ড. মাহবুব হাসান
আমরা দিন দিন আমাদের সাহস হারিয়ে ফেলছি। কখন যে আবার আজরাইলের মতো নীরবে এসে শাদা পোশাকের কথিত র্যাব-পুলিশ-ডিবি নাকি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী আতকা উঠিয়ে নিয়ে যায় আমার/ আপনার নয়নমনি, সেই ভয়ে আত্মা খাঁচাছাড়া হবার জোগাড়! গলার কাছে এসে জানটা ধুঁকছে! যারা অবিশ্বাস করবেন তারা হয় গুম, গুপ্তহত্যার সহযোগী, না হলে তারা এই আতঙ্কহীন থাকার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে কি সম্ভব কূলকিনারাহীন গুম আর গুপ্তহত্যায় স্থির থাকা? কিন্তু চুপ থেকে আজরাইলের মতো সন্ত্রাসীদের, যারা র্যাব, পুলিশ ও ডিবি’র নাম ব্যবহার করে গুম করছে সাধারণ মানুষকে, তাদের আরও বেপরোয়া হতে দেবো আমরা? না-কি তাদের সেই নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার একটা পথ তৈরি করবো? নাকি চুপ থাকবো নিজের ও ভাই-বেরাদর-আত্মীয়-স্বজনদের রক্ষার জন্য। তাতে কি তারা রক্ষা পাবে? কে জানে!
চুপ থাকাটাই তো দূরদর্শীর মতো সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই অন্যায় কি চলতেই থাকবে। আর আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখবো। আমরা যদি রুখে না দাঁড়াই, তাহলে সন্ত্রাসীদের তো পোয়াবারো। সেই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী , ডিবির লোক কিংবা র্যাবের শাদা পোশাকের পরিচয়দানকারী হোক না কেন। তারা সন্ত্রাসী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জনমনে যা ত্রাস সৃষ্টি করে, তাই সন্ত্রাসী কাজ। আইশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নামে কাজটা করলে সাধারণ মানুষ রাস্তায়, গলিতে কোনোরকম অবরোধ সৃষ্টি করবে না, রুখেও দাঁড়াবে না, সেটাই করছে তারা। পুলিশও শাদা পোশাকে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারে না। কারণ তাতে ব্যক্তির হিউম্যান রাইটস কেবল লঙ্ঘিতই হয় না, রাষ্ট্রের সংবিধানকেও লঙ্ঘন করা হয়। অবশ্য বর্তমান সরকার যেভাবে সংবিধানকে লঙ্ঘন করে একটার পর একটা অন্যায়-অবৈধ কাজ করে চলেছেন, তাতে এটাই মনে হয় যে রাজনৈতিক সরকারের গোপন ইঙ্গিতেই বাহিনীর লোকেরা এই আতঙ্কের জন্মদাতা। চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পক্ষে এ-রকম আতঙ্ক সৃষ্টি সম্ভব নয়। আর যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশের দক্ষতা, দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। র্যাব-পুলিশ যদি দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে এই দুটি বাহিনী রাখার কি প্রয়োজন? জনগণের টাকায় পোষা এই দুটি বাহিনীর তো কোনো অধিকারই নেই জনগণের শান্তিকে নস্যাৎ করার। কিন্তু তারা অস্বীকার করলেই তো আর হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানুন বা না জানুন, পুলিশ প্রধান তো বলেছেন দেশে গুম, গুপ্তহত্যা হচ্ছে। তার বাহিনীর লোকেরা এটা করছে না। এইটুকু জবাবদিহিতায় কিন্তু তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। পুলিশ প্রধানকে এটা মনে রাখতে হবে যে তারা সরকারের অনুগত বাহিনী হলেও দেশের জনগণের নিরাপত্তা রক্ষারই কর্মচারী-কর্মকতা তারা। তাদের হাতে অস্ত্র দেয়া হয়েছে সন্ত্রাসীদের দমনে, সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য। সে দায়িত্ব পালনে পুলিশ প্রধান ব্যর্থ হলে তার উচিত পদত্যাগ করে চলে যাওয়া। সেই সাথে রাজনৈতিক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও উচিত ব্যর্থতার দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে পদত্যাগ করা। কারণ তিনি শপথ নিয়েছিলেন যে, তিনি জনগণের জানমালের নিরাপত্তাই কেবল দেবেন না, আইনের শাসন কায়েমে বিশেষ অবদান রাখবেন। তিনি আইনের শাসনের নামে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি ভণ্ডুল করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে চলেছেন। পুলিশের উচিত এ-কথা মনে রাখা যে তারা সরকারের দমন করার দায়টিকে পালন না করে পুলিশি আদর্শের দায়িত্ব পালন করা। গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বিরোধী দলের অধিকার কায়েমের তাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত। সেটা তারা পালন করছেন না। সেই অপরাধে নতুন সরকার এসে পুলিশের দায়িত্বশীলদের কাঠগড়ায় তুলে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এর মধ্যেই যারা পুত্র কিংবা ভাই-বেরাদর, পিতা বা চাচাকে গুম বা গুপ্ত হত্যার শিকার হয়ে আকুল হয়ে কেঁদে চলেছেন, তাদের আর্তনাদ কি আমরা শুনতে পাচ্ছি না? প্রিয় পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুন, যদি আপনার প্রিয়জনকে কোনো শাদা পোশাকের ডিবি/ র্যাব/পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায় আপনার বাড়ি বা বাসা , বাসার গলিপথ থেকে, দোকান, রাজপথ থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে, তাহলে আপনার কি রকম লাগবে? এই আতঙ্ক আপনি কি দিয়ে নিরসন করবেন? আর এর সমাধানই বা কি?
আমার বিবেচনায় এ-রকম ঘটনা যখন ঘটতে যাবে, সবাই মিলে আগে সেই শাদা পোশাকধারীদের পরিচয়পত্র দেখে নেবেন। তারপর তাদের কাছে ভিকটিমের বিরুদ্ধে কোনোরকম গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কিনা, সেটা চাইবেন। না দিতে পারলে তাদের আটক করুন। তারপর মিডিয়ার লোকদের ডাকুন। প্রচার করুন এরা কারা। তারপর পুলিশে সোপর্দ করুন তাদের। আমি জানি বলা যত সহজ, কাজটা করা ততোটাই কঠিন। অস্ত্রের সামনে কোনো লোক প্রতিবাদ জানাতে যেতে চায় না। কিন্তু এটাই মনে রাখতে হবে যে অস্ত্র জনগণের সম্মিলিত শক্তির সামনে কিছুই না। পাড়ায় পাড়ায় এ-রকম প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলেই কেবল মাত্র গুম, গুমহত্যা বন্ধ করা যাবে। তাছাড়া যাবে না। কারণ এখানে সরকার আছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, কিন্তু তিনি / তারা এ-নিয়ে ভাবিত নন তারা। তার আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধব রাজনৈতিক সহকর্মীদের তো আর তার বাহিনী গুম করবে না। এমন কি সন্ত্রাসীরাও সেটা করতে যাবে না। অতএব তাদের মনোবেদনা আমরা দেখবো না কোনোদিনই। যে পুত্র হারায় কেবল সেই পুত্র হারানোর শোক বোঝে।
২.
পাষণ্ড-স্বামী জুঁইয়ের ডান হাতের পাঁচটি আঙুলই চাপাতি দিয়ে কেটে নিয়েছিল। জুঁইয়ের অপরাধ সে লেখাপড়া করতে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। প্রবাসী স্বামী রফিক দেশে ফিরে এসে জুঁইয়ের ডান হাতের পাঁচ আঙুল চাপাতি দিয়ে কেটে ফেলে। রফিক এখন জেলে। আর সেই আহত , আঙুল হারানো অদম্য শিক্ষার্থী জুঁই এখন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শ্রুতিলেখকের সাহায্যে। তার পাশে এখন তার এলাকার সব মানুষ, দেশের কোটি কোটি মানুষ। আর পাষণ্ড রফিক একা। সে এখন জেলের ঘানি টানছে।
এটা একটি উদাহরণ। আজকে সরকার বিরোধী দল দমনে পাষন্ড রফিকের মতো আচরণ করছেন। অন্ধ আক্রোশ কি ক্ষতি করতে পারে সেটা যদি ক্ষমতাসীন দল ও সরকারগুলো বুঝতো তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের এবং দেশের সার্বিক অবস্থা এমন হতো না কখনোই। সরকার দলীয় হলেও তারা যে দেশের সব মানুষের প্রতিনিধি, সব মানুষের সার্বিক উন্নতির শপথ নিয়েছেন, সেটা ক্ষমতায় বসে ভুলে যায় সরকারপ্রধান ও তার মন্ত্রিপরিষদ। তারা মনে করে ভোট দিয়ে জনগণ তাদের দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পাঠিয়েছে। কথাটায় সত্য আছে, তবে তা আংশিক। দলীয় কর্মসূচির সেইটুকুই ভোটাররা বাস্তবায়ন চায় যা জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকে নিশ্চিত করে। ভোটাররা নিশ্চয় সরকারকে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করার জন্য ম্যান্ডেট দেয়নি। দেয়নি বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দিতে পুলিশকে রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বানাতে।
চুপ থাকাটাই তো দূরদর্শীর মতো সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই অন্যায় কি চলতেই থাকবে। আর আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখবো। আমরা যদি রুখে না দাঁড়াই, তাহলে সন্ত্রাসীদের তো পোয়াবারো। সেই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী , ডিবির লোক কিংবা র্যাবের শাদা পোশাকের পরিচয়দানকারী হোক না কেন। তারা সন্ত্রাসী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জনমনে যা ত্রাস সৃষ্টি করে, তাই সন্ত্রাসী কাজ। আইশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নামে কাজটা করলে সাধারণ মানুষ রাস্তায়, গলিতে কোনোরকম অবরোধ সৃষ্টি করবে না, রুখেও দাঁড়াবে না, সেটাই করছে তারা। পুলিশও শাদা পোশাকে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারে না। কারণ তাতে ব্যক্তির হিউম্যান রাইটস কেবল লঙ্ঘিতই হয় না, রাষ্ট্রের সংবিধানকেও লঙ্ঘন করা হয়। অবশ্য বর্তমান সরকার যেভাবে সংবিধানকে লঙ্ঘন করে একটার পর একটা অন্যায়-অবৈধ কাজ করে চলেছেন, তাতে এটাই মনে হয় যে রাজনৈতিক সরকারের গোপন ইঙ্গিতেই বাহিনীর লোকেরা এই আতঙ্কের জন্মদাতা। চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পক্ষে এ-রকম আতঙ্ক সৃষ্টি সম্ভব নয়। আর যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশের দক্ষতা, দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। র্যাব-পুলিশ যদি দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে এই দুটি বাহিনী রাখার কি প্রয়োজন? জনগণের টাকায় পোষা এই দুটি বাহিনীর তো কোনো অধিকারই নেই জনগণের শান্তিকে নস্যাৎ করার। কিন্তু তারা অস্বীকার করলেই তো আর হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানুন বা না জানুন, পুলিশ প্রধান তো বলেছেন দেশে গুম, গুপ্তহত্যা হচ্ছে। তার বাহিনীর লোকেরা এটা করছে না। এইটুকু জবাবদিহিতায় কিন্তু তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। পুলিশ প্রধানকে এটা মনে রাখতে হবে যে তারা সরকারের অনুগত বাহিনী হলেও দেশের জনগণের নিরাপত্তা রক্ষারই কর্মচারী-কর্মকতা তারা। তাদের হাতে অস্ত্র দেয়া হয়েছে সন্ত্রাসীদের দমনে, সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য। সে দায়িত্ব পালনে পুলিশ প্রধান ব্যর্থ হলে তার উচিত পদত্যাগ করে চলে যাওয়া। সেই সাথে রাজনৈতিক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও উচিত ব্যর্থতার দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে পদত্যাগ করা। কারণ তিনি শপথ নিয়েছিলেন যে, তিনি জনগণের জানমালের নিরাপত্তাই কেবল দেবেন না, আইনের শাসন কায়েমে বিশেষ অবদান রাখবেন। তিনি আইনের শাসনের নামে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি ভণ্ডুল করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে চলেছেন। পুলিশের উচিত এ-কথা মনে রাখা যে তারা সরকারের দমন করার দায়টিকে পালন না করে পুলিশি আদর্শের দায়িত্ব পালন করা। গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বিরোধী দলের অধিকার কায়েমের তাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত। সেটা তারা পালন করছেন না। সেই অপরাধে নতুন সরকার এসে পুলিশের দায়িত্বশীলদের কাঠগড়ায় তুলে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এর মধ্যেই যারা পুত্র কিংবা ভাই-বেরাদর, পিতা বা চাচাকে গুম বা গুপ্ত হত্যার শিকার হয়ে আকুল হয়ে কেঁদে চলেছেন, তাদের আর্তনাদ কি আমরা শুনতে পাচ্ছি না? প্রিয় পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুন, যদি আপনার প্রিয়জনকে কোনো শাদা পোশাকের ডিবি/ র্যাব/পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায় আপনার বাড়ি বা বাসা , বাসার গলিপথ থেকে, দোকান, রাজপথ থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে, তাহলে আপনার কি রকম লাগবে? এই আতঙ্ক আপনি কি দিয়ে নিরসন করবেন? আর এর সমাধানই বা কি?
আমার বিবেচনায় এ-রকম ঘটনা যখন ঘটতে যাবে, সবাই মিলে আগে সেই শাদা পোশাকধারীদের পরিচয়পত্র দেখে নেবেন। তারপর তাদের কাছে ভিকটিমের বিরুদ্ধে কোনোরকম গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কিনা, সেটা চাইবেন। না দিতে পারলে তাদের আটক করুন। তারপর মিডিয়ার লোকদের ডাকুন। প্রচার করুন এরা কারা। তারপর পুলিশে সোপর্দ করুন তাদের। আমি জানি বলা যত সহজ, কাজটা করা ততোটাই কঠিন। অস্ত্রের সামনে কোনো লোক প্রতিবাদ জানাতে যেতে চায় না। কিন্তু এটাই মনে রাখতে হবে যে অস্ত্র জনগণের সম্মিলিত শক্তির সামনে কিছুই না। পাড়ায় পাড়ায় এ-রকম প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলেই কেবল মাত্র গুম, গুমহত্যা বন্ধ করা যাবে। তাছাড়া যাবে না। কারণ এখানে সরকার আছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, কিন্তু তিনি / তারা এ-নিয়ে ভাবিত নন তারা। তার আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধব রাজনৈতিক সহকর্মীদের তো আর তার বাহিনী গুম করবে না। এমন কি সন্ত্রাসীরাও সেটা করতে যাবে না। অতএব তাদের মনোবেদনা আমরা দেখবো না কোনোদিনই। যে পুত্র হারায় কেবল সেই পুত্র হারানোর শোক বোঝে।
২.
পাষণ্ড-স্বামী জুঁইয়ের ডান হাতের পাঁচটি আঙুলই চাপাতি দিয়ে কেটে নিয়েছিল। জুঁইয়ের অপরাধ সে লেখাপড়া করতে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। প্রবাসী স্বামী রফিক দেশে ফিরে এসে জুঁইয়ের ডান হাতের পাঁচ আঙুল চাপাতি দিয়ে কেটে ফেলে। রফিক এখন জেলে। আর সেই আহত , আঙুল হারানো অদম্য শিক্ষার্থী জুঁই এখন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শ্রুতিলেখকের সাহায্যে। তার পাশে এখন তার এলাকার সব মানুষ, দেশের কোটি কোটি মানুষ। আর পাষণ্ড রফিক একা। সে এখন জেলের ঘানি টানছে।
এটা একটি উদাহরণ। আজকে সরকার বিরোধী দল দমনে পাষন্ড রফিকের মতো আচরণ করছেন। অন্ধ আক্রোশ কি ক্ষতি করতে পারে সেটা যদি ক্ষমতাসীন দল ও সরকারগুলো বুঝতো তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের এবং দেশের সার্বিক অবস্থা এমন হতো না কখনোই। সরকার দলীয় হলেও তারা যে দেশের সব মানুষের প্রতিনিধি, সব মানুষের সার্বিক উন্নতির শপথ নিয়েছেন, সেটা ক্ষমতায় বসে ভুলে যায় সরকারপ্রধান ও তার মন্ত্রিপরিষদ। তারা মনে করে ভোট দিয়ে জনগণ তাদের দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পাঠিয়েছে। কথাটায় সত্য আছে, তবে তা আংশিক। দলীয় কর্মসূচির সেইটুকুই ভোটাররা বাস্তবায়ন চায় যা জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকে নিশ্চিত করে। ভোটাররা নিশ্চয় সরকারকে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করার জন্য ম্যান্ডেট দেয়নি। দেয়নি বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দিতে পুলিশকে রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বানাতে।
এ-কাজটা যে কেবল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার করছে, তাই নয়, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারাও করেছে। এই রকম অন্যায় নীতি ও আদর্শ নিয়ে জনগণের শাসন কায়েম করা যায় না। আজ দেশে নির্বাচিত সরকার আছে কিন্তু নেই গণতান্ত্রিক শাসন ও শাসকদের গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা। মুখে কপচালেই গণতন্ত্র কায়েম হয় না। এই সত্য শেখ হাসিনা সরকারকে সবার আগে উপলব্ধি করতে হবে। কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে না। আর এখানেই আমাদের ভয়। পাষণ্ড রফিকের মতো বুদ্ধি নিয়ে হাসিনা সরকার প্রশাসন চালাচ্ছেন। তিনি যে একা হয়ে পড়ছেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, সেটা বুঝতে পারছেন না। রফিকের পাশেও ছিল তার ভগ্নীপতি। তাকে সেই ভগ্নীপতি রক্ষা করতে পারেনি। হাসিনা ও সরকারের পাশে আছেন দলীয় চামচা ও স্বার্থান্বেষী মানুষেরা। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। রাজনৈতিক চরিত্র ফ্যাসিবাদি হলে তাকে গণতন্ত্রে ফেরানো, মতপ্রকাশের অধিকারে বিশ্বাসী করে তোলা যায় না। হাসিনা সরকারের হয়েছে সেই রোগ। এই রোগ সারানোর কোনো চিকিৎসক নেই। জ্ঞান আর গণতান্ত্রিক পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসই সেই রোগের দাওয়াই। সমালোচনাকারীদের শত্রু মনে করাই হলো অন্ধত্ব। সমালোচনা হচ্ছে নিজেদের লোভ আর অন্ধ ক্ষমতার মসনদ থেকে মাটির পৃথিবীতে নামিয়ে আনার একটি প্রশস্ত রাজপথ। কিন্তু সেই রাজপথে কেবল কুটনা বুড়ির মতো কাটা বিছিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না শেখ হাসিনা সরকার, উদুর পিন্ডি বুদোর ঘাড়েও চাপিয়ে দিয়ে ব্যঙ্গ করছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ফরাশি ওপেন টেনিসের প্রতিযোগিতায় দেখা যায় ‘বিএনপি’ নামের একটি সাইন। আমরা হাসতে হাসতে বলি, দেখো বিএনপি ফরাসি ওপেনে বিনিয়োগ করেছে। আমরা সেটা মজা করার জন্যই বলতাম। কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানি আইএসআই’র সাবেক প্রধান দুররানির সাক্ষ্য বিএনপি শব্দটি পেয়েই বুঝলেন, তার প্রতিপক্ষ আইএসআই’র কাছে থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি খেয়ালই করেননি যে ওই বিএনপি বালুচ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের বিএনপি নয়। আসলে খেয়াল নয়, এটা ইচ্ছে করেই করেছেন তিনি প্রতিপক্ষ বিএনপিকে ঘায়েল করতে। দেশের জনগণ যে অতোটা বোকা ও গাধা নয় সেটা একটিবার বিবেচনা করতে বলি আমরা রাজনীতিকদের। এখন গ্রামের সাধারণ চাষাও বোঝে, রাজনীতিকরা কি করেন, কি বলেন। তারা যে মিথ্যা বলেন প্রতিনিয়ত, মিথ্যাই তাদের রাজনৈতিক চরিত্রের অঙ্গ, সেটা শাদা কাগজের মতোই স্পষ্ট। দয়া করে শাদা পাতায় কালি মাখাবেন না। এটা ভোটারদেরই কেবল নয়, ১৬ কোটি মানুষেরই সবিনয় অনুরোধ।
ড. মাহবুব হাসান: কবি ও সাংবাদিক,সুত্র বার্তা ২৪,কম
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন