মনিরুজ্জামান মনির
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যে তাঁরে দুর্নীতির অভিযোগে বিশেষ কারাগারে বন্দি রাখল, সেই আধা সামরিক, আধা গণতান্ত্রিক, সংবিধান লঙ্ঘনকারী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মইনউদ্দিন, ফখরুদ্দীন এবং তাদের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেননি; বরং তাদের বিদেশ পলায়নে বা নিরাপদ অবস্থানে থাকার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন বলে শোনা যায়। বিরোধী দল এটাকে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাতের ফসল বলে মনে করে। আওয়ামী সরকার বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে তিন ধাপ পিছিয়ে গিয়ে বিগত বিএনপি সরকারের শাসনকালে বেগম জিয়া এবং তাঁর দুই সন্তানের বিরুদ্ধে তুলল অজস্র দুর্নীতির অভিযোগ। প্রায় প্রতিদিন ভাষণে, বিবৃতিতে, দেশে-বিদেশে বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর সন্তানদের চোর, লুটেরা, দুর্নীতিবাজ বলে প্রধানমন্ত্রী উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে যাচ্ছেন। তিনি তখন ভাবেননি তাঁর সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একের পর এক এমন দুর্নীতির অকাট্য অভিযোগ উঠবে। আওয়ামী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার শিশু লগ্নে বাজারে লাগল আগুন। সাধারণ থেকে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাপন হল দুর্বিষহ, অচল। সেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে একটি ঊর্ধ্বতম স্থানে স্থির হয়ে আছে। শেয়ারবাজারে মানুষ হলো নিঃস্ব। কোটি কোটি টাকা লুটপাটের কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হলো সরকার। বাজার বিশ্লেষকদের অভিযোগ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বিরাট অংকের উেকাচ গ্রহণের মাধ্যমে বাজার সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। সরকার দেরিতে হলেও মন্ত্রীর পদ থেকে বঞ্চিত না করে অন্য পরিবর্তিত পদে তাঁকে আসীন করালেন। হয়তো বা আকাশ ছোঁয়া দুর্নীতি করার জন্যই বিমান পরিবহন মন্ত্রীর পদে তাকে পদায়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সারাদেশের ভঙ্গুর, বিধ্বস্ত রাস্তা মেরামত বা সংস্কার না করেই বিরাট অংকের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের সন্দেহ পোষণ করেছে জনগণ। পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতির অভিযোগ যোগ হয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। অবশেষে বিতর্কিত মন্ত্রী মন্ত্রিত্ব না হারিয়ে অন্য পরিবর্তিত পদে পদায়ন হলেন। আওয়ামী সরকার চলমান থাকাকালীন দুর্নীতি নামের ধারাবাহিক নাটকের পর্বগুলো যখন দৃশ্যমান হচ্ছে, তখনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নতুন নতুন বিশেষণের বিশেষণ প্রয়োগ করে (কু অর্থে) বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি ‘গালি’ বর্ষণ অব্যাহত রাখলেন। এতে জনগণের কাছে বেগম জিয়া ও তাঁর পরিবার কলঙ্কিত হলেন না; বরং তাঁদের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বাড়তে লাগল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের আস্থা কমতে লাগল। এই সরকারের দুর্নীতি নাটকের ৩নং পর্বের পর্দা উঠলো অতি সম্প্র্রতি। কথায় বলে, ‘আল্লাহর ঢোল বাতাসে বাজে’। আর সেই কলঙ্কিত নায়ক বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। আওয়ামী সরকারের শেষ বেলার মন্ত্রী। তিনি জন্মসূত্রে সুনামগঞ্জের অধিবাসী। তবে তাঁর চলনে, বলনে, চরিত্র বিশ্লেষণে সুনামগঞ্জী বা সিলেটী গন্ধ না থাকলেও সে দেশের মানুষেরা ‘আমাদের দাদা’ বলে তাঁকে নিয়ে গর্ব করে। যদিও তিনি অতীতের অন্যান্য নির্বাচিত এমপিদের মতো নির্বাচিত হওয়ার পরেই হাওড়-বাঁওড়, বিলের লিজ বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে পড়েন বলে জনশ্রুতি আছে। আসলে তারা সুনামগঞ্জের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছুই করেননি বা করেন না। সুনামগঞ্জের নিরীহ সরল মানুষের সঙ্গে সবাই রাজনৈতিক প্রতারণা করে বললে ভুল হবে না। যেমন—সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া নির্মাণাধীন সুরমা সেতুর এক পা এক কূলে আরেক পা অন্য কূলে, পেট ও মস্তকবিহীন অবস্থায় অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজও তাঁরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করে সুনামগঞ্জ টু সিলেট রাস্তায় নির্মিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে বিএনপির আমলের অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানকে। সুরঞ্জিত বাবু আসলে বিগত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এক এগারোর আওয়ামী সংস্কারবাদীর খেতাবটা মুছে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে সত্য-মিথ্যা, অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন। সংবিধান সংশোধন কমিটির সভাপতি হিসেবে মীমাংসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দেয়ার সুপারিশ করেন। তিনি আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ সরকার ও বিএনপিকে এক সাংঘর্ষিক মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে যান। ফলে দেশে রাজনৈতিক সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হতে থাকে। তার সদ্য রেলমন্ত্রী হওয়া এবং সত্ মানুষের অহঙ্কার গুঁড়িয়ে দিল ঘুষের টাকা বহনকারী একটি গাড়ি এবং তাঁর অধীন কয়েকজন। গাড়িটির সফরসূচি ছিল চট্টগ্রাম টু জিগাতলা। কিন্তু পথে দেরি হয়ে গেল। তাই তো নিরাপদে সুরঞ্জিত বাবুর আঙ্গিনায় এসে পৌঁছতে পারল না সেই গাড়ি। তাই হয়তো তিনি ফেঁসে গেলেন এবং মনে মনে বললেন, ‘আরে টাকা তুমি সময়মত আইলা না’। ইতিমধ্যে অবশ্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গুপ্তধন সম্পত্তির আরও খবর প্রকাশ পাচ্ছে বিভিন্ন কাগজে, সংবাদ মাধ্যমে। ঘুষ গ্রহণের এই একাঙ্কিকা নাটক ‘আপন ঘরে কালো বিড়াল’ প্রদর্শিত হওয়ার পরেও কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ঘরে কালো বিড়াল খুঁজতে থাকবেন তাঁকে অসম্মান করার জন্য?
monirlyric@gmail.com
monirlyric@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন