এরশাদ ম খা আলমগীর তাপস আশিক মান্নান চৌধুরী নতুন ব্যাংকের মালিক
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে তীব্র তারল্য সঙ্কট সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও ৬ ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বুধবার প্রবাসী বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের (এনআরবি) দেয়া তিনটিসহ অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে একসঙ্গে ৯ ব্যাংকের অনুমোদনে ব্যাংকিং সেক্টরে অসম প্রতিযোগিতা ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন ব্যাংক অনুমোদনে অর্থনীতিবিদরা এ খাতে বহুমুখী ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করলেও সরকার সবার মতকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিল।
গতকাল অনুমোদন দেয়া নতুন ৬ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতার নাম রয়েছে। অনুমোদন দেয়া হয়েছে ঢাকা-১২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপসের মধুমতি ব্যাংক, যার চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে হুমায়ুন কবীরের। অনুমোদন পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়কর উপদেষ্টা ও তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এম মনিরুজ্জামান খন্দকারের মিডল্যান্ড ব্যাংক। এছাড়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (রংপুর-৫) এইচএস আশিকুর রহমানের মেঘনা ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ ব্যাংকটির পরিচালকের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ। নতুন ব্যাংক হিসেবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা ও আওয়ামী বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাত আবদুল মান্নান চৌধুরীর সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এসএম আমজাদ হোসেনের নাম। নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো মহাজোটের শরিক দল ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে শহিদুল আলমের। আর গত বুধবার অনুমোদন দেয়া তিন এনআরবি ব্যাংক হলো—এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড (যার উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম চৌধুরী), এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (যার উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ফরাসত আলী) ও এনআরবি লিমিটেড (যার উদ্যোক্তা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আহমেদ)।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন ৯ ব্যাংকের অনুমোদনে দেশের ব্যাংকিং খাতে অসম প্রতিযোগিতা ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সঙ্কট ও আমানতের অভাব আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ নতুন ব্যাংক প্রসঙ্গে আমার দেশ-কে বলেন, কিছুদিন ধরেই দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সঙ্কট রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তদারকির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতাও দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বিদ্যমান ব্যাংকগুলো ব্যাসেল-২-এর শর্তগুলো পূরণ করতে পারছে না। নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ায় এ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আমানতের যে অবস্থা, নতুন ব্যাংক আসায় আমানত সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তাই এ মুহূর্তে নতুন ব্যাংক অনুমোদনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যুক্তিসম্মত হয়নি।
গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভায় প্রবাসে বসবাসরত উদ্যোক্তাদের তিনটি এনআরবি ব্যাংক অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেদিন প্রচলিত বেসরকারি ব্যাংকের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও অনুমোদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি পরিষদ। তাই ওইদিন বৈঠক মুলতবি করা হয়। ওই মুলতবি বৈঠকটিই গতকাল বেলা দেড়টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয়। সভায় রাজনৈতিক বিবেচনায় এই ৬ ব্যাংকের অনুমোদন দেয় পরিষদ। বৈঠকে পরিষদ সদস্যদের মধ্যে অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনত্ কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন না। সূত্রে জানা গেছে, ড. তারেক নতুন ব্যাংকের বিরোধিতার কারণেই বৈঠকে আসেননি।
পরিষদের সভাশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, পরিচালনা পরিষদের বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য পরিস্থিতি, ঋণপ্রবাহ ও আমানত পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে নতুন ব্যাংক অনুমোদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। পরে পরিষদ সদস্যরা ব্যাংক অনুমোদনে গঠিত তিনটি কমিটির দেয়া মার্কস বিবেচনা করে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়টি অস্বীকার করেন এই ডেপুটি গভর্নর। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যাদের ব্যাংক দেয়া হয়েছে তারা সবাই দেশের নাগরিক। তাদের যোগ্যতা বিবেচনা করেই ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের এই ডেপুটি গভর্নর আরও জানান, ব্যাংকগুলোকে ৬ মাসের জন্য লেটার অব ইনটেম্লট দেয়া হয়েছে। এ সময় ব্যাংকগুলোকে কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো—ছয় মাসের মধ্যে বাণিজ্য পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়া, পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা কার্যক্রম শুরুর আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়া, কোনো উদ্যোক্তা পরিচালক যেন ঋণখেলাপি না হয় ও এনবিআরের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করা। এসব শর্ত পালনের পরই ব্যাংকগুলো পুরোপুরি কাজ শুরু করতে পারবে। ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় ঢাকার বাইরে স্থাপন করতে উত্সাহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাংকের জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে আগ্রহীদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকার জামানতসহ আবেদন করতে বলা হয়। মোট ৩৭টি আবেদন জমা পড়ে নতুন ব্যাংকের জন্য। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৬টি আবেদন চূড়ান্ত করে নতুন ব্যাংক অনুমোদনে কমিটি গঠন করা হয়। সূত্র জানায়, আবেদনকারী উদ্যোক্তারা সবাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। তাই কাকে ব্যাংক দেয়া হবে—বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না সরকার নিজেও। সে কারণে ব্যাংকের অনুমোদন দিতে গত ২৭ মার্চ পরিচালনা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হলেও ২৫ মার্চ অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে ডেকে পাঠান। শেষ পর্যন্ত তারিখ পরিবর্তন করে ৪ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয় নতুন ব্যাংক অনুমোদনের জন্য। সেদিনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না সরকার। তাই পরে আবারও সময় বাড়ানো হয় ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। জানা গেছে, অবশেষে সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা করে গতকাল ৬ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়।
দেশের অর্থনীতিবিদের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক ইচ্ছায় ব্যাংক দেয়া হলে দেশের অর্থনীতি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদসহ দেশের বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই এ ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ আশঙ্কা বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ নতুন ব্যাংক অনুমোদনে কিছুটা ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তিন এনআরবিসহ মোট ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দিল। বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংক চারটি, বেসরকারি ব্যাংক ৩০টি, বিশেষায়িত চারটি, বিদেশি নয়টিসহ মোট ৪৭টি ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরে আরও ৯ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হলো। নতুন এই ৯ ব্যাংকের অনুমোদনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দুই আমলে অনুমোদন দেয়া ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ২২-এ।
গতকাল অনুমোদন দেয়া নতুন ৬ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতার নাম রয়েছে। অনুমোদন দেয়া হয়েছে ঢাকা-১২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপসের মধুমতি ব্যাংক, যার চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে হুমায়ুন কবীরের। অনুমোদন পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়কর উপদেষ্টা ও তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এম মনিরুজ্জামান খন্দকারের মিডল্যান্ড ব্যাংক। এছাড়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (রংপুর-৫) এইচএস আশিকুর রহমানের মেঘনা ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ ব্যাংকটির পরিচালকের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ। নতুন ব্যাংক হিসেবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা ও আওয়ামী বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাত আবদুল মান্নান চৌধুরীর সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এসএম আমজাদ হোসেনের নাম। নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো মহাজোটের শরিক দল ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে শহিদুল আলমের। আর গত বুধবার অনুমোদন দেয়া তিন এনআরবি ব্যাংক হলো—এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড (যার উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম চৌধুরী), এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (যার উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ফরাসত আলী) ও এনআরবি লিমিটেড (যার উদ্যোক্তা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আহমেদ)।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন ৯ ব্যাংকের অনুমোদনে দেশের ব্যাংকিং খাতে অসম প্রতিযোগিতা ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সঙ্কট ও আমানতের অভাব আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ নতুন ব্যাংক প্রসঙ্গে আমার দেশ-কে বলেন, কিছুদিন ধরেই দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সঙ্কট রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তদারকির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতাও দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বিদ্যমান ব্যাংকগুলো ব্যাসেল-২-এর শর্তগুলো পূরণ করতে পারছে না। নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ায় এ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আমানতের যে অবস্থা, নতুন ব্যাংক আসায় আমানত সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তাই এ মুহূর্তে নতুন ব্যাংক অনুমোদনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যুক্তিসম্মত হয়নি।
গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভায় প্রবাসে বসবাসরত উদ্যোক্তাদের তিনটি এনআরবি ব্যাংক অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেদিন প্রচলিত বেসরকারি ব্যাংকের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও অনুমোদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি পরিষদ। তাই ওইদিন বৈঠক মুলতবি করা হয়। ওই মুলতবি বৈঠকটিই গতকাল বেলা দেড়টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয়। সভায় রাজনৈতিক বিবেচনায় এই ৬ ব্যাংকের অনুমোদন দেয় পরিষদ। বৈঠকে পরিষদ সদস্যদের মধ্যে অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনত্ কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন না। সূত্রে জানা গেছে, ড. তারেক নতুন ব্যাংকের বিরোধিতার কারণেই বৈঠকে আসেননি।
পরিষদের সভাশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, পরিচালনা পরিষদের বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য পরিস্থিতি, ঋণপ্রবাহ ও আমানত পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে নতুন ব্যাংক অনুমোদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। পরে পরিষদ সদস্যরা ব্যাংক অনুমোদনে গঠিত তিনটি কমিটির দেয়া মার্কস বিবেচনা করে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়টি অস্বীকার করেন এই ডেপুটি গভর্নর। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যাদের ব্যাংক দেয়া হয়েছে তারা সবাই দেশের নাগরিক। তাদের যোগ্যতা বিবেচনা করেই ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের এই ডেপুটি গভর্নর আরও জানান, ব্যাংকগুলোকে ৬ মাসের জন্য লেটার অব ইনটেম্লট দেয়া হয়েছে। এ সময় ব্যাংকগুলোকে কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো—ছয় মাসের মধ্যে বাণিজ্য পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়া, পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা কার্যক্রম শুরুর আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়া, কোনো উদ্যোক্তা পরিচালক যেন ঋণখেলাপি না হয় ও এনবিআরের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করা। এসব শর্ত পালনের পরই ব্যাংকগুলো পুরোপুরি কাজ শুরু করতে পারবে। ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় ঢাকার বাইরে স্থাপন করতে উত্সাহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাংকের জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে আগ্রহীদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকার জামানতসহ আবেদন করতে বলা হয়। মোট ৩৭টি আবেদন জমা পড়ে নতুন ব্যাংকের জন্য। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৬টি আবেদন চূড়ান্ত করে নতুন ব্যাংক অনুমোদনে কমিটি গঠন করা হয়। সূত্র জানায়, আবেদনকারী উদ্যোক্তারা সবাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। তাই কাকে ব্যাংক দেয়া হবে—বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না সরকার নিজেও। সে কারণে ব্যাংকের অনুমোদন দিতে গত ২৭ মার্চ পরিচালনা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হলেও ২৫ মার্চ অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে ডেকে পাঠান। শেষ পর্যন্ত তারিখ পরিবর্তন করে ৪ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয় নতুন ব্যাংক অনুমোদনের জন্য। সেদিনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না সরকার। তাই পরে আবারও সময় বাড়ানো হয় ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। জানা গেছে, অবশেষে সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা করে গতকাল ৬ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়।
দেশের অর্থনীতিবিদের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক ইচ্ছায় ব্যাংক দেয়া হলে দেশের অর্থনীতি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদসহ দেশের বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই এ ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ আশঙ্কা বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ নতুন ব্যাংক অনুমোদনে কিছুটা ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তিন এনআরবিসহ মোট ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দিল। বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংক চারটি, বেসরকারি ব্যাংক ৩০টি, বিশেষায়িত চারটি, বিদেশি নয়টিসহ মোট ৪৭টি ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরে আরও ৯ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হলো। নতুন এই ৯ ব্যাংকের অনুমোদনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দুই আমলে অনুমোদন দেয়া ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ২২-এ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন