রবিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১২


তত্ত্বাবধায়ক না হলে সরকার পতন আন্দোলন - খালেদা : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে উল্লেখ করে বলেছেন, তবে তার আগে সরকারকে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে রাজি আছে। গতরাতে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার সমাপনী ভাষণে তিনি একথা বলেন। দিনভর অর্ধশতাধিক নেতার বক্তৃতায় বিএনপির সাংগঠনিক অবকাঠামো, সরকারের দুঃশাসন ও আন্দোলনের সম্ভাব্য কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বক্তৃতায় তৃণমূলের নেতাদের দাবি ও পরামর্শের ভিত্তিতে ভবিষ্যত্ করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
খালেদা জিয়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা জনগণের কাছে তা জোর গলায় প্রচার করুন। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। এজন্য এমন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান সরকার পুনর্বহাল করতে বাধ্য হয়। তা না হলে একপর্যায়ে তিনি প্রয়োজনে সরকার পতনের একদফার আন্দোলনেও যেতে হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ’৮৬ সালে এরশাদ শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নীলনকশার নির্বাচন করেছিল। এবারও শেখ হাসিনা এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে ওই ধরনের একটি নির্বাচন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
খালেদা জিয়ার সমাপনী বক্তব্য দেয়া আগে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা একদফার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন, এছাড়া আওয়ামী লীগের লাগাম টেনে ধরা যাবে না। আর একদফার আন্দোলনের আগে বিএনপি ও এর অঙ্গ দলগুলোকে গ্রুপিংমুক্ত করারও পরামর্শ দেন তারা।
সকালে নির্বাহী কমিটির উদ্বোধনী অধিবেশনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকার আলটিমেটাম না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। প্রয়োজনে সরকার পতনের একদফার আন্দোলনও দেয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাই যেন তাদের বক্তব্যে সুচিন্তিত মতামত রাখেন, সেই আহ্বানও জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। নির্বাহী কমিটির সভায় প্রায় ৪৮ জন নেতা বক্তব্য রাখেন।
নির্বাহী কমিটির নেতারা একদফার আন্দোলনের ব্যাপারে মতামত দেয়া ছাড়াও তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ, সব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ছাত্রদল, যুবদল ও মহিলা দলকে পুনর্গঠন, দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের শোকজপূর্বক অব্যাহতির উদ্যোগ নেয়া, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে আদলেই হোক প্রার্থিতা দেয়া, হরতালসহ সব কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর বিএনপির সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান।
তাদের এই বক্তব্যের পর সমাপনী ভাষণে খালেদা জিয়া বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণযোগ্য নয়। তাই জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় গেলে এই আইন বাতিল করা হবে।
তিনি নতুন নির্বাচন কমিশনারদের অগ্রহণযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও দলীয় লোকদের মতো আজ্ঞাবহ বলে অভিহিত করে বলেছেন, এমন লোকদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে না। এদের দিয়ে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না।
তিনি বলেন, মইন-ফখরুদ্দীনের সময় নির্বাচন কমিশনে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়; গম চুরির অভিযোগে সেনাবাহিনী থেকে যার চাকরি চলে গিয়েছিল। এবারও সেনাবাহিনীর একজন সাবেক অফিসারকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এমন লোকদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিয়েছে, যেন নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে কিছু করতে না পারে। কারণ দুর্বলরা সবসময় আজ্ঞাবহ থাকে।
একইভাবে তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলবে না উল্লেখ করে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, যেসব দেশে এই মেশিন দিয়ে নির্বাচন হতো, সেসব দেশের নির্বাচনে ইতোমধ্যেই এই মেশিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি যেসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই, আগামী দুই মাসের মধ্যে সেসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন। একইভাবে অঙ্গদলগুলোর সব স্তরে আগামী দুই মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন। সম্ভাব্য সব জেলায় সফর করবেন তিনি। তিনি সারাদেশে দলের জন্য নতুন নতুন ছেলেমেয়েদের রিক্রুট করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ’৭৪ সালে দেশের অবস্থার সঙ্গে এখনকার অবস্থার কোনো পার্থক্য নেই। তখনকার মতো এখনও মানুষ খেতে পায় না। কিন্তু মিডিয়া এজেন্সির ভয়ে তা লিখতে পারছে না। ’৭২-৭৫ সালের মতো ২০০৯-১০ সালের মধ্যেও কোনো গুণগত পার্থক্য নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী সংসদে বা সংসদের বাইরে যে ভাষায় কথা বলেন, আমার পক্ষে সে ভাষায় কথা বলা সম্ভব নয়। আমি মিথ্যা বা আবোল-তাবোল বলতে পারি না। রেহানা আক্তার রানু ও সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া সংসদে যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, তা ওই নেত্রীর ভাষাই ফেরত দিয়েছেন মাত্র। এই বক্তব্য যদি স্পিকারের ভালো না লেগে থাকে, তাহলে একই ভাষায় যখন প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখতেন, তখন তাকে স্পিকার থামাননি কেন?
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে আইএসআই থেকে কোনো দরবেশের মাধ্যমে অর্থ আনার কারণে প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল।
খালেদা জিয়া বলেন, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সময় বিএনপি দুর্বল ছিল। এখন বিএনপি অনেক বেশি শক্তিশালী। আওয়ামী লীগ ১২ মার্চে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে, বিএনপি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা জানে, আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে একটি দুর্বল দল। তাই তাদের এই দুর্বল সময়েই আমাদেরকে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আঘাত করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতিবাজ। তাদের অর্থ দেশ থেকে পাচার করার কারণেই ডলারের দাম বেড়ে গেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে কুইক মানি বানিয়ে নিয়েছে। এয়ারটেল ও ভিওআইপি দিয়ে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুতের জন্য জেলায় জেলায় ও ঢাকা মহানগরীতে প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ‘মুগুর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এখন যারা দলের সঙ্গে বেঈমানী করবে, তোমরা তাদের মুগুর দেবে। কেউ বেঈমানী করলে ছাড় দেবে না, তাদের ছেঁচা দেবে।
তিনি বিএনপির মরহুম মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কথা স্মরণ করে বলেন, দলের দুঃসময়ে তিনি অনেক ভূমিকা রেখেছেন। ভালো কাজ করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি; কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে। একটি সহযোগী দলের চাপও ছিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে।
তিনি বলেন, আমি তো রাজনীতিতে আসতে চাইনি। আপনারাই আমাকে রাজনীতিতে এনেছেন। তিনটি নির্বাচনে আমার নেতৃত্বে বিএনপি জয়লাভ করেছে। আপনারা যদি আমাকে কথা দেন আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, তাহলে আমিও আপনাদের কথা দিচ্ছি, জনগণের রায় নিয়ে আমরা আবার ক্ষমতায় যাব।
নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ২০টি প্রস্তাব গৃহীত : নির্বাহী কমিটির বিকালের অধিবেশনে দেশ জাতি ও দল সম্পর্কে ২০টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের নিন্দা, দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে, ভারতে ৫৪টি নদীর আন্তঃসংযোগ প্রকল্প বাতিল করতে হবে, শেয়ারবাজার ধস ও অর্থনীতির নিম্নগতির দায়ভার নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হবে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির দায়ভার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ, খুলনায় কয়লাভিত্তিক যে বিদ্যুত্ প্লান্ট হচ্ছে তার পরিবেশগত ক্ষতি বিবেচনায় উদ্বেগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে ব্যাপক সমর্থন দেয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ প্রদান, প্রতি জেলায় দলের বর্ধিত সভা করার সিদ্ধান্ত ইত্যাদি।
সকালের অধিবেশনে খালেদা জিয়া : বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া আগামী ১০ জুনের মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেয়ার যে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে তা মানতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তা না হলে প্রয়োজনে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নামতে পারে বিএনপি। আগামী ১১ জুন ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার লক্ষ্যে কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল সকালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় একথা বলেন তিনি। সকাল ১১টা ০৫ মিনিটে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ বৈঠক শুরু হয়। নির্বাহী কমিটির এ সভা দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সূচনা বক্তব্যের পর খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্বও করেন তিনি। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ হওয়ার পর যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। উদ্বোধনী পর্বের পর বেলা সাড়ে ১২টায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রথম বক্তব্য দেন লারমনিরহাট বিএনপি সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে গঠিত ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটির এটি তৃতীয় সভা। এর আগে ২০১০ সালের ৩১ জুলাই প্রথম এবং ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল দ্বিতীয় সভা হয়েছিল।
সভার মূল মঞ্চে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আর এ গনি, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, সারোয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি জার্মানিতে, এম. শামসুল ইসলাম অসুস্থ, নজরুল ইসলাম খান সিঙ্গাপুরে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় কারাগারে ও তারেক রহমান চিকিত্সার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন।
খালেদা জিয়া বেলা ১২টায় বক্তব্য শুরু করেন। পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, দুর্নীতি, অপশাসন, আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুত্ পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারের দমননীতি, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দলীয়করণ, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থরক্ষা এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসসহ চলমান আন্দোলনের বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেন।
নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আজ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। দেশের মানুষ সে ধরনের কোনো নীলনকশার নির্বাচন হতেও দেবে না। ১০ জুনের সময়সীমার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১১ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে। সেখান থেকে এই দাবি পূরণের সরকারকে বাধ্য করতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
দাবি না মানলে সরকার পতনে এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামতে হতে পারে—একথা বলে খালেদা জিয়া এ বিষয়ে দলীয় নেতাদের মতামত চেয়েছেন। খালেদা জিয়া বলেন, আন্দোলন ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য গ্রহণ করতে হবে সুপরিকল্পিত কর্মসূচি। এর সঙ্গে যুক্ত করতে হয় ব্যাপক জনসাধারণকে। সেই কৌশলগুলো নিয়ে সভায় আপনাদের মতামত দিতে হবে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন জাতীয় দাবি, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল হবে : খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, বিদেশি প্রভুদের তুষ্ট করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নীলনকশার নির্বাচন করে তারা আবারও ক্ষমতায় আসতে চায়। কারণ, দেশের মানুষের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। এজন্যই তারা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করেছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আজ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করব ইনশাআল্লাহ।
সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ : খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা বলেছিল নিত্যপণ্যের দাম কমাবে। ১০ টাকা কেজিতে চাল দেবে, বিনা পয়সায় সার দেবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, সুশাসন কায়েম করবে, দলীয়করণ করবে না। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই তারা পূরণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, এখন দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। ৩০ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল পাওয়া যায় না। ভোজ্যতেলের লিটার ১৩০ টাকা। ডিমের হালি ৩৬ টাকা। এক কেজি আটার দাম ৩৫ টাকা। গুঁড়োদুধের দাম নিম্নবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিত্যপণ্যের কোনোটাই সরকার জনগণের ধরাছোঁয়ার মধ্যে রাখতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দুর্নীতিবাজ সরকার : খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক বর্তমান সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন তারা স্থগিত করেছে। বিশ্বব্যাংকের পথ ধরে এডিবি, আইডিবি এবং জাইকাও সরে দাঁড়িয়েছে। যে সংস্থাকে কাজ দেয়ার জন্য বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী লোকেরা আগাম বিরাট অংকের ঘুষ নিয়েছে, সে সংস্থাকে বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। কানাডা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান : খালেদা জিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অবিরাম গতিতে চলছেই। গত সোয়া তিন বছরে বিচারবহির্ভূত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ৪ শতাধিক প্রাণ ঝরে গেছে। গত ২ এপ্রিল একদিনেই ৭ জনকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক সহিংসতার নিহত হয়েছেন ৫৯২ জন। আহত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৯০ জন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। শুধু রাজধানীতেই ৫ হাজার ৫৭৬ বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধারের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, তিন বছরে দেশে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ৫ লাখেরও বেশি। শুধু হত্যাকাণ্ডই পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১০ হাজারের বেশি ঘটেছে ।’
বিদ্যুতের লোডশেডিং : খালেদা জিয়া বলেন, বিনা টেন্ডারে কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র দিয়ে লুটপাট করা হলেও বিদ্যুতের সঙ্কট গুরুতর আকার ধারণ করেছে। পিডিবি বলেছে, তারা ১৬ শতাংশ লোডশেডিং করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতপক্ষে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ৩৫ শতাংশের বেশি। কেবল তাই নয়, জ্বালানি খাতে আ.লীগের লুটপাটে আজ রাষ্ট্রীয় সংস্থা পিডিবি হয়ে পড়েছে দেউলিয়া।
জাতীয় গ্রিডে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সংযোজনে প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ অভিহিত করে তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্রকল্প বিদ্যুত্ দেয়ার জন্য নয়, জনগণের টাকা লুটপাটের জন্য করা হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি : খালেদা জিয়া বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের টালমাটাল অবস্থা। সারাবিশ্বে ডলারের দাম কমলেও বাংলাদেশে দাম বেড়ে চলেছে। ৬৯ টাকার ডলারের বিনিময় হার এখন ৮৬ টাকার ওপর। সরকারি দলের লুটপাটের টাকা পাচারের কারণেই ডলারের দাম এতটা বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। মুদ্রাস্ফীতির হার নজিরবিহীনভাবে সাড়ে ১১ শতাংশে উঠেছে।
শেয়ার মার্কেট ধ্বংস : তিনি ক্ষমতাসীনদের ‘আশীর্বাদপুষ্ট গোষ্ঠী’ শেয়ারবাজার ধ্বংসের জন্য দায়ী উল্লেখ করে বলেন, আজও তাদের বিচার হয়নি। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে পথে বসে গেছেন। কয়েকজন আত্মহত্যাও করেছেন।
ভারতের স্বার্থরক্ষা করছে সরকার : খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষের কাছে দেয়া কোনো ওয়াদা পূরণ করা না হলেও বিদেশি প্রভুদের গোপন অঙ্গীকারগুলো তারা বাস্তবায়ন করে চলেছে। জাতীয় স্বার্থের মূল্য তাদের কাছে নেই। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে দেশবাসীর আপত্তি উপেক্ষা করে সরকার ভারতীয় অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা আদায় করতে পারিনি। ট্রানজিটের নামে ভারতকে করিডোর দেয়া হয়েছে বিনিময়ে কোনো কিছুই পায়নি বাংলাদেশ। সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের পাখির মতো হত্যা করছে ভারতীয় বিএসএফ। তারা (সরকার) কোনো প্রতিবাদ করছে না। ১/১১তে দেশের দুর্যোগের সময়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন খালেদা জিয়া।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সুরাহা নেই : খালেদা জিয়া বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার কোনো সুরাহা হয়নি। তারা নিজের ঘরে খুন হলেন। আর প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন, কারও বেডরুমের নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। নানা কথা আজ ভেসে বেড়াচ্ছে। সাগর-রুনিসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যার পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত বলে শোনা যায়। হয়তো সে কারণেই তদন্ত ধামাচাপা পড়েছে। অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবির সঙ্গে তিনি একাত্মতাও প্রকাশ করেন।
সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে : খালেদা জিয়া সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বারবার বিপর্যয়ের মধ্য থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। প্রমাণ করেছে জনগণের সমর্থনধন্য এই দল অবিনাশী, দুর্জয় ও দুর্বার। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভোটের অধিকার রক্ষা করতে জনগণকে সংঘবদ্ধ করার দায়িত্ব বিএনপি নেতৃত্বের ওপর এসে গেছে। তাই দলকে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও সংঘবদ্ধ করতে হবে।
শোক প্রস্তাব : বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান, কাজী নুরুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শিল্পী ভুপেন হাজারিকা, সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ, রশীদ তালুকদার, মিশুক মুনীর, সাগর সারওয়ার, মেহেরুন রুনি, শওকত জামিল, চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, চলচ্চিত্র অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি, রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুর রাজ্জাক, শিল্পপতি স্যামসন এইচ চৌধুরী, সৌদি কূটনীতিক খালাফ আল আলী, নব্বইয়ের ছাত্র নেতা জাহাঙ্গীর সাত্তার টেংকুসহ স্টিফ জর্জ, জগজিত্ সিং, হুংনি হিউজটোনসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব ও দলের দুই শতাধিক নেতাকর্মীর প্রতি শোক প্রকাশ করা হয়।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা সরকার পতনে এক দফার আন্দোলনের পাশাপাশি দলকে গ্রুপিংমুক্ত চান, ডিসিসি নির্বাচনে প্রার্থী চান : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় নেতারা এক দফার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করে বলেছেন, এ ছাড়া আওয়ামী লীগের লাগাম টেনে ধরা যাবে না। আর এক দফার আন্দোলনের আগে বিএনপি ও এর অঙ্গ দলগুলোকে গ্রুপিংমুক্ত করারও পরামর্শ দেন তারা। কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট—এর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি মিলনায়তনে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা দলের চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে এসব পরামর্শ রাখেন।
সকালে নির্বাহী কমিটির উদ্বোধনী অধিবেশনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকার আলটিমেটাম না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। প্রয়োজনে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনও দেয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাই যেন তাদের বক্তব্যে সুচিন্তিত মতামত রাখেন, সেই আহ্বানও জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। নির্বাহী কমিটির নেতারা এক দফার আন্দোলনের ব্যাপারে মতামত দেয়া ছাড়াও তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে পুর্ণাঙ্গ নিয়োগ, সব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ছাত্রদল, যুবদল ও মহিলা দলকে পুনর্গঠন, দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের শোকজপূর্বক অব্যাহতির উদ্যোগ নেয়া, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে আদলেই হোক প্রার্থিতা দেয়া, হরতালসহ সব কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর বিএনপির সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর বক্তৃতা দিয়ে এ অধিবেশন শুরুর পর একে একে বক্তৃতা দেন মোজাহার আলী প্রধান এমপি, সংরক্ষিত আসনের এমপি আশিফা আশরাফী পাপিয়া ও রেহেনা আক্তার রানু, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, কাজী নুরুজ্জামান বাবুল, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, কবীর মুরাদ, ভিপি সাইফুল ইসলাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া এমপি, সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকর, সাদেক হোসেন খোকা, ফজলুল হক মিলন, হারুন অর রশিদ, অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর, কেএস মাহমুদ, রফিক শিকদার, শামীমুর রহমান শামীম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ। বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকার পতনের জন্য কঠোর, প্রয়োজনে এক দফা আন্দোলন শুরুর দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, আন্দোলন বেগবান করার প্রয়োজনে দেশের জেলা-থানা-ওয়ার্ডে বিদ্যমান দলীয় কোন্দল মেটানো জরুরি বলে অভিমত উঠে আসে সাংগঠনিক জেলা নেতাদের বক্তব্যে। সক্রিয় নেতাদের দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্বশীল পদে বসানোর আবেদনের পাশাপাশি নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করারও তাগিদ দেন জেলার নেতারা। এছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠে থাকা নেতাদের মূল্যায়নের দাবিও তোলেন বিভিন্ন জেলার নেতারা। হরতালের সময়ে মাঠে না থেকে সংবাদ সম্মেলনে চেহারা দেখাতে আগ্রহী নেতাদের সমালোচনাও উঠে আসে তাদের বক্তব্যে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিগুলোতে নিহত, আহত ও গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য সাংগঠনিকভাবে সহায়তা দেয়ার দাবি ওঠে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায়। কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া এমপি, সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকর প্রমুখের বক্তব্যে এ বিষয়ক আবেদন ফুটে ওঠে।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে দলের কোনো নেতাকর্মী আহত হলে তািক্ষণকভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো ব্যবস্থা দলে নেই। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে প্রতিনিয়তই আমাদের কেউ না কেউ আহত হচ্ছেন, কেউ গ্রেফতার হচ্ছেন বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের পাশে দাঁড়ানোর সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয়া হোক। সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া বলেন, হরতাল চান না স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অঙ্গদলের নেতারা। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও রাজশাহীতে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের নামে পোস্টার না হয়ে পোস্টার করা হয়েছে জীবিত নেতাদের ছবি দিয়ে। বিএনপিতে হাইব্রিড নেতাদের আগমন ঘটেছে। তাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত। তাদের জন্য সাংগঠনিক সমস্যা হচ্ছে। কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব কোনো ব্যবসায়ীকে না দেয়ারও আহ্বান জানান পাপিয়া। তিনি হাশেম, আমিন আহমেদ ভুঞা ও সিলভার সেলিমের নামও উল্লেখ করেন। রেহেনা আক্তার রানু বলেন, আন্দোলন আরও শক্তিশালী করতে হলে ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন করে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া ছাত্রদল ও যুবদলও পুনর্গঠন করা দরকার। এছাড়া জিয়াউর রহমানের ওপর গবেষণার জন্য লাইব্রেরি করারও দাবি জানান রানু।
কিশোরগঞ্জের ফজলুর রহমান বলেন, আমি ছাত্রলীগ করতাম। শেখ হাসিনাকে আমি চিনি। কঠোর ও দুর্বার আন্দোলন ছাড়া তার ভিত নড়ানো যাবে না। আওয়ামী লীগের পতন ঘটানো যাবে না। কর্মীদের ভোটে নেতা নির্বাচনের দাবি উঠেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সভায়। বক্তৃতায় এ দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, তৈমুর আলম খন্দকার প্রমুখ। কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেছেন, নেতা আসতে হবে নিচ থেকে। কিছুতেই যাতে ওপর থেকে নেতা নির্বাচন করা না হয়। আর নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়াও গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত। নেতা নির্বাচন হতে হবে কর্মীদের ভোটে। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। কেএস মাহমুদ বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করুন।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, যদি দল ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে দুটি মেয়র পদসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করবে। অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদ বলেন, ভুল হতে পারে। তাই আগামীতে যেন আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়, সেই আবেদন জানাই। ফজলুল হক মিলন বলেন, জনগণের চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। তাই জনগণের সঙ্গে দেশনেত্রীর মেলামেশায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব উপদেষ্টা। গুলশান অফিসে উপদেষ্টাদের সময় কম দিয়ে নেতাকর্মীদের সময় বেশি দেয়া উচিত আমাদের নেত্রীর। তিনি বলেন, সংস্কারবাদীরা ভয়ে চলে গিয়েছিলেন। এখন তাদের নিয়ে আর কোনো বিতর্ক নয়। তাদের দলে নিতে হবে। হারুন অর রশিদও একই কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে কর্মসূচি দেয়ার কথাও বলেন।
ওয়েব ক্যামেরায় লন্ডন থেকে সভা পর্যবেক্ষণ তারেকের : এদিকে লন্ডনে বসেই নির্বাহী কমিটির সভা পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাস্থলে স্থাপিত ওয়েব ক্যামের মাধ্যমে চিকিত্সার জন্য লন্ডনপ্রবাসী তারেক পুরো সভায়ই পর্যবেক্ষণ করছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কারাগারে নির্যাতনের শিকার তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডনে চিকিত্সাধীন আছেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads