পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ বায়বীয় নয় : গণপ্রতিরোধ প্রয়োজন
নতুন যোগাযোগমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নের নতুন উত্স খুঁজতে মহাব্যস্ত হলেও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কিছু করেননি। অবশ্য সরকার ও সরকারি দল এ দুর্নীতির কথা উড়িয়ে দিতে কিছু করার বাকি রাখেনি। ঋণদাতাদের চাপ আর সমালোচনার ঝড় থামাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেও তার বিরুদ্ধে কিছু করা হয়নি। এক্ষেত্রেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে পিছপা হয়নি। তারা ‘তদন্ত’ করে দুর্নীতির কিছুই খুঁজে পায়নি বলেছে। অথচ কানাডার পুলিশ পদ্মা সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে। এরপরই বিশ্বখ্যাত কানাডীয় প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রাথমিকভাবে দুর্নীতি প্রমাণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার অর্থই হচ্ছে এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণাদি আছে। এর ফলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট কোনো প্রকল্পের ঠিকাদারি দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি।
স্মরণ করা যেতে পারে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর অর্থায়ন স্থগিত করেছিল বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতারা। গত বছর বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের একাধিক কর্মকর্তা কানাডীয় প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে কমিশন চেয়েছে। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কথাও গোপন থাকেনি। বিষয়টি নিয়ে কানাডীয় পুলিশ তদন্ত শুরু করে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় এখন বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির ওপর সাময়িক বরখাস্ত (ইটিসি) আদেশ জারি করেছে। পাশাপাশি কানাডীয় প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ তদন্তেও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৬ মার্চ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদত্যাগ করার কথাও জানা গেছে। ২০১০ ও ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব থেকে দুটি অননুমোদিত প্রকল্পের এজেন্টদের নীতিবিরুদ্ধ উপায়ে বড় অংকের অর্থ দেয়ার সন্ধান মিলেছে। এর কোনোটাই উড়ো খবর নয়। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে এসবের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ভারতের কেরালায় বিদ্যুত্ প্রকল্প কাজে।
এভাবে হাটে হাঁড়ি ভাঙার পর সরকার ও সরকারি দলের লোকেরা নিজেদের আড়াল করতে নতুন কী আবিষ্কার করবেন সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা না করে উপায় নেই। তবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ যে কম নয় সেটা এখন অস্বীকার করা কঠিন। কানাডীয় প্রতিষ্ঠান ঘুষ সেধেছে এর প্রমাণ মিলেছে। দুই পক্ষ অর্থাত্ দাতা-গ্রহীতা ছাড়া তো দুর্নীতি হয় না। এখন দ্বিতীয়পক্ষ কে সেটা জানা দরকার। যদিও আমাদের করিত্কর্মা দুদকের পক্ষ থেকে দুর্নীতি অস্বীকার করে আগেই সার্টিফিকেট জমা দেয়া হয়েছে। এখন তারা কী করে সেটাও দেখা দরকার। তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর আর কী বাকি আছে! দুর্নীতি দমন, না লালন সেটা তাদের কাজ থেকে আবারও প্রমাণ হবে। তবে তাদের ভূমিকা যাই হোক না কেন, সরকারের ভেতরে দুর্নীতি এতটাই বেড়ে গেছে যে আর সেটা চেপে রাখা যাচ্ছে না। থলে থেকে একটার পর একটা দুর্নীতির গোঁফওয়ালা বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুর্নীতি, লুটতরাজ কিভাবে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে সেটা ভুক্তভোগী মানুষকে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মুখে যাই বলা হোক না কেন, চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী একটি দুর্নীতির ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। এ ধরনের একটি দুর্নীতির অভিযোগের খবর, তাও আবার সরকারি নথিপত্র উল্লেখ করে ছাপিয়ে আমার দেশ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের সারাদেশে কয়েক ডজন মামলার আসামি হতে হয়েছিল। এখন সেই মামলাবাজরা কী করবেন? তারা কি বিশ্বব্যাংক, সেই কানাডীয় প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন? নাকি গোঁফওয়ালা বেড়াল দেখে লেজ গুটিয়ে পিছিয়ে আসবেন? আমাদের দুদক অবশ্য লোক বুঝে মুখ খোলে। ক্ষমতাসীনদের দিকে চোখ বন্ধ রেখে তারা বেছে বেছে বিরোধীদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েই লেজ খাড়া করে তেড়ে আসে। এমন একচোখা ভূমিকার জন্য দুদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগেই নখদন্তহীন অবস্থায় নেতিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে যে কোনো বিষয়ের মতো দুর্নীতি নিয়েও এখানে সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি ভূমিকার কারণে সত্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে বিদেশি সরকারের তদন্তের ফল কে অস্বীকার করবে?
এরপর দুর্নীতি বিরোধিতায় গা-ঝাড়া দিয়ে না উঠলে জনগণ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। সবার আগে বিরোধী দলেরই জোরেশোরে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মাঠে নামা দরকার। সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে জনগণের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আগেই। এখন গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেই দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।
স্মরণ করা যেতে পারে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর অর্থায়ন স্থগিত করেছিল বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতারা। গত বছর বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের একাধিক কর্মকর্তা কানাডীয় প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে কমিশন চেয়েছে। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কথাও গোপন থাকেনি। বিষয়টি নিয়ে কানাডীয় পুলিশ তদন্ত শুরু করে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় এখন বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির ওপর সাময়িক বরখাস্ত (ইটিসি) আদেশ জারি করেছে। পাশাপাশি কানাডীয় প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ তদন্তেও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৬ মার্চ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদত্যাগ করার কথাও জানা গেছে। ২০১০ ও ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব থেকে দুটি অননুমোদিত প্রকল্পের এজেন্টদের নীতিবিরুদ্ধ উপায়ে বড় অংকের অর্থ দেয়ার সন্ধান মিলেছে। এর কোনোটাই উড়ো খবর নয়। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে এসবের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ভারতের কেরালায় বিদ্যুত্ প্রকল্প কাজে।
এভাবে হাটে হাঁড়ি ভাঙার পর সরকার ও সরকারি দলের লোকেরা নিজেদের আড়াল করতে নতুন কী আবিষ্কার করবেন সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা না করে উপায় নেই। তবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ যে কম নয় সেটা এখন অস্বীকার করা কঠিন। কানাডীয় প্রতিষ্ঠান ঘুষ সেধেছে এর প্রমাণ মিলেছে। দুই পক্ষ অর্থাত্ দাতা-গ্রহীতা ছাড়া তো দুর্নীতি হয় না। এখন দ্বিতীয়পক্ষ কে সেটা জানা দরকার। যদিও আমাদের করিত্কর্মা দুদকের পক্ষ থেকে দুর্নীতি অস্বীকার করে আগেই সার্টিফিকেট জমা দেয়া হয়েছে। এখন তারা কী করে সেটাও দেখা দরকার। তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর আর কী বাকি আছে! দুর্নীতি দমন, না লালন সেটা তাদের কাজ থেকে আবারও প্রমাণ হবে। তবে তাদের ভূমিকা যাই হোক না কেন, সরকারের ভেতরে দুর্নীতি এতটাই বেড়ে গেছে যে আর সেটা চেপে রাখা যাচ্ছে না। থলে থেকে একটার পর একটা দুর্নীতির গোঁফওয়ালা বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুর্নীতি, লুটতরাজ কিভাবে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে সেটা ভুক্তভোগী মানুষকে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মুখে যাই বলা হোক না কেন, চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী একটি দুর্নীতির ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। এ ধরনের একটি দুর্নীতির অভিযোগের খবর, তাও আবার সরকারি নথিপত্র উল্লেখ করে ছাপিয়ে আমার দেশ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের সারাদেশে কয়েক ডজন মামলার আসামি হতে হয়েছিল। এখন সেই মামলাবাজরা কী করবেন? তারা কি বিশ্বব্যাংক, সেই কানাডীয় প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন? নাকি গোঁফওয়ালা বেড়াল দেখে লেজ গুটিয়ে পিছিয়ে আসবেন? আমাদের দুদক অবশ্য লোক বুঝে মুখ খোলে। ক্ষমতাসীনদের দিকে চোখ বন্ধ রেখে তারা বেছে বেছে বিরোধীদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েই লেজ খাড়া করে তেড়ে আসে। এমন একচোখা ভূমিকার জন্য দুদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগেই নখদন্তহীন অবস্থায় নেতিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে যে কোনো বিষয়ের মতো দুর্নীতি নিয়েও এখানে সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি ভূমিকার কারণে সত্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে বিদেশি সরকারের তদন্তের ফল কে অস্বীকার করবে?
এরপর দুর্নীতি বিরোধিতায় গা-ঝাড়া দিয়ে না উঠলে জনগণ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। সবার আগে বিরোধী দলেরই জোরেশোরে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মাঠে নামা দরকার। সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে জনগণের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আগেই। এখন গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেই দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন