মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল ২০১২,মানবজমিন
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ বলেন, আমাদের মতো দেশে সরকারের টাকা ছাপানো ছাড়া তেমন কোন কাজ নেই। শুধু টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়ানো যাবে না। বেশি বেশি ব্যাংক হলে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা না-ও হতে পারে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকগুলো হওয়ায় ব্যাংকিং সরকারের হস্তক্ষেপ আরও বাড়বে। ফলে ভাল ব্যাংক পাওয়ার আশা বৃথা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান মানবজমিনকে বলেন, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট, কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কট দেখা দেবে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতকে সব সময় কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হয়, এটা যথাযথ ভাবে না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে এত বেশি ব্যাংক দেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, নতুন ব্যাংক দেয়ায় তারা যদি সেবার মান বাড়ায় তাহলে বিবেচনা এক রকম। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক খাতের যে পরিস্থিতি, তাতে ভাল সেবা সম্ভব হবে না। ফলে ভবিষ্যতে নতুন এত ব্যাংক পজিটিভ কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হলে তো আর অর্থনীতির বিবেচনা লাগে না। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কার প্রয়োজন পড়ে না বলে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দেশে নতুন ব্যাংকের দরকার আছে কিনা তা ভেবে দেখবে দেশের একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু যেখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, সেখানে অর্থনীতির প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বের আর কোন দেশে এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নেই। সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পূর্ণভাবে সরকারের কাছে নতি স্বীকার করলো। এতে সরকার নিরঙ্কুশ ক্ষমতার ব্যবহারটাই দেখালো। সরকার জাতীয় অর্থনীতির দিকে তাকায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর ফলে সরকার দলীয় লোকদের খুশি করেছে। উল্লেখ্য, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে যথাযথ প্রক্রিয়া ও শর্ত মেনে ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকার জামানতসহ আবেদন করতে বলা হয় আগ্রহীদের। আবেদন করার ক্ষেত্রে ৪০০ কোটি টাকার মূলধন, একজন উদ্যোক্তার ১০ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী হওয়া, গত ৫ বছরে খেলাপি থাকলে বা এ বিষয়ে মামলা চললে তার আবেদন বিবেচনায় না নেয়া, পরিচালনা পর্ষদে সর্বাধিক ১৩ সদস্য রাখা, উদ্যোক্তার আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পদ থেকে ব্যাংকের মূলধন সরবরাহ, উদ্যোক্তা বা পরিচালকের সততা ও যোগ্যতা যাচাইসহ বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মোট ৩৭টি আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়ে, যার মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৬টি আবেদন বিবেচনার জন্য রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ঘুরে সেই তালিকা আরও যাচাই-বাছাইয়ের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সেই তালিকার ভিত্তিতেই নতুন ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংক চারটি, বেসরকারি ব্যাংক ৩০টি, বিশেষায়িত চারটি, বিদেশী ৯টিসহ মোট ৪৭টি ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরে প্রবাসীদের তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বেসরকারি ৩০টির সঙ্গে এখন যোগ হলো আরও ৬টি। |
সোমবার, ৯ এপ্রিল, ২০১২
রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই
Posted on ৬:৩৯ PM by Abul Bashar Manik
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন