গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে গুম হন বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী। ওই সময়ে গুম হওয়ার ওই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন সেখানকার অনেকেই। দৈনিক আমার দেশ-এ প্রত্যক্ষদর্শী এক ডাব বিক্রেতার বিবরণ ছাপা হয়েছে। সহযোগী দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং দৈনিক সমকাল-এ আরও দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ছাপা হয়েছে। এদের একজন ডিউটিরত পুলিশের এসআই ও একজন ডাব বিক্রেতার ছেলে সোহেল রানা। এরই মধ্যে বনানী থানার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নিয়েছেন। সেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা আমার দেশ-এর পাঠকদের জানার জন্য দেয়া হলো :
ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তাকে : বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুম ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা ধস্তাধস্তির সময় ঘটনাস্থলে হাজির হন। তিনি ছিনতাইকারী ভেবে অপহরণকারীদেরই (!) একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরেন এবং কৌশলগতভাবে হুমকিও দেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলে ওঠেন, ‘কেউ নড়বে না, গুলি করে দেব কিন্তু।’ এ সময় ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত একজন মাইক্রোবাসের সাইডে এগিয়ে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজেদের একটি বিশেষ বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা অভিযান চালাচ্ছি। বাধার সৃষ্টি করবেন না, সরে দাঁড়ান। এ সময় মাইক্রোবাসের ভেতরে ওই বাহিনীর কিছু নমুনা প্রমাণ হিসেবে দেখতে পেয়ে কথিত অভিযান পরিচালনাকারীর শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে তিনি দুই পা পিছিয়ে যান। কিন্তু মাইক্রোবাসের লোকটি আবার পেছন দিকে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আবার ধমক দিয়ে বলেন, ‘সরে যেতে বললাম না, এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলে যান।’
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাটি আর এক মুহূর্তও ঘটনাস্থলে অবস্থান করা নিরাপদ ভাবেননি। তাই তিনি জোর কদমে হেঁটে গলি রাস্তাটির দক্ষিণ পাশের জলখাবার হোটেলের সামনে চলে যান। সেখানে ওই পুলিশ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলটি রাখা ছিল। সেখান থেকে তিনি গুলশান জোনেই তার কর্মস্থল থানায় পৌঁছে তার অফিসার ইনচার্জ ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের কাছে পুরো বিষয়টির বর্ণনাও দিয়েছেন। কিন্তু অফিসার ইনচার্জ বিভিন্ন স্থানে টেলিফোনে আলাপ করে ওই সাব-ইন্সপেক্টরকে এ বিষয়ে আর মুখ খুলতে নিষেধ করে দেন। পাশাপাশি তাকে সাবধানে চলাফেরারও পরামর্শ দেন। এ ঘটনার পর রাতেই পুলিশ কর্মকর্তাটি ঘটনাস্থলে ইলিয়াস আলীকেই অপহরণ করা হয়েছে বলে জানতে পারেন। তিনি ঘটনাস্থলেও যান। এর পর থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তার ঘনিষ্ঠ একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুমের ঘটনায় কোনো রকম তথ্যসূত্র-প্রমাণাদি রাখতে চাননি অপহরণকারীরা। এ কারণে তার গাড়িচালককেও জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় এভিডেন্স (সাক্ষ্য-প্রমাণ) হিসেবে ছিলেন শুধু ওই পুলিশ কর্মকর্তাটি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পৃক্ত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘অপহরণকারীরা’ অবিশ্বাস করেননি মোটেও। সহকর্মী ওই পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা, পরে ইলিয়াস আলীর অপহরণের বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলার পরই দ্বিতীয় এভিডেন্স হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাটি নিজের জীবন নিয়েও চরম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তার সত্যতা পাওয়া গেছে মহাখালী মোড়ের পেট্রল পাম্পসংলগ্ন জলখাবার হোটেল থেকে। ওই হোটেলের একজন কর্মী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ওই রাতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাটি সাদা পোশাকে মোটরসাইকেলে মহাখালীর অদূরে ডিউটি দিচ্ছিলেন। থানায় ফেরার আগে তিনি রাস্তায় মোটরসাইকেলটি থামিয়ে নাস্তা খাওয়ার জন্য বসেন। হঠাত্ উল্টো দিকের গলি থেকে দুই পথচারী এসে জানায়, রাস্তার মধ্যে ছিনতাই আর মারামারি হচ্ছে। এটুকু শুনেই ওই সাব-ইন্সপেক্টর গলির দিকে ছুটে যান। তার পেছনে আরও দু-একজন এগিয়ে গেলেও তারা অজ্ঞাত আশঙ্কায় নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকলেও প্রত্যক্ষদর্শী এসআই মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছেই কথিত অপহরণকারীদের একজনের শার্টের কলার চেপে ধরেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি তার অফিসার ইনচার্জের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার সময় আরও জানান, তাকে যখন ধমক দিয়ে সরানো হচ্ছিল তখনও ৪-৫ জন মিলে একজনকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিচ্ছিলেন। গাড়ির ভেতর থেকেও ধস্তাধস্তি ও ধমকাধমকির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময় পাশের একটি ভবনের আড়াল থেকে একজন মোবাইল ফোনে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন। সেখানে মোবাইল স্ক্রিনের আলো তিনি এবং অপহরণকারীদেরও একজন খেয়াল করছিলেন। তবে মোবাইলে ভিডিও ধারণকারী যুবকটিকে পরদিন থেকে আর পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী একমাত্র সাব-ইন্সপেক্টর কর্মরত থানার অফিসার ইনচার্জকে আরও বলেন, ইলিয়াস আলীর গাড়ির পেছন দিকে কালো রঙের মাইক্রোটি ধাক্কা মারায় চালক ক্ষিপ্ত হয়ে নেমে যান এবং মাইক্রো চালকের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় মাইক্রো থেকে আরও ৪-৫ জন নেমে গিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালককে জোর করে ধরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরক্ষণেই ৩-৪ জন নেমে গিয়ে প্রাইভেটকারে বসে থাকা ইলিয়াস আলীকেও ধরে গাড়িতে তোলার সময় ধস্তাধস্তির সৃষ্টি হয়।
উদ্ধার হলো না ১১ দিনেও : একে একে ১১ দিন কেটে গেল, তবুও ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করতে পারল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী। গত তিন দিন তাকে উদ্ধারের জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালালেও সেই অভিযান ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
জোর করে গাড়িতে তোলার সময় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিত্কার দিচ্ছিলেন : ‘বনানীতে পার্কের বেঞ্চে ঘুমাচ্ছিলাম। তখনও গভীর ঘুম ধরেনি। হঠাত্ চিত্কার-চেঁচামেচির শব্দ পাই। এতে পাতলা ঘুম ভেঙে জেগে উঠি। পার্কের বেঞ্চে বসেই দেখতে পাই, একটি লোককে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে চার ব্যক্তি। গাড়িতে উঠতে না চাওয়ায় ওই ব্যক্তিকে কিলঘুষি মারা হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় ধস্তাধস্তির পর জোর করে তাকে গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় ওই ব্যক্তি ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিত্কার করছিল। পরদিন সকালে জানতে পারি, বনানীর পার্কের পাশের সড়ক থেকে যে ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল, তিনি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। গাড়িতে উঠিয়ে বনানী এক নম্বরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।’
১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় বনানীর ২ নম্বর সড়কের পাশের সড়ক থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. আনসারকে তুলে নেয়া হয়। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ডাব বিক্রেতা সোহেল রানা। বাসায় ফিরতে দেরি হলে প্রায়ই বনানীর পার্কে ঘুমান সোহেল। ওই পার্কের পাশেই তার বাবা ডাব বিক্রি করেন। সোহেল ডাব বিক্রেতা বাবাকে সাহায্য করেন। ইলিয়াসকে তুলে নেয়ার পুরো ঘটনটি খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন সোহেল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সোহেলকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। গতকাল বনানী থানায় সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহেলের সঙ্গে একান্তে কিছু সময় কথা বলেন। সোহেলের কথায় উঠে আসে সেই রাতের চিত্র। সোহেলের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড কাছে রয়েছে। এ নিয়ে ইলিয়াস গুমের ঘটনায় অন্তত ৩ প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাদের সবার বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে।
সোহেল রানা জানান, হঠাত্ দেখলাম পার্কসংলগ্ন সড়কে একটি সাদা রঙের গাড়িকে আটকে দেয়া হয়েছে। ওই গাড়িটির সামনে-পেছনে আরও দুটি গাড়ি। গাড়িতে উঠতে না চাওয়ায় কয়েকজন লোক একজনকে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছিল আর বলছিল, ‘গাড়িতে ওঠ। তোকে গাড়িতে উঠতেই হবে।’
যারা গাড়িতে তুলছিল তাদের পরনে কী ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা জানান, যারা টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তুলছিল তাদের পরনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পোশাক ছিল না। তাদের পরনে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ছিল। পরনের কাপড় ঝিকমিক করছিল।
সব সময় কি পার্কে রাত কাটান—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা জানান, আমার সঙ্গে ওই রাতে একজন পার্কে ঘুমিয়ে ছিল। ওই ব্যক্তিকে আমি চিনি না। সে আমাকে এসে বলে, গ্রাম থেকে এসেছি, থাকার কোনো জায়গা নেই। ঘটনাস্থলে কোনো ব্যক্তিকে কারও শার্টের কলার চেপে ধরতে আমি দেখেনি। ওই সময় অন্য কাউকে ঘটনাস্থলে জড়ো হতেও দেখিনি। গভীর ঘুমে থাকায় আমার পাশের লোকটি ঘটনাটি টের পায়নি।
যারা ধরে নিয়ে গেছে, তারা দেখতে কেমন—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলেন, ‘তারা লম্বা ছিলেন। কেউ মোটাসোটা আবার কেউ হ্যাংলা-পাতলা।’ আপনি পার্কে ঘুমান কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল জানান, রাত ১২টার দিকে বাসার গেট বন্ধ হয়ে যায়। যেদিন কাজ করতে বেশি রাত হয়ে যায়, সেই দিন পার্কে রাত কাটাই। রাজধানীর একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন বলে জানান সোহেল।
নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুত্ফরের বক্তব্য : এ ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বনানীর ২ নম্বর সড়কসংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবন নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুত্ফর রহমান। ইলিয়াস গুমের পর লুত্ফরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লুত্ফর জানিয়েছেন, ওই রাতে একটি গাড়ির সঙ্গে আরেকটি গাড়ির ধাক্কা লাগার শব্দ তিনি শুনেছেন। এরপর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের আওয়াজ পান। তবে ঘটনাটি নির্মাণাধীন ভবনের টিনের বেড়ার ওপাশে হওয়ায় পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। লুত্ফরের কথা জানতে চাইলে নূরানী টাওয়ারের আরেক নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ রানা বলেন, চার দিন ধরে লুত্ফরের খোঁজ নেই। এ ঘটনার পর সে অনেক ভয় পেয়ে যায়। সম্ভবত গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। তবে আমাদের কাউকে কিছু বলেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লুত্ফরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বনানীর ২ নম্বর সড়কের যে এলাকা থেকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন, ওই সড়কের একপাশে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অন্যপাশে নির্মাণাধীন ভবন নূর টাওয়ার। নূর টাওয়ারের সামনেই একটি পার্ক। ওই স্থান থেকে ইলিয়াস আলীর বাসা ৩০০ গজ দূরেই। গুম হওয়ার স্থান ছাড়া বনানীর দুই নম্বর সড়কের দু’পাশেই রয়েছে বাড়ি। ইলিয়াসকে ‘তুলে’ নিতে বনানীর দুই নম্বর সড়কের সবচেয়ে নির্জন এলাকাটি বেছে নেয়া হয়।
একটি সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীকে ‘তুলে’ নেয়ার সময় পুলিশের একজন এসআই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ছিনতাইকারী ভেবে প্রথমে ওই কর্মকর্তা একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরেন। কৌশলগত কারণে পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ঘটনাটি তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে অবগত করেন। তবে ইলিয়াসকে ‘তুলে’ নেয়ার সময় পুলিশের কোনো সদস্যের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, ইলিয়াসকে উদ্ধারে র্যাব সর্বোচ্চ তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি চৌধুরী লুত্ফুল কবীর বলেন, তদন্ত করার একটি পর্যায়ে আমরা সোহেলের খোঁজ পাই। এরপর তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
বনানী থানার ওসি (তদন্ত) মাইনুল ইসলাম বলেন, ইলিয়াসের সন্ধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যা উঠে এসেছে : প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় একটি বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো, ধস্তাধস্তি করেই গাড়িতে ইলিয়াসকে তুলে নেয়া হয়েছিল। ঘটনার পরপরই একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, একটি প্রাইভেটকার ইলিয়াসের গাড়িকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়েছিল। সোহেল রানা জানান, ঘটনাস্থলে গাড়ি ছিল তিনটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সবার বক্তব্যে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো—ঘটনাস্থলে ইলিয়াসের সঙ্গে অপহরণকারীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল।
ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তাকে : বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুম ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা ধস্তাধস্তির সময় ঘটনাস্থলে হাজির হন। তিনি ছিনতাইকারী ভেবে অপহরণকারীদেরই (!) একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরেন এবং কৌশলগতভাবে হুমকিও দেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলে ওঠেন, ‘কেউ নড়বে না, গুলি করে দেব কিন্তু।’ এ সময় ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত একজন মাইক্রোবাসের সাইডে এগিয়ে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজেদের একটি বিশেষ বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা অভিযান চালাচ্ছি। বাধার সৃষ্টি করবেন না, সরে দাঁড়ান। এ সময় মাইক্রোবাসের ভেতরে ওই বাহিনীর কিছু নমুনা প্রমাণ হিসেবে দেখতে পেয়ে কথিত অভিযান পরিচালনাকারীর শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে তিনি দুই পা পিছিয়ে যান। কিন্তু মাইক্রোবাসের লোকটি আবার পেছন দিকে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আবার ধমক দিয়ে বলেন, ‘সরে যেতে বললাম না, এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলে যান।’
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাটি আর এক মুহূর্তও ঘটনাস্থলে অবস্থান করা নিরাপদ ভাবেননি। তাই তিনি জোর কদমে হেঁটে গলি রাস্তাটির দক্ষিণ পাশের জলখাবার হোটেলের সামনে চলে যান। সেখানে ওই পুলিশ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলটি রাখা ছিল। সেখান থেকে তিনি গুলশান জোনেই তার কর্মস্থল থানায় পৌঁছে তার অফিসার ইনচার্জ ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের কাছে পুরো বিষয়টির বর্ণনাও দিয়েছেন। কিন্তু অফিসার ইনচার্জ বিভিন্ন স্থানে টেলিফোনে আলাপ করে ওই সাব-ইন্সপেক্টরকে এ বিষয়ে আর মুখ খুলতে নিষেধ করে দেন। পাশাপাশি তাকে সাবধানে চলাফেরারও পরামর্শ দেন। এ ঘটনার পর রাতেই পুলিশ কর্মকর্তাটি ঘটনাস্থলে ইলিয়াস আলীকেই অপহরণ করা হয়েছে বলে জানতে পারেন। তিনি ঘটনাস্থলেও যান। এর পর থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তার ঘনিষ্ঠ একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুমের ঘটনায় কোনো রকম তথ্যসূত্র-প্রমাণাদি রাখতে চাননি অপহরণকারীরা। এ কারণে তার গাড়িচালককেও জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় এভিডেন্স (সাক্ষ্য-প্রমাণ) হিসেবে ছিলেন শুধু ওই পুলিশ কর্মকর্তাটি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পৃক্ত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘অপহরণকারীরা’ অবিশ্বাস করেননি মোটেও। সহকর্মী ওই পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা, পরে ইলিয়াস আলীর অপহরণের বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলার পরই দ্বিতীয় এভিডেন্স হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাটি নিজের জীবন নিয়েও চরম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তার সত্যতা পাওয়া গেছে মহাখালী মোড়ের পেট্রল পাম্পসংলগ্ন জলখাবার হোটেল থেকে। ওই হোটেলের একজন কর্মী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ওই রাতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাটি সাদা পোশাকে মোটরসাইকেলে মহাখালীর অদূরে ডিউটি দিচ্ছিলেন। থানায় ফেরার আগে তিনি রাস্তায় মোটরসাইকেলটি থামিয়ে নাস্তা খাওয়ার জন্য বসেন। হঠাত্ উল্টো দিকের গলি থেকে দুই পথচারী এসে জানায়, রাস্তার মধ্যে ছিনতাই আর মারামারি হচ্ছে। এটুকু শুনেই ওই সাব-ইন্সপেক্টর গলির দিকে ছুটে যান। তার পেছনে আরও দু-একজন এগিয়ে গেলেও তারা অজ্ঞাত আশঙ্কায় নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকলেও প্রত্যক্ষদর্শী এসআই মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছেই কথিত অপহরণকারীদের একজনের শার্টের কলার চেপে ধরেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি তার অফিসার ইনচার্জের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার সময় আরও জানান, তাকে যখন ধমক দিয়ে সরানো হচ্ছিল তখনও ৪-৫ জন মিলে একজনকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিচ্ছিলেন। গাড়ির ভেতর থেকেও ধস্তাধস্তি ও ধমকাধমকির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময় পাশের একটি ভবনের আড়াল থেকে একজন মোবাইল ফোনে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন। সেখানে মোবাইল স্ক্রিনের আলো তিনি এবং অপহরণকারীদেরও একজন খেয়াল করছিলেন। তবে মোবাইলে ভিডিও ধারণকারী যুবকটিকে পরদিন থেকে আর পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী একমাত্র সাব-ইন্সপেক্টর কর্মরত থানার অফিসার ইনচার্জকে আরও বলেন, ইলিয়াস আলীর গাড়ির পেছন দিকে কালো রঙের মাইক্রোটি ধাক্কা মারায় চালক ক্ষিপ্ত হয়ে নেমে যান এবং মাইক্রো চালকের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় মাইক্রো থেকে আরও ৪-৫ জন নেমে গিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালককে জোর করে ধরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরক্ষণেই ৩-৪ জন নেমে গিয়ে প্রাইভেটকারে বসে থাকা ইলিয়াস আলীকেও ধরে গাড়িতে তোলার সময় ধস্তাধস্তির সৃষ্টি হয়।
উদ্ধার হলো না ১১ দিনেও : একে একে ১১ দিন কেটে গেল, তবুও ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করতে পারল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী। গত তিন দিন তাকে উদ্ধারের জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালালেও সেই অভিযান ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
জোর করে গাড়িতে তোলার সময় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিত্কার দিচ্ছিলেন : ‘বনানীতে পার্কের বেঞ্চে ঘুমাচ্ছিলাম। তখনও গভীর ঘুম ধরেনি। হঠাত্ চিত্কার-চেঁচামেচির শব্দ পাই। এতে পাতলা ঘুম ভেঙে জেগে উঠি। পার্কের বেঞ্চে বসেই দেখতে পাই, একটি লোককে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে চার ব্যক্তি। গাড়িতে উঠতে না চাওয়ায় ওই ব্যক্তিকে কিলঘুষি মারা হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় ধস্তাধস্তির পর জোর করে তাকে গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় ওই ব্যক্তি ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিত্কার করছিল। পরদিন সকালে জানতে পারি, বনানীর পার্কের পাশের সড়ক থেকে যে ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল, তিনি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। গাড়িতে উঠিয়ে বনানী এক নম্বরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।’
১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় বনানীর ২ নম্বর সড়কের পাশের সড়ক থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. আনসারকে তুলে নেয়া হয়। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ডাব বিক্রেতা সোহেল রানা। বাসায় ফিরতে দেরি হলে প্রায়ই বনানীর পার্কে ঘুমান সোহেল। ওই পার্কের পাশেই তার বাবা ডাব বিক্রি করেন। সোহেল ডাব বিক্রেতা বাবাকে সাহায্য করেন। ইলিয়াসকে তুলে নেয়ার পুরো ঘটনটি খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন সোহেল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সোহেলকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। গতকাল বনানী থানায় সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহেলের সঙ্গে একান্তে কিছু সময় কথা বলেন। সোহেলের কথায় উঠে আসে সেই রাতের চিত্র। সোহেলের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড কাছে রয়েছে। এ নিয়ে ইলিয়াস গুমের ঘটনায় অন্তত ৩ প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাদের সবার বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে।
সোহেল রানা জানান, হঠাত্ দেখলাম পার্কসংলগ্ন সড়কে একটি সাদা রঙের গাড়িকে আটকে দেয়া হয়েছে। ওই গাড়িটির সামনে-পেছনে আরও দুটি গাড়ি। গাড়িতে উঠতে না চাওয়ায় কয়েকজন লোক একজনকে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছিল আর বলছিল, ‘গাড়িতে ওঠ। তোকে গাড়িতে উঠতেই হবে।’
যারা গাড়িতে তুলছিল তাদের পরনে কী ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা জানান, যারা টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তুলছিল তাদের পরনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পোশাক ছিল না। তাদের পরনে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ছিল। পরনের কাপড় ঝিকমিক করছিল।
সব সময় কি পার্কে রাত কাটান—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা জানান, আমার সঙ্গে ওই রাতে একজন পার্কে ঘুমিয়ে ছিল। ওই ব্যক্তিকে আমি চিনি না। সে আমাকে এসে বলে, গ্রাম থেকে এসেছি, থাকার কোনো জায়গা নেই। ঘটনাস্থলে কোনো ব্যক্তিকে কারও শার্টের কলার চেপে ধরতে আমি দেখেনি। ওই সময় অন্য কাউকে ঘটনাস্থলে জড়ো হতেও দেখিনি। গভীর ঘুমে থাকায় আমার পাশের লোকটি ঘটনাটি টের পায়নি।
যারা ধরে নিয়ে গেছে, তারা দেখতে কেমন—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলেন, ‘তারা লম্বা ছিলেন। কেউ মোটাসোটা আবার কেউ হ্যাংলা-পাতলা।’ আপনি পার্কে ঘুমান কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল জানান, রাত ১২টার দিকে বাসার গেট বন্ধ হয়ে যায়। যেদিন কাজ করতে বেশি রাত হয়ে যায়, সেই দিন পার্কে রাত কাটাই। রাজধানীর একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন বলে জানান সোহেল।
নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুত্ফরের বক্তব্য : এ ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বনানীর ২ নম্বর সড়কসংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবন নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুত্ফর রহমান। ইলিয়াস গুমের পর লুত্ফরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লুত্ফর জানিয়েছেন, ওই রাতে একটি গাড়ির সঙ্গে আরেকটি গাড়ির ধাক্কা লাগার শব্দ তিনি শুনেছেন। এরপর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের আওয়াজ পান। তবে ঘটনাটি নির্মাণাধীন ভবনের টিনের বেড়ার ওপাশে হওয়ায় পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। লুত্ফরের কথা জানতে চাইলে নূরানী টাওয়ারের আরেক নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ রানা বলেন, চার দিন ধরে লুত্ফরের খোঁজ নেই। এ ঘটনার পর সে অনেক ভয় পেয়ে যায়। সম্ভবত গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। তবে আমাদের কাউকে কিছু বলেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লুত্ফরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বনানীর ২ নম্বর সড়কের যে এলাকা থেকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন, ওই সড়কের একপাশে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অন্যপাশে নির্মাণাধীন ভবন নূর টাওয়ার। নূর টাওয়ারের সামনেই একটি পার্ক। ওই স্থান থেকে ইলিয়াস আলীর বাসা ৩০০ গজ দূরেই। গুম হওয়ার স্থান ছাড়া বনানীর দুই নম্বর সড়কের দু’পাশেই রয়েছে বাড়ি। ইলিয়াসকে ‘তুলে’ নিতে বনানীর দুই নম্বর সড়কের সবচেয়ে নির্জন এলাকাটি বেছে নেয়া হয়।
একটি সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীকে ‘তুলে’ নেয়ার সময় পুলিশের একজন এসআই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ছিনতাইকারী ভেবে প্রথমে ওই কর্মকর্তা একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরেন। কৌশলগত কারণে পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ঘটনাটি তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে অবগত করেন। তবে ইলিয়াসকে ‘তুলে’ নেয়ার সময় পুলিশের কোনো সদস্যের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, ইলিয়াসকে উদ্ধারে র্যাব সর্বোচ্চ তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি চৌধুরী লুত্ফুল কবীর বলেন, তদন্ত করার একটি পর্যায়ে আমরা সোহেলের খোঁজ পাই। এরপর তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
বনানী থানার ওসি (তদন্ত) মাইনুল ইসলাম বলেন, ইলিয়াসের সন্ধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যা উঠে এসেছে : প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় একটি বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো, ধস্তাধস্তি করেই গাড়িতে ইলিয়াসকে তুলে নেয়া হয়েছিল। ঘটনার পরপরই একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, একটি প্রাইভেটকার ইলিয়াসের গাড়িকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়েছিল। সোহেল রানা জানান, ঘটনাস্থলে গাড়ি ছিল তিনটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সবার বক্তব্যে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো—ঘটনাস্থলে ইলিয়াসের সঙ্গে অপহরণকারীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন