বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১২

প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় এরশাদ শিকদারের সহযোগী নূরে আলম এবার ডান্ডাবেড়ি পরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে চাঁদা দাবি করলেন



খুলনা অফিস : বাগেরহাট জেলা কারাগারে বন্দি এরশাদ শিকদারের মামলার রাজসাক্ষী দন্ডাদেশ প্রাপ্ত নূরে আলম এবার ডান্ডাবেড়ি পরে খুলনা মহানগরীর স্টেশন রোডে এসে পুলিশ প্রহরায় এক ব্যবসায়ীর কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করলেন। গত সোমবার এ চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটে। এব্যাপারে ব্যবসায়ী জাকির হোসেন খুলনা থানায় একটি জিডি করেছেন। ঘটনাটি প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
নগরীর জাহিদুর রহমান সড়কের বাসিন্দা সরদার জাকির হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেন, গত ২ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে নূরে আলম ডান্ডাবেড়ী পরা অবস্থায় পুলিশ প্রহরায় তার চাচার মালিকানাধীন ১নং স্টেশন রোডস্থ সরদার এজেন্সী নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসে। তখন দোকানে কেউ ছিল না। ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় নূরে আলমকে দেখে ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে স্টেশন রোড ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ শেখ সেখানে যান। তিনি ব্যাপার কি জানতে চাইলে নূরে আলম বলে, সরদার আহাদুজ্জামানের ভাই এডভোকেট সরদার নূরুজ্জামানকে ৬/৭ বছর আগে মামলার জন্যে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। উনি যেন টাকাটা ১নং স্টেশন রোডের বাসিন্দা তার আত্মীয় রানীকে দিয়ে দেয়। নতুবা সমস্যা হবে। এডভোকেট নুরুজ্জামান জিডি দাখিলকারী জাকিরের পিতা। তিনি ২০০০ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। জিডিতে নূরে আলম জাকির ও তার চাচা সরদার আহাদুজ্জামানকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতে চায় এবং না দিলে মারাত্মক বিপদে ফেলতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করা হয়।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানার জন্যে গতকাল বৃহস্পতিবার স্টেশন রোডে গেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় একটি ইজিবাইকে করে নূরে আলম সেখানে আসে। তার সাথে ৪ জন পুলিশ ছিল। 
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আসামী নূরে আলমের স্কট ইনচার্জ আর্ম এসআই ফারুক হোসেন জানান, আমিসহ দু'জন কনষ্টেবল ও একজন নায়েককে সাথে নিয়ে বাগেরহাট জেল থেকে নূরে আলমকে একটি মামলায় হাজিরার জন্য খুলনার আদালতে নিয়ে আসি। হাজিরা শেষে বাগেরহাটে যাওয়ার পথে ইজিবাইক যোগে খুলনা থানা মোড় হয়ে হেলাতলা দিয়ে স্টেশন রোডে ঢোকার পরে নূরে আলম ইশারায় জনৈক ব্যক্তিকে গাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে আসে। এরপরে আমি বুঝতে পেরে দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে চালককে ক্লে রোড হয়ে ডাকবাংলো দিয়ে চলে যেতে বলি।
এ ব্যাপারে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার হাসান জানান, নূরে আলম বাগেরহাট জেলে আছে। ২ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্যে তাকে খুলনায় পাঠানো হয়েছিল।
বাগেরহাটের জেলার মোঃ বদরুদ্দোজা জামান জানান, গত ২ এপ্রিল জেলা পুলিশ লাইনের সাব ইন্সপেক্টর ফারুক হোসেন নূরে আলমকে খুলনা আদালতে হাজিরার জন্য নিয়ে যায়। যথারীতি হাজিরা শেষে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি জানান, হাজিরা দিতে আসামীকে নিয়ে কারাগারের বাইরে খুলনার আদালত ছাড়া অন্য কোথাও তাকে নেয়া হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশের ভয়ংকর খুনী এরশাদ শিকদারের দক্ষিণ হস্ত হিসেবে পরিচিত নূরে আলম গ্রেফতার হওয়ার পরে তার মুখ থেকে এরশাদ শিকদারের সকল হত্যাযজ্ঞের কাহিনী বেরিয়ে আসে। তখন নূরে আলম আদালতে রাজসাক্ষী দেয়। তার সাক্ষীর ভিত্তিতেই আদালত এরশাদ শিকদারের ফাঁসির আদেশ দেয়। ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads