পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই অনেক নাটকের পর দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে পুনর্বহাল হলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গত রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এক প্রজ্ঞাপনে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। গত ৯ এপ্রিল থেকে টাকার বস্তা কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশ-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে সোমবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রোববার রাতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। সোমবার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সিদ্ধান্ত সরকারের ইমেজ রক্ষার চেষ্টা হিসেবে মনে করা হতে থাকে। কিন্তু এক দিন না পেরোতেই এই সিদ্ধান্ত উল্টে গেল। জানা গেছে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্ত্রিত্ব পুনর্বহালে প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে তদবির করা হয়। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট সচিবকে ডেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলেন। ক্যাবিনেট সচিব এ সময় অন্য একটি কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। সেখান থেকে দ্রুত এসে তিনি সরকারি নির্দেশ কার্যকর করেন।
গত রাতে এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের কার্যপ্রণালী বিধির ৩(৪) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সুরঞ্জিত কাণ্ডের পর হঠাৎই দেশের রাজনৈতিক হাওয়া পাল্টে গেছে। সরকারের বাকপটু মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্যেও যেন খানিকটা সতর্কতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সরকারি দল চাইছে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়কে নিজেদের ইমেজ তৈরির জন্য কাজে লাগাতে। আর বিরোধী দলগুলো এ ঘটনাকে সরকারের ভেতরে দুর্নীতির বড় প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ নিয়ে ৯ এপ্রিল থেকে চলে আসা ঘটনাপ্রবাহ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বড় ঝড়ের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এখন সাবেক হলেও তার অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। এ ঘটনা সরকারি দলের একশ্রেণীর নেতার বাকপটুতার ওপর বড় ধরনের চপেটাঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশ-বিদেশে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে এখন সরব আলোচনা চলছে। সরকারি দল এ যাবৎকাল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে, তা বিগত সময়ের দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ। সত্যমিথ্যা মিলিয়ে এই প্রচারণা চলছে কয়েক বছর ধরেই। বিপরীতে বিরোধী দলের কণ্ঠ ছিল খুবই ক্ষীণ। কিন্তু এখন সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ হাতেনাতে প্রমাণিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই সরকারি দলের ওপর স্নায়বিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের হাতে সময় আর বেশি নেই। এরই মধ্যে তাদের তিন বছর পেরিয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হলে দেড় বছরের কিছুটা বেশি সময় তারা পাবেন। কিন্তু সরকারি দলের নেতাকর্মীরা এমন অনেক বিতর্কিত কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন যেখান থেকে তাদের বের হয়ে আসার সুযোগ কম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বরং তাদের বেশির ভাগ কাজেই ভুল হচ্ছে। এত দিন সরকারের দুর্নীতির বিষয়টি এতটা প্রকাশ্যে ছিল না। এখন এসব নিয়ে যেসব মুখরোচক কাহিনী চাওর হচ্ছে, তার সবই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে। সরকার নিজেদের কিন ইমেজের ব্যাপারে যে দাবি এত দিন করে আসছিল, তা এখন অসার প্রমাণিত হয়ে গেছে। সরকারের অন্যান্য বিভাগেও দুর্নীতির কালিমা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে সরকারি ও বিরোধী দল নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার জন্য জোর প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীকে আজ সমুদ্রজয়ের সাফল্যে সংবর্ধনা দেয়া হবে। সেখানে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন। অন্য দিকে আজই বিরোধী দলের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে চার দলীয় জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয়া হবে। আজ থেকে চার দল ১৬ দলীয় নির্বাচনী জোটে রূপান্তর হবে। সুরঞ্জিত কাণ্ডের পর বিরোধী দল যে প্রচারণায় নামবে, সেখানে সরকারের দুর্নীতির বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে। শেষ সময়ে যা সরকারের জন্য এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে; কারণ অভিযোগ প্রমাণের আগেই মন্ত্রী পদত্যাগ করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ তিনি বলেন, রেলের এ ঘটনায় কারা দোষী তা ইতোমধ্যে বের হয়ে এসেছে। দোষী রেলের দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনের এপিএসকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। সর্বোপরি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ এ দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, চুরির পর পদত্যাগ করে সরকারের নাকি ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে; আওয়ামী লীগ সেটিই দাবি করছে। তাহলে এর আগে যাদের চুরির জন্য পদ্মা সেতু হয়নি তাদের কেন পদত্যাগ করানো হলো না? তাদের ধরিয়ে দিলে তো পদ্মা সেতুর কাজ অনেক দূর এগিয়ে যেত।
তিনি বলেন, সুরঞ্জিত বাবু তার নেত্রীকে খুশি করতে সারা জীবন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ওনার দুই ছেলের প্রতি তীর ছুড়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এবার তিনি দুর্নীতিতে ধরা পড়ে প্রমাণ করেছেন আসলে তারাই দুর্নীতিগ্রস্ত।
এ ঘটনায় বিজিবির অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিজিবির সদর দফতরে এ ধরনের ঘটনা ধরা পড়ল, কিন্তু তারা এখনো চুপচাপ কেন? এ ঘটনায় সুরঞ্জিত বাবুর ওপরে এবং নিচে কারা জড়িত আছে তা-ও জানা দরকার। সে জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। একই সাথে গাড়িচালককে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে সবার সামনে হাজির করা দরকার। আমরা এখনো জানি না তার ভাগ্যে কী ঘটেছে। তাকে কি আসলে গুম করা হয়েছে, তিনি কি জীবিত আছেন?
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ জানান, রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভালো করেছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এটিই নিয়ম। যার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তার সরকারে থাকার কোন নৈতিক অধিকার থাকে না।
তিনি আরো বলেন, এত দিন সরকার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রমাণ ও বিচার ছাড়া একতরফাভাবে দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে আসছিল। এখন বিষয়টির ব্যালান্স হলো। এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনেরও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। রেলমন্ত্রীর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি এম হাফিজউদ্দীন খান বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো রেলমন্ত্রী দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন না। দেশের মানুষ এটি জোরালোভাবে বিশ্বাস করে। সে জন্য জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তাকে আরো আগেই সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি মূলত সরে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাপে। তবুও বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য ভালো। আর এ থেকে অন্য মন্ত্রী ও রাজনীতিকদেরও শিক্ষা নেয়া উচিত। তবে শুধু পদত্যাগই নয়, বিষয়টি আরো উচ্চতর তদন্ত হওয়া দরকার।
গত রাতে এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের কার্যপ্রণালী বিধির ৩(৪) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সুরঞ্জিত কাণ্ডের পর হঠাৎই দেশের রাজনৈতিক হাওয়া পাল্টে গেছে। সরকারের বাকপটু মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্যেও যেন খানিকটা সতর্কতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সরকারি দল চাইছে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়কে নিজেদের ইমেজ তৈরির জন্য কাজে লাগাতে। আর বিরোধী দলগুলো এ ঘটনাকে সরকারের ভেতরে দুর্নীতির বড় প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ নিয়ে ৯ এপ্রিল থেকে চলে আসা ঘটনাপ্রবাহ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বড় ঝড়ের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এখন সাবেক হলেও তার অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। এ ঘটনা সরকারি দলের একশ্রেণীর নেতার বাকপটুতার ওপর বড় ধরনের চপেটাঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশ-বিদেশে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে এখন সরব আলোচনা চলছে। সরকারি দল এ যাবৎকাল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে, তা বিগত সময়ের দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ। সত্যমিথ্যা মিলিয়ে এই প্রচারণা চলছে কয়েক বছর ধরেই। বিপরীতে বিরোধী দলের কণ্ঠ ছিল খুবই ক্ষীণ। কিন্তু এখন সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ হাতেনাতে প্রমাণিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই সরকারি দলের ওপর স্নায়বিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের হাতে সময় আর বেশি নেই। এরই মধ্যে তাদের তিন বছর পেরিয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হলে দেড় বছরের কিছুটা বেশি সময় তারা পাবেন। কিন্তু সরকারি দলের নেতাকর্মীরা এমন অনেক বিতর্কিত কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন যেখান থেকে তাদের বের হয়ে আসার সুযোগ কম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বরং তাদের বেশির ভাগ কাজেই ভুল হচ্ছে। এত দিন সরকারের দুর্নীতির বিষয়টি এতটা প্রকাশ্যে ছিল না। এখন এসব নিয়ে যেসব মুখরোচক কাহিনী চাওর হচ্ছে, তার সবই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে। সরকার নিজেদের কিন ইমেজের ব্যাপারে যে দাবি এত দিন করে আসছিল, তা এখন অসার প্রমাণিত হয়ে গেছে। সরকারের অন্যান্য বিভাগেও দুর্নীতির কালিমা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে সরকারি ও বিরোধী দল নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার জন্য জোর প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীকে আজ সমুদ্রজয়ের সাফল্যে সংবর্ধনা দেয়া হবে। সেখানে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন। অন্য দিকে আজই বিরোধী দলের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে চার দলীয় জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয়া হবে। আজ থেকে চার দল ১৬ দলীয় নির্বাচনী জোটে রূপান্তর হবে। সুরঞ্জিত কাণ্ডের পর বিরোধী দল যে প্রচারণায় নামবে, সেখানে সরকারের দুর্নীতির বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে। শেষ সময়ে যা সরকারের জন্য এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে; কারণ অভিযোগ প্রমাণের আগেই মন্ত্রী পদত্যাগ করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ তিনি বলেন, রেলের এ ঘটনায় কারা দোষী তা ইতোমধ্যে বের হয়ে এসেছে। দোষী রেলের দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনের এপিএসকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। সর্বোপরি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ এ দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, চুরির পর পদত্যাগ করে সরকারের নাকি ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে; আওয়ামী লীগ সেটিই দাবি করছে। তাহলে এর আগে যাদের চুরির জন্য পদ্মা সেতু হয়নি তাদের কেন পদত্যাগ করানো হলো না? তাদের ধরিয়ে দিলে তো পদ্মা সেতুর কাজ অনেক দূর এগিয়ে যেত।
তিনি বলেন, সুরঞ্জিত বাবু তার নেত্রীকে খুশি করতে সারা জীবন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ওনার দুই ছেলের প্রতি তীর ছুড়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এবার তিনি দুর্নীতিতে ধরা পড়ে প্রমাণ করেছেন আসলে তারাই দুর্নীতিগ্রস্ত।
এ ঘটনায় বিজিবির অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিজিবির সদর দফতরে এ ধরনের ঘটনা ধরা পড়ল, কিন্তু তারা এখনো চুপচাপ কেন? এ ঘটনায় সুরঞ্জিত বাবুর ওপরে এবং নিচে কারা জড়িত আছে তা-ও জানা দরকার। সে জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। একই সাথে গাড়িচালককে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে সবার সামনে হাজির করা দরকার। আমরা এখনো জানি না তার ভাগ্যে কী ঘটেছে। তাকে কি আসলে গুম করা হয়েছে, তিনি কি জীবিত আছেন?
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ জানান, রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভালো করেছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এটিই নিয়ম। যার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তার সরকারে থাকার কোন নৈতিক অধিকার থাকে না।
তিনি আরো বলেন, এত দিন সরকার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রমাণ ও বিচার ছাড়া একতরফাভাবে দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে আসছিল। এখন বিষয়টির ব্যালান্স হলো। এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনেরও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। রেলমন্ত্রীর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি এম হাফিজউদ্দীন খান বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো রেলমন্ত্রী দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন না। দেশের মানুষ এটি জোরালোভাবে বিশ্বাস করে। সে জন্য জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তাকে আরো আগেই সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি মূলত সরে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাপে। তবুও বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য ভালো। আর এ থেকে অন্য মন্ত্রী ও রাজনীতিকদেরও শিক্ষা নেয়া উচিত। তবে শুধু পদত্যাগই নয়, বিষয়টি আরো উচ্চতর তদন্ত হওয়া দরকার।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন