শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সুরঞ্জিত কেলেঙ্কারি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বস্তাভরা ৭০ লাখ টাকা নিয়ে গভীর রাতে রেলওয়ের জিএম ও এপিএস যাচ্ছিলেন রেলমন্ত্রীর বাসায়। কিন্তু রেলমন্ত্রীর ভাগ্য খারাপ, বেরসিক ড্রাইভারের কারণে বিজিবি সদর দফতরে এ টাকা ধরা পড়ে যায়। ফলে প্রকাশ হয়ে পড়ে রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির অন্দর মহলের নানা তথ্য। এ ঘটনায় বেকায়দায় পড়ে শেখ হাসিনার সরকার। প্রথম দু’দিন প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি হজম করে পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করেন। এরপর তিনি চলে যান তুরস্ক সফরে। সেখান থেকে ফিরে এসে দেখেন সুরঞ্জিতের ঘুষ কেলেঙ্কারি দেশে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে কিছু একটা না করলে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে তিনিও পড়বেন। ফলে গণভবনে তলব করলেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিতকে। সুরঞ্জিত যখন গণভবনে ঢুকেন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন বঙ্গভবনে, রাষ্ট্রপতির কাছে। সুরঞ্জিত অপেক্ষা করছিলেন। বঙ্গভবন থেকে গণভবনে ফিরে প্রধানমন্ত্রী সুরঞ্জিতকে দশ মিনিটের একটি সাক্ষাত্ দেন। তিনি তাকে পদত্যাগ করতে বলেন। এ অবস্থায় মুখ কালো করে গণভবন থেকে বের হন সুরঞ্জিত। পরদিন রেলভবনে গিয়ে সুরঞ্জিত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে মন্ত্রীর পতাকা নামিয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে যান। ওই দিন অজস্র ফটোসাংবাদিকের সামনে তার মুখখানা ছিল আষাঢ় মাসের বাদলা দিন। যাই হোক, একদিন পরে ঘটে নাটকীয় ঘটনা। সন্ধ্যায় হঠাত্ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি ঘোষণা আসে সুরঞ্জিতের মন্ত্রিত্ব যায়নি। গেছে রেলের দায়িত্ব। তিনি এখন ‘উজিরে খামাখা’ বা দফতরবিহীন মন্ত্রী। আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠে সুরঞ্জিতের মুখ। বিবিসির কাছে ভরাট কণ্ঠে আবার বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এটা করেছেন। আমার বলার কিছু নেই। অর্থাত্ তিনি মন্ত্রী বহাল, খুশিতে গদগদ।
সুরঞ্জিতের দফতরবিহীন মন্ত্রিত্ব নিয়ে যখন আবার কানাঘুষা শুরু হয়, যখন খবর বের হয় প্রতিবেশী দেশের চাপে প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এছাড়া কোনো উপায় ছিল না তখন বৃহস্পতিবার কৃষক লীগের সমাবেশে কেন সুরঞ্জিতকে মন্ত্রিত্বে রাখা হলো ব্যাখ্যা দিলেন শেখ হাসিনা। এবার দায়দায়িত্ব চাপালেন রাষ্ট্রপতির ঘাড়ে। বললেন, ‘কেউ পদত্যাগ করলেই তার পদত্যাগ হয়ে যায় না। সেটা গ্রহণ করা হলো কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তদন্ত হচ্ছে, ফলাফল বের হলে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নেবেন। যতক্ষণ রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর না করেন, ততক্ষণ তিনি রেলমন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু আমরা তা করিনি। তাকে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। তাজও পদত্যাগ করেছে। আমরা তার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাইনি। সে এখনও দফতরবিহীন মন্ত্রী রয়ে গেছে।’ এ বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। তারা বলেছেন, সুরঞ্জিত সেন ও সোহেল তাজ এখন আর মন্ত্রী হিসেবে বহাল নেই। সংবিধানের ৫৮(১)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। ফলে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবেও তাদের মন্ত্রিসভায় রাখার আর সুযোগ নেই। এমনকি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, গাড়িতে বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সবকিছুই অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ বিষয়টি বলেছেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলে ভালো যন্ত্রণায় পড়েছেন। সুরঞ্জিতের কেলেঙ্কারির কারণে তাকে না সরিয়েও পারছেন না, আবার প্রচণ্ড চাপেও আছেন। সুরঞ্জিতকে পদত্যাগ করানোর পর একটি বিশেষ সম্প্রদায় ভেঙে পড়েছিল, তারা মনমরা হয়ে গিয়েছিল। এরপরই দেখা যায় ঢাকার একটি বিশেষ দূতাবাস তত্পর হয়ে যায়, একটি প্রতিবেশী দেশের নীতি-নির্ধারকরা ফোন করেন। ফলে শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন। তবে সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে রেলওয়ের ঘুষ ও দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সেখানে অবিশ্বাসের কিছু নেই। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র, শিক্ষক ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজের ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : যে গল্পের শেষ নেই’ লেখা থেকে একটি উদ্ধৃতিই যথেষ্ট। তিনি লিখেছেন, ‘ঘটনাবলী যেভাবে ঘটেছে, বিশেষত এপিএসের পক্ষে সুরঞ্জিতের সাফাইয়ের চেষ্টা, তার পদত্যাগে অস্বীকার, কার্যকর পদক্ষেপে বিলম্ব—সবই অন্য রকম ইঙ্গিত দিয়েছে। তদুপরি ঠিক এই সময় তার ছেলের টেলিকম লাইসেন্স পাওয়া থেকেও সন্দেহ বেড়েছে যে আগেও হয়তো নয়-ছয় হয়েছে, একই সময় তার মালিকানাধীন একটি মার্কেট উদ্বোধন এই সন্দেহকে আরও ভিত্তি দিয়েছে। রেলওয়ের দুর্নীতির কথা তো জানাই ছিল, হোতাদের নামধাম এখন সবার আলোচনার বিষয়। তদুপরি এই কেলেঙ্কারির রহস্য ভেদ করার জন্য যিনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন, সেই ব্যক্তি গাড়ির চালক আলী আজম খানের ব্যাপারে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। তার নিজের স্বার্থেই উচিত ছিল এ নিয়ে উদ্যোগ নেয়া। বিশেষত গাড়িচালক আলী আজমের পরিবার যখন তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পুলিশ, সরকার, দুর্নীতি দমন কমিশনের যখন কোনো মাথাব্যথা নেই, মানবাধিকার কমিশন কথা পর্যন্ত বলছে না, তখন মন্ত্রীও সেই পথ নিয়েছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যখন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইছেন, তখন তিনি ভরসা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ওপর। প্রধানমন্ত্রী তাকে হতাশ করেননি, ‘দফতরবিহীন’ হলেও মন্ত্রিত্ব তার রক্ষা হয়েছে। অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও অনেকে বহাল তবিয়তে মন্ত্রিসভায় আছে, এক্ষেত্রে সুরঞ্জিতের দোষ কি?
সুরঞ্জিতের দফতরবিহীন মন্ত্রিত্ব নিয়ে যখন আবার কানাঘুষা শুরু হয়, যখন খবর বের হয় প্রতিবেশী দেশের চাপে প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এছাড়া কোনো উপায় ছিল না তখন বৃহস্পতিবার কৃষক লীগের সমাবেশে কেন সুরঞ্জিতকে মন্ত্রিত্বে রাখা হলো ব্যাখ্যা দিলেন শেখ হাসিনা। এবার দায়দায়িত্ব চাপালেন রাষ্ট্রপতির ঘাড়ে। বললেন, ‘কেউ পদত্যাগ করলেই তার পদত্যাগ হয়ে যায় না। সেটা গ্রহণ করা হলো কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তদন্ত হচ্ছে, ফলাফল বের হলে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নেবেন। যতক্ষণ রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর না করেন, ততক্ষণ তিনি রেলমন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু আমরা তা করিনি। তাকে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। তাজও পদত্যাগ করেছে। আমরা তার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাইনি। সে এখনও দফতরবিহীন মন্ত্রী রয়ে গেছে।’ এ বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। তারা বলেছেন, সুরঞ্জিত সেন ও সোহেল তাজ এখন আর মন্ত্রী হিসেবে বহাল নেই। সংবিধানের ৫৮(১)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। ফলে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবেও তাদের মন্ত্রিসভায় রাখার আর সুযোগ নেই। এমনকি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, গাড়িতে বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সবকিছুই অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ বিষয়টি বলেছেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলে ভালো যন্ত্রণায় পড়েছেন। সুরঞ্জিতের কেলেঙ্কারির কারণে তাকে না সরিয়েও পারছেন না, আবার প্রচণ্ড চাপেও আছেন। সুরঞ্জিতকে পদত্যাগ করানোর পর একটি বিশেষ সম্প্রদায় ভেঙে পড়েছিল, তারা মনমরা হয়ে গিয়েছিল। এরপরই দেখা যায় ঢাকার একটি বিশেষ দূতাবাস তত্পর হয়ে যায়, একটি প্রতিবেশী দেশের নীতি-নির্ধারকরা ফোন করেন। ফলে শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন। তবে সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে রেলওয়ের ঘুষ ও দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সেখানে অবিশ্বাসের কিছু নেই। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র, শিক্ষক ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজের ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : যে গল্পের শেষ নেই’ লেখা থেকে একটি উদ্ধৃতিই যথেষ্ট। তিনি লিখেছেন, ‘ঘটনাবলী যেভাবে ঘটেছে, বিশেষত এপিএসের পক্ষে সুরঞ্জিতের সাফাইয়ের চেষ্টা, তার পদত্যাগে অস্বীকার, কার্যকর পদক্ষেপে বিলম্ব—সবই অন্য রকম ইঙ্গিত দিয়েছে। তদুপরি ঠিক এই সময় তার ছেলের টেলিকম লাইসেন্স পাওয়া থেকেও সন্দেহ বেড়েছে যে আগেও হয়তো নয়-ছয় হয়েছে, একই সময় তার মালিকানাধীন একটি মার্কেট উদ্বোধন এই সন্দেহকে আরও ভিত্তি দিয়েছে। রেলওয়ের দুর্নীতির কথা তো জানাই ছিল, হোতাদের নামধাম এখন সবার আলোচনার বিষয়। তদুপরি এই কেলেঙ্কারির রহস্য ভেদ করার জন্য যিনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন, সেই ব্যক্তি গাড়ির চালক আলী আজম খানের ব্যাপারে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। তার নিজের স্বার্থেই উচিত ছিল এ নিয়ে উদ্যোগ নেয়া। বিশেষত গাড়িচালক আলী আজমের পরিবার যখন তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পুলিশ, সরকার, দুর্নীতি দমন কমিশনের যখন কোনো মাথাব্যথা নেই, মানবাধিকার কমিশন কথা পর্যন্ত বলছে না, তখন মন্ত্রীও সেই পথ নিয়েছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যখন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইছেন, তখন তিনি ভরসা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ওপর। প্রধানমন্ত্রী তাকে হতাশ করেননি, ‘দফতরবিহীন’ হলেও মন্ত্রিত্ব তার রক্ষা হয়েছে। অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও অনেকে বহাল তবিয়তে মন্ত্রিসভায় আছে, এক্ষেত্রে সুরঞ্জিতের দোষ কি?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন