রবিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১২

সুরঞ্জিতের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন? : এপিএস ফারুক চাকরিচ্যুত, অ্যাকাউন্ট জব্দ জিএম মৃধা ও কমান্ড্যান্ট এনামুল সাসপেন্ড : রেলের সাড়ে সাত হাজার নিয়োগ স্থগিত




রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। তার অ্যাকাউন্টে সাম্প্রতিক লেনদেনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক দিলকুশা শাখাসহ তার আর যেসব অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেগুলোর দিকে তীক্ষষ্ট নজর রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান গতরাতে আমার দেশ-কে বলেছেন, মন্ত্রীর অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ এলে ভেবে দেখা হবে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুদক সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল আমার দেশ-কে বলেছেন, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেলে তারা তদন্ত করে দেখবেন।
সুরঞ্জিতের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে চাকরিচ্যুত এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের অ্যাকাউন্ট থেকেও বিভিন্ন সময় টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। ৭০ লাখ টাকা ঘুষ কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশের পরপরই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অ্যাকাউন্ট কনফিডেন্সিয়াল হিসেবে চিহ্নিত করে পাসওয়ার্ড লক করে দেয়া হয়।
ওদিকে রেলমন্ত্রীর এপিএস ফারুক ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব গতকাল জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এপিএস ফারুককে গতকাল চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং রেলওয়ের জিএম (পূর্বাঞ্চল) আবু ইউসুফ মৃধা ও কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) এনামুল হককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টির হওয়ায় গতকাল এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে অভিযোগগুলো জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। গতকাল রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ তথ্য জানান। যদিও জনপ্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে আগের তারিখ (ব্যাকডেট) বসিয়ে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হচ্ছে। গতকাল ২২৮ জন রেলওয়েতে যোগদান করেছেন। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাত ১১টায় রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) ইউসুফ আলী মৃধা এবং রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক ধানমন্ডি থেকে বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে জিগাতলায় মন্ত্রীর বাসায় যাওয়ার পথে বিজিবি সদর দফতরে ধরা পড়েন। জিগাতলায় মন্ত্রীর বাসার যাওয়ার আগেই তাদের বহনকারী গাড়ির চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবি সদর দফতরে ঢুকিয়ে দিয়ে চিত্কার-চেঁচামেচি শুরু করে দেন। এ ঘটনার পরই রেলওয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাড়ে সাত হাজার লোক নিয়োগে চরম দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্যের ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে। সোমবার রাতে বস্তাভর্তি টাকাসহ তারা ধরা পড়ার পর রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার অনলাইনে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় তার অ্যাকাউন্টে বড় অংকের টাকা জমা করেন। ঘুষ কেলেঙ্কারির এ ঘটনা নিয়ে হৈচৈয়ের মধ্যেই মার্কেন্টাইল ব্যাংক রেলমন্ত্রী ও তার এপিএসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
বিজিবি সদর দফতরে অবৈধ টাকা ও বিদেশি মদসহ ধরা পড়ার পর ওমর ফারুক তালুকদার, ইউসুফ আলী মৃধা, এনামুল হক ও ড্রাইভার আলী আজম মিডিয়ার সামনে স্বীকার করেছেন, তারা রাতে মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। পরদিন বিকালে রেলমন্ত্রী টাকা আটকের বিষয়ে বলেছেন, এ টাকা এপিএসের। সে তার নিজের টাকা নিয়ে রাস্তায় ঘুরবে—এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। পরদিন অবশ্য তিনি এ ঘটনা তদন্তের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শশী কুমার সিংহ ও তার একান্ত সচিবের নেতৃত্বে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে টিআইবিসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, এ কমিটি দুটি করার অর্থই হচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেয়া। ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করারও দাবি করেন তারা। একইসঙ্গে প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে রেলমন্ত্রীকে তার পদ থেকে অপসারণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। দুর্নীতি দমন কমিশনও ঘুষ কেলেঙ্কারি ও রেল মন্ত্রণালয়ের নিয়োগবাণিজ্যের ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য দু’সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য পেলে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রীর গঠিত তদন্ত কমিটির সামনে গতকাল জবানবন্দি দেয়ার জন্য হাজির হন জিএম ইউসুফ আলী মৃধা। জবানবন্দি দেয়া শেষে বের হওয়ার সময় ইউসুফ আলী মৃধা সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা ওইদিন মন্ত্রীর বাসায়ই যাচ্ছিলাম। তবে টাকা ছিল কি না, থাকলে কত টাকা ছিল, তা এপিএস ওমর ফারুকই ভালো বলতে পারবেন। কেননা তিনি নিজে প্রথম দিনই বলেছেন, ওই টাকা তার নিজের। এদিকে গতকালই ওমর ফারুককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরপত্তা কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে। অন্যদিকে ওই ঘটনার পর থেকেই চালক আজমের কোনো হদিস নেই। চালকের অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কেউই মুখ খুলছেন না।
সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুক ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ : রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস মো. ওমর ফারুক তালুকদার এবং তার স্ত্রী মারজিয়া ফারজানার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব ও জব্দ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগ থেকে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর চিঠি পাঠিয়ে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের ব্যাপারে যে অভিযোগ রয়েছে—সে ব্যাপারেও তদন্ত করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
সুরঞ্জিতের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে কিনা—এ বিষয়ে টেলিফোনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান এ বিষয়টি দেখছেন। আর মন্ত্রীর ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ এলে, ভেবে দেখা হবে।’
পরে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে দেখা যাবে। তবে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস মো. ওমর ফারুক তালুকদার এবং তার স্ত্রী মারজিয়া ফারজানার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ফারুকের অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন হওয়ার অভিযোগ আসায় তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে যাতে তারা টাকা সরাতে না পারেন, সেজন্য তাদের হিসাব জব্দ করা হয়েছে। অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি সত্য হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা বলেন, এ দুজনের ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণ করে যদি অভিযোগ সত্য হয়, তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’
এদিকে তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৭০ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনার বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে বিভিন্নভাবে কাজ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক ও তাদের শাখা থেকে মো. ওমর ফারুক তালুকদার এবং তার স্ত্রী মারজিয়া ফারজানার নামে কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হিসাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী সাত দিনের মধ্যে এই দুজনের ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ এপ্রিল রাতে পিলখানায় বিজিবির গেটে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিব ফারুকের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রোববার চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে। ওই গাড়িতে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ মৃধাসহ আরেক রেল কর্মকর্তা ছিলেন, এদের দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় রোববার। ইউসুফ মৃধা ও ফারুক স্বীকার করেছেন যে টাকা নিয়ে মন্ত্রীর বাসার দিকে যাওয়া হচ্ছিল।
ধরা পড়ার তিন দিন আগে ৩৫ লাখ টাকায় গাড়ি কেনেন সুরঞ্জিতের এপিএস : বার্তা২৪ ডটনেট জানায়, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার পিলখানায় বস্তাভর্তি টাকাসহ আটকের তিন দিন আগে ৬ এপ্রিল ৩৫ লাখ টাকায় গাড়ি কিনেছেন। এর আগে এপিএস হওয়ার পরপরই মোহাম্মদপুর পিসিকালচার হাউজিংয়ে একটি দামি ফ্ল্যাট ও একটি প্রাইভেট কার কেনেন। এপিএস ফারুক তার পরিচিত জনদের কাছে তার গাড়ি কেনার খবরটি মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন ৬ এপ্রিল।
গত শুক্রবার বিকালে এই গাড়ির বিষয়ে ফারুকের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ৩৫ লাখ টাকার গাড়িটি কার নামে কেনা হয়েছে। জবাবে তিনি বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘কার নামে কেনা হয়েছে তা খুঁজে নিন।’ অন্য কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই তিনি তার মোবাইল ফোনের লাইনটি কেটে দেন। ফারুকের পরিচিত জন ও মোহাম্মদপুর এলাকার আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থক জানান, এপিএস হওয়ার আগে ঢাকা শহরে ফারুক টিউশনি করে চলতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর হাউজিং এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘রেলের জিএমের সঙ্গে আঁতাত করে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করেছেন এপিএস। এ কারণেই তার এ অবস্থা।’ তিনি জানান, এপিএস হওয়ার পর ফারুক তার শ্যালককে দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন। শ্যালকের নামে টাকা জমিয়েছেন তিনি। ফারুকের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, তার বাসায় কয়েন রাখার ব্যাংকটি মাটির নয়, স্বর্ণের।
দুর্নীতির কারণে রেলওয়ের সাড়ে ৭ হাজার নিয়োগ স্থগিত : রেলওয়ের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টির হওয়ায় গতকাল এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে অভিযোগগুলো জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। গতকাল রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ তথ্য জানান। এদিকে জনপ্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে আগের তারিখ (ব্যাকডেট) বসিয়ে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হচ্ছে। গতকাল ২২৮ জন রেলওয়েতে যোগদান করেছেন। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রেলওয়ের চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা। তারা বলেছেন, লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ার ফলে তাদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যেসব টাকা দেয়া হয়েছে তা কিভাবে আদায় করবেন তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা। প্রসঙ্গত, ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় রেলমন্ত্রী এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, জিএম (পূর্বাঞ্চল) ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা কমান্ড্যান্ট এনামুল হক বিপুল পরিমাণ টাকাসহ গভীর রাতে বিজিবির হাতে ধরা পড়ার ঘটনায় রেলওয়ের নিয়োগ বাণিজ্যের কথা ফাঁস হয়ে যায়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা এনামুল হককে সাসপেন্ড ও এপিএস ওমর ফারুককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
রেলওয়ের সংস্থাপন বিভাগ সূত্র জানায়, সারাদেশে ৬৫ ক্যাটাগরিতে ৭ হাজার ২৭৫ শূন্যপদে নিয়োগ দেয়ার জন্য জনসংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি দেয়া হয়। মামলাজনিত কারণে ১৩৫টি পদ বাদে ৬৫ ক্যাটাগরিতে ৭ হাজার ১৪০ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। রেলওয়ের সদর দফতরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চল জোনের ৪১ ক্যাটাগরিতে তিন হাজার ৪২৯ পদের বিপরীতে ৮৪৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল জোনের ২১ ক্যাটাগরিতে তিন হাজার ৫৩৩ পদের বিপরীতে ৩২৭ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবতার সঙ্গে রেলওয়ের সদর দফতরের দেয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। পূর্বাঞ্চল জোনের জিএম ইউসুফ হোসেন মৃধা গতকাল আমার দেশকে বলেন, পূর্বাঞ্চল জোনের ৩ হাজার ২০০ পদের বিপরীতে এক হাজার ১০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও এক হাজার ৪০০ পদের নিয়োগপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি ৬৫০ পদে লোক নিয়োগ নিয়ে মামলা চলছে। একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল জোনে এক হাজারের বেশি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় এক দফা বাড়িয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দিয়ে রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে দরকষাকষি ও ঘুষ বাণিজ্যের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ের পরও নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যায় রেলওয়ে কর্মকর্তারা। তারা কৌশল হিসেবে নিয়োগপত্রে আগের তারিখ (ব্যাকডেট) ব্যবহার করেছেন। এমনকি গত ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদে নিয়োগপত্র দেয়া হয়। গত ৫ এপ্রিল ট্রলিম্যান পদেও নিয়োগপত্র দেয়া হয়, যার কপি এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। এছাড়া চৌকিদার, ট্রেন নাম্বার টিকারসহ বিভিন্ন পদে গত মার্চ মাসে নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগপত্র পরে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহাবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ওই চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
ক্ষুব্ধ চাকরি প্রার্থীরা : ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় রেলওয়ের প্রায় সাড়ে সাত হাজার পদে নিয়োগ স্থগিত হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন চাকরি প্রত্যাশীরা। গতকাল আমার দেশ কার্যালয়ে হাজির হয়ে এবং ফোন করে বেশ কয়েকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব চাকরি প্রত্যাশী বলেছেন, প্রতিটি পদের বিপরীতে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন তারা। এসব টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা কে দেবে। তারা এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads