপরি, এর জন্য তেল আমদানি করার দরকারও হতো না। গ্যাসের যোগান থেকেই বন্ধ কেন্দ্রগুলো চলতে পারতো।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু এবং আরো কিছু কেন্দ্র মেরামত করলে সবমিলিয়ে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটের মত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বর্তমান অবকাঠামো থেকেই পাওয়া সম্ভব ছিল। তবে সরকার বলছে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি বা ২৭শ' মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ১৭শ' মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। অথচ এদিকে না গিয়ে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট মেরামত ও নবায়ন করলে এবং সেই সাথে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করলে এককালীন এক হাজার কোটি টাকাও খরচ হতো না কিন্তু দেশবাসী বাড়তি ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেত। তাতে জনগণের ওপর ঋণের পাহাড় হতো না, বারবার তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হতো না।
বর্তমানে যে হারে বিদ্যুতের সংকট চলছে আগামী দিনে এই সংকট আরো তীব্র হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারাই আশংকা করছেন। কেননা গ্রীষ্মের শুরু হতে এখনো সপ্তাহখানেক বাকি। কাজেই গ্রীষ্মকাল শুরু হলে একদিকে গরম অন্যদিকে পানির জন্য লোকজনের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন যদি বিদ্যুতের অভাবে লোকজন সময়মতো পানিও না পান তাহলে বিদ্যুৎ ও পানির জন্য লোকজন আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads