প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক একেএম শাহনেওয়াজ জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় ভিসি ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনরত শিক্ষক সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ঘেরাও করে ফেলে ছাত্রলীগ। তারা আন্দোলনরতদের দিকে তেড়ে এসে ভিসি ভবনের ফটক থেকে সরে যেতে বলে এবং গালিগালাজ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরা মশাল জ্বালিয়ে তখন স্লোগান দিতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় ঢিল ছোড়া ও হামলা। হামলা শুরু হলে ভিসি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়া পুলিশও সরে যায়। আধ ঘণ্টা ধরে এই অবস্থা চলার পর বিদ্যুৎ চলে আসে। পরে ছাত্রলীগ হামলা বন্ধ করে কিছু দূরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক একেএম শাহনেওয়াজ ছাড়াও সহযোগী অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু, সোমা মুমতাজ, মাসুম শাহরিয়ার ও সহকারী অধ্যাপক আমিনুর রহমান খান এবং মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ জিতু আহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ‘ভিসি বিতাড়ন মঞ্চ’ ভেঙে ফেলে। আগেও শিক্ষক সমাজের আরেকটি মঞ্চ পুড়িয়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মীরা। এর আগে ভিসি’র অপসারণ চেয়ে মিছিল করায় বিকালে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মীদের খুঁজে খুঁজে ধরে বেধড়ক মারধর করে তারা। ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিল ও ছাত্রলীগের পাল্টা মিছিলে উত্তাল রয়েছে ক্যাম্পাস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও ছয় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা ও সিন্ডিকেটে ছুটির সিদ্ধান্ত বাতিলসহ ১১ দফা দাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। সমাবেশে জোট কর্মীরা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার প্রতিবাদে ‘যুগান্তর’ পত্রিকা পোড়ায়। সমাবেশ শেষে গতকাল সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেয় তারা। বিকাল ৩টার দিকে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি কলি মাহমুদসহ কর্মীরা বটতলা থেকে টিএসসিতে আসার পথে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার মুখে পড়ে। এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু নিজ গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা টিএসসি’র দিকে গিয়ে সেখানেও জোট কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় আহত হয়েছেন জোটের সভাপতি কলি মাহমুদ, সহ-সভাপতি মঈন মুনতাসির কার্তিক, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সুশান, থিয়েটার কর্মী সুদীপ, অর্ণ, সাধারণ শিক্ষার্থী ফরিদুদ্দীন রাহাতসহ ১২ জন। আহত ৬ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা শেখ শরীফুল ইসলাম, আশরাফুজ্জামান লিটন, মেহেদী হাসান সম্রাট, অর্ণব, ফেরদৌস, মিঠুন ও সাইফুল ইসলাম শাকিল। এতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাংস্কৃতিক কর্মীরা আহতদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে যান। সেখান থেকে তারা মিছিল শুরু করেন। বিভিন্ন হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের মদদে পরিচালিত এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভিসি ভবনের সামনে মিছিল চলছিল। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাকিলা শারমিন বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার জন্য ভিসি এ হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু আমাদের আন্দোলনকে হামলা চালিয়ে দমানো যাবে না। আমাদের দাবি মানতেই হবে। এদিকে ছাত্রলীগও ভিসির সমর্থনে পাল্টা মিছিল করছিল। এ ব্যাপারে ভিসি শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘সকাল থেকে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি, ক্যাম্পাসে ফিরে সাংস্কৃতিক কর্মীদের মারধরের ঘটনা তদন্ত করে দেখব।’
অন্যদিকে ভিসি’র পতনের দাবিতে তার ভবনের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। গতকাল বেলা ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন তারা। শুক্রবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষক সমাজের ভিসি ভবন অবরোধ ভিসি’র পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলবে বলে জানান ইতিহাস বিভাগের আন্দোলনকারী অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান। ছাত্রলীগের কর্মীদের ‘ভিসি প্রত্যাখ্যান মঞ্চ’ পুড়িয়ে দেয়ার পর গতকাল বেলা ১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে আবারও ‘ভিসি বিতাড়ন মঞ্চে’র উদ্বোধন করেন শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন। একই সঙ্গে ভিসিপন্থি শিক্ষকরা অবস্থান করেন ভিসি ভবনের পেছনের গেটে। শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, পুলিশ দিয়ে ক্যাম্পাস চলতে পারে না। ভিসিপন্থি শিক্ষক এবং তার লালিত ছাত্রলীগ দিয়ে যে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা দ্বারা ভিসির দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ফের প্রমাণিত হলো। এছাড়া বিকালে ভিসি ভবনের পাশে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এদিকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজ তাদের স্থগিত ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী শিক্ষক সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল আলম সেলিম বলেন, ভিসির নির্দেশে ও প্রক্টরের তত্ত্বাবধানে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর এ অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। ভিসি অবৈধভাবে পদকে আঁকড়ে ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে ভীত হয়ে তিনি দমন-পীড়ন নীতি অবলম্বন করেছেন। এ নীতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন এখন পদত্যাগেরও কোন বিকল্প নেই। চবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ এদিকে স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম থেকে জানান: পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরপরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে আহত হয়েছেন ৬ জন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল ক্যাম্পাসের স্টেশন চত্বরে ঘটে এই ঘটনা। পুলিশ এই ঘটনায় ৩ জনকে আটক করেছে। আহতরা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শাকিল, দর্শন ১ম বর্ষের সাব্বির আহমেদ ও শেখ কামাল, উদ্ভিদবিদ্যা ২য় বর্ষের কামরুল হাসান রিয়াদ, পরিসংখ্যান ১ম বর্ষের আমিনুল ইসলাম ও মো. ফরহাদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শহর থেকে ছেড়ে আসা একটি শাটল ট্রেন ক্যাম্পাস স্টেশনে এসে পৌঁছালে ছাত্রলীগের দু’টি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ‘সিক্সটি নাইন’ ও ‘একাকার’ নামের দুটি বগির সমর্থকদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখা যায়। ঘটনার সময় পুলিশ মাহমুদুল হাসান তুষারসহ তিনজনকে আটক করে। তুষার ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও গুলি পাওয়ার কথা দাবি করা হয়েছে। হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি বাবুল আক্তার মানবজমিনকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত। ঘটনার সময় আমরা একটি পিস্তল উদ্ধার করেছি। সংঘর্ষকারীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়ার কথা জানান। |
শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১২
জাবিতে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা, চবিতে সংঘর্ষ
Posted on ১:২০ PM by Abul Bashar Manik
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন