মনিরুজ্জামান মনির
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের ডিজিটাল উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণ করার অসম্ভব অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছিল। সচেতন নাগরিকদের বিস্মিত করে দিয়ে এবং বর্তমান বিরোধী দলের ভোট কারচুপির অপবাদ মাথায় বহন করে দুই-তৃতীয়াংশের অধিক আসনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। অভিযোগ হলেও সত্য, দেশ ও মানুষের জন্য কল্যাণকর একটি অঙ্গীকারও তারা রাখতে পারেনি। উপরন্তু তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করেছে এবং দেশের মানুষকে জীবনযাপনে নিরাপত্তাহীন ও সঙ্কটাপন্ন করে তুলেছে। তবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যে কর্ম করার সংকল্প বর্ণিত ছিল না সেগুলো সুচারুভাবে সম্পাদন করে যাচ্ছে। এর বিপরীতে জনগণের সমালোচনা বা বিরোধী দলের আন্দোলনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। ’৯৬-এর আওয়ামী সরকারের চেয়ে ২০০৯-এর আওয়ামী সরকার অনেক বেশি হিংস্র, বেপরোয়া—একথা অনস্বীকার্য। আগে উল্লিখিত ইশতেহারবহির্ভূত দুটি কর্মের একটি হলো—বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দুই সন্তানকে অশ্রাব্য-অশ্লীল অপবাদের বিষমাখা তীরে বিদ্ধ করা। তাদের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলাগুলো বহাল রাখা এবং কল্পনার সুতায় বোনা নতুন নতুন মামলা দেয়া। সর্বজনপ্রিয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী জনগণ যাকে বলে ‘আপসহীনা দেশনেত্রী’, সেই বেগম খালেদা জিয়ার নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান, স্মৃতিস্তম্ভ থেকে তাদের নাম মুছে ফেলা বা তুলে ফেলা। দ্বিতীয় অপকর্মটি হলো—বন্ধু রাষ্ট্র ভারতকে করিডোর দেয়া, সমুদ্রবন্দর দেয়া, ফেনী নদী থেকে পানি উত্তোলন করার অনুমতি দেয়া। যদিও তিস্তার পানি সমবণ্টনের চুক্তি এখনও ওরা করেনি। সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উজানে বরাক নদীতে টিপাই মুখ বাঁধ গড়ার প্রস্তুতিপর্ব অব্যাহত রেখেছে। তিন বিঘা করিডোরের সম্পূর্ণ মীমাংসা হয়নি। সীমান্তে বাংলাদেশীদের পাখির মতো শিকার করছে বিএসএফ। আমার আজকের প্রধান আলোচ্য বিষয়, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার অবদানকে আওয়ামী সরকারের অস্বীকৃতি। আসলে যাদের নাম আগামী ইতিহাসের পাণ্ডুলিপিতে সত্য বর্ণে লেখা হচ্ছে, তাদেরই নাম মুছে ফেলার এ এক অপচেষ্টা বা ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যখনই ক্ষমতায় আসেন তখনই তার এসব রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা তীব্র আকার ধারণ করে। এটা প্রতিপক্ষ বিশেষত বিএনপি দমনের গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। তবে বহির্বিশ্বে ব্যতিক্রম। তাদের দেশের রাজনৈতিক কোনো মহান ব্যক্তিদের দল মত-নির্বিশেষে সম্মান করে থাকে এবং তাদের অবদান মনে রাখে। তুরস্কে দেখেছি তুর্কিবীর, জাতির জনক কামাল আতাতুর্কের প্রতি সে দেশের জনগণ ও সরকারের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। মিসরে দেখেছি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সমাধিস্থলে সারাদিন তিনজন সৈনিক পালাক্রমে সেলুট দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশসহ ৭টি দেশকে নিয়ে গঠিত সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে জিয়ার নাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। তুরস্কে আছে শহীদ জিয়ার নামে প্রধান সড়ক। অতীতে ইরান-ইরাকের দীর্ঘকালীন যুদ্ধ থামাতে OIC-এর পক্ষে ভূমিকা রাখা শহীদ জিয়ার অবদান আজও ভুলতে পারে না মুসলিম বিশ্ব। সৌদি আরবের আরাফাতে বাংলাদেশের নিমগাছ ‘জিয়া ট্রি’ হয়ে শোভা বর্ধন করছে। আর বাংলাদেশের ক্ষমতার দম্ভে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে ‘জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’-এর নাম নির্দ্বিধায় পরিবর্তন করে ফেললেন। বেগম জিয়ার নামে বরাদ্দকৃত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়ি, যেখানে শহীদ জিয়ার বসবাসের অনেক স্মৃতি জড়ানো, সেই বাড়ি থেকে নিষ্ঠুরভাবে বেগম জিয়াকে উত্খাত করলেন। বেগম জিয়া সরকারে থাকাকালীন সৃষ্ট সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালের পাশে বেগম জিয়া মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে সর্বাধুনিক জিয়া অডিটোরিয়ামের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে গৃহীত হয়েছে। আমাদের দেশে এই হলো একজন জনপ্রিয় শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি বা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চলমান আওয়ামী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক মূল্যায়ন। বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী এশিয়াতে বিখ্যাত বলে উল্লেখযোগ্য যমুনা বহুমুখী সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। বেগম জিয়া পারতেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে এমনকি নিজের নামে সে সেতু তৈরি করতে। সেদিন আওয়ামী লীগ যমুনা পারে হরতাল ডেকেছিল কিন্তু আজ দেখা যায় সেই যমুনা সেতুর পাশে বঙ্গবন্ধু শব্দটি জুড়ে দিয়ে সেই ঐতিহাসিক সেতুর পরিবর্তিত নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু’। বেগম খালেদা জিয়া সরকারপ্রধান থাকার সময় চীন সফরে গিয়ে বাংলাদেশে ন্যাম সম্মেলনের জন্য ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের অডিটোরিয়াম তৈরির চুক্তি করেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অডিটোরিয়ামটি তৈরি হওয়ার পর চীন বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ এ বিষয়ে বাংলাদেশে গৃহীত ঋণ মওকুফ করে দেয় এবং অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয় ‘চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র।’ এই যুগান্তকারী অবদানের নেপথ্যে বেগম জিয়ার নাম থাকায় আওয়ামী সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আগের নাম পরিবর্তন করে রাখল ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র’। শুধু বিএনপি এবং বেগম জিয়ার প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্ শক্তির অন্যতম শক্তিধর দেশ বলে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত চীনের সাহায্য-সহযোগিতা এবং উদারতার অবদানকে আমরা দরিদ্র দেশের তালিকায় থেকে, অপমান করা কি মঙ্গল জনক হলো?
monirlyric@gmail.com
monirlyric@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন