শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১২

সুরঞ্জিতের অর্থ কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতেই ইলিয়াস ইস্যু : রফিক-উল-হক ‘সরকারদলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ডিসিসি নির্বাচন হবে না’


সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অর্থ কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতেই ইলিয়াস আলীর ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছে মন্তব্য করে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেছেন, ‘সুরঞ্জিত সাহেব পচা শামুকে পা দিয়েছেন, তার পা কেটে ফেলা হয়েছে। কারণ ৭০ লাখ টাকা কোনো বড় বিষয় নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে নতুন ব্যাংক নিচ্ছেন। এসব টাকার উৎস কোথায় সে সম্পর্কে কেউ জানে না। কারো বৈধ উপার্জনে এভাবে ব্যাংক পাওয়া সহজ নয়।’
গতকাল শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিকেলে জাতীয় প্রেস কাবে এ অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘হাইকোর্ট যেভাবে মুভ করছেন এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকার একে অপরের প্রতি যেভাবে দোষারোপ করছে তা দেখে মনে হচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে ডিসিসি নির্বাচন হবে না। আসলে সরকার তাদের দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত না করে এ নির্বাচন হতে দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বিএনপিও চায় না আওয়ামী লীগও চায় না। তারা চায় নেতা। সে হিসেবে মান্নার গায়ে কোনো গন্ধ । সে অবশ্যই নির্বাচিত হবে। ডিসিসি উত্তরের মানুষ তাকে জয়ী করবে। তার মতো লোক মেয়র হলে আমাদের জন্য সেটি হবে গর্বের বিষয়।’
বিরোধী জোট আহূত আজকের হরতাল সম্পর্কে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, ‘আসলে না কাঁদলে মা-ও শিশুকে দুধ দেয় না। তাই দাবি আদায়ে বিরোধী জোট এ হরতালের ডাক দিয়েছে। তবে বর্তমান বিশ্বে হরতালের বিকল্প পদ্ধতিও প্রচলিত হয়েছে। হরতালে সাধারণ মানুষ তিগ্রস্ত হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতালের বিকল্প ভাবতে হবে।’
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার বিষয়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন খুব গরম। ইলিয়াস ইস্যুটা হলো সুরঞ্জিতের ইস্যুকে চাপা দেয়ার জন্য। সুরঞ্জিত ৭০ লাখ টাকা দিয়ে পচা শামুকে পা কেটেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার পর সরকার রাত ১২টার সময় তার বিরুদ্ধে ১০ বছর আগের দু’টি মামলা পুনরুজ্জীবিত করেছে। পুলিশ কিভাবে এত পুরনো একটি বিষয়ে মামলা নিলো? তাই এটা নিশ্চিত করে বলা যায় সুরঞ্জিতের সেই কেসকে চাপা দিতে ইলিয়াসের ইস্যুটা শুরু হয়েছে।’
তিনি মনে করেন ‘এভাবে একে অপরকে গুম করবে, এটি গণতন্ত্র নয়। মুখে গণতন্ত্র বললে লাভ হবে না। সবাইকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। আজ এক ইলিয়াস গুম হয়েছে কাল আরেক ইলিয়াস গুম হবে এভাবে গণতন্ত্র টিকতে পারে না। আসলে গণতন্ত্রের কথা বলে আমাদের বোকা বানানো হচ্ছে। আমরা এক পা এগিয়ে গেলে আবার দুই পা পিছে চলে যাই। আমরা চাই দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র ফিরে আসুক।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যখন বক্তৃতা করবেন তখন তাদের মনে করা উচিত তার সামনে একটা আয়না আছে। যেভাবে সেভাবে বক্তব্য দেয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ইলিয়াসের স্বজনেরা কাঁদছে। আর রাজনীতিবিদেরা একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ঢাকার মানুষের নিত্যদিনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কেউ কথা বলছে না। সেগুলো বলার সময় তাদের নেই। আমরা চাই দেশের সঙ্কট মোকাবেলায় দুই নেত্রী এক হয়ে কাজ করুক। যদি নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারেন তাহলে আপনাদের দেশ চালানোর কোনো অধিকার নেই। ব্যারিস্টার রফিকের কথার সূত্র ধরে তিনিও বলেন, ‘ডিসিসি নির্বাচন বন্ধে মতাসীনদের (আওয়ামী লীগের) হাত আছে। আমি জানি সরকারের হাত অনেক লম্বা। তবে তা জনগণের হাত থেকে কতটুকু লম্বা সেটি আমরা দেখতে চাই।’
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, হেরে যাওয়ার লজ্জা ও ভয়ে সরকার নির্বাচন দিতে চাইবে না। কিন্তু এটি বোঝা উচিত, যত বেশি নরম মাটির ওপর দাঁড়ানো হয় তত পা নিচে নেমে যায়। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন থানার নাগরিক কমিটির নেতারা বক্তব্য রাখেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads